Monday, December 31, 2012

টুকরো টুকরো লেখা ২৫

২০১২ শেষ হতে আর কয়েক ঘন্টা। একটা একটা করে দিন খতম হতে থাকলে একসময় সপ্তাহ-মাস পেরিয়ে বছর হবে এইটাই স্বাভাবিক। বয়স বাড়তে থাকার বেদনাও একসময় গা সওয়া হয়ে আসে। নববর্ষে গলা বাড়িয়ে গোষ্ঠমামাকে খুঁজতে থাকি অন্তত নতুন কোন ফাঁদে চমৎকৃত হতে।

১.

ডিসেম্বর মাসের শুরুটা ভালোই লাগছিল। আশা ছিল একদিকে দেইল্লা রাজাকারের মামলায় প্রত্যাশিত রায় হবে অন্যদিকে শিবিরের মার খেতে খেতে পুলিশ একসময় ক্ষেপে উঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজ সিদ্ধান্তেই জামাত-শিবিরের উপর চড়াও হবে। বরাহনন্দনদের বাঁশডলা খাবার সেইসব মায়াবী চলচ্চিত্র বার বার করে দেখতে দেখতে বছরের শেষ দিনটাতে ঘটা করে কলিজু ভূনা দিয়ে হারাম পানি খাবো। হলো না। আন্তর্জাতিক বরাহদের হস্তক্ষেপে রায় আটকে গেল। আটকে গেল কথাটা অবশ্য এখনো পুরোপুরি সঠিক না। বলতে হবে রায়ের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যেকোন দিন দেলু রাজাকারের মামলার রায় হবে এটা গত ৭ ডিসেম্বরের কথা। এরপর ইউকে থেকে হ্যাকিংয়ের কাহিনি। আইনের দৃষ্টিতে যে হ্যাক করে সে অপরাধী। দায় সেই হ্যাকারের আর সেই বেআইনি তথ্য যারা মিডিয়াতে ছাপায় তার। মাঝখান থেকে ভদ্রতা করে বিচারপতি নিজামুল হক সাহেব পদত্যাগ করে বসলেন। এখন মওদুদীয় ছাগুরা বিচার বিলম্বিত করার জন্য ভ্যা ভ্যা শুরু করে দিয়েছে। বিচার নতুন করে শুরু করতে গেলে সব কয়টা শুয়োর জেল থেকে বের হয়ে যাবে। তাতে ক্ষমতাসীন সরকারী দলের তেমন কিছু হবে না। পস্তাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে যারা বছরের পর বছর মোষ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তারা।


২.

ছাত্রলীগ শিবিরের সামনে কেঁচো হলেও বরাবরের মতোই নিরস্ত্র সিভিলয়ান নির্যাতনের ব্যাপারে তার সাংগঠনিক দক্ষতা অব্যহত রেখেছে। বিশ্বজিৎ দাস নামের কোন নিরিহ মানুষকে কয়েকজন মিলে কুপিয়ে হত্যা করলো বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা। তাও আবার একেবারে ক্যামেরার সামনে। সেই ভিডিও দেশেবিদেশে প্রচার করে ছাত্রলীগের চোখের সামনেই জামাত-শিবির নিজেদের যৌনকেশে শ্যাম্পু করে ফেললো। ছাত্রলীগের মতো নপুংসক সংগঠণ আমার দেখা রাজনৈতিক ইতিহাসে নাই।


৩.

নতুন দিল্লীতে ধর্ষণ নতুন কোন ঘটনা না। মুম্বাইয়ের বদনাম অতীতে অবশ্য আরো বেশি শুনেছি। তারপরেও দিল্লীতে ধর্ষণের ঘটনা মাঝে মধ্যেই চোখে পড়তো কাগজে। তৃণমূল জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে কোলকাতায়ও ধর্ষণ বেড়ে গেছে। অথচ একসময় কোলকাতায় অন্য যে অপরাধই হোক, যৌন অপরাধ দক্ষিণ এশিয়ায় সব থেকে কম হতো। সে যাই হোক জনগণ হঠাৎ করেই জ্বলে ওঠে। ব্যাপারটা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা গণঅভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে সত্য। বহুদিন থেক সহ্য করতে করতে একদিন আর সহ্য হয় না। কেন হয় না আর তার আগের অত দিন কেনই বা সহ্য হলো তার জবাব আযাযিল জানে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের আর্থরাজনৈতিক পার্থক্য অনেক হলেও সামাজিক পার্থক্য তেমন পেলাম না। বাংলাদেশের বরাহদের মতোই ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমকে দোষারাপ, শালীনতার প্রসঙ্গ তুলে জঘন্য পুরুষতান্ত্রিক ফতোয়া আর এই সব কিছুর মাধ্যমে ধর্ষণকারীদের বাঁচানো এবং সমস্যার গোড়ায় দৃষ্টিপাতে বাধা দেওয়া; এই সব কিছুই আমাদের অতি পরিচিত। রাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই রাজনীতিতে লুম্পেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং বর্তমানে ব্যবহৃত লুম্পেনদের দমন করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে রাজি না। এবং এইজন্য তাঁরা কখনো প্রসঙ্গটাকেই সামনে আসতে দেন না। একদম বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ-বিএনপি। জীবনে কিছুই তো সেভাবে হলো না। মাঝে মাঝে মনে হয় এর চাইতে বরং সরকারী দলের গুণ্ডা হলে টোকা দিলে পকেটে একটা কিছু অন্তত বাজতো।


৪.

শিবির পিটাতে কুণ্ঠিত হলেও বিদ্যুত আর জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনার প্রতিবাদে বামমোর্চার বিক্ষোভ কর্মসূচীতে আক্রমণ করতে পুলিশের দক্ষতার কমতি ‌ছিল না। সৈকত মল্লিক নামে গণসংহতি আন্দোলনের একজন কর্মীর পা ভেঙ্গে দিতে পুলিশকে নিশ্চয়ই তেমন বেগ পেতে হয় নাই। সরকারের কাছে পুরো জাতির ঠ‌্যাং একদিকে আর তৌফিক এলাহির জবান আরেক দিকে। এইসব চালিয়ে যান। ফলাফল পাবেন সময় মতো।

আরেকদিকে আবার কিছু কিছু দলছুট স্বঘোষিত বামের একটু অন‌্যরকম আস্ফালন দেখা যাচ্ছে নেট জগতে। তারা বামমোর্চার কর্মসূচীতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদের সঙ্গে ফাউ হিসাবে বাম ঐক‌্যে বিভাজনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিপিবি-বাসদের কর্মসূচীতে পুলিশ কেনো আক্রমণ করলো না সেই প্রশ্নটা সিপিবিকে না করে পুলিশকে করতে হতো। কিন্তু এই দলছুট লোকগুলির আসল সমস্যা হচ্ছে পাবলিসিটি। কথার মধ্যে খাবলা খানেক গু না থাকলে লোকে দুর থেকে দুর্গন্ধ পাবে কী করে?  দুষ্টুলোকে বলে বামঐক্য হতে না পারলে তাঁদের(এঞ্জিও-কর্পোরেট লাইনের স্বঘোষিত বামের) রুটি রুজি বাড়বে। পাতে উঠবে আরো কয়েক হাতা আমিষ।


৫.

সামনে আরো একটা বছর আসছে। আমার জ্ঞান হবার পরে এতোটা উৎকণ্ঠা নিয়ে আর কোন নতুন বছর আসে নাই। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা পার করে নতুন নতুন অনিশ্চয়তার সামনে সবকিছু। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পরে বাবা একদিন বলেছিল, কিছুই আর আগের মতো হবে না। গত এক দশকে মোটামুটি সেইরকমই দেখতে পাচ্ছি। বৈশ্বিক রাজনৈতিক অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী তো বটেই ১৯৮৯-৯১ পরবর্তী মেরুকরণও দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে ইউরোর অগ্নিপরীক্ষা। ইউরো ডুবে গেলে ডলারের পোয়াবারো। বেঁচে গেলে ঘাড় মটকানো যাবে পূর্বের বা ভূমধ‌্যসাগর বা কৃষ্ণসাগরের আশেপাশের কারোরই। আরব বসন্তের হাওয়ায় ন‌্যাটোর বারুদের গন্ধ তীব্র হয়ে উঠছে। ভারতে নরেন্দ্র মোদী আড়মোড়া ভাঙছেন। আনন্দমঠের এই সীতারামের জন‌্যেও এসপার ওসপারের সময় এই ২০১৩। বাংলাদেশে চারটা সম্ভাবনা এখন সামনে :

১) কোনভাবে ভোটচুরি করে সরকারী দলের নির্বাচিত হওয়া। (যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় হবে না।)

২) প্রচুর ভয়াবহ ব‌্যর্থতা সত্ত্বেও বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতা আর জামাতমূখীতার কারণে সহিহ্ ভোটেই সরকারী দলের কোনরকমে টিকে যাওয়া এবং ট্রাইব‌্যুনালের রায় আপিলটাপিল পার করে কার্যকর হয়ে যাওয়া। তারপর যা হবার সেটা ২০১৪-২০১৮ পর্বের গল্প।

৩) ২০০১ এর মত করে আঠারো দলীয় জোট ক্ষমতায় আসা এবং ১৯৭১ মডেলে গণহত‌্যা শুরু করা।

৪) "দেশের এই পরিস্থিতিতে সোনাবাহিনি/সুসিল সোমাজ হাত গুটিয়ে বসে থাক্তে প্রে না। সবাই ঘরে ঘরে বালের আঁটি জমা করুন। মাটি আর মানুষের সমন্বয় সাধনে তোমার সমাধি আজ ফুলে ফুলে ঢাকা ইসলামের সওগাত ইত্যাদি। ঈমান-একতা-শৃঙ্খলা"।

আপাতত ২০১৩ সালের জন্য এর বাইরের কোন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না। এর মধ্যে দুই নম্বরটার সম্ভবনা সব থেকে কম।

এতো সব কিছুর পরেও শুভকামনা থাকলো সবার জন্য। কীভাবে হবে জানিনা তারপরেও নতুন বছর শুভ হোক।

পুনশ্চ : যতদূর জানি এটা নজরুল গীতি। নাকি?

1 comment:

Kafy said...
This comment has been removed by the author.