Friday, April 23, 2010

টুকরো টুকরো লেখা ২২

শুক্রবার পর্যন্ত ভূতের মতো কাজ করেছি। টানা চারদিন ইস্টারের বন্ধ। গত সপ্তাহজুড়ে যেই বিশাল কর্মতালিকা বানিয়েছিলাম তাতে ধূপধুনো দিয়ে ঘুমের উপর আছি। পরিকল্পনা একটা ভ্রান্ত ধারণা। এই মহাসত্য জানা সত্ত্বেও একের পর এক ভ্রান্তির টানেলে ক্রলিং করছি। এর শেষ খুঁজতে যাওয়াও একটা ভ্রান্ত ধারণা।

১.

বঙ্গবীর ডিগবাজী মারছেন বেশ অনেক বছর আগেই। এখন আস্তে আস্তে পলিটিক্যাল ক্লাউনে পরিণত হইতেছেন। চারিদিকে পরিবর্তনের জোয়ার। সবাই চেঞ্জ হইতে চায় চেঞ্জ দেখতে চায়। দিনকাল অন্যরকম। এতোকাল পত্রিকা মারফত জানতাম তিনি মূলত ঢুশঢাশ লাইনের লোক। সেদিন বিডি নিউজে দেখলাম এখন তিনি বেশ পরহেজগার হইছেন। দেইখা কলিজাটা ঠাণ্ডা হইয়া গেলগা। ভালো থাকেন বঙ্গবীর। আমরা ধইরা নিলাম নিচের ছবিটা আপনার না।

ছবিটা যার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবীর বইলা আমরা তারেই চিনুম। আপনে থাকেন আপনার গামছা লইয়া।

২.

পটুয়াখালীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিঙে শুনলাম গরুর গোস্ত নিষিদ্ধ করা হইছে। আমি উপমহাদেশের সব থিকা বড় ছাত্রাবাসগুলির একটাতে সাড়ে চাইর বছর থাকছি। মিলপ্রতি আট টাকা কইরা দিতাম সেই সময়। তখনো গোমাংস বাংলাদেশে এমন কিছু সস্তা ছিলো না। আর আমাদের হলে কমপক্ষে পঞ্চাশজন সনাতন ধর্মাবলম্বী বাস করতেন। কোনদিন শুনি নাই যে তাঁদের জন্য গরুর বিকল্প কিছু রান্না করা হয় নাই। সুতরাং নির্মলবাবু দ্রব্যমূল্যের এবং সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্রদের যে দোহাই দিলেন সেইটা ধোপে না টিকার মতোই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুবুদ্ধি হউক। মেনুতে গোমাংস ফিরুক এই প্রত্যাশাই করি।
তবে দেশে গরুর মাংসের দাম যে গত এক দশকে অস্বাভাবিক রকম বাড়ছে এইটা ঘটনা। আমি যখন প্রথম বাজারে যাই সেই আশির দশকের শেষের দিকেও গরুর মাংসের কেজি ছিল পয়ত্রিশ থিকা চল্লিশ টাকা। সেইটা বাড়তে বাড়তে চুরানব্বই-পচানব্বই নাগাদ ষাইট টাকায় আসে। দুই হাজার সালের শুরু পর্যন্ত সেইটা সিজন অনুসারে ষাইট থিকা সত্তুর-পচাত্তুরের মধ্যে ওঠানামা করতো। এর পরে মিলেনিয়ামে আইসা সেইটা হাইজাম্প দিলো। কারণ হিসাবে পত্রিকা মারফত জানলাম ভারতীয় গরুর "অনুপ্রবেশ" রোধ করতে গিয়াই এই দশা। নব্বই দশকের প্রথমার্ধেও দেখতাম অনেক রিক্সাচালক-বেবি ট্যাক্সি চালক হোটেলে পরোটা-গরু দিয়া প্রাতরাশ সারে। মোড়ের হোটেলগুলিতে এক বাটি গরুর গোস্ত ছয় থিকা আট টাকা আর বাড়ি মারা খাস্তা পরোটা একটাকা। মোটামুটি বারো থিকা চৌদ্দটাকার মধ্যে তখন চা-বিড়ি সহ গ্র্যান্ড প্রাতরাশ সম্ভব ছিল। যেই অমানুষিক শারিরিক পরিশ্রম তাঁরা করেন তার জন্য সকাল বেলা ভারী নাস্তা খুব জরুরি। এখন যে দ্রব্যমূল্যের কথা শুনি তাতে তো ভাজি দিয়া বাজে পরোটা খাইতে গেলেও বিশটাকা বাইর হইয়া যাওয়ার কথা। চা-বিড়ি না হয় বাদই দিলাম। আমার প্রশ্ন হইলো আমাগো দেশে কি কোনভাবেই গরুর উৎপাদন বাড়ানো যায় না? দেশে এতো পয়সাওয়ালা লোকজন আছেন তারা কি এই খাতে কিছুটাকাও খাটাইতে পারেন না?
যা বুঝতাছি এর একটাই সমাধান আছে। সেইটা হইলো আমারে একটা জ্যাকপট পাইতে হইবো। তারপর অচ্ছুৎ বলাইয়ের বন্ধুরে সেইখান থিকা এককোটি টাকা দিমু। সে একটা বড় সাইজের জমিতে একটা ফার্ম বানাইবো। সেইখানে সারা দুনিয়া থিকা উত্তেজিত ষাড় আর লাস্যময়ী গাভী কিনা আইনা রাখা হবে। বাইরে থিকা তাগো খালি দরকার মতো খাওন দেওয়া হবে। ব্যস। ঐখানে তাগো একটাই কাম। পাঁচ বছরে তাগো সংখ্যা অন্তত পাঁচগুণ হইবো। তারপর পুলাপান লায়েক হইলে তারাও কর্তব্য বুইঝা যাইবো। এইভাবেই একদিন বর্তমান ওয়েজ লেভেল স্থির রাইখা গরুর গোস্ত কেজিপ্রতি পঞ্চাশ টাকায় নামবে। মাছেভাতে বাঙালী গরুভাতে শিফট করবে। বাংলাদেশ হবে এশিয়ার আর্জেন্টিনা। বাঁচুকমরুক যাই করুক গরু খাইয়াই করবো।

অপেক্ষা শুধু জ্যাকপটের .....

৩.

বরাহ শিবিরে স্মৃতিভ্রম শুরু হইছে। বাড়িতে সবাই তাওয়া কড়াই রেডি রাখেন। স্মৃতি ফিরাইতে থ্রীস্টুজেস মডেলের বিকল্প নাই।

No comments: