Tuesday, October 13, 2009

মিউনিখনামা : অক্টোবর ফেস্ট

ভূতের মতো কয়েকদিন টানা কাজ কইরা তারপর ছুটি নিলাম হপ্তাখানেক। নেওয়াটা ফরজ ছিল। কিন্তু সপ্তাহ পার হইয়া যাওয়ার পরেও দেখি আর কাজে ফিরতে মন চায় না। মন না চাওয়াটা একটা জটিল সঙ্কট। বয়স বাড়তে বাড়তে মনের এই বেয়াড়াপনা বাড়তেছে আর পাল্লা দিয়া কমতাছে মনের উপর জোর খাটানোর ক্ষমতা। এইটার চিকিৎসা আদৌ আছে কী না জানিনা।

১.

আগস্টের শেষে কাসেলের সচল সম্বেলনের সময় থিকাই প্ল্যান কইরা রাখছি এইবার অক্টোবর ফেস্টে যাইতেই হইবো। টার্গেট ২৫ সেপ্টেম্বর। যারা যারা যাবে সবার সাথে সব কথাবার্তা পাকা। এরমধ্যে ২৩ তারিখ বিকালবেলায় খিয়াল হৈল...থুক্কু..তীরন্দাজরেই জানানো হয় নাই! ২৪ তারিখ বিকালে দিলাম ফোন। খাইলাম ঝাড়ি। খাওয়ারই কথা। তিনি জানাইলেন পুরা সময় দিতে পারবেন না। যাই হোক সময় শেষ পর্যন্ত ঠিকই দিলেন। মানে আমরা একরকম জুলুম কৈরাই আদায় করলাম আর কি দেঁতো হাসি । এরকম জুলুম ভবিষ্যতে আর হবে না ইত্যাদি প্রতিজ্ঞার পর্ব দ্রুত শ্যাষ কইরা শুরু হইলো আমাগো মিশন ম্যুনশেন'০৯।

২.

ধূসর গোধুলির ধারণা ছিল ২৫ তারিখ শনিবার। এরকম ধারণা থাকার ফলাফল যা হওয়ার তাই হইল। অর্থাৎ ২৫ তারিখ দুপুরে কাসেল থিকা মিউনিখ যাত্রী সংখ্যা খাড়াইলো সাকুল্যে দুইজন। হাসিব আগের দিন থিকাই মিউনিখে। বাইছা বাইছা যেইটাতে সবচাইতে কম গাড়িবদল করা লাগে রেলস্টেশনের মেশিন থিকা এরকম একটা যাত্রাসূচি নেওয়া হইল। কাসেল-ফ্রাঙ্কফুর্ট, ফ্রাঙ্কফুর্ট-ভুইর্ৎসবুর্গ, ভুইর্ৎসবুর্গ-ন্যুরেনবার্গ, ন্যুরেনবার্গ-মিউনিখ। মোট তিনবার গাড়ি বদলানো। ২০০৬ সালে একবার সাতবার গাড়িবদলের লাইন ধইরা খবর হইয়া গেছিল।

৩.

ফ্রাঙ্কফুর্ট নাইমা লাগলো খিদা। দুইজনেরই প্যাট খালি। বেশ প্যাটভরাইয়া খাওয়া লাগবো কারণ মিউনিখ পৌঁছাইতে রাইত নয়টা। প্ল্যাটফর্মের ভিতরে দুইচক্কর দিয়া কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ফেসিবাদী অবস্থানে যাইতে ব্যর্থ হইয়া গেলাম বাইরে। স্টেশন থিকা সোজা বাইর হইয়া ম্যুনশেনার স্ট্রাসের একটা দোকানে ঢুকলাম। লোকজনের চেহারা দেইখা মনে হইলো তুর্কি কিংবা ইরানি। খিদার জ্বালায় গপ গপ কইরা খাইলাম। কিন্তু যা খাইলাম সেগুলা যথেষ্ট অখ্যাদ্য। দোকানের নামটা আমি ভুইলা গেছি। হিমুর মনে আছে। ফ্রাঙ্কফুর্টে ট্রানজিট থাকলে কেউ আর পারতোপক্ষে ঐ দোকানে খাইয়েন না। পথে অবশ্য প্যাট নামে নাই। যা ভয় ছিল। আমার হৈল তার উল্টা। পুরা বন্ধ।

তারপর বহুসময় পার কইরা আরো দুইবার গাড়ি বদলাইয়া যখন মিউনিখে পৌঁছাইলাম তখন বাজে রাত ৯টা। হাসিব অপেক্ষায় ছিল প্লাটফর্মে। তীরন্দাজের বাড়ি ফিরতে তখনও ঘন্টা তিন। বসলাম তিনজনে মিউনিখ স্টেশনের বাইরে একটা দোকানে। নানান কথা। কথার কি শেষ থাকে তিনজন সচল এক জাগা হইলে?

৪.

তীরন্দাজের বাসায় যখন ঢুকলাম তখন রাইত বারোটা। কোমরে হাত দিয়া ভদ্রলোক যেইভাবে আমাগো ত্রিমুর্তিরে মাপলেন সেইটা একটা দৃশ্য। বৌদি আগেই বাসায় আইসা শুইয়া পড়ছেন। আমরা ফিসফিস কইরা গিয়া বসলাম ড্রইংরূমে। কিসু খাবো না খাবো না করতে করতে পুরা এক ঠোঙ্গা রুচি চানাচুর(ঝাল) মাইরা দিলাম। লগে ফ্রিজে থাকা শেষ বীয়ারটাও। জানলাম পরদিন বেলা তিনটার পর থিকা সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি নাই। অর্থাৎ অক্টোবর ফেস্টের মালোৎসবে আমরা তারে পাইতেছি না। পার্টিক্লান্ত তীরন্দাজরে ঘুমাইতে না দিয়া ঘন্টাখানি চললো নানান ধুনফুনালাপ। উশি ভাবী আমরা আসার আগেই দোতলায় আমাদের থাকার উত্তমব্যবস্থা কইরা রাখছিলেন। এই রকম জুলুমের পরে লজ্জিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও আমরা নির্লজ্জ্ব ত্রিমুর্তি মুখে কান পর্যন্ত হাসি নিয়া শুইতে গেলাম।

৫.

মাঝরাতে আর শেষরাতে আমার ঘুম ভাঙলো দুই থেকে তিনবার। হিমু এবং হাসিব দুইজনের নাকই কথা বলে। অথচ অতীত অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত জানতাম সকাল হইলে নাকডাকার বা ডাকানোর অভিযোগ আমার ঘাড়ে আইসাই পড়বে। এবং অবধারিতভাবে তা পড়লোও। তবে এইবার আমারো কিছু বলার থাকায় এক্টু ইজি লাগতেছিল।

জম্পেশ প্রাতরাশের পর বাইর হইলাম একটু শহরে ঘুরতে। শহর ঘুরা মানে মহল্লার একাংশ আর কি। মিউনিখ অতি বিশাল। তীরন্দাজের বাড়ি থিকা বাইর হইয়া রাস্তা পার হইলেই অলিম্পিয়া পার্ক। ১৯৭২ সালে অলিম্পিক উপলক্ষে বানানো। পার্কের মাঝখানে এক জায়গায় একটা ঢিবির মতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যাবতীয় ধ্বংশস্তুপ জড়ো কইরা বানানো ঢিবি। কিছুক্ষণ চাইয়া থাকলে বুক ঢিপ ঢিপ করে। এদিকে তীরন্দাজ তাড়া দেয়। আমরাও দেই এবং তাড়িত হই। ধুসর গোধুলি রাস্তায়। তার আইতে আর নাকি মিনিট বিশেক। ফিরতি পথে আবার তীরুদার বাড়ি।

এদিকে গোধুলির বিশমিনিট আর শ্যাষ হয় না। ঘন্টা খানেক পর ফোন কইরা জানা গেলো রাস্তা প্যাচাইছে। নানারকম এদিকএদিক ডিরেকশান দিয়া অবশেষে বেলা একটাসোয়াএকটা নাগাদ তীরুদার বাড়ির সামনে আইসা একটা গাড়ি থামলো। ওরে খাইছে! গাড়িতে দুই পিছ স্বর্ণকেশী আর্যবালিকা। বিদায় নিবার কালে আবার তাগো লগে খানিক জাবড়াজাবড়িও কৈরা নিল। তীরুদা হাসি মুখে বললেন, এইনা হৈলে ধুগো !

৬.

খিদা লাগছিল সেইরকম। ঠিক হৈল সবাই একলগে যামু মণ্ডপে। সেইখানে তীরুদারে রাইখা চারমুর্তি যামু টেরিযিয়ানভেযে নামের সেই বিরাট মাঠে যেইখানে অক্টোবর ফেস্ট নামের সেই মাল খাওয়ার উৎসব চলিতেছিল জশনে জুলুছে। এর মধ্যে আবার পুতুলের ফোন। ডিনারের নিমন্ত্রণ। অর্থাৎ মাল খাইতে হবে কিছুটা খিয়াল কৈরা। পরদেশে রাপু খাপাং হইলে হয়তো ট্রামবাসের লাইনটাই শুধু পামু। উঠা আর হৈবো না।

পূজামণ্ডপে গিয়া যখন পৌঁছলাম তখন বেলা আড়াইটা। আশৈশব রায়ের বাজারে মানুষ। শৈশবের সব থিকা রঙ্গীন স্মৃতিগুলির সাথে ঢাকের বাদ্য শুনতে পাই। ঢাক শোনা হৈল না। তবে প্রতীমা দেখলাম। মনে হৈল দূর্গতিনাশীনি চারমূর্তির দিকে চাইয়া রহস্যময় হাসি দিতেছেন। অনেক পুরনো বান্ধবের দেখা মিলল। ওদিকে পেটে চোচো করতাছে। ডেগচির উপর ঝাপাইয়া পড়লাম। অসাধারণ। শেষ কবে এর থিকা ভালো খিচুড়ি খাইছিলাম মনে পড়ে না। সব্জিটাও সেরকম। আর তারুপর বহুকাল পরে খাওয়া প্রসাদ।

একটা মজার কথা শুনলাম। মিউনিখে নাকি দুইটা মণ্ডপ হইছে। একটা বাংলাদেশের আরেক্টা ভারতের। শুইনা ভালো লাগলো। লাগলো কি? না কি কিছুই লাগলো না?

কী জানি?

৭.

অক্টোবর ফেস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহান্ত ফেসিবাদী ইতালিয়ানদের নাম কৈরা হয়। ঝাঁকে ঝাঁকে মালখোর মুসলিনির দেশ থিকা হিট্লুর দেশে আসে। এইটা জানা থাকলেও আমাগো ছুটিছাটা হিসাব কৈরা অন্য সপ্তাহান্তগুলাতে জাগা বাইর করা গেলো না। তাই ২৬ সেপ্টেম্বরেই আইতে হৈলো গজব ভিড় সত্বেও।

মাঠের কাছে আইসা দেখি মানুষ যাইতে আছে বানের লাহান। মাঝে মাঝে রাস্তার ধারে বেখুদি মে কদম ল্যড়খড়ানো লোকজন দেখা যায়। আমাগো প্যাটে তখনো শুধুই পূজার খিচুড়ি। পানিও খাই নাই খাওয়ার পরে। এক্টু কোক খাইছিলাম। সেইটা নিয়মাফিক তৃষ্ণা বাড়াইছে। আবহাওয়াটাও বীয়ারের। স্রোতের লগে লগে ঢুইকা গেলাম একসময়। পরিস্থিতি হৈল আপনার আর কষ্ট কৈরা হাঁটা লাগবো না। জনস্রোতের কোন এক জাগায় খাড়াইলেই হৈবো। হাসিব যেহেতু জুম্মাবারে একবার আইসা গেছে সুতরাং আমাগো মধ্যে অক্টোবর ফেস্টের ভূগোলটা সেই জানে একমাত্র ঠিকঠাকমতো। সবার আগে হাসিব, তার পিছে আমি, তার পিছে হিমু আর সবার পিছে মনির হোসেন।

যাইতে যাইতে আশেপাশে দেখতেছিলাম বাভারিয়ার শত শত লোকাল ব্রুইয়ারির তাঁবু। আমাগো গন্তব্য ছিল লোয়ভেনব্রয়। সেইটা আবার মোটামুটি বিশ্ববিখ্যাত। বেশী বিখ্যাত জিনিস আমাগো পোষায় না। লোয়ভেনব্রয়ের বীয়ার গার্টেনের এন্ট্রি দিয়া ঢুইকা এক্সিট দিয়া বাইর হইলাম। কিংবা ভাইসভার্সা, বুঝলাম না। তবে ঘটনা হৈল যে দাঁড়ানোর জাগা নাই। আর ভিড়টা মোটেও সুস্থির না। আমরা ছাড়া সবাই মোটামুটি লাইনে আইসা পড়ছে। ভিড়ের ঠেলায় এক্কেরে মেলার শেষ মাথায় বাইর হইয়া কোনমতে চাইরজন একজাগা হৈলাম। ক্যামনে কি? হালার মাল খাইতে আইসা জাগা পাই না...এইটা এক্টা কথা? কথা তো না। কিন্তু যাই কৈ? তাঁবুতে জাগা পাওয়া সম্ভবও না ইচ্ছাও নাই। বীয়ার গার্টেনগুলাতে দাঁড়ানোর জাগাও নাই। তাইলে? মনে ক্ষীণ আশঙ্কা তৈরী হৈলো, তবে কি এই পূণ্যতীর্থ থিকা মালবঞ্চিতভুদাইচিত্তে বিদায় নিতে হৈবো? আমার জাবি'র এক বন্ধুর কথা মনে পড়লো। সে নাকি একবার শিবপূজার সময় বেশ স্নানটান কৈরা ধবধবা ধূতিপাঞ্জাবী পৈড়া সন্ধ্যার সময় বাবাজ্যাঠামশাইকাকাদাদাগো লগে মন্দিরে গিয়া বইছে। যথাসময়ে বাবার প্রসাদে মুখাগ্নি হৈলো। কিন্তু কল্কির কক্ষপথ আমার বন্ধুরে মিস কৈরা গেলোগা। একবার না পর পর চাইরবার। শেষে গুরুজনদের উপর বীতশ্রুদ্ধ হৈয়া আমার বন্ধু শ্রীমঙ্গলবাজার থিকা পোটলা কিনা ম্লেচ্ছ কায়দায় খোলে ভইরা খাইছিল। আমরাও কি তাইলে কল্কি পামু না?

হাসিব নানান হিসাব নিকাশ কৈরা কৈল সেই ক্ষেত্রে আমাগো আবার মেলার প্রধাণ গেটের কাছাকাছি গিয়া দেখতে হৈবো আউগুস্টিনারের বীয়ার গার্টেনে জাগা আছে কি না। তবে এইবার এক্টা আলাদা তড়িকা। সেইটা হৈল যারা বইসা আছে তাগো কেউরে দিয়া অর্ডার দেওয়াইতে হইবো। কারণ ফেসিবাদী ওয়েটাররা নাকি বেঞ্চে পাছাপাতা নাই এমন কাউরে সার্ভ করে না। আরো জানা গেলো গতকালকে তিনি এইখানেই আসছিলেন। সাথে বেগানা সফেদ জেনানা। এবং তারাও ঐ বইসা থাকাদের কৃপাতেই প্রসাদ পাইছেন। যাইহোক একপর্যায়ে ঢুকা গেলো সেই বীয়ার গার্টেনে। আউগুস্টিনার এমনিতে বীয়ার হিসাবে খুবই ভালো। যদিও মিউনিখের বাইরে তেমন পাওয়া যায় না। গতবার কাসেলের আসার সময় তীরুদা পুরা এককেইজ নিয়া আসছিলেন। সেই কেইজটা শেষ হইছে মিউনিখ যাওয়ার তিনদিন আগে। ভিতরে যে ঢুকবো সেই জায়গা পাইতেও গেলোগা বিশ মিনিটের মতো। আমার আশঙ্কা ছিল ফট কইরা রোইদ পৈড়া গেলে মাসবীয়ার (এক লিটারের গ্লাসরে মাস কয়) খাইয়া সঠিক চাম পাওয়া যাইবো কি না। লগে সবুজ বাঘের কথাও মনে পড়লো। আবর্ত ভালো হোক বা না হোক বোতলে যদি মদ থাইকা থাকে টাল তাতে হৈতেই হৈবো। তা সে পরিবেশন বা পরিবেশ যাই হোক না ক্যান।

বীয়ার গার্টেনে ঢুইকা হাতের ডাইনের প্রথম বেঞ্চিতে ড্রিন্ডলার পড়া এক্টা সেরকম বালিকা। ভাবভঙ্গীতে বুঝা যাইতেছে কম্পক্ষে দুইটা মাস এরমধ্যেই গিলছে। তারসাথে আরো পোলাপান। কারো বয়সই চোখের আন্দাজে বিশের উপর মনে হৈলো না। যাইহোক ডাইনদিকের বেঞ্চে সর্ববামে বসা বালিকাই আলোচ্য। মনির হোসেন তারে নানান ধুনফুন বুঝাইয়া শেষেমেশ রাজি করলো। যদিও এর মধ্যে ফেসিবাদী ওয়েটার বার দুয়েক আইসা ঘুইরা গেছেগা। তিনবারের বার তিনটা বীয়ার পাওয়া গেলো। হাসিব জানাইলো সে খাইবো না। তার যুক্তি সবাই টাল হৈলে শেষে বাড়িজ্জাওনের রাস্তা পাওঞ্জাইবো না। যাই হোক ঠ্যাঙ্গের উপর খাড়াইয়াই প্রথম চুমুক দিলাম। সেই বালিকাসহ চাইরজনে একলগে গ্লাস বাড়ি দিয়া কৈলাম, আউফ দ্দীণূ ! বালিকা জিগায় দ্দীণূ কে? বলা হৈলো সে আমাগো এক হতভাগ্য বন্ধু। ফেসিবাদী বস ছুটি না দেওয়ায় সে আসতারে নাই। এরপর তার লগে আরো দুই তিনবার বাড়ি দিয়া দ্দীণূর সাস্থ্যকামনা করা গেলো। এরমধ্যে বামদিকে আস্তে আস্তে কিছু জাগা পাওয়া গেলো। পাশের এক মহিলা শুরু করলো খাজুইরা আলাপ। সে আইছে সকাল দশটায়। লগে তার খসম। সেই সকাল থিকা শুরু করছে এখনো চলতাছে। তার খসমরে দেখা গেলো একটু পর পর টেবিলের তলে যায়গা। সে বার দুইতিন কীজানিএক্টা কৈতে চাইলো আমারে। পরিস্কার বুঝা গেলো না। এরমধ্যে দেখি মনির হোসেন আধাগ্লাসেই মোটামুটি লাইনে। সে তার পার্শ্ববর্তিনীর লগে জমাইয়া বইছে। ভদ্রমহিলার বয়স ভালৈ হৈবো। তবে এন্থুসিয়াস্টিক। মনির হোসেন তারে আমাগো অনুপস্থিত বন্ধুর নানান দাঁস্তাঁয়ে শুনায়। এইকান সেইকান থিকা সেইটা পুরা টেবিলে তার্পর টেবিলান্তরে যায়গা। এক একবার বড়ো চুমুক দিতে গেলেই গিলাসে সমবেত বাড়ি "আউফ দ্দীণূ !"। এক পর্যায়ে সেইটা প্রায় পুরা বীয়ার গার্টেনে ছড়াইয়া গেলোগা। হাসিবও এক্টা গিলাস নিয়া দিলো মালে বাড়ি ..... প্রায় অর্ধশতাধিক মালখোর কোরাসে আওয়াজ দেয়....আউফ দ্দীণূ !

৮.

দুই নম্বর মাস শেষ কইরা বুঝলাম আরো আউগাইলে খবরাছে। মানে তখন বাড়ি যাইতে তৃতীয় না পঞ্চম-ষষ্ঠব্যক্তির হেল্প লাগবো। এরকম ব্যক্তি তখন বাঘের চোখের মতোন। মেজাজটেজাজ বেশ ভাল্লাগতেছে। ওদিকে আকাশে গোধুলির আভাস। আরেকদিকে দুইলিটার বীয়ার জনিত প্রক্ষালনচাপ। সুতরাং রংমহল থিকা বাইর হৈতে হৈলো। বাইরে যাইতে গিয়া দেখি চাপের মাত্রা পদক্ষেপের ব্যাস্তানুপাতে বাড়ে। মেইন গেটের কাছে আইসা পাওয়া গেলো গণশৌচাগার। তার পরিস্থিতিও সেরকম। অতিবৃহৎ কিউ। জনতাব্যাঙ্কে নব্বুই দশকের দ্বিতীয়ার্ধে ইলেকট্রিক বিলের লাইনের মতন। যাই হোক কেমনে জানি অপেক্ষা করতে পারলাম। তারপর মোটামুটি ক্লিয়ার হৈয়া আইসা দেখি মনির হোসেনের সাথে কী নিয়া জানি হিমুর লাগছে। এইটা নতুন কিছু না। সুতরাং ধীরেসুস্থে টেরিযিয়ানভীযে থিকা বাইর হৈলাম।

বাইর হইয়া খোলা আকাশের নিচে খোলা বাতাসে স্টেশন পর্যন্ত অনেকটা হাঁটা পথ। অনেক পরিকল্পনা হৈলো। রীতিমতো মারাত্মক সব বিজনেস আইডিয়া। বাংলাদেশের বোকা ব্যবসায়ীরা হয়তো কোনদিনই সেগুলা খাইবো না। সেইটারো একটা সমাধান বাইর করা হৈলো। সবার আগে এক্টা জ্যাকপট জিতা লাগবো। তারপর সেইটার অর্ধেক দিতে হৈবো প্রয়োজনমতো কয়েকজন মন্ত্রীআমলারে পাদার্কি (রুশ ভাষায় বিশেষ উপহার দেঁতো হাসি) হিসাবে। বাকি অর্ধেকে একটা বিরাট ব্রুইয়ারী। ব্র্যান্ডের নাম হৈবো আড়িয়াল খাঁ। মানস চউক্ষে দেখলাম পাবলিক ছাপড়া হোটেলে ঢুইকা কৈতাছে, ঐ কালু একটা আড়িয়াল খাঁ আর দুইটা কিমাপুরী ........

এর মধ্যে হাসিব না হিমু কে কইলো মনে নাই, যে আমাগো দেশে বীয়ারের কারখানা বানানোর মতো উদ্বৃত্ত গম নাই। আমি চিন্তাভাবনা কৈরা কৈলাম তাইলে আমাগো যেইটা টিপিক্যাল সেই বাবার প্রসাদরেই টার্গেট করা হোক। টেরিযিয়ানভীযের মতো মহাস্থানগড়ের গাঁজা উৎসবের মাঠটারেই নেওয়া যাইতেরে। বঙ্গদেশের থিকা ভালো গঞ্জিকাতো আর কোথাও নাই। সাধুরা আর বিদেশীরা পাল্লা দিয়া টানবো। হোটেলগুলি থাকবো ঐ মাঠ থিকা কম্পক্ষে দশ কিলোমিটার দূরে। তাইলে শুধু হোটেল ভাড়া না ট্যাক্সি ভাড়াবাবদও সরকার অনেকগুলা রেমিট্যান্স পাইবো। কিন্তু এইসব ভাবনা কি তাগো আছে? নাই।

কানে তাঁদের লুহার তালা .......

1 comment:

Aero River said...

ইস্ কি সচল জীবন আপনার। লেখাটা খন্ড খন্ড করে দিলে বোধহয়.... কি হতো? নাকি কিছুই হতো না????