প্রবাসীদের বিশেষ করে পশ্চিমের প্রবাসী বাঙ্গালীরা, নিদেনপক্ষে তাঁদের একাংশ ভয়াবহ সাংস্কৃতিক সঙ্কটে পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন। উত্তর ভারতের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের কাছে ধীরগতির বিষক্রিয়ায় আত্মসমর্পন করে ফেলছেন তাঁরা। এই ব্যাপারে আমার মতে মিডিয়াকে একতরফা দায়ী করা যাবে না। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের জায়গাটা মনে হয় সব থেকে জরুরি। ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের সাথে ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে হিন্দি বা উর্দুকে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা বানিয়ে ফেলছে কিছু বাঙ্গালী এবং এদের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ভারতীয় বাঙ্গালীদের এক্ষেত্রে হয়তো অতটা দায়ী করা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের বাঙ্গালীদের জন্য ব্যাপারটা একভাবে সাংস্কৃতিক আত্মহত্যার পর্যায়ে পড়ে।
কয়েক বছর আগে আমরা মানে কাসেলের বাংলাদেশী ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নতুন কোন ছাত্র এলেই প্রথম দফা তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হবে যে কোন অবস্থাতেই যেন ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের সাথে ইংরেজী বা জার্মান ছাড়া অন্যকোন ভাষায় যেন কথা না বলা হয়। শুধুমাত্র পশ্চিবঙ্গের বাঙ্গালীদের সাথে গায়ে পড়ে হলেও বাংলা বলা যেতে পারে। কিন্তু দিল্লী-মুম্বাই-পিণ্ডি-লাহোরের লোকজনের সাথে কোন অবস্থাতেই ম্লেচ্ছভাষার বাইরে যাওয়া চলবে না। কিন্তু ছাত্ররা আর কয় জন? বিপুল অধিকাংশ বাংলাদেশী শ্রমিক, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তদের কাছে আমরা পৌঁছতে পারিনি।
আজ আমার পরিচিত এক সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙ্গালী "দিওয়ালী" উদযাপন করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম বাঙ্গালীর কালী পূজার আবেদন তো দীওয়ালী বা দীপাবলির থেকে অনেক বেশী। তাহলে কালী পূজা কথাটা উল্লেখ করে দাওয়াত দিলে সমস্যা কোথায়? বলে দিওয়ালীর একটা বৈশ্বিক পরিচয় আছে। কালীপূজা তো শুধু বাঙ্গালীর! তো শুধু বাঙ্গালীর হলে সমস্যা কী? তুমি তো বাঙ্গালী! বলে কালীপূজা ধলাদের বুঝিয়ে বলার অনেক ঝামেলা ইত্যাদি। আমি চুপ করে যাই। আসল কথা হচ্ছে মিডিয়া মারফত লোকে দিওয়ালীটা চেনে। কালীপূজা বলতে গেলেই মিডিয়ার উপর খোদগারী করতে হবে।
মনটা খানিক খারাপ হলো। গতকাল দুপুরে ঠিক করেছিলাম প্রদীপ জ্বলবার পরে চলে যাবো ট্রটস্কির উপর একটা সেমিনারে। পরে সন্ধ্যার কী ভেবে ভেড়ার গোস্ত কিনে এনে ম্যারিনেট করে ফেললাম। অচ্ছুৎ বলাইরা চলে যাবার পর থেকে কাসেলে তো সমাবেশটমাবেশের তেমন আর উছিলা পাওয়া যায় না। সেই ভেড়া দিয়ে কাচ্চি ঘন্টাখানেক আগে ওভেনে ঢুকিয়ে এলাম। খেতে কেমন হবে জানিনা। কালী পূজার টিপিক্যাল লুচি আর পাঁঠার মাংস ত আর ম্লেচ্ছদের দেশে হবে না। তাই ভেড়ার কাচ্চি বিরিয়ানীই সই। মা কালী নিশ্চয়ই ক্ষমা করবেন। পাঁঠা হোক ভেড়া হোক আসল কথা হচ্ছে নিহত আমীষ ব্যা করে কিনা।
আস্তা আস্তে প্রদীপ জ্বলছে এক এক করে। আমি মিস করছি মুণ্ডুমালীনীর রক্তজ্বিভটাকে।
জগদম্বা ! রাখিস মা রসেবশে !
No comments:
Post a Comment