১৯৯০ থেকে বছরগুলির গতি একটু একটু করে বাড়তে থাকে। এরকম রিলেরেসে পার হয়ে গেল মিলেনিয়াম। কিন্তু ২০০০ থেকে ২০১০ দোবরের চ্যাঙ দেখিয়ে চলে গেল ব্যোম্ফাটভুস্। এই ভেলকীটাই ভাবছিলাম নববর্ষের সকালে লেপের ভিতর চিতকাইত হয়ে। চোখবুজে ভাবতে চেষ্টা করলাম। হ্যা মীর মশাররফ হোসেন হল-রাজ্জাকের হোটেল-সমাজবিজ্ঞান ভবন- ট্রান্সপোর্ট-চৌরঙ্গী-প্রান্তিক-বিশ মাইল-কলা ভবন-আল বেরুনী-সালাম বরকত-কামাল উদ্দিন-ভাসানী-সংসপ্তক-জিমনাসিয়াম-বোটানিক্যাল- এক পাল শেয়ালের ভো দৌড়-দুই নম্বর গেট .... তারপর সের্গেই বুবকার উর্ধ্বতন প্রপিতামহের পোলভোল্টে প্রয়াত জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের নিহত অস্ত্রাগার কাসেল শহরের এক্কেবারে মাঝখানে। আস্ত একটা দশক পার করে দিলাম মুভি ক্যামেরার চলন্ত পাটাতনে। ঘটনার সংখ্যা অনেক। তবে কোথাও যেন মনোটোনাস লাগছিল। হতে পারে জীবন থেকে দশটা বছর ঝরে পড়ায়। অথবা সময়টা হয়তো সত্যিই একঘেয়ে ছিল। অথবা হয়তো চিরকালই এরকম ছিল এতকাল খিয়াল করে পেছনে তাকানো হয় নাই। আমার কেমন মনে হয় আধুনিক মানুষ জীবনের বেড়ে উঠবার একগুচ্ছ বছরকে নিজের সময় বলে ধরে নেয়। প্রিমিটিভ অ্যাকুমুলেশান যা হবার সেই সময়টায় ঘটে। বাকি জীবনের প্রাপ্তিঅপ্রাপ্তি ঐ একগুচ্ছ সময়ের বিন্যাস-সমাবেশে কাটে। এটা সবার ক্ষেত্রে সত্য নাও হতে পারে। আমার ক্ষেত্রেও হয়তো না। হতে পারে এটা স্রোতের মাঝখানে ঝাঁপ দেবার মুহুর্তের আছর'এ একধরণের ভাসমান সংশয়।
এইসব ধুনফুন ভাবনায় গতরাতের বাসি তেহারি সাঁটাই। বীয়ারের মগে বেশী দুধচিনি দিয়ে কফি খাই। ক্যালেণ্ডারটা বদলে ২০১১ করি। সচল খুলে দেখি গতরাতে লগ অফ না করেই ঘুম দিয়েছিলাম। এদিক ওদিক কিছু পোস্টে ঢুঁ মেরে ব্লগ লিখুনে ক্লিক করে লাইন কয়েক টাইপ করে ড্রাফট করে রেখে দেই। বাইরে মাইনাস দুই। মোটামুটি অ্যাস্ট্রোনট সেজে আশেপাশের তুষারাচ্ছাদিত পথে কয়েক চক্কর ঘুরলাম। চতুর্থ চক্করের সময় মনে হলো এইসব অতীত খাউজানো মেলানকলি কপচানোর জন্যই বছর দুই ধরে সচলে আমার পোস্টগুলি সুপারফ্লপ। অথচ একদা হাতিশালে কত্তো গণ্ডার ছিল আর ঘোড়াশালে জলহস্তি! গিরা সমান তুষার মাড়িয়ে ঘরে ফিরি। ড্রাফট খুলে দীর্ঘশ্বাসগুলি ঘ্যাচাং করি। ভাবতে বসি বিগত দশককে নতুন করে। দেখলাম সুস্বাদু যা কিছু তার সবটাই কাজের কাজ বাদ দিয়ে বাকি সব কিছুর মধ্যে। সেই বাকি সব কিছুর তালিকাও হ্রস্ব। ফিলিম দেখা, গান শোনা আর ব্লগে খুটুর খুটুর ধুনফুন টাইপ করা।
২০০৩ থেকে প্রবাসী। হাই স্পীড ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রচুর ফিলিম দেখা গান শোনা হয়ে গেছে। নতুন সিনেমার তুলনায় নতুন গান শোনা হয়েছে অনেক কম। সিনেমার তালিকাতেও পুরনো সিনেমা নতুন করে দেখার তালিকা বড়। পুরনো ছবির মধ্যে সব চাইতে বেশীবার দেখেছি গানস অফ নাভারুন, গুড ব্যাড আগলী, ফুল মেটাল জ্যাকেট, কামিং টু আমেরিকা, বেভারলি হিলস কপ, গন উইথ দ্য উইণ্ড, টু কিল আ মকিং বার্ড, ব্যাটেলশীপ পটেমকিন, জাজমেন্ট অফ ন্যুরেনবার্গ, আউট ল জোসীওয়েলস, দ্য আনটাচেবলস্, ওয়ানস আপন এ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট, হিচককের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে করা প্রায় সব ছবি, মডার্ন টাইমস, অরণ্যের দিনরাত্রি সহ সত্যজিত রায়ের সবছবি, যুক্তি তক্কো আর গপপো, মৃণাল সেনের খারিজ-আকালের সন্ধানে-কোলকাতা ৭১, জীবন থেকে নেয়া, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, তাহাদের কথা। আরো আছে নাম মনে পড়ছে না চট করে। গানের তালিকাতে পুরনোদের সংখ্যাগরিষ্টতা তিন-চতুর্থাশের বেশী। ঐ তালিকা দিতে গেলে গোটা দুই কিড়মিড় রাক্ষস সাইজ পোস্ট লাগবে। অতি সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রাচ্যপ্রতিচ্যের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আর সুবিনয় রায়-দেবব্রত বিশ্বাসের রবীন্দ্রসঙ্গীত বাদে পুরো সময়টাই গেছে রক অ্যান্ড রোলের প্রত্যুষ (১৯৫৩-১৯৫৭) আর সাইকেডেলিক যূগ থেকে ডায়ার স্ট্রেইটসের অন এভরি স্ট্রিট (১৯৯১) নিয়ে। অর্থাৎ মগজের খাদ্যে সমসাময়িক মশলাপাতির উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি ছিল।
শূন্যদশকের শুরুর বেশ খানিকটা সময় কেটেছে গোয়থে ইন্সটিটিউটে। সেখানেই জার্মান সিনেমায় হাতে খড়ি। তবে খড়ি দিয়ে খুব বেশী কিছু লেখা হয় নাই। মোটামুটি গোয়থে'র লাইব্রেরীর কালেকশানের কয়েকটা ছবিই ঘুরে ফিরে দেখা হয়েছে। তার মধ্যে বুডেনব্রুকস (১৯৭৮), লটে ইন ভাইমার, ডেয়ার কাবিনেট ড. ক্যালগেরি, মেট্রোপলিস, লোলা রেন্ট, ডেয়ার টোড ইন ভেনেডিগ, ফাউস্ট (১৯২০), ক্লাউন, ডী ব্লেখট্রমেল আর এডগার রাইৎসের হাইমাট সিরিজের ২য় খণ্ড ডী ৎসোয়াইটে হাইমাটের ১৩ পর্বের কথা মনে পড়ছে। হাইমাটের প্রথম খণ্ড ডী হাইমাট আর তৃতীয় খণ্ড হাইমাট দ্রাই তখন গোয়থের লাইব্রেরীতে ছিলো না। এছাড়া ওখানে ফিল্ম ফেস্টিভাল লেগেই থাকতো। সেখানেও দেখতাম অনেক কিছু। গুড বাই লেনিন, ইম যূলি, ডী ফেয়ারভান্ডলুঙ এগুলি মনে পড়ছে। জার্মানীতে আসার পরে টরেন্টের কল্যাণে ইংরেজী আর জার্মান সাব টাইটেলে দেখা হয়ে গেছে গোদার, আন্তোনিওনি, বেত্রোলু্চ্চি, ফেলিনি আর ইঙ্গমার বার্গম্যানের একগুচ্ছ ছবি। টরেন্টের কল্যাণে নতুন করে আইজেনস্টাইনের সব ছবিও দেখা হয়েছে। তারাকোভস্কির ইভানস চাইল্ডহুড ছাড়া আর কিছু পাই নাই নেটে তখন। জার্মানীতে হলে গিয়ে দেখা ফরাসী ছবি মাত্র দুটি। কম্বিয়া তু মে'ম আর লা ভি অন রোয। হিসাব মতো আরো অনেক ফরাসী ছবি দেখা উচিত ছিল। কিন্তু আমার কোন কিছুই হিসাব মোতাবেক হয় না।
শূন্যদশকে মুম্বাইএর ছবি দেখা হয়েছে সব থেকে কম। একদম শুরুতে দিল চাহতা হ্যায়, কাঁটে ভালো লেগেছিল। এর বহুকাল পরে রঙ দে বাসন্তি আর থ্রী ইডিয়টস্ বাদে আর তেমন কিছু দেখা হয় নাই। খানিকটা করে দেখেছি কাল হো না হো জাতীয় এটা সেটা কিন্তু মনে থাকার মতো না। সেই নব্বই দশকের শেষে জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি হবার পর থেকে কেন যেনো হিন্দী ছবির প্রতি আকর্ষণটা চলে গিয়েছিলো। সম্ভবত আশির দশকের শেষ থেকে ১৯৯২-৯৩ পর্যন্ত অতিরিক্ত দেখবার কারণে। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ পর্যন্ত দেখবার মতো জিনিস বলতে গোবিন্দ'র কিছু ঝাকানাকা গান। এর বাইরে তেমন কিছু ভাল্লাগতো না।
আমাদের সময়কার কিছু মধ্যবিত্তের মতো বাংলাছবি বলতে শুধু তথাকথিত আর্ট ফিলিম বোঝার বাতিক আমারো ছিলো। সম্ভবত এখনো আছে। তবুও গত কয়েক বছরে বেশ কিছু তথাকথিত বানিজ্যিক ছবি দেখা হয়ে গেছে। টাইম্পাসের দোহাই দিয়ে লাভ নাই। গণিতের হিসাবে দেখলে যুক্তি তক্কো আর গপপো দেখলেও টাইম্পাস, চ্যালেঞ্জ নিবিনা শালা দেখলেও টাইম্পাস। তারপরেও বলবো মুখে স্বাদ কিঞ্চিৎ বেশী পাওয়ায় ঐ তথাকথিত বিকল্পধারা'র ছবিই বেশী দেখা হয়েছে। এর মধ্যে সেভাবে ভালো লাগার মতো ছবি সংখ্যায় যথারীতি কম। সেভাবে মানে কীভাবে সেটা ব্যাখ্যা করা আমার জন্য কঠিণ। কারণ ফিলিমের টেকনিক্যাল ব্যাপারস্যাপার কিচ্ছু বুঝি না। আমি বলতে পারেন কেবল চোখের আর মগজের স্বাদের উপর ভর করে দর্শকের দায়িত্বটা পালন করতে পারি।
২০০৩-০৪ এ ঘরে ইন্টার নেট না থাকায় বাংলা ছবি দেখা হয় নাই। ২০০৫ এর শেষে ইন্টারনেটের কল্যাণে দেখে ফেললাম গৌতম ঘোষের দেখা আর আবার অরণ্যে। দুটোর একটাও ভাল্লাগে নাই। পার, অন্তর্জলী যাত্রা, পদ্মা নদীর মাঝি থেকে গৌতম ঘোষের যে ভাবমূর্তি তৈরী হয়েছিল আমার কাছে সেগুলো একভাবে ভেসে গেলো। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের উত্তরা দেখেছিলাম জাবি'র একেবারে শেষ সময়ে ২০০১ সালে। এর পরে ২০০৫ সালে দেখলাম মন্দ মেয়ের উপাখ্যান আর ২০০৯ এ কালপুরুষ। অনেকের থেকে ভালো হলেও নিম অন্নপূর্ণা, চরাচর, তাহাদের কথা বা লাল দরজার বুদ্ধবাবুকে পাওয়া গেল না। মন্দ মেয়ের উপাখ্যান'র শুধু ঐ পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের "ও লাগর লাগর হে" গানের জায়গাটা আর তাপস পালের কিছু অংশ ভালো লাগলো। আর কালপুরুষকে মনে হচ্ছিল অসম্ভব শ্লথ। মনে হচ্ছিল সিনেমাটা একটা হাতি। আমাকে শেকলে বেঁধে টানছে আর আমি "সবাই বলে মানুষ বাড়ে আমি বলি কমে রে" বলে ডুকরে কাঁদছি। বুদ্ধবাবুর নজরে এই পোস্ট পড়ে গেলে তিনি নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবেন। নির্বোধের প্রতিক্রিয়ায় শিল্পের কী আসে যায়?
এরমধ্যে ২০০৪ এ এক বাংলাদেশী সতীর্থের বদৌলতে দেখা হলো ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালি। পুরা সেরম লাগল। ছবিটা না। ঐশ্বর্য্যকে। তারপর দুষ্টু শিষ্ট যে কারণেই হোক টুকটুক করে একেবারে আবহমান পর্যন্ত ঋতুপর্ণ ঘোষের সবছবি দেখে ফেলি। শিষ্ট কারণে ভাল্লাগে শুধু হিরের আংটি, শুভ মহরৎ, রেইনকোট আর দ্য লাস্ট লীয়ার। দুষ্টু কারণে হিরের আংটি বাদে সবগুলো। কৈফিয়ত দিতারুম না। শুধু চন্দ্রিল ভট্ট'কে কোড করতে পারবো,
টোনাটুনি দুই ভাই
দ্যাখো কোনাকুনি বনসাই
শুরুর খানিক মৃণাল-মানিক
অন্তে সুভাষ ঘাই
বাংলাদেশের কয়েকটা ছবি ভাল্লাগছে। মাটির ময়না আর অন্তর্যাত্রা পুরা ভালো লেগেছে। উত্তরের খেপ আর নিরন্তর লেগেছে মোটামুটি। ব্যাচলার আর থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার (পুরা দেখি নাই) যা তা লেগেছে। মনপুরা দেখে হাই তুলছি। নব্বই দশকে চাকা, একাত্তরের যীশু, ইতিহাস কন্যা, দুখাই'র মতো ছবি হয়েছে। এই এক দশকে নিশ্চয়ই আরো ছবিটবি হয়েছে বা হচ্ছে। সেখানে নিশ্চয়ই আমার মতো দর্শকের জন্য একটা দুইটা ভালো কিছু আছে বা থাকবে। না থাকলে কিছু করার নাই।
ঋতুপর্ণ ঘরানার কাছাকাছি আরো কয়েকটা ছবি দেখলাম। তার মধ্যে অন্তহীন প্রথমটা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছি। পরে বুঝলাম সব কৃতিত্ব রাধিকা আপ্টের। একটানে দেখলাম শিকারী, চিতা, চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা, বর আসবে এক্ষুনি, পরান যায় জ্বলিয়ারে, বঙ কানেকশান, ক্রস কানেকশান, ম্যাডলী বাঙালী। বুঝলাম উত্তরাধুনিক নন্দনতত্ব প্রান্তিক সমাজদৃষ্টির দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে অনেকেই মেনে নিচ্ছেন। এটা ভালো। তবে ভালো মানে এই না যে সেটা আমারো ভালো লাগতে বাধ্য। এগুলির মধ্যে নানা কারণে ভালো লাগলো শুধু ম্যাডলী বাঙালী। সেই ভালো লাগাও আগের ভালো লাগাগুলির থেকে অন্যমাত্রার। প্রধাণ কারণ সম্ভবত এর আগে বাংলায় আর কোন আস্ত রক মুভি হয় নাই। ভালো লাগার তালিকায় জনপ্রিয় ছবির মধ্যে আমি বরং এমএলএ ফাটাকেষ্ট আর মিনিস্টার ফাটাকেষ্ট'কে কিছুটা এগিয়ে রাখবো। ওগুলার মধ্যে ডিজুস ভণ্ডামী নাই।
ভালো লাগার তালিকায় আরো এগিয়ে রাখবো এক মুঠো ছবি (সব কয়টা না এক নম্বরটা অর্থাৎ জন্মদিন আর তিন নম্বরটা মানে তপনবাবু), নিশিযাপন, পাতালঘর, কণি, ওয়ারিশ ইত্যাদিকে। তবে শূন্য দশকে আমার ফেভারিট ছবির শীর্ষে থাকবে সুমন মুখোপাধ্যায়ের হার্বার্ট আর চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের ওয়াই টু কে অথবা সেক্স ক্রমে আসিতেছে। এর মধ্যে হার্বার্ট দেখবার সুযোগ হয়েছে এই মাত্র সপ্তাহ দুই আগে। মনে হলো দেড় দশক পরে একটা ভালো ছবি দেখলাম। উপন্যাসটার অনেক নাম শুনেছি কিন্তু পড়া হয়ে ওঠে নাই। গত দশবারো দিন ধরে একা একা বিড়বিড় করছি, ক্যাটব্যাটওয়াটারডগফিশ। ওয়াই টু কে অথবা সেক্স ক্রমে আসিতেছে দেখেছিলাম ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের দ্বিতীয় সেমি ফাইনাল চলাকালীন সময়। প্রথমার্ধে আর দ্বিতীয়ার্ধের পঁয়ত্রিশ মিনিটেও গোল হলো না দেখে মোটামুটি নিশ্চিন্ত হয়ে শুরু করলাম। প্রথম দেখায় একটু ধাক্কা খেলাম। পুরো মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। ভাবলাম পেটে কিছু পড়ুক তারপর আবার দেখা যাবে। অতিরিক্ত সময়ের আর মিনিট তিন বাকি। আর গোল হবেনা ভেবে গেলাম ড্যোনার কাবাব কিনে আনতে। আসতে আসতে যা সর্বনাশ হবার হয়ে গেলো। ক্লিন্সম্যানের সেই চেহারা এখনো ভূলতে পারি না। টিভি বন্ধ করে ড্যোনার সাবাড় করে ছবিটা আবার দেখলাম খিয়াল করে। তারপর আবার দেখলাম। আবার দেখলাম। সব মিলিয়ে চার পাঁচবার তো হবেই। টাইটেল সং থেকে শুরু করে পুরাটাই ফাটাফাটি। দুর্দান্ত স্ক্রিপ্ট। কোথাও কোন বাড়তি মেদ নেই। এই ছবির একটা সংলাপ আমার কাছে শূন্য দশকের সেরা।
আমি পোস্টমর্ডানিজম জানি না... আমি শেফালীকে চাই..
হলিউডের ছবিও বলিউডের মত খুব একটা দেখা হয় নাই গত দশ বছরে। শুধু হ্যারী পটার দেখেছি সবগুলি, লর্ড অফ দ্য রিংস সবগুলি, শিকাগো, ডুপ্লিসিটি, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান, টার্মিনাল, ওশিয়ানস ইলেভেন/ টুয়েলভ, ল'জ অফ অ্যাট্রাকশান, মামা মিয়া, ইণ্ডিয়ানা জোন্স ৪, মোনালিসা স্মাইলস, ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস এই তো। মোটামুটি এগুলোই সাথে আরো দুয়েকটা হয়তো যোগ হবে। এর প্রায় সবই দেখেছি হলে গিয়ে। বেশীরভাগই দলে পড়ে।
জার্মানী আসার পর থেকে সমসাময়িক জার্মান ছবিও দেখা হয়েছে কিছু। একেবারেই অল্প কিছু। সেই ২০০৪ সাল থেকে ভুণ্ডার ফন বেয়ার্ন, ডেয়ার উন্টারগাঙ, আগনেস উন্ড যাইনে ব্রুইডার, এলেমেন্টার টাইলশেন, ডেয়ার বাডার মাইনহফ কম্প্লেক্স, এণ্ডডেকুং ডেয়ার কারিভুর্স্ট, আনোনুইমা, ১৯৩৬, বুডেনব্রুকস(২০০৮) ইত্যাদি। এগুলিও সব হলে গিয়ে দেখা। আরো বেশি কিছু দেখা উচিত ছিল। হয় নাই। কত কিছুই তো হয় নাই জীবনে। যষ্মীন দেশে যদাচার নিয়মে এখন জার্মান ছবি দেখেই অনেক বেশী স্বস্তি পাই। বাংলাছবির মতো জার্মান ছবিও একভাবে জীবনের অংশ হয়ে গেলো। মাঝে লো প্রোফাইলে চলে গেলো হলিউড আর বলিউড।
এই পুরো পোস্টটা নিজেই পড়লাম একবার। এটার মানে কী? একটা দশক ধরে একটা লোক মোটে এই কয়টা ফিলিম আর দেখেছে? আমি দেখেছি। কারণ বেশীর ভাগ সময়ই গেছে আশি আর নব্বই দশকে গণ্ডা গণ্ডাবার দেখা সেই সত্যজিত রায়, ঋত্বিক ঘটক আর মৃণাল সেন দেখে। হলিউডের যা দেখেছি সবই পুরনো। গান যা শুনেছি তাও পুরনো। ২০০৮ সালের অক্টোবরে বের হওয়া ব্ল্যাক আইস বাদে আর কোন নতুন ইংরেজী গানের অ্যালবাম আগ্রহ করে শোনা হয় নাই। বাকি যা শুনেছি সবই রাস্তাঘাটে ক্যাফেতে বা পাবে। নতুন দুনিয়া হয়তো আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমশ। আর গানবাজনা সিনেমা বা ব্লগিং এর বাইরে এই এক দশকের বাকি সালতামামি কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো লিখব। বা হয়ত কোনদিনই লিখবো না।
পুনশ্চ : গত দশকে হতাশ না করে অপরিবর্তিত এন্টারটেইনার আমার বিচারে মোটে একজনই। তিনি শচীন তেণ্ডুলকার। তিনি খেলেই চলেছেন। আরো চলবেন সেই বিশ্বাস থাকলো।এইসব ধুনফুন ভাবনায় গতরাতের বাসি তেহারি সাঁটাই। বীয়ারের মগে বেশী দুধচিনি দিয়ে কফি খাই। ক্যালেণ্ডারটা বদলে ২০১১ করি। সচল খুলে দেখি গতরাতে লগ অফ না করেই ঘুম দিয়েছিলাম। এদিক ওদিক কিছু পোস্টে ঢুঁ মেরে ব্লগ লিখুনে ক্লিক করে লাইন কয়েক টাইপ করে ড্রাফট করে রেখে দেই। বাইরে মাইনাস দুই। মোটামুটি অ্যাস্ট্রোনট সেজে আশেপাশের তুষারাচ্ছাদিত পথে কয়েক চক্কর ঘুরলাম। চতুর্থ চক্করের সময় মনে হলো এইসব অতীত খাউজানো মেলানকলি কপচানোর জন্যই বছর দুই ধরে সচলে আমার পোস্টগুলি সুপারফ্লপ। অথচ একদা হাতিশালে কত্তো গণ্ডার ছিল আর ঘোড়াশালে জলহস্তি! গিরা সমান তুষার মাড়িয়ে ঘরে ফিরি। ড্রাফট খুলে দীর্ঘশ্বাসগুলি ঘ্যাচাং করি। ভাবতে বসি বিগত দশককে নতুন করে। দেখলাম সুস্বাদু যা কিছু তার সবটাই কাজের কাজ বাদ দিয়ে বাকি সব কিছুর মধ্যে। সেই বাকি সব কিছুর তালিকাও হ্রস্ব। ফিলিম দেখা, গান শোনা আর ব্লগে খুটুর খুটুর ধুনফুন টাইপ করা।
২০০৩ থেকে প্রবাসী। হাই স্পীড ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রচুর ফিলিম দেখা গান শোনা হয়ে গেছে। নতুন সিনেমার তুলনায় নতুন গান শোনা হয়েছে অনেক কম। সিনেমার তালিকাতেও পুরনো সিনেমা নতুন করে দেখার তালিকা বড়। পুরনো ছবির মধ্যে সব চাইতে বেশীবার দেখেছি গানস অফ নাভারুন, গুড ব্যাড আগলী, ফুল মেটাল জ্যাকেট, কামিং টু আমেরিকা, বেভারলি হিলস কপ, গন উইথ দ্য উইণ্ড, টু কিল আ মকিং বার্ড, ব্যাটেলশীপ পটেমকিন, জাজমেন্ট অফ ন্যুরেনবার্গ, আউট ল জোসীওয়েলস, দ্য আনটাচেবলস্, ওয়ানস আপন এ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট, হিচককের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে করা প্রায় সব ছবি, মডার্ন টাইমস, অরণ্যের দিনরাত্রি সহ সত্যজিত রায়ের সবছবি, যুক্তি তক্কো আর গপপো, মৃণাল সেনের খারিজ-আকালের সন্ধানে-কোলকাতা ৭১, জীবন থেকে নেয়া, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, তাহাদের কথা। আরো আছে নাম মনে পড়ছে না চট করে। গানের তালিকাতে পুরনোদের সংখ্যাগরিষ্টতা তিন-চতুর্থাশের বেশী। ঐ তালিকা দিতে গেলে গোটা দুই কিড়মিড় রাক্ষস সাইজ পোস্ট লাগবে। অতি সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রাচ্যপ্রতিচ্যের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আর সুবিনয় রায়-দেবব্রত বিশ্বাসের রবীন্দ্রসঙ্গীত বাদে পুরো সময়টাই গেছে রক অ্যান্ড রোলের প্রত্যুষ (১৯৫৩-১৯৫৭) আর সাইকেডেলিক যূগ থেকে ডায়ার স্ট্রেইটসের অন এভরি স্ট্রিট (১৯৯১) নিয়ে। অর্থাৎ মগজের খাদ্যে সমসাময়িক মশলাপাতির উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি ছিল।
শূন্যদশকের শুরুর বেশ খানিকটা সময় কেটেছে গোয়থে ইন্সটিটিউটে। সেখানেই জার্মান সিনেমায় হাতে খড়ি। তবে খড়ি দিয়ে খুব বেশী কিছু লেখা হয় নাই। মোটামুটি গোয়থে'র লাইব্রেরীর কালেকশানের কয়েকটা ছবিই ঘুরে ফিরে দেখা হয়েছে। তার মধ্যে বুডেনব্রুকস (১৯৭৮), লটে ইন ভাইমার, ডেয়ার কাবিনেট ড. ক্যালগেরি, মেট্রোপলিস, লোলা রেন্ট, ডেয়ার টোড ইন ভেনেডিগ, ফাউস্ট (১৯২০), ক্লাউন, ডী ব্লেখট্রমেল আর এডগার রাইৎসের হাইমাট সিরিজের ২য় খণ্ড ডী ৎসোয়াইটে হাইমাটের ১৩ পর্বের কথা মনে পড়ছে। হাইমাটের প্রথম খণ্ড ডী হাইমাট আর তৃতীয় খণ্ড হাইমাট দ্রাই তখন গোয়থের লাইব্রেরীতে ছিলো না। এছাড়া ওখানে ফিল্ম ফেস্টিভাল লেগেই থাকতো। সেখানেও দেখতাম অনেক কিছু। গুড বাই লেনিন, ইম যূলি, ডী ফেয়ারভান্ডলুঙ এগুলি মনে পড়ছে। জার্মানীতে আসার পরে টরেন্টের কল্যাণে ইংরেজী আর জার্মান সাব টাইটেলে দেখা হয়ে গেছে গোদার, আন্তোনিওনি, বেত্রোলু্চ্চি, ফেলিনি আর ইঙ্গমার বার্গম্যানের একগুচ্ছ ছবি। টরেন্টের কল্যাণে নতুন করে আইজেনস্টাইনের সব ছবিও দেখা হয়েছে। তারাকোভস্কির ইভানস চাইল্ডহুড ছাড়া আর কিছু পাই নাই নেটে তখন। জার্মানীতে হলে গিয়ে দেখা ফরাসী ছবি মাত্র দুটি। কম্বিয়া তু মে'ম আর লা ভি অন রোয। হিসাব মতো আরো অনেক ফরাসী ছবি দেখা উচিত ছিল। কিন্তু আমার কোন কিছুই হিসাব মোতাবেক হয় না।
শূন্যদশকে মুম্বাইএর ছবি দেখা হয়েছে সব থেকে কম। একদম শুরুতে দিল চাহতা হ্যায়, কাঁটে ভালো লেগেছিল। এর বহুকাল পরে রঙ দে বাসন্তি আর থ্রী ইডিয়টস্ বাদে আর তেমন কিছু দেখা হয় নাই। খানিকটা করে দেখেছি কাল হো না হো জাতীয় এটা সেটা কিন্তু মনে থাকার মতো না। সেই নব্বই দশকের শেষে জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি হবার পর থেকে কেন যেনো হিন্দী ছবির প্রতি আকর্ষণটা চলে গিয়েছিলো। সম্ভবত আশির দশকের শেষ থেকে ১৯৯২-৯৩ পর্যন্ত অতিরিক্ত দেখবার কারণে। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ পর্যন্ত দেখবার মতো জিনিস বলতে গোবিন্দ'র কিছু ঝাকানাকা গান। এর বাইরে তেমন কিছু ভাল্লাগতো না।
আমাদের সময়কার কিছু মধ্যবিত্তের মতো বাংলাছবি বলতে শুধু তথাকথিত আর্ট ফিলিম বোঝার বাতিক আমারো ছিলো। সম্ভবত এখনো আছে। তবুও গত কয়েক বছরে বেশ কিছু তথাকথিত বানিজ্যিক ছবি দেখা হয়ে গেছে। টাইম্পাসের দোহাই দিয়ে লাভ নাই। গণিতের হিসাবে দেখলে যুক্তি তক্কো আর গপপো দেখলেও টাইম্পাস, চ্যালেঞ্জ নিবিনা শালা দেখলেও টাইম্পাস। তারপরেও বলবো মুখে স্বাদ কিঞ্চিৎ বেশী পাওয়ায় ঐ তথাকথিত বিকল্পধারা'র ছবিই বেশী দেখা হয়েছে। এর মধ্যে সেভাবে ভালো লাগার মতো ছবি সংখ্যায় যথারীতি কম। সেভাবে মানে কীভাবে সেটা ব্যাখ্যা করা আমার জন্য কঠিণ। কারণ ফিলিমের টেকনিক্যাল ব্যাপারস্যাপার কিচ্ছু বুঝি না। আমি বলতে পারেন কেবল চোখের আর মগজের স্বাদের উপর ভর করে দর্শকের দায়িত্বটা পালন করতে পারি।
২০০৩-০৪ এ ঘরে ইন্টার নেট না থাকায় বাংলা ছবি দেখা হয় নাই। ২০০৫ এর শেষে ইন্টারনেটের কল্যাণে দেখে ফেললাম গৌতম ঘোষের দেখা আর আবার অরণ্যে। দুটোর একটাও ভাল্লাগে নাই। পার, অন্তর্জলী যাত্রা, পদ্মা নদীর মাঝি থেকে গৌতম ঘোষের যে ভাবমূর্তি তৈরী হয়েছিল আমার কাছে সেগুলো একভাবে ভেসে গেলো। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের উত্তরা দেখেছিলাম জাবি'র একেবারে শেষ সময়ে ২০০১ সালে। এর পরে ২০০৫ সালে দেখলাম মন্দ মেয়ের উপাখ্যান আর ২০০৯ এ কালপুরুষ। অনেকের থেকে ভালো হলেও নিম অন্নপূর্ণা, চরাচর, তাহাদের কথা বা লাল দরজার বুদ্ধবাবুকে পাওয়া গেল না। মন্দ মেয়ের উপাখ্যান'র শুধু ঐ পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের "ও লাগর লাগর হে" গানের জায়গাটা আর তাপস পালের কিছু অংশ ভালো লাগলো। আর কালপুরুষকে মনে হচ্ছিল অসম্ভব শ্লথ। মনে হচ্ছিল সিনেমাটা একটা হাতি। আমাকে শেকলে বেঁধে টানছে আর আমি "সবাই বলে মানুষ বাড়ে আমি বলি কমে রে" বলে ডুকরে কাঁদছি। বুদ্ধবাবুর নজরে এই পোস্ট পড়ে গেলে তিনি নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবেন। নির্বোধের প্রতিক্রিয়ায় শিল্পের কী আসে যায়?
এরমধ্যে ২০০৪ এ এক বাংলাদেশী সতীর্থের বদৌলতে দেখা হলো ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালি। পুরা সেরম লাগল। ছবিটা না। ঐশ্বর্য্যকে। তারপর দুষ্টু শিষ্ট যে কারণেই হোক টুকটুক করে একেবারে আবহমান পর্যন্ত ঋতুপর্ণ ঘোষের সবছবি দেখে ফেলি। শিষ্ট কারণে ভাল্লাগে শুধু হিরের আংটি, শুভ মহরৎ, রেইনকোট আর দ্য লাস্ট লীয়ার। দুষ্টু কারণে হিরের আংটি বাদে সবগুলো। কৈফিয়ত দিতারুম না। শুধু চন্দ্রিল ভট্ট'কে কোড করতে পারবো,
টোনাটুনি দুই ভাই
দ্যাখো কোনাকুনি বনসাই
শুরুর খানিক মৃণাল-মানিক
অন্তে সুভাষ ঘাই
বাংলাদেশের কয়েকটা ছবি ভাল্লাগছে। মাটির ময়না আর অন্তর্যাত্রা পুরা ভালো লেগেছে। উত্তরের খেপ আর নিরন্তর লেগেছে মোটামুটি। ব্যাচলার আর থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার (পুরা দেখি নাই) যা তা লেগেছে। মনপুরা দেখে হাই তুলছি। নব্বই দশকে চাকা, একাত্তরের যীশু, ইতিহাস কন্যা, দুখাই'র মতো ছবি হয়েছে। এই এক দশকে নিশ্চয়ই আরো ছবিটবি হয়েছে বা হচ্ছে। সেখানে নিশ্চয়ই আমার মতো দর্শকের জন্য একটা দুইটা ভালো কিছু আছে বা থাকবে। না থাকলে কিছু করার নাই।
ঋতুপর্ণ ঘরানার কাছাকাছি আরো কয়েকটা ছবি দেখলাম। তার মধ্যে অন্তহীন প্রথমটা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছি। পরে বুঝলাম সব কৃতিত্ব রাধিকা আপ্টের। একটানে দেখলাম শিকারী, চিতা, চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা, বর আসবে এক্ষুনি, পরান যায় জ্বলিয়ারে, বঙ কানেকশান, ক্রস কানেকশান, ম্যাডলী বাঙালী। বুঝলাম উত্তরাধুনিক নন্দনতত্ব প্রান্তিক সমাজদৃষ্টির দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে অনেকেই মেনে নিচ্ছেন। এটা ভালো। তবে ভালো মানে এই না যে সেটা আমারো ভালো লাগতে বাধ্য। এগুলির মধ্যে নানা কারণে ভালো লাগলো শুধু ম্যাডলী বাঙালী। সেই ভালো লাগাও আগের ভালো লাগাগুলির থেকে অন্যমাত্রার। প্রধাণ কারণ সম্ভবত এর আগে বাংলায় আর কোন আস্ত রক মুভি হয় নাই। ভালো লাগার তালিকায় জনপ্রিয় ছবির মধ্যে আমি বরং এমএলএ ফাটাকেষ্ট আর মিনিস্টার ফাটাকেষ্ট'কে কিছুটা এগিয়ে রাখবো। ওগুলার মধ্যে ডিজুস ভণ্ডামী নাই।
ভালো লাগার তালিকায় আরো এগিয়ে রাখবো এক মুঠো ছবি (সব কয়টা না এক নম্বরটা অর্থাৎ জন্মদিন আর তিন নম্বরটা মানে তপনবাবু), নিশিযাপন, পাতালঘর, কণি, ওয়ারিশ ইত্যাদিকে। তবে শূন্য দশকে আমার ফেভারিট ছবির শীর্ষে থাকবে সুমন মুখোপাধ্যায়ের হার্বার্ট আর চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের ওয়াই টু কে অথবা সেক্স ক্রমে আসিতেছে। এর মধ্যে হার্বার্ট দেখবার সুযোগ হয়েছে এই মাত্র সপ্তাহ দুই আগে। মনে হলো দেড় দশক পরে একটা ভালো ছবি দেখলাম। উপন্যাসটার অনেক নাম শুনেছি কিন্তু পড়া হয়ে ওঠে নাই। গত দশবারো দিন ধরে একা একা বিড়বিড় করছি, ক্যাটব্যাটওয়াটারডগফিশ। ওয়াই টু কে অথবা সেক্স ক্রমে আসিতেছে দেখেছিলাম ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের দ্বিতীয় সেমি ফাইনাল চলাকালীন সময়। প্রথমার্ধে আর দ্বিতীয়ার্ধের পঁয়ত্রিশ মিনিটেও গোল হলো না দেখে মোটামুটি নিশ্চিন্ত হয়ে শুরু করলাম। প্রথম দেখায় একটু ধাক্কা খেলাম। পুরো মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। ভাবলাম পেটে কিছু পড়ুক তারপর আবার দেখা যাবে। অতিরিক্ত সময়ের আর মিনিট তিন বাকি। আর গোল হবেনা ভেবে গেলাম ড্যোনার কাবাব কিনে আনতে। আসতে আসতে যা সর্বনাশ হবার হয়ে গেলো। ক্লিন্সম্যানের সেই চেহারা এখনো ভূলতে পারি না। টিভি বন্ধ করে ড্যোনার সাবাড় করে ছবিটা আবার দেখলাম খিয়াল করে। তারপর আবার দেখলাম। আবার দেখলাম। সব মিলিয়ে চার পাঁচবার তো হবেই। টাইটেল সং থেকে শুরু করে পুরাটাই ফাটাফাটি। দুর্দান্ত স্ক্রিপ্ট। কোথাও কোন বাড়তি মেদ নেই। এই ছবির একটা সংলাপ আমার কাছে শূন্য দশকের সেরা।
আমি পোস্টমর্ডানিজম জানি না... আমি শেফালীকে চাই..
হলিউডের ছবিও বলিউডের মত খুব একটা দেখা হয় নাই গত দশ বছরে। শুধু হ্যারী পটার দেখেছি সবগুলি, লর্ড অফ দ্য রিংস সবগুলি, শিকাগো, ডুপ্লিসিটি, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান, টার্মিনাল, ওশিয়ানস ইলেভেন/ টুয়েলভ, ল'জ অফ অ্যাট্রাকশান, মামা মিয়া, ইণ্ডিয়ানা জোন্স ৪, মোনালিসা স্মাইলস, ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস এই তো। মোটামুটি এগুলোই সাথে আরো দুয়েকটা হয়তো যোগ হবে। এর প্রায় সবই দেখেছি হলে গিয়ে। বেশীরভাগই দলে পড়ে।
জার্মানী আসার পর থেকে সমসাময়িক জার্মান ছবিও দেখা হয়েছে কিছু। একেবারেই অল্প কিছু। সেই ২০০৪ সাল থেকে ভুণ্ডার ফন বেয়ার্ন, ডেয়ার উন্টারগাঙ, আগনেস উন্ড যাইনে ব্রুইডার, এলেমেন্টার টাইলশেন, ডেয়ার বাডার মাইনহফ কম্প্লেক্স, এণ্ডডেকুং ডেয়ার কারিভুর্স্ট, আনোনুইমা, ১৯৩৬, বুডেনব্রুকস(২০০৮) ইত্যাদি। এগুলিও সব হলে গিয়ে দেখা। আরো বেশি কিছু দেখা উচিত ছিল। হয় নাই। কত কিছুই তো হয় নাই জীবনে। যষ্মীন দেশে যদাচার নিয়মে এখন জার্মান ছবি দেখেই অনেক বেশী স্বস্তি পাই। বাংলাছবির মতো জার্মান ছবিও একভাবে জীবনের অংশ হয়ে গেলো। মাঝে লো প্রোফাইলে চলে গেলো হলিউড আর বলিউড।
এই পুরো পোস্টটা নিজেই পড়লাম একবার। এটার মানে কী? একটা দশক ধরে একটা লোক মোটে এই কয়টা ফিলিম আর দেখেছে? আমি দেখেছি। কারণ বেশীর ভাগ সময়ই গেছে আশি আর নব্বই দশকে গণ্ডা গণ্ডাবার দেখা সেই সত্যজিত রায়, ঋত্বিক ঘটক আর মৃণাল সেন দেখে। হলিউডের যা দেখেছি সবই পুরনো। গান যা শুনেছি তাও পুরনো। ২০০৮ সালের অক্টোবরে বের হওয়া ব্ল্যাক আইস বাদে আর কোন নতুন ইংরেজী গানের অ্যালবাম আগ্রহ করে শোনা হয় নাই। বাকি যা শুনেছি সবই রাস্তাঘাটে ক্যাফেতে বা পাবে। নতুন দুনিয়া হয়তো আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমশ। আর গানবাজনা সিনেমা বা ব্লগিং এর বাইরে এই এক দশকের বাকি সালতামামি কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো লিখব। বা হয়ত কোনদিনই লিখবো না।
|
No comments:
Post a Comment