কোন সময়ে কোন কথা বলতে হবে বা হবে না'র হিসাব করতে করতে সব থেকে জরুরি কথাগুলোই শেষ পর্যন্ত বলা হয়ে ওঠে না। ছাপা মাধ্যম/নেট মাধ্যম সব জায়গাতেই "সঠিক সময়" নির্ণয়ের গণিত নিয়ে প্রবল কামড়াকামড়ি চলে। যারা এই অতি বিতর্কিত "সঠিক সময়ের" তোয়াক্কা না করে নিজ বিচারে সঠিক কথাটা বলে ফেলতে পারেন, তাঁদের কথাগুলিই শেষ পর্যন্ত বলা হয়। অভিজিৎ সেরকমই একজন। সব থেকে বড় কথা, যাকে আঘাত করতে তিনি কলম চালিয়েছেন ঠিক তাঁকেই তিনি আঘাত করতে পেরেছেন। তিনি যাদের আহত করেছেন, নিজ মতামত বজায় রেখে তাদের বেঁচে থাকা সভ্যতার জন্য হুমকি। আর তাদের অস্তিত্বের জন্য অভিজিতের মত স্পষ্টভাষী মানুষেরা হুমকি। সভ্যতার শত্রু ধর্মবাদীদের হাতেই শেষ পর্যন্ত অভিজিৎকে প্রাণ দিতে হলো। রাষ্ট্র অভিজিতকে বাঁচাতে পারলো না। রাষ্ট্র আদৌ অভিজিতের মতো মানুষকে নিরাপত্তা দিতে চায় কি না সেই প্রশ্নের সমাধানেও পৌঁছানো গেলো না।
ধর্মবাদী মানুষ ব্যতিক্রমহীনভাবে মুক্তচিন্তা বিরোধী। সংগঠিত ধর্মের (রিলিজিওন) পক্ষে কোন কথা নাই। "রিলিজিওন" শব্দের উৎপত্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক সংগঠন এবং ধর্মপেশাজীবিদের যাবতীয় কার্যক্রম একতরফা নেতিবাচক। "রিলিজিওন" মাত্রেই সামন্তবাদী-পুরুষতান্ত্রিক বাটপারি। এই কথাগুলি মানুষ অতি প্রাচীনকাল থেকে জানে। তারপরেও অনেক বড় সংখ্যার মানুষ বুঝেশুনে এই আফিম খায়। কারণ রাজদণ্ড এই বাটপারির পক্ষে। ধর্ম নামের বাটপারির প্রকৃত রক্ষক রাষ্ট্র। জার্মান সমাজ বিজ্ঞানে রাষ্ট্রকে "Gewaltsmonopole" বলা হয়, যার আভিধানিক অর্থ সন্ত্রাসের মনোপলি। পুলিশ, গোয়েন্দা, সেনাবাহিনি রাষ্ট্রের অঙ্গ। সুতরাং জাদুর জামা দেখতে সাধারণ মানুষ বাধ্য। এই বাধ্য করার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের তদারকিতে জনগণকে বিভিন্ন মডেলে অশিক্ষা এবং কুশিক্ষা প্রদান করা হয়, যার প্রভাবে ধর্মের লোকঠকানো টাকার ভাগ না পাওয়া অশিক্ষিত এবং কুশিক্ষিত মানুষ সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পর্যন্ত পৌছে যায়।
ব্যাপারটা একতরফা না। কারণ ইতিহাস সরলরেখাও না বৃত্তও না। আড়াইশ বছর আগে পশ্চিম ইউরোপে সামন্তবাদের পতন হয়েছে। সামন্তবাদ-রাজতন্ত্র-পুঁজিবাদ উচ্ছেদ করে রুশ বিপ্লবের বয়সও সাড়ে সাতানব্বই বছর। লোক ঠকানোর কাজে ধর্ম ব্যবহারের বিরোধিতা জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসছে কিছুদিন পর পরই। মানুষ আক্রান্ত হয়। হতে থাকে। হতেই থাকে। তারপর একসময় ফেটে পড়ে। তাতে কিছু পরিবর্তন হয়। অনেক কিছুই হয় না। অপেক্ষায় থাকতে হয় মানুষ আবার কবে ফেটে পড়বে। এই অপেক্ষার দু:সময়গুলিতে অভিজিতের মতো মানুষরা লিখতে থাকে। লেখাগুলি পরবর্তী ফেটে পড়ার ভিত তৈরি করে। যখন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মাধ্যমে লিখতে পারে না তখন ব্লগে লেখে। লিখতেই থাকে।
অভিজিৎ মরে নাই। ব্লগার মরে না।
1 comment:
Post a Comment