Monday, April 14, 2008

প্রচন্ড গর্জনে আসিল একি দুর্দিন দারুণ ঘনঘটা

সেদিন আটটার দিকেও মঞ্চের বাঁদিকের কোনায় দাঁড়িয়েছিলাম আমি,শশাঙ্ক, অঞ্জন, অঞ্জন(ছায়ানট), জাহিদ আর মাহবুব মোর্শেদ। ১৯৯৫ থেকে ছায়ানটের মেঠো কর্মী হবার সুবাদে সংরক্ষিত এলাকার ভেতর থেকে অনুষ্ঠাণ দেখতাম। ২০০১ সালেই প্রথম পুরোপুরি দর্শক হিসেবে সীমানার বাইরে। সকাল থেকে খালি পেট। চা গেছে গোটা তিনকাপ। বিড়ি খাওয়া দরকার। পুলিশ মঞ্চের কাছাকাছি চা-বিড়িওয়ালাদের দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। অঞ্জনকে গুতাদিলাম চল বিড়ি খেয়ে আসি। শশাঙ্ক আর মাহবুব মোর্শেদ চলে গেল আরো ভেতরের দিকে, আমি আর অঞ্জন চলে এলাম রমনা রেস্তোরার দিকে। ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ফ্যান্সী আপা গাইছিল, নজরুলের গান, একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী। তারপর সেই ঘটনা। সেই মুহুর্তে সবার মতো আমারো মনে হয়েছিল শর্টসার্কিট। ওমর ভাই মাইকে ঘোষনা দিলেন না দেখেই, আপনারা ছোটাছুটি করবেন না সম্ভবত শর্টসার্কিট হয়েছে। লোকজন তবু দ্রুত সরে গেলে লাশগুলি দেখা গেলো। মানুষ মনে হয় চিৎকার করতেও পারছিল না। সাগর ভাই জিজ্ঞাসা করলেন আমার ভাইয়ের কথা। আমি বললাম আমাদের বাসায় একবার ফোন করতে হবে। দাদাবৌদি তখনো বাসায়ই ছিলেন। কিছুক্ষণ আহতদের অ্যম্বুলেন্সে তোলায় সহায়তা করতে গেলাম। পুলিশ এলাকা কর্ডন করে সবাইকে বের করে দিল। চারুকলায় এসে দেখলাম স্রোতের মত মানুষ। কিন্তু কেমন যেন কোন বিকার নেই। "বোমা ফুটেছে ! ও আচ্ছা!" ধরণের মনোভাব। মাথাটা শুণ্য লাগছিল। সময়টা ফ্যান্সী আপার গান আর বোমার শব্দের সাথে থেমে গিয়েছিল। সেই ১৪০৮ থেকে আজ ১৪১৫। সাত বছর ধরেই সময়টা ১৪০৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ আটটা পাঁচে থেমে আছে।




গড় রেটিং
(৩ ভোট)
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: রবি, ২০০৮-০৪-১৩ ২১:২৫)
উদ্ধৃতি সুমন চৌধুরী এর ব্লগ ১৫টি মন্তব্য পছন্দের পোস্টে যুক্ত আপত্তি জানান ২৫৪বার পঠিত

--------------------------------------------------------------------------------
Views or opinions expressed in this post solely belong to the writer, সুমন চৌধুরী. Sachalayatan.com can not be held responsible.
--------------------------------------------------------------------------------



১ ধুসর গোধূলি সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ০৭:২০


- প্রতিবারের মতো সেবারও বৈশাখ উদযাপন হচ্ছিলো। অন্যান্য বছর ছুটির দিনগুলো বেছে নিলেও সেবার একেবারে দিনক্ষণ মতে পহেলা বোশেখই ধার্য্য হলো। অনেক আগে থেকে সাজসাজ বারউড মহিলা বিদ্যালয়কে ঘিরে। এবারই বেশ বড় পরিসরে হতে যাচ্ছে উৎসবটা। পরে এসবিএস রেডিও'র কল্যানে জানা গিয়েছিলো দর্শনার্থীদের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। আয়োজন, খাটাখাটুনি সার্থক। সারাদিনই গান বাজনা চলছে মুক্ত মঞ্চে (এখানকার একজন সচলও সেদিন সেখানে গান পরিবেশন করেছিলেন)। সন্ধ্যায় আলো ঠিক সামান্য কমে এলে বাইরের প্রাঙ্গণে লোকসমাগম কমে গেলো। ভেতরের অডিটোরিয়ামে তখন ইনডোর সঙ্গীতানুষ্ঠান-বিচিত্রানুষ্ঠান চলছে। হঠাৎ অধ্যাপক ড. রাজ্জাক, যিনি আয়োজকদের একজন। মঞ্চে এলেন। মাইক্রোফোন হাতে নিলেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, "এই মাত্র খবর পেলাম রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়েছে..." এক মিনিট নীরবতা পালন করা হলো। কিন্তু সেই হলো ছন্দপতন। একটা সুন্দর ছিমছাম অনুষ্ঠানটা আরও বাড়ানোর ইচ্ছে থাকলেও সেটা আর সম্ভব হয়নি। দর্শক সারিতে একটা চাপা গুঞ্জন। অনেকের চোখের কোণা ভেজা, কণ্ঠ ধরা। অনেকে তৎক্ষণাত দেশে ফোন ঘুরালো, মিলন মেলা ভেঙে বাড়ি ফিরলো অনেকে।

পরদিন, দৈনিক পত্রিকার ইন্টারনেট ভার্সনে উঠে এলো বীভৎস সব ছবি। বাঙালিত্ব ভালোবেসে নতুন বছরের আনন্দে নিজেকে ভরিয়ে তোলার অপরাধে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাওয়া বাঙালীর ছবি। কী করে ভুলি, সেই দিনটাকে! সেই ১৪০৮-এর প্রথম দিনটাকে!!

_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান লেখককে মেসেজ


২ অলৌকিক হাসান রবি, ২০০৮-০৪-১৩ ২৩:৪৪


সারারাত অনুষ্ঠান সম্পাদনা শেষ করে সকালে বাসায় যাব এমন সময় আমার হাতে একটি ভিএইচএস ক্যাসেট ধরিয়ে দেয়া হলো। বলা হলো রমনায় বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে, এখন স্পেশাল বুলেটিন যাবে। নির্ঘুম রাতের শেষে জ্বলতে থাকা চোখে দেখতে থাকি লাশগুলো। এরই ফাঁকে বাসায় ফোন করে জেনে নিই রমনায় যাওয়া মা-ভাইদের অবস্থা। অতো সকালে কোনো সম্পাদক থাকে না বলে আমাকেই করতে হয়েছিল বছরের প্রথম দিনে এই মর্মান্তিক নিউজ। ওই বছরটা আমার শুরু হয় বিভৎস্য লাশ দেখে।




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান


৩ সুজন চৌধুরী সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ০৫:৪০


ঐ ১বারই দেরী করে যাচ্ছিলাম, ভয়াবহ টিভিতে দেখলাম ফ্যান্সি গান গাচ্ছে তারপর আওয়াজ!! তারপর সুমনের ফোন!
আমরা সাধারণত যেখানে দাড়াতাম বোমাটা ফাটে সেখানেই..........
তারপর সারাদিন দেখলাম মানুষের তামাশা , সেটা নিয়ে পরে কোন সময় পোস্ট দিবো।
আপাতত শুভ নববর্ষ।



--------------------------------------------------------------------------------
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান লেখককে মেসেজ


৪ আনোয়ার সাদাত শিমুল সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ০৫:৫৯


এর পরেও মানুষের অংশগ্রহণ-আগ্রহে ভাটা পড়েনি। অপশক্তির কাছে মাথা নোয়ায়নি বাঙালী ।




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান লেখককে মেসেজ


৫ পরিবর্তনশীল সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ০৭:১০


শিমুল ভাই বলেছেন...


উদ্ধৃতি
এর পরেও মানুষের অংশগ্রহণ-আগ্রহে ভাটা পড়েনি। অপশক্তির কাছে মাথা নোয়ায়নি বাঙালী ।

ঠিক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান লেখককে মেসেজ


৬ তীরন্দাজ সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ০৮:১৯


বিদেশ বসে পত্রিকায় পড়ে শিউরে উঠেছিল শরীর। অনেকক্ষন স্তব্ধ হয়ে ছিলাম।

প্রতি নববর্ষের শুরুতেই এই কলংক সামনে দাঁড়ায় বারবার। কষ্ট হয় বুকের ভেতরে। কিন্তু আমাদের কলংকের কি শেষ আছে? কলংকই অভ্যাসে পরিনত হয়েছে আমাদের জীবনে।

নববর্ষের শুরুতে কলংকহীন সময়ের প্রার্থনা তাই সবার আগে।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান লেখককে মেসেজ


৭ অতিথি লেখক [অতিথি] সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ০৮:৩৬


রমনাতে আমিও ছিলাম পুকুরের আরেক কোনায় আরো তিন বন্ধুসহ। আমরা সবাই তখন ঢাবি'তে পড়ি। অনেক ভিড় দেখে একটু সরে এসেছিলাম আমরা মঞ্চ থেকে, কেউ একজন বাংলাদেশের মানচিত্র বিক্রি করছিল - বেশ মনে আছে- হঠাৎ একটা ভোঁতা আওয়াজ আর অল্প একটু ধোঁয়া, প্রথমে মনে হয়েছিল বড় বড় স্পিকারগুলার কোনোটা হয়তো ফেটে গিয়েছে!! তারপরই মাইকে কে যেন বলল্‌ শর্টসার্কিট হয়েছে- কিন্তু তারপরই সেই বুক কাপাঁনো দৃশ্য - কোনোদিন ভুলবনা- কিভাবে যেন বাসায় গেলাম হেটেঁ শাহবাগ হয়ে- বেশ কয়েক রাত আমি ঘুমাতে পারিনি ঠিক মতো- এখনও সেই ভোঁতা আওয়াজটার কথা মনে হলে শিউরে উঠি।

-
কৈলাশ
koilashblog@gmail.com




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান


৮ সুমন চৌধুরী সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ১৮:৩৮


যারা পড়লেন, যারা মন্তব্য করলেন সবাইকে ধন্যবাদ। বেশ জমিয়ে কিছু লিখবো বলে শুরু করেছিলাম। আঙ্গুল অবশ হয়ে এলো হঠাৎ করে। ১ বৈশাখ ১৪০৮ সকাল আটটা পাঁচ আমাকে কেমন যেন বেসামাল করে ফেলে। কিছু বলতে গেলে মনে হয় চর্বিত চর্বন করে ফাজলামী করছি আর সেদিনের পাপেট মাস্টাররা কুটি কুটি হাসছে।



--------------------------------------------------------------------------------

ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান


৯ অনিন্দিতা (যাচাই করা হয়নি) সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ১৯:৪৩


যাদের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালিকে স্তব্ধ করে দেয় তারা কি পেরেছে? বরং এখন আমাদের নববর্ষ উদযাপন এত বিশাল আকার ধারণ করেছে যে ভাবা যায় না। আমাদের দেশের যে কোন ধর্মীয় উৎসবের চাইতেও বড় উৎসব মনে হয় এই বাংলা নববর্ষকে। ঢাকা ছাড়িয়ে সব মফস্বল শহরে এর ব্যাপ্তি। সব ধর্মের মানুষ নতুন জামা কাপড় পড়ে প্রাণের তাগিদে বেরিয়ে পড়ে নববর্ষকে বরণ করতে।
কোন্ জাতি পারে এভাবে ভয় কে তুচ্ছ করতে?




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান
১০

৯.১ সুমন চৌধুরী সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ১৯:৪৮


আপনার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক।



--------------------------------------------------------------------------------

ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান
১১

১০ ফারুক ওয়াসিফ সোম, ২০০৮-০৪-১৪ ১৯:৫৫


''আর সেদিনের পাপেট মাস্টাররা কুটি কুটি হাসছে।''
...........................................................................
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান লেখককে মেসেজ
১২

১১ সবুজ বাঘ রবি, ২০০৮-০৪-২০ ০৫:০৯


তুমি শশাঙ্ক দারে পাইলা কন থিক্যা? ওইদিন আমি শশাঙ্ক দা, ফিরোজ আর বিউভল নুরু ভাই পরাই মরতে মরতে বাঁইচা গেছি। তুমার নগে ওইদিন আমাগো দেহা হয় নাইকা।




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান লেখককে মেসেজ
১৩

১১.১ সুমন চৌধুরী রবি, ২০০৮-০৪-২০ ০৮:১০


শশাঙ্ক ছিল তো যতদূর মনে পড়ে। টিভি ক্যামেরার মঞ্চ যেইখানে বসানো ছিল তার পাশাপাশি দেখা হইছিল। মাহবুব মোর্শেদও ছিল। আর ক্যারা ক্যারা ছিল স্মৃতি ঝাপসা হইয়া গেছে। আমি অনেক্ষণ ধইরা চেষ্টা করলাম। ঐ যে অঞ্জনরে নিয়া বিড়ি খাইতে গেলাম রমনা রেস্তোরার দিকে, তার আগের ঘটনাগুলি এলোমেলো হইয়া গেছে...



--------------------------------------------------------------------------------

ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান
১৪

১২ অঞ্জন (যাচাই করা হয়নি) বুধ, ২০০৮-০৫-০৭ ১১:৩২


শশাঙ্ক দা ছিলো না সাথে । হয়ত রমনাতেই ছিলো, কাছেধারে। সিগারেটে আগুন দেয়ার সাথে সাথে প্রথম শব্দ। তারপর খানিক বাদে আরও একবার।
তারপর বাকিটা দিন একে ওকে খুঁজে বেড়ানো।
পড়ে থাকা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন মানুষগুলোর কাছে যাইনি কেউ। আশংকায়, যদি চেনামানুষ বেরিয়ে পড়ে।
না, আমাদের চেনা কারোরই কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু, আজও প্রথম বৈশাখে যখন যাই - ওই জায়গাটাকে দেখি। পায়ের আঙ্গুলে ভর দূর থেকে সারি সারি মানুষের মাথার উপর দিয়ে।
শরীর বিবশ হয়, শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসে শিরশিরে হীম। প্রিয় গান পৌঁছয় না কানে, প্রিয় সঙ্গী বিস্মৃত হয়ে যান মুহুর্তেই ।

হারাইনি কিছুই, তবু কী যেন হারানোর ব্যাথা গ্রাস করে আমাদের। ভালো লাগে না...




উদ্ধৃতি ঘ্যাচাং সম্পাদনা জবাব আপত্তি জানান
১৫

১২.১ সুমন চৌধুরী বুধ, ২০০৮-০৫-০৭ ১৩:২৭


কিছুই বলার নাই।
সেদিন প্রথম আলোতে দেখলাম ঐখানে নাকি বোমা পাতা হয়েছিল। অথচ ভোরবেলা ঠোলা আসছিল কুত্তা নিয়া। কখন পাতলো? কেমনে পাতলো?

পুনশ্চ: তোমার ইমেইল বাউন্স করে ক্যা? একটা কার্যকর ঠিকানা দিও....



--------------------------------------------------------------------------------

No comments: