Monday, March 02, 2009

টুকরো টুকরো লেখা ১০

সময় চোখের নিমেষে ফুরুৎ হচ্ছে। বয়স সবে বাড়তে শুরু করার দিনে একদম এগুতো না। এখন পুরা উল্টা। ইদানিং জলহস্তি দিয়েও বেঁধে রাখা যাচ্ছে না। মাথার সামনের দিকে একটা চুল অনেকদিন ধরে পেকে আছে। কয়েকবার শ্রীঘরে পাঠাবার পরেও ঐ জায়গায় ঠিক ঐ চুলটাই গজাচ্ছে এবং সেটা পাকা। খুপড়ির ভিতরে যতই লজেন্স-লাট্টু-ডাঙ্গুলির আবদারগুলি মুখ ভেঙচে কাঁদুক, ক্ষেতের ফসল ঠিকই সময়মতো পেকে চুলায় উঠবার প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে। বড়ো হতে চেয়েছিলাম। বুড়ো হতে চাইনি। চাইও না। সময়ের সাথে তাই কুস্তি লড়ছি। বহু কষ্টে আজ দুপুরে সময়কে খানিক সময়ের জন্য হলেও মানিক সাহেবের চিপায় ধরেছি। পরে এর প্রতিশোধ তিনি বিলক্ষণ নেবেন জানি। তবু সময়ের মৌজ সময়েই করে নিতে হবে।
১.
নতুন সরকার ক্ষমতায় বসার দেড় মাস পেরোল। একদম কালক্ষেপন না করে তাঁরা স্বমুর্তি ধারন করে ফেলেছেন। ইতোমধ্যেই জনৈক মন্ত্রীর পরিবার অ্যাকশানে নেমে গেছেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নামের প্রতিভাধর সংঘ আগামী নির্বাচনে খাটিয়া তোলার সরব প্রস্তুতি শুরু করেছে। তার উপর গুডগার্ল পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি তাঁর সদাহাস্যবদনে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আনতে রাজী নন, তা প্রণববাবুরা যতই "বাফার স্টেট" বলুন আর সোমনাথ বাবুরা আমাদের সংসদের কার্যকারিতায় সহায়তার অনভিপ্রেত অভিলাষ প্রকাশ করুন..দ্য হাসি মাস্ট বি দেয়ার।
২.
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনির মধ্যেও রঘুপতিরাঘবরাজারাম লাইনে ভক্তি দেখা যাচ্ছে। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের কাজেও তাঁরা গুলি খরচ করতে রাজী নন। প্রয়োজনে প্রাণদেবেন কিন্তু সন্ত্রাসীকে গুলি কখনোই না। সরদায় যে আজকাল ঢিশুমঢাশুমের সাথে অহিংস দর্শনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে তার আলামত পেয়ে খুব ভাল্লাগলো।
৩.
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আজিকালি বড় গোল দেখা যাচ্ছে। আমি বরাবরের মতোই উদ্বিগ্ন মধ্যবিত্ত অভিভাবকদের হতাশ করে বলতে চাই, যেসব ঘটনার কারণে আপনারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ব্যবস্থাপত্র সমর্থন করছেন, তার কোনটাই ছাত্ররাজনীতি থাকা না থাকার সাথে সম্পর্কিত না। বিষয়টা ক্ষমতা কাঠামোর সাথে জড়িত। ছাত্র রাজনীতিকে অকার্যকর করা হয়েছে বা তর্ক সাপেক্ষে বললাম অকার্যকর হয়েছে বটে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবেই হোক আর কীভাবে যেন পদ্ধতিতেই হোক এই নাশকতার লাভ যার পকেটে যাচ্ছে পাপেটের সুতা তার হাতে। ঐ লাভ থেকে তাঁর পুঁজি পরমার্থ। ছাত্র রাজনীতির কী খারাপ কতটা খারাপ, বাবামা কেন সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান, সেই সন্তান লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলে তাঁদের অনুভুতি, ছাত্র রাজনীতি থেকে আমরা চাঁদাবাজ ছাড়া আর কী তৈরী করছি ইত্যাদির বর্ননা আজকাল আর পড়ি না। আজন্ম এসব শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে চোখকান পঁচে গেছে। আরো জানি যে সমস্যায় গোড়ায় যেতে এইসব ঘটনায় দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছিদের বাধ্য করা যায় না। অবস্থান অনুসারে বক্তব্য আসবে সেটাই স্বাভাবিক। তারপরেও কেউ কেউ স্বভাবদোষে হোক পেশাদোষে হোক সমস্যার গোড়ায় যাবেই। আর সেখানে গিয়ে যা দেখা যায় তাতে দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিবার পরিবর্তে সর্বশান্ত হবার পরিণতিই দেখা যায়। এরপরে আলোচনা আরো জটিল দার্শনিকতায় ঢোকে। বর্তমানেই যেখানে আকণ্ঠ কাদায় নিমজ্জিত সেখানে একটা ডুব সাঁতার আর কতই বা খারাপ হবে; সমাধান যখন সহজ নয় তখন সর্বনাশই সই ইত্যাদি। এর বাইরে কেউ কেউ অবশ্য আরো অনেক খেলো তর্ক তোলেন, যেমন ইউরুপাম্রিকায় ছাত্ররাজনীতি নাই..মালুশিয়াইন্দুনিশিয়ায় নাই..অরা কি সুন্দর ভালো আছে ইত্যাদি। এই গ্রুপটা নিতান্তই ইনফর্মেশন গ্যাপে ভোগেন বলে বেশীদুর আসতে পারেন না। ছাত্র রাজনীতি বিষয়ক আলোচনা সমালোচনা তর্কে পাঞ্জা লড়েন ঐ দার্শনিক প্রশ্ন উত্থাপনকারীরা। এই আলোচনায় অনেক স্মৃতিচারন হয়, অনেক অশ্রু খরচ হয়, অনেক জিঘাংসা, অনেক পরস্পরবিরোধী তথ্যের কৌনিক আদানপ্রদান হয়। বাকি শুধু থেকে যায় সমস্যার কারণ আর সমাধানের নির্দেশনা। এর পরে সামনে আসে আরো একটি অত্যন্ত গভীর শয়তানি বক্তব্য, সমাধানের পথ নিশ্চিত করে না দেখাতে পারলে সমস্যার কারণ নির্ধারনের চেষ্টা করা অনৈতিক!!! এই চিত্র আমার এতো বেশী চেনা যে বহুদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি বিষয়ক কোন আলাপে আমি ঢুকি না।
ঘটনা হচ্ছে বিষয়টা রাজনীতি। সুনির্দিষ্ট অবস্থানের বাস্তবতা আপনাকে যতই প্রতিক্রিয়াশীল হতে উৎসাহিত করুক, রাজনীতি রাজনীতির নিয়মেই চলবে। চাকুরিজীবি ভদ্রসমাজ যতই রাজনীতিমুক্ত সভ্য জীবনের খোঁয়াব দেখুক প্রতিটি মুহুর্ত তাঁরা রাজনীতির পাপেট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাপেটগিরিতে পরমার্থ খুঁজে পেয়ে তাঁরা আত্মাকে শান্তিতে রাখতে চাইলে আসলে জবাবে তেমন কিছু বলারও থাকে না। তবে তাঁরা যখন তর্ক করতে আসেন তখন কিন্তু বিপক্ষের তার্কিকেরা তাঁর আত্মার শান্তি টিকিয়ে রাখা বা নিদেন পক্ষে শ্রদ্ধা করারও কোন দায় রাখেন না। সুতরাং যখনই কেউ কোন বিষয় নিয়ে তর্কে অবতীর্ন হতে চান, সেখানে সমস্যায় গোড়ায় যাবার মেথডকে আপারহ্যান্ড দিতে তিনি বাধ্য। তাঁর ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত প্রশান্তির আকাঙ্খা সেখানে সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক।আমি ঘোরতর ইতিহাসপন্থী মানুষ। ইতিহাস বিরোধী দর্শনচর্চাকারীগণ হয় বায়ুগ্রস্থ নতুবা বুদ্ধিবৃত্তিক তস্কর। তাঁদের মেথডে অনেক জ্ঞানের কথা থাকলেও আমি ঐপথের পথিক না।
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান অন্য সব ধরনের প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, গুচ্ছ বা সমাবেশের মতোই দৌড়ের উপর থাকে। অর্থাৎ প্রতিটা পরবর্তী ঘটনা ধারাবাহিকভাবে পূর্ববর্তী ঘটনার রেফারেন্স ধারণ করে। সুতরাং একটু ধারাবাহিকভাবে আসা যাক। আজকে আমরা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলতে যা দেখি সেটা ইংরেজের তৈরী। এই প্রতিষ্ঠান মোগলদের তৈরী প্রতিষ্ঠানের চাইতে ভালো না খারাপ তার আলোচনা এইখানে খানিক অপ্রাসঙ্গিক। তবু এইটুকু বলে রাখি যে ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি, অন্তত বর্তমানে যেভাবে সারা পৃথিবীতে আমরা দেখি সেটা ইউরোপ থেকে পাওয়া। উপনিবেশে এই প্রক্রিয়াটি তাঁরা চাপিয়ে দিয়েছিল এবং এর সাথে শাসিতের সাংস্কৃতিক দূরত্ব ছিল, সেটাও ঠিক। তবে সময়ের সাথে জনগণ এই প্রক্রিয়াটিতে ক্রমশ বেশী করে সম্পৃক্ত হয়েছে এবং উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম এইসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নতুন চেহারা পেয়েছে। এতে সাংস্কৃতিক গোলামীর কিছু উপাদান থেকে যায় স্বভাবতই। কিন্তু প্রায়োগীক, প্রত্যক্ষ রাজনীতির জায়গা এই প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতিই পেয়েছে এবং সেটা শুধু মাত্র ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক আধিপত্যের জায়গা থেকে নয়, খেলাফত বা রামরাজত্বের যোগ্যতর বিকল্প হিসেবেও। সুতরাং ১৯৪৭ নাগাদ এই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের একটা সামাজিক ভিত্তি তৈরী হয়ে গিয়েছিল এটা ঘটনা। আমাদের আলোচ্য ছাত্র রাজনীতি ব্যাপারটি ইংরেজ আমলে শুরু হলেও তাঁর চর্চা ব্যাপকতা পায় ইংরেজ বিদায়ের পরে। পুরো পাকিস্তান আমল জুড়ে ছাত্ররাজনীতির ঘটনা প্রবাহকে গ্রাফে বসালে দেখা যাবে ক্রমশ এতে অংশগ্রহণকারী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর এর ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে। আরো দেখা যাবে ট্রেন্ড অর্থাৎ কোন ধারার রাজনীতিতে ছাত্র সমাজ আকৃষ্ট হচ্ছে এবং সেখানে অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে তাঁরা কতোটা আন্তরিক। ইতিহাসের তথ্যকে নির্ধারক ধরে বলা যায় এই ধারা ছিল প্রবলভাবে আর্থ-রাজনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দিকে, যে ধরনের পরিবর্তনকে আন্তর্জাতিক পুঁজি সবসময় একতরফা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে এসেছে। সেই সময়কার প্রবল উত্থানকে ঠেকাবার তাৎক্ষনিক প্রচেষ্টাগুলি একভাবে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মাধ্যমে। তারপর তখনকার কায়েমী স্বার্থ ছাত্ররাজনীতির মধ্যকার বিপ্লবী প্রবণতাকে খতম করতে একতরফা লুম্পেনাইজেশনের পলিসি গ্রহণ করে। এই পলিসি অবশ্য এনএসএফের মাধ্যমে আইয়ুব খানের আমলেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিবের আমলের লুঠপাটের সাথে এনএসএফের কিছু গুনগত পার্থক্য ছিল। শেখ মুজিবের আমলে বিপ্লবের ইন্সট্রুমেন্ট তৈরী না থাকলেও বিপ্লবের পরিস্থিতি একভাবে বিচার করছিল এটা ঘটনা। শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ সর্বপ্রকার বিরোধীতার জায়গা শক্তিপ্রয়োগে দমন করতে গিয়ে বাকশাল করে বসলেন। আর তার কিছুদিন পরে খতম হয়ে আবার সামরিক শাসন। এই সামরিক শাসন থেকে যে ফেইজের শুরু সেই ট্রেন্ডটাই ক্রমশ ম্যাচিওর হতে হতে আজকের জায়গায় এসেছে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসে ছাত্র রাজনীতিকে লুম্পেনাইজ করার কাজে আইয়ুবীয় ফর্মুলা নতুন করে নিয়ে আসেন। সেই থেকে প্রতিটি ক্ষমতাসীনদল সেই ফর্মুলাকে ধারাবাহিকভাবে অনুসরন করে আসছে। এই ধারাবাহিকতা থেকে বোঝা যায় এর অনুসারিদের অভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে। এই উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের রাস্তা বন্ধ করা। ছাত্র রাজনীতি লুম্পেনাইজ হবার অর্থ রিক্রুটমেনটের জায়গাটিকে স্থায়ীভাবে দখলে নেওয়া। অর্থাৎ ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে জনগনের পক্ষে পলিটিক্যাল কমিটমেন্টের জায়গা থেকে কাজ করার ন্যুনতম যোগ্যতা নিয়ে যেন ক্ষমতার কেন্ত্রে থাকা দলগুলিতে কোন রকম রিক্রুটমেন্ট না হয়। লুম্পেনাইজেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মডেলটি মৌলিক নয়। উনিশ শতক থেকেই শ্রমিক আন্দোলন দমনে এই মডেলটি বহু ব্যবহারে ঋদ্ধ।
প্রক্রিয়াটি সরল রেখায় ঘটেনি। ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ সরল রেখায় ক্রিয়াশীল হতে পারেন না। তিনি যেহেতু নাই, সুতরাং সরল রেখার চিন্তা আমরা বাদ দেই। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এই লুম্পেনাইজ হতে থাকা ছাত্র রাজনীতিই লড়াই করেছে। ১৯৯০ তে সামরিক শাসনের পতন ঘটে গণতন্ত্র ফিরে এলেও ছাত্র রাজনীতিতে উল্টো ট্রেন্ড (দৃশ্যত) দেখা যায়। ১৯৯০ সালের পর থেকে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বেশীরভাগ উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিলুপ্ত হয়। একতরফা দখলদারিত্বের যুগ শুরু হয়। ১৯৯১-১৯৯৬ বিএনপি আমলে ছাত্রদল, ১৯৯৬-২০০১ আমলে ছাত্রলীগ, ২০০১-২০০৬ আমলে ছাত্রদল তারপরে ২০০৯ এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবারো ছাত্রলীগ...একেবারে অলিখিত কিন্তু কঠোরভাবে অনুসৃত নীতি মোতাবেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রনের এই ফ্যাসীবাদী প্রবণতা দেখা যায়। জাতীয় রাজনীতিতে গণতন্ত্রের একধরনের অনুশীলন হলেও ছাত্র রাজনীতিতে এই লুম্পেনাইজড ফ্যাসীবাদ চলার বটম লাইন কী? কারা রাজনীতিতে আসছে আগামীতে? বিজ্ঞাপন কোম্পানিগুলি যে নতুন প্রজন্ম নতুন প্রজন্ম বলে ন্যান্টা হয়ে নৃত্য করছেন, কে বা কারা সেই নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক প্রতিনিধী?
অবশ্য এই দখলদারিত্বের রাজনীতির বিপরীতে আমরা দেখেছি ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, সিলেটে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে সাধারন ছাত্রছাত্রীদের প্রতিরোধ আন্দোলন। সত্যিকারের পলিটিক্যাল ইস্যুতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা সংগঠিত ঠিকই হয়েছে। অর্থাৎ ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সংগঠিত হবার প্রবণতাটি ঠিকই রয়ে গেছে। অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থে পুরোপুরি অ্যাপলিটিকাইড তাঁরা হয়ে ওঠেনি। যৌন নিপীড়ন, বেতন ফী বৃদ্ধি, হলে সীট সঙ্কটের বিরুদ্ধে,ধর্মীয় ফ্যাসীবাদী শিবির ঠেকাতে এবং বিগত সুশীল সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় যাদেরকে দেখা গেছে তারা কিন্তু ঐ লুম্পেনাইজড ছাত্রলীগছাত্রদলছাত্রশিবির নয়। সেখানে রাজনৈতিক পরিচয়ে শুধু প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন আর তার বাইরে সাধারন ছাত্রছাত্রীদের পাবেন। অর্থাৎ ছাত্র সমাজের এখনো লুম্পেনও নয়, ধর্মীয় মৌলবাদীও নয়। এরা প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির বাইরে অবস্থান করেন। কারণ ক্ষমতাসীন দলগুলির স্টুডেন্ট উইং এ ডাকাত না হলে রিক্রুট করা হয় না। সুতরাং মূলধারার ভোটের রাজনীতি থেকে খানিকটা অগ্রসর দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে বর্তমান ক্যাম্পাস রাজনীতিতে। সেটা হচ্ছে ক্ষমতাসীন লুঠেরা দলগুলির হাত থেকে রাজনীতিকে উদ্ধার করা। আর এই উদ্ধারের কাজ অবশ্যই সেনাবাহিনির নয়। কৃষক-শ্রমিকদের পাশাপাশি ছাত্রদের। ছাত্র সমাজ কীভাবে এই দুরূহ কাজটি করতে পারবে সেখানেই এই মুহুর্তে খানিক ধাঁধাঁ। তবে সমস্যার মূলে ঢুকবার চেষ্টাই হচ্ছে সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ। যারা এই মুহুর্তে মাঠে আছেন লড়াই আর পরবর্তী নির্মানের দায় তাঁদের।

No comments: