Friday, June 12, 2009

আহ্ কবিতা.....

(মেলানকলি থেকে পালিয়ে বেড়ানোর একটা প্রবণতা গড়ে উঠেছে আশৈশব...মেলানকলি শব্দটা জানবার আগে..বুঝবার তো বটেই। অথচ একটা বয়সের পরে অথবা একটা বয়সে পৌঁছে ভাবনার খাটিয়া ভেঙে কবিতা তাড়া করে বসলো। দৌড়ে অনভ্যস্ত আমি ছুটেছি কবিতার নাগালসাধ্য ব্যবধানে। নিজেকে বাঁচাতে চাইলে হয়তো খড়িকঞ্চির ভরসায় সের্গেই বুবকা হতাম। তার বদলে হিটে আউট স্প্রিন্টার হয়ে আছি। অথচ মেলানকলির সম্ভাবনা দেখামাত্র শাটার নামাই। কবিতায় ফুর্তি খোঁজা পাঠকের সংখ্যালঘিষ্ঠ তালিকায় মহানন্দে পড়ে আছি। সম্ভবত থাকবোও। কী মনে করে কেন আজ হঠাৎ কবিতা নিয়ে লিখবার ইচ্ছা হলো তা এক গূঢ় রহস্য, যার ঢ়'র গভীরতা আমাকে সাঁতার না জানা বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। তবুও দীর্ঘকালের আড়ষ্ঠতা কাটাতে আঙ্গুলের বকবকানি বি-ন্যাচারাল থেকে দ্রুত ডি-শার্পে চড়াই পিতলের হাতুড়ির বাড়িতে। এই স্বেচ্ছাচারটাই হয়তো মূলধারার সাথে ব্লগীয় ধারার পার্থক্য।)

বাংলাব্লগ শুরু হবার, মানে কমিউনিটি ব্লগিং শুরু হবার কিছুদিন পর থেকেই আশে পাশে আছি। ব্লগিং শুরু কবিতা দিয়ে। সম্ভবত দ্রুত লিখে পোস্ট সংখ্যা বাড়ানো যায় এটাই সেযূগে কবিতায় একনিষ্ঠ হবার প্রকৃত কারণ ছিল। তার সাথে একরকম প্যাশনও ছিল, যে যাক এতোদিনে কোন একটা ভরা মজলিসে মুখ না দেখিয়ে এইসব অপারগতার পাঠ্যবস্তু ছেড়ে দেবার একটা ব্যবস্থা হলো। কালে কালে কিছু পাঠক জুটলো। পাঠযোগ্য কবিতা আর সেই সাথে আন্তর্জালিক বরেষুদেরও দেখা পেতে থাকলাম। বাংলাব্লগের প্রথম ধাক্কা থেকে দুতিনমাসে উঁকি দিতে থাকলো ব্লগীয় কবিরা।

ক্রমশ বাংলাব্লগের সেদিন ফুরালো। মূলধারার স্বীকৃত মাসলফুল কবিরা ব্লগে আসতে শুরু করলেন। ব্রহ্মতেজে কারো কারো মাসলপুল হলো। নির্বোধ জনতা তাতে আমোদিত হলে, আন্তর্জালকে ব্রহ্মশাপ দিয়ে বিদায় হলেন কেউ কেউ। কেউ কেউ সাতপাঁচ ভেবে থেকেও গেলেন। কিন্তু মনে একটা কিন্তুও তাঁদের অনেকের মাঝেই থেকে গেলো। আন্তর্জালে লিখতে গেলে, তাঁদের সাথে ব্যুৎপত্তিগত বৈসাদৃশ্যের একঝাঁক অসংস্কৃত চাবি-পাটা চালকের পাশে থেকে লিখতে হবে। এ বেদনা আর মধুর হলো না। হয়তো হবারও নয়। তাই হয়তো তাঁদের কেউ কেউ সিদ্ধান্ত নিলেন, না, আন্তর্জালে আর কবিতা না, এখন থেকে নিজেদের কবিতা বিষয়ে কাঠিবাজির জিমন্যাস্টিকস চলবে। শুধু একটা কথাই তাঁরা ভুলে গেলেন। পল্টি যতই নিখুঁত হোক, তাঁদের রোমশ ঠ্যাঙে অন্তত আন্তর্জালিক বাস্তবতায় কেউ নাদিয়া কমুনিচি দেখবে না।

সে যাই হোক। গীবত অতি উপাদেয় হলেও এই পোস্টের ফুঁচকি আপাতত সেদিকে নয়। লিখতে বসেছিলাম ব্লগের কবিতা নিয়ে। সেই সূত্রে ব্লগের কবি আর বিদগ্ধ কবিতে গিট্টু লেগে গেল। এই গিট্টু খুলতে পারবো এমন দুরাশা করি না। তার বদলে ব্লগের পাতায় যাদের কবিতা ভালো লেগেছে এই ব্যক্তি পাঠকের তাঁদের কবিতা নিয়েই দুটো কথা বলবো। এই কথা কোন অবস্থাতেই শিল্প সমালোচনা নয়। নিতান্তই ভালো লাগা কিছু কবিতা আউরে পরবর্তী ভালোলাগার অনিশ্চিয়তার পরিবর্ধন। যাঁদের কবিতা ভালো লাগেনি বা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়া হয়ে ওঠেনি তাঁদের কথা বলবো না। আমি না বললেও অন্য কেউ যখন বলতেই পারে, তখন আমি কেন বললাম না এই দাবীতে ঘেঁটি পাড়া দিয়ে বসা টেক্সচুয়াল/অ্যাকটিভ দুই কালচারেই রাজনৈতিকভাবে অসিদ্ধ।

একটা টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে আমার পছন্দের কবিদের কেউ কেউ সচলায়তনে লেখেন না বা কোন কারণে সচল ত্যাগ করেছেন। এই সমস্যা কাটাবার সঠিক উপায় হচ্ছে এই পোস্ট পড়ার সময় খেয়াল রাখা, আমি এখানে বাংলাব্লগ জগতে আমার ভালোলাগা কবিদের কথা বলছি। সচলায়তনের গন্ডি এখানে নির্ধারক নয়। ঠিক কবিদের কথা নয়, কবিতার কথা বলছি। যেখানে কবিকে শুধুই তাঁর কবিতা দিয়ে বিবেচনা করার মতো একটা ঘোরতর তর্কসাপেক্ষ আবর্তকে সহাস্যে এড়িয়ে শুধু ভালোলাগা কবিতাগুলি উল্লেখের খাঁচায় কাব্যালোচনা নেচে নেচে হাসে।

সেই ২০০৬ থেকে শুরু করি। শুভকথা হচ্ছে আমি পাঠক হিসেবে মারাত্মক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। সেই সূত্রে উন্নাসিকও বলা যেতে পারে। ভালো লাগা কবিদের তালিকা সেই কারণে নাতিদীর্ঘ। প্রথমটা যাঁরা লিখতেন তাঁদের কারো কবিতা চোখে ধরে নি। মনে ধরার তো প্রশ্নই ওঠে না। প্রথম চোখে আটকায় রাসেল( ........) এর করা প্যারোডিগুলি। যে অবলীলায় সে একের পর এক প্যারোডি করে যেতো তাতে মুগ্ধ না হওয়া কঠিন ছিল। এই ছেলের প্যারোডির প্রধান শিকারদের একজন ছিলাম আমি নিজে। জীবনে কোনদিন এতো আনন্দ নিয়ে পঁচি নাই। এর পর সেই রাসেলের হাতে আরো অনেক বিদগ্ধজনকে পঁচতে দেখি। আমি নিজস্বতা থাকাকে খুব বেশী গুরুত্ব দেই। সেই সূত্রে রাসেল নজরে পড়া অনিবার্য ছিল। তবে সেই আমলে রাসেলের ভদ্রকবিতাগুলির চাইতে প্যারোডি আর পঁচানিগুলির স্বাদ অনেক অনেক বেশী ছিল। নানা কারণে এখানে লিঙ্ক দিচ্ছি না। কেউ জানতে চাইলে সামহোয়ারে রাসেল ( ........) এর ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল মাসের পোস্টগুলি পড়ে দেখতে পারেন। এর পরের মাসে সে উইলিয়াম ব্লেকের ম্যারেজ অফ হেভেন অ্যান্ড হেল অনুবাদ করেছিল। খুবই শ্রমসাধ্য কাজ সন্দেহ নেই। তবে আমার কাছে এর কোনটাই ওর প্যারোডি বা পঁচানি যেমন, ব্যার্থ রাইছু -- আত্মজীবনি
নামের পোস্টের শেষের এই গুল্লি কবিতাটির সমকক্ষ হতে পারেনি,

ময়লা অন্তর্বাসে সিকনি মুছে
মাথায় সাজিয়ে রাখি গৌরবমুকুট
মুক্তচিন্তনের ফেউ ঘুরে কলামে
খেঁক শেয়ালের খোজে বিজ্ঞ কুক্কুট
কলম অনশনে যায় তুলে ভুয়া ইস্যু
চটি পড়ে রিপুর তাড়নায় পুড়ি
আনমনে চিবাই বীর্যসিক্তমুড়ি
লিখি প্রতিবাদ লিপি
ইতি ব্যার্থ রাইছু।


এর বাইরে রাসেলের ভালো লাগা কবিতাগুলির মধ্যে উল্লেখ করার মতো এই মুহুর্তে মনে পড়ছে বিনিময় করবো না স্মৃতি .....

এই কবিতার মূল্য কত?
সিগারেট বাবদ ৩০ আর যে কাগজে লিখছি সেটা ১টাকায় কেনা।
আড্ডায় বসে ৩ কাপ চা ৯ টাকা আর তোমার সাথে দেখা করবার জন্য যখন রিকশা চেপে যাচ্ছি তখন রিকশা ভাড়া লেগেছে ৩০ টাকা।

মানসিক শ্রম আর কায়িক শ্রমের জন্য মজুরি আরও ৪০ টাকা বাড়ালেও মোটে ১১০ টাকা-
সম্পাদক কিনতে চাইছে ৫০০ টাকায়-

কি লাভ হবে কবিতা বেচলে কর্পোরেটের কাছে?

পথ , জ্যাম আর মানুষের ঘাম ঠেলে তোমার কাছে , আরও কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা আমার,
তোমার স্পর্শ লেগে আছে এ কবিতায়,
তোমার কাছে যাওয়ার আর তোমার ছায়ায় শুয়ে থাকার
১০০ দিনের গন্ধ লেগে আছে-

ভালোবাসাবাসি দিনের কখনও নিলাম হয় না

কুন্তলা,

না আমি এ কবিতা বেচবো না।


সেকালে রাসেলের সাথে শুধু কবিতা না, আরো অনেক কিছুতে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। কবিতার মুগ্ধতা সেগুলিতে ধারাবাহিক ফুয়েল জুগিয়ে গেছে। রাসেলের কথা দিয়ে কবিতার আলোচনা শুরু করার কারণ শুধু তাঁরাই বুঝবেন যারা আগে ব্লগার পরে লেখক। এটা কোন কৃতিত্ব-ব্যর্থতা না। এটা একটা ঐতিহাসিক সীমানির্ধারন।

No comments: