Friday, December 11, 2009

কয়েকটি পোমো গল্পের খসড়া

বছর আড়াই-তিন আগে কোন একটা সেমিনারের শেষে ম্যাক্রো-সোশিওলজির প্রফেসার ড. হাইনৎস বুডে'কে আধুনিকতা আর উত্তরাধুনিকতার সহজ সংজ্ঞার্থ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বললেন, "এই ব্যাপারগুলির আসলে কোন ডেফিনেশান নাই। উদাহরণ দিয়ে কিংবা উদাহরণগুচ্ছ দিয়ে বুঝতে হয়। আমার মতে সরলতম উদাহরণ হতে পারে এরকম: আধুনিকতা হচ্ছে প্রফেসারের লেকচার পছন্দ না হলে বের হয়ে চলে যাওয়া আর উত্তরাধুনিকতা হচ্ছে অপছন্দের লেকচারের সময় বসে বসে ল্যাপটপে চ্যাট করা।" এর পরে এই বিষয়ে টুকটাক নানান কিছু পড়লেও কোথাও হের বুডে'র মতো চমৎকার উদাহরণ চোখে পড়ে নাই। এর কারণ আমার অজ্ঞানতা, গুরুভক্তি দুইটাই হতে পারে। যাই হোক এই সব জ্ঞানতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা সহকারেই আজ সকালে শুভাশীষ দাশের গল্প পড়ে মনে হলো করি একটা এক্সপেরিমেন্ট সেটার আধুনিকতা/ উত্তরাধুনিকতার বিচার পাঠকের আঙ্গুলে ছেড়ে দেই।







১.

কোন এক রবিবার সকালে মনির হোসেন বিঠোফেনপ্লাৎসে দাঁড়িয়ে মেসওয়াক করছিল। রবিবার সকাল সাড়ে আটটায় ক্যাটওয়াক দেখতে পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু মনির হোসেন পরিসংখ্যানের ফ্যাসীবাদ মানে না।

মর্মনদের দেখা যাচ্ছে। মাথা বাদে বাকি দেহে গাদাগাদা কাপড় চড়ানো এক ফর্সা তরুণী পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে। দেখার মতো বিভঙ্গগুলি অনেক ভেবে ভেবে জাগামতো ঝাপসা নেগেটিভ রেখে যায়।

- সুপ্রভাত!
মনির হোসেন নিচের পাটির ঠিক মাঝের দুটি দাঁতের ফাঁক দিয়ে চিড়িৎ করে সামনের ফোয়ারাতে থুতু ফেলে অস্পষ্ট উচ্চারণে বলে,
- সুপ্রভাত ......
মোহিনি হাসিতে তরুনী বলে,
- আপনি কি জানেন প্রভূ ফিরে আসছেন?
- প্রভূ ক্যাঠা?
বলে আবারো সেই দুই দাঁতের ফাঁক দিয়ে থুতু ফেলে। এবারের ডেলিভারি ইয়র্কার। একেবারে ফোয়ারার উৎসমুখে গেঁথে যায়।
তরুণী মুখে হাসি ধরে রাখলেও কপালে চুলের গোড়া থেকে আর্য নাসিকা পর্যন্ত বিষাদ নেমে আসে।
- আপনি বারে বারে এমন আনসিভিক হচ্ছেন কেন?
সাথে সাথে মর্মনরা কালো ব্লেজার ছুঁড়ে ফেলে মাওয়ালী ছবির জিতেন্দ্রর মতো কিশোর কুমারের কণ্ঠে কোরাস ধরে , রামা রামা রামা রামা রামা রামা রে ..এ এ এ....
তাঁদের প্রত্যেকের টি-শার্টে হাভানা ক্লাবের জলছাপ। নিচে সোনালী অক্ষরে লেখা, আজ সন্ধ্যায় কিউবা লিব্রে'তে বিরাট মূল্যহ্রাস। গ্লাসপ্রতি দুই ইউরো তেত্রিশ সেন্ট।

মনির হোসেন ফোয়ারার জলে কুলি করে।

স্ক্রিন চারভাগ হয়ে দ্বিমাত্রিক চারকোণে হারিয়ে যায়।

২.

কাসেল শহরের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের সামনে বিরাট লন। সেখানে কিছু স্থায়ী বেঞ্চি পাতা। তার ঠিক বামকোণে গম্ভীর মুখে সান্টাক্লজ। তিনি অতি ধীরে ডানপায়ের জুতা খোলেন। তারপর মোজা। সি এণ্ড এ থেকে কেনা উন্টার সকস্ । খ্যাশ খ্যাশ করে পায়ের পাতা চুলকান। চোখেমুখে অরগাজম্ !

এবার স্ক্রিন চারদিক থেকে অন্ধকার হয়ে আসতে আসতে কষ্টিপাথর হয়ে যায়।

৩.

তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে কাকডাকা ভোর। তরুণ রবীন্দ্রনাথ কালু পালোয়ানের কাছে নানচাক্কু শিখছেন। পাশে মাও সে তুং। গায়ে নামাবলী। মাঝে মাঝে ডানহাতে বামবগল চুলকান। কেউ কিচ্ছুটি জানতে পায় না। একটু দুরে মাটিতে বসে ব্রুসলী টিফিন ক্যারিয়ারের ঢাকনা খুলে নানরুটি আর বটিকাবাবে মন দেয়। তার থেকে কোনাকুনি লিও শাও চী হাভানার ধোঁয়া ছাড়ে।
স্ক্রিন ঝন ঝন করে ভেঙে পড়ে।

৪.

প্রায়ান্ধকার শুড়িখানায় হিমু। বারের ওপাশে হাসান মোরশেদ। তাঁর হাতে বাকির খাতা। হিমুর মুখে রহস্যজনক হাসি। আমি বললাম, আমি তো বাকি খাইনা আমারে দ্যান! মনির হোসেন বলে, আমিও তো! হাসান মোরশেদ কাষ্ঠ কণ্ঠে বলেন, আইজকা দোকান বন্ধ বাড়িজ্জাও। সবুজ বাঘ দরজা থেকেই ফিরে যাচ্ছিল। আমরা তিনজন বেরিয়ে আসতে চারজন হলাম। আমাদের পরনে হাওয়াই শার্ট আর শর্টস।

চারজনে কোরাস গাই,

আমরা ক'টি ভাই
টাল টক্কর হতে চাই
কেরুর দারু গলায় ঢেলে
শ্বশুরবাড়ি যাই .....

৫.

রবীন্দ্রনাথ হন্তদন্ত হয়ে মিউনিখ সেন্ট্রাল স্টেশনে রেলওয়ের অফিসে ঢুকে পড়ে। লাইন ভেঙে গিয়ে অফিসারকে পাকড়ে ধরে।

- মিউনিখ থিকা দর্শনার গাড়ি কয়টায়?
অফিসার বললেন, যাব্বাবা! যা বললেন একখানা! চা খেয়েছেন নাকি?

No comments: