Wednesday, December 23, 2009

টুকরো টুকরো লেখা ১৭







উদ্ভট একটা ব্যারাম হয়েছে। হাতপা চাবায়। যেমনতেমন চাবানো না রীতিমতো কুচুরমুচুর করে চাবায়। কখনো মনে হয় ভোজপুরী পালোয়ান দিয়ে শরীর মালিশ করাই, কখনো মনে হয় স্পঞ্জের দাঁতওয়ালা কুমির দিয়ে হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালির আগ পর্যন্ত আনন্দদায়কভাবে চিবাই। কখনো নিজেই নিজের পা টিপি। কিছুক্ষণ টিপলে চোখ ভেঙে ঘুম পায়। আর এই সমস্যা হয় শুধু মাত্র একটু আরাম করে বসলে। ঠ্যাঙ যতক্ষণ হাঁটার উপর থাকে ততক্ষণ সুপার ফিট। এই রোগের ফেরে ইদানিং বেশীরভাগ সময় হাঁটা আর শোয়ার উপর থাকি। বসিটসি কম।

ডাক্তারের কাছে বলতে তিনি খ্যা খ্যা করে হাসেন। বলেন কোলেস্টেরল বাড়তির দিকে ছাড়া কোন সমস্যা নাই। আর যেই সমস্যার কথা বলছেন সেটা আপনার মনের। কোন ওষুধটষুধ না দিয়ে শুধু কিছু হালকা ব্যায়ামের পরামর্শ দিলেন।

হতে পারে ডাক্তারের কথাই ঠিক। অথবা এমন গূঢ় কোন রোগে ধরেছে যা কিনা আধুনিক বিজ্ঞান এখনো চিনতে পারে নাই। হতে পারে টোট্যালিটি মাইনাস আধুনিক বিজ্ঞান ইজ ইকায়াল টু কুচুরমুচুর। অথবা ইঁচড়ে পাকা ছিলাম বলে প্রৌঢ়ত্বও আগেভাগে কড়া নাড়ছে।

১.

সপ্তাহ দুই আগে আবার তেহারি রানলাম। একসময় সপ্তাহে কম্পক্ষে দুইবার রান্না করতাম। মাস তিনচার ধইরা একটু লাইনে থাকার চেষ্টা কইরা ক্রমাগত বেলাইনে যাইতেছি। লাইনের তো আর কোন নৈতিক ভিত্তি থাকেনা। রিপিটেশান ভঙ্গ করাই সেই ক্ষেত্রে বেলাইন। একটু একটু ঠাণ্ডা পড়া শুরু করছে তখন। রান্না শুরু করার আগ দিয়া হিমুরে ফোন দিলাম। কামলার জাগা থিকা রুশ দেশের শরবত পাইছিলাম একটা। তেহারি হইলো একরকম। মাংসটা মনে হয় মহিষাসুরের ছিল। পুরা ছাব্বিশ ঘন্টা টক দৈ দিয়া ম্যারিনেট কইরা পাক্কা দেড় ঘন্টা উচাজ্বালে কশাইয়াও সে নির্বিকার। যাই হোক খিদার ঠেলায় রান্না একসময় না একসময় শেষ হয়। লগে একটু রুশ দেশের শরবত। ঐতিহাসিক ব্যুৎপত্তি রুশ দেশে হইলেও জন্মাইছে দেখলাম কোন জার্মান ব্রুইয়ারিতে। ব্র্যান্ডের নাম ইয়েলেৎসিন। জার্মান ভদকাগুলির প্রায় সবই কোন না কোন রুশ রাষ্ট্রপতির নামে। গরুবাছুর, ইয়েলেৎসিন, পুতিনফ (পুতিনকা না...ঐটা অভিজাত ভদকা) ইত্যাদি। ইয়েলেৎসিন এর আগে কখনো খাই নাই।

তো সেইদিন মহিষাসুরের সাথে ইয়েলেৎসিন টাইনা চেয়ারে গাইথা গেলাম গা। কোন আলাপও আর জমে না। নানান বিষয় গুতাইতে গুতাইতে আইলো পলিটিক্যাল ডেভেলপমেন্টের কথা। অনেকদিন আগের থিকা এই বিষয়টা পড়তেছি। সেই ১৯৯৯-২০০০ সালে কম্পারেটিভ পলিটিক্সে পড়ছিলাম। বৈদেশে আইসা ঐভাবে একটা পেপার হিসাবে না পড়লেও বিভিন্ন প্রসঙ্গের ভগ্নাংশ হিসাবে পাইছি। তাতে আমি কৈছিলাম যে প্রতিরোধের প্রবণতা রাজনৈতিক উন্নয়ন পরিমাপের একটা খুব প্রধাণ প্যারামিটার। আসলে সেইটা রাজনৈতিক উন্নয়ন তাত্ত্বিকদের একাংশের বক্তব্য। অনেকে আরো অন্য অনেক কিছু মনে করেন। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে (মহিষাসুর দিয়া ইয়েলেৎসিন না খাইয়া) যেইসব তাত্ত্বিকরে দোসবন্ধু মনে করি তারা রাজনৈতিক উন্নয়ন'রে সরাসরি ভূয়া ধারণা বইলা ফতোয়া দিছে। কিন্তু অত কথা ঐসময় মাথায় নাই। প্যাটে মহিষাসুর। আমি একটু জাতীয়তাবাদী ঝোঁক নিয়া কইতেছিলাম যে যেহেতু প্রতিরোধের ঘটনা আমাদের নিকট আর সুদুর অতীতে খুব ঘন ঘন সেই বিচারে আমরা যারা অনেকদিন ধইরা স্বৈরশাসন সহ্য করছে তাদের থিকা পলিটিক্যালি বেশি ডেভেলপ্ট। হিমু গেলগা চেইতা। কয় যেমন? আমি কইলাম যেমন ইন্দোনেশিয়া। কয় ওদের সাথে আমাদের কোন পার্থক্য নাই। আমি কইলাম আছে। কারণ আমরা কোন মার্শাল ল'রে দশবছরের বেশী দাঁড়াইতে দেই নাই। আর ওরা টানা বত্রিশ বছর ধইরা চরম প্রতিক্রিয়াশীল সুহার্তোরে সহ্য করছে। যেই লোক ক্ষমতায় বসতে বসতেই দশ লাখ মানুষ জবাই করছে। হিমু কয় ওগুলা বাদ দেন। আমাগো দেশে তো তিরিশ লাখ শহীদ হইছে। আমরাতো মুক্তিযুদ্ধ করছি। কিন্তু আফটারমাথগুলা চিন্তা কইরা দেখেন কোন পার্থক্য আছে কি না। আমি তাও হাল ছাড়িনা। কইলাম ক্যান আমরা তো গত সব কয়টা নির্বাচনে বিপরীতে ভোট দিছি। কয় তাতে কী লাভ। আমি আর কিছু কইনা। কারণ আমি জানি আমি ভূল কৈতাছি। কেমনে কেমনে জানি হান্টিংটন দিয়া তর্ক শুরু কইরা দিছি। লেভেল অফ ইন্সটিটিউশনালাইজেন জাতীয় প্যারামিটাররে যারা বর্ণবাদী কইছে সারা জীবনতো তাগোই সাপোর্ট কইরা আইছি। আমার গুরু বইলা জানতাম বারান, সুইজি, গুণ্ডার ফ্রাঙ্ক, হামজা আলাভী, প্রভাত পাটনায়েক, পুলানজা, ফস্টার আর ইদানিংকালে ক্রিস্টফ শেরার, বাস্তিয়ান ফন আপেলডর্ন, রবার্ট ওয়েইড, হাইনৎস হোলৎস, রবার্ট স্টাইঙ্গারভাল্ড প্রমুখ আরো অনেক অনেক জ্ঞানী লোক যারা মোটামুটি হান্টিংটন বা এস.ই,ফাইনার'দের উল্টা রাস্তায় হাঁটছে। আমি তো জানি রাজনৈতিক উন্নয়ন তত্ত্ব হইল নানান এঙ্গেলে লাউকদু কইরা শেষে কিউইডি টানে অতএব হোয়াইট ককেশিয়ানরা সভ্যতর রেইস....এবং তাহারা যিশুর ভক্ত বলিয়া নিজেদের ঘোষনা করে ... এবং সাধারণত সিডিইউ'রে ভোট দেয় ....

আমি হয়তো একটু ইতিবাচক ভাবতে চাইতেছিলাম। শর্টরান ইতিবাচকতা যারে কয় আর কি। ভাবতে চাইতেছিলাম যে শহরের সমস্ত বানর একদিন মারা যাবে ....

সব কিছুর জন্য দায়ী ঐ ইয়েলেৎসিন। এরপর থিকা জার্মান ভদকা আর খামুই না। আর খাইলেও কম্পক্ষে পুতিনফ ....


২.

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার শিডিউল আবারো পিছাইছে। আইনগুলা আমরা সবাই মোটামুটি জানি। সেই কবে থিকা হেভিওয়েট আইনজীবিরা বইলা আসতেছে আইনে কোন সমস্যা নাই খালি রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষা। এই অপেক্ষার লাইনে ইতিমধ্যে চোখের সামনে সুনাডা কয়েকবার ফলছেও। এইবার নির্বাচনের পর থিকা খুব খিয়াল করার কথা বলা হইতেছে, খোলা রাস্তা/ ভার্চুয়াল জগত সব জাগা থিকা। বর্তমান সরকারী দল সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অতি তিক্ত থাকায় তারা যে এইসব ভালো কথা পাত্তা দেয় সেইটা চুপচাপ মাইনা নিতে মোটেও ভরসা হয় না। পুরা একটা বছর চইলা যাইতেছে। জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করার প্রচলিত শিডিউল কাছাইয়া আসতেছে। এই অবস্থাতেও রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের বিচার শুরু করার শিডিউল পিছাইলে যারা নির্বাচনী দুধভাতের বদলে সত্যি সত্যি ধর্মীয় মৌলবাদের আইনসিদ্ধ খতম দেখতে চায় তারা একটু চিন্তিত হইতেই পারে। আসলে আমার প্রত্যাশাটা যেরকম সেরকম প্রত্যাশা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটারদের খুব বড় সংখ্যারও। এইটা কোন সমীক্ষা ছাড়াই যৌক্তিক অনুমানের জায়গা থিকা বলা যায়। এই বিষয়ে ইতিমধ্যে গত এক বছরে বর্তমান সরকাররে কম্পক্ষে লাখখানেক রিমাইণ্ডার দেওয়া হইছে। তাতে তারা দৃকপাত করেন নাই যথারীতি। সম্ভবত লুহার তালা কানে না দিলে গদীতে পাছা রাখা যায় না।

তবে আমি চাই আমার এই অনুমানগুলা ভুল হোক। সত্যি সত্যি বিচার শুরু হোক। ২০১৪ সালের মধ্যে হয় রাজাকার/আলবদর/আলশামসগুলিরে ঝুলান নাইলে কম্পক্ষে কনডেম সেল পর্যন্ত পৌছান। নাইলে আম ছালা সবই যাইবো। এই ভবিষ্যতবানীর যাথার্থ ভোটের রাজনীতির বাকিসব ছাগু যুক্তি এবং মাইরপ্যাচের উর্ধ্বে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা এমনিতেই বেশী। কারণ শেষ বিচারে আওয়ামী লীগ নিতান্তই বিএনপির মতো আরেকটা দল। নির্ভরশীল আর্থরাজনৈতিক অবকাঠামোতে কোঅপ্টেটিভ ডেমোক্র্যাসীর বাইরের বাস্তবতা পাওয়ার সম্ভাবনা আমাদের ছিল ১৯৭২ থিকা ১৯৭৫ এ। সেই সুযোগ বহুলাংশে বঙ্গবন্ধু নিজেই নষ্ট করছেন। কইরা নিজে নিহত হইছেন। বাঙ্গালীর বুকেও ছুরি মারছেন। আমি আওয়ামী মন:স্তত্ত্ব যা বুঝি তাতে তারা ভাবতেছেন যে গোআ-নিজামীদের ঝুলাইলে আউমিলীগরে ইসলাম বিরোধীটিরোধী বইলা ভোট কইমা যাইবো। এই ভাবনাটা ভুল। ভুল এই হিসাবে যে এই প্রচারনা ১৯৫৪ থিকাই আছে। তবুও এরপরে বেশ কয়েকটা নির্বাচনে তারা নানারকম মৌলিক স্বপ্ন দেখাইয়া ক্ষমতায় আইছেন। মোটামুটি কোনটাই পুরন করেন নাই। তারপরেও তারা ফিরা আসতে পারছেন সাম্রাজ্যবাদের আশির্বাদে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাণের গুণগত দূর্বলতার কারণে। তবে এইবারের সাথে আগের প্রত্যেকবারের খুব বড় পার্থক্য হইতেছে বস্তু নিজের ভিতর থিকাও পারিপার্শ্বের প্রভাবে হোমোসেপিয়েনদের সচেতন প্রয়োগ নিরপেক্ষভাবে পরিবর্তিত হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গটা সেইভাবে গত ৩৮ বছরে বহুব্যবহারে পারিপার্শ্বের সাথে বিক্রিয়া করছে এর সমর্থক বা বিরোধীতাকারীদের ইচ্ছানিরপেক্ষভাবে। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের এই ন্যুনতম বোধ না থাকলে তারা এইবারও সামনে যত্ন কইরা পাতা ফাঁদে পা দিয়া পাতালে ঢুকবেন।

গাফফার চৌধুরী একটা রামছাগল।

৩.

আজকে সকালে জানালা খুইলাই দেখি চারদিক সাদা। মোটামুটি হালকা এক আস্তর স্নো পড়ছে। মৌসুমের প্রথম স্নো। আমি বরাবরই তুষারের ভক্ত। আর প্রবল শীতে আমার শরিরটাও অনেক অনেক বেশী ভালো থাকে। এইবারও আশাকরি থাকবে। তাপমাত্রা যত নিচে নামে এই কারণে আমার উল্লাস তত বাড়ে। চুড়ান্ত কোণঠাসা জীবনে এইরকম দুইএকটা উল্লাসের থাকলে ক্ষতি কী?

No comments: