Friday, December 03, 2010

ফোরেলে সন্ধ্যায় স্মৃতি খাউজানি

সচলায়তনে ইদানিং বেশ রেসিপিটেসিপি পড়তেছে। দিফিওর রেসিপি ধইরা কালী পূজার দিন কাচ্চি রানছিলাম। মাইনসে ভালোই কইছে খাইয়া। সেইটা যে পুরাপুরি ভদ্রতা না পাতিল খালি হওয়া তার প্রমাণ। তারপরের কয়েকদিন গেলো আবারো ধুনফুন খাইয়া। কোনদিন ইউনির মেন্জায়, কোনদিন তুর্কি দোকান থিকা ড্যোনার কিংবা ভেড়ার মাথার সুপ আর নাইলে রুটি দিয়া টমেটো ডিমের লণ্ডভণ্ড।

সময়টা খারাপ। আগেও খারাপ ছিল। ভবিষ্যতেও খুব সাংঘাতিকভাবে বদলাইয়া যাবে তেমন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাইতেছে না। জীবনটা এই পর্যন্ত বাঁশের উপর দিয়া গেছে। ভবিষ্যতও খুব সম্ভবত যাবে। বাঁশের আয়তনটায়তনে হয়তো কখনোসখনো পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু বাঁশ যে খাইয়াই যাইতে হবে সেই বিষয়ে এই মুহুর্তে তেমন কোন সন্দেহ নাই।

কথা হইলো দু:সময়ের দু:খে খাওয়া তো আর বন্ধ থাকবো না। সাদাকলারের কামলা হোক, ফকিন্নির পুতের কামলা হোক, ধার কইরা হোক, ভিক্ষা কইরা হোক যতক্ষণ জান আছে প্যাট খালি রাখার কোন অপশন নাই। আইজ সকালে কামলা দিয়া দুপুরে লাইব্রেরীতে কিছু সময়হত্যা কইরা   বিকালের দিকে বাইর হইয়া একটা বিড়ি ধরাইয়া এই কথাগুলাই ভাবতেছিলাম। ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরার পথ বদলাইয়া সোজা গেলাম গিয়া টেগুটএ। টেগুট হইলো উচ্চমধ্যবিত্তের সুপার মার্কেট। মানে সব জিনিসের দামই অন্য সুপার মার্কেটগুলার থিকা একটু কইরা বেশী। গিয়া কতক্ষণ এদিকসেদিক ঘুরলাম। এইটা সেইটা হাতে নিয়া লাড়াচাড়া কইরা আবার থুইয়া দেই। এরকম ঘুরতে ঘুরতে একসময় গেলামগা যেইখানে তাজা মাছ ব্যাচে সেইখানে। দেখি একটা মাত্র আনগেবট মানে সস্তার অফার আছে এই সপ্তাহে। সেইটাও আমার অতিপ্রিয় মাছ ফোরেলে। ইংরেজীতে যারে কয় ট্রাউট। অফারের শিল্ডের উপর বড় কইরা লেখা ১ ইউরো। আমার তো মন মেজাজ ভালো হইয়া গেলো লগে লগে। তাজা ফোরেলে মোটে এক টাকা ! কইলাম দেন একটা। বেডি দেখি বড় একটা উঠাইয়া সেইটা আবার ওজন করে। লেবেলের দিকে খিয়াল কইরা দেখি ১ ইউরোর উপর ছোট ছোট অক্ষরে ১০০ গ্রাম লেখা। পুরা মাছটার দাম খাড়াইলো তিন ইউরো তেত্রিশ সেন্ট। ফ্রোজেন কিনলে দুই ইউরোতে দুইটা পাইতাম। তাতে পার্থক্য হইতে যে বাসায় আইসা সেটা গলাইতে আবার কিছু টাইম যাইতো। কী আর করা মাছ কিনা টেগুট থিকা বাইর হইয়া বাসায় ফিরতে ফিরতে মনে হইলো কিনাই যখন ফালাইছি তখন আইজকা একটা গজব এক্সপেরিমেন্ট ফরজ।

রাস্তা পার হইয়া হাঁটতে হাঁটতে গেলামগা রেভে। এইটাও একটু নাক উঁচা সুপার মার্কেট তবে টেগুটের থিকা কিছু কম।  এক কেজি আলু কিনলাম। একবোতল অলিভ অয়েল আর এক বোতল বালজামিকো। বালজামিকো জিনিসটা মনে হয় জীবনে এই প্রথম কিনলাম।  কে জানি একবার কইছিলো যে ফোরেলে বেক করার সময় পিঁয়াইজের লগে একটু কইরা বালজামিকো দিলে স্বাদ বাড়ে। 

মাথার মধ্যে নানারকম আইডিয়া ঘুরতাছে কী দিয়া কেমনে কী। বাসায় আইসা প্রথমেই যেইটা করলাম ওভেন অন কইরা ১৮০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে দিয়া দিলাম। তারপর গল্ফের বলের সাইজের পিঁয়াইজ কাটলাম একটা এক্কেরে পুরা কুচাইয়া। মার্বেল সাইজের দুই কোয়া রসুন কাটলাম আরো সূক্ষ কুচি কইরা। লগে চাইরটা মাঝারি সাইজের কাঁচামরিচ।  তারপর সবগুলারে একলগে কইরা আরো একদফা মৌলিক কুচি। তারপর তিনটা মোটামুটি বড় সাইজের আলুর চামড়া ছাড়াইয়া একেকটারে মাঝখান থিকা দুইভাগ করলাম। ব্যাস কাটাকুটা শ্যাষ।

এইবার ফোরেলের প্যাকেট খুইলা দেখলাম প্যাট ফাড়াই আছে। প্যাটের মধ্যে পিঁয়াইজ-রসুন-কাঁচামিরচের ঘন্ট ভইরা দিয়া উপরে দুইতিন ফোঁটা বালজামিকো দিয়া দিলাম। এইবার মাছের সাইজের থিকা এদিক এদিক আধাবিঘৎ মতন বড় রাইখা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ছিঁড়লাম। তারপর ওর উপরে একটুস খানি অলিভ অয়েল আর দুই চিমটি মতন লবণ ছড়াইয়া তার উপরে রাখলাম মাছটা। এইবার মাছের উপরে আর দুই চিমটি মতন লবণ আর সামান্য অলিভ অয়েল দিয়া অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলরে এমনভাবে মোড়াইয়া দিলাম যাতে বেগানা বাতাস কোন চান্স পায়। আরো একটা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়া আলুর সাইজমত ঠোঙ্গা বানাইয়া তার মধ্যে প্রথমে দিলাম কিছুটা আইরিশ বাটার আর লবণ তার উপর আলু দিয়া তারো উপর আবারো দুইতিন চিমটি লবণ ছিটাইয়া দিলাম। তারপর মনে হইলো আরে রেসিপি যেই দেশেরই হোক। আমি যেইটা করতেছি সেইটা কজমোপলিট্যান  হওয়া ফরজ। পিঁয়াইজের আর কাচামরিচের কুঁচি যা বাঁইচা গেছিলো তার পুরাটাই ছিটাইয়া দিলাম আলুর উপরে। তারপর ঐ আলুরেও এয়ারটাইট কইরা ঠোঙ্গা দুইটা দিলাম ওভেনে ভইরা। ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় সন্ধ্যা ছয়টা বিশ।

তারপর প্রথমে গত তিনদিনের জইমা থাকা থালাবাটি ধুইলাম। অরবাদে একটা নিরতিশয় সস্তা হোয়াইট ওয়াইনের কর্ক খুইলা কম্পুর সামনে আইসা বসলাম। কম্পক্ষে সোয়া একঘন্টা আরো বইসা থাকা লাগবো। কারণ তাপ দিছি মোট ১৮০ ডিগ্রি। কতক্ষণ দৈনিক পত্রিকা আর সচল লাইড়া গেলাম ইউটিউবে। পুরানা বাংলা ছবির গান শুন্তে খুব ইচ্ছা করতাছিল কয়েকদিন ধইরা। দিলাম সার্চ। কয়েক মাস আগেও একবার এরকম সার্চ দিছিলাম তখন কিছুই পাই নাই। আজকে টিবি দেওয়া মাত্র দেখি একটার পর একটা আসতেছে। শুন্তে আর দেখতে থাকলাম একেকটা কয়েকবার কইরা। আপনারাও শুনেন। ততক্ষণ আমার ফোরেলে আর আলু ওভেনে সাইজ হইতে থাক
 







সবগুলাই ফালতু গান। কিন্তু চালু গান। এরকম চালুগান আজকাল আর হয় না। অথবা হয় কিন্তু আমার কাছে চালু লাগে না।

একসময় দেড় ঘন্টা পার হয়। ওভেন খুইলা বাইর করলাম। বড় একটা বাসনে সাজাইলাম। এখন খামু। কুত্তার মতো খিদা লাগছে। খাওয়া শুরু করার আগে লেখাটা পোস্টাইলাম।

প্রৌস্ট উণ্ড গুটেন আপেটিট! 

No comments: