তারপর সময় বরাবরের মতোই এলোমেলো। পৌণপুণিক ধরা খেতে খেতে একসময় প্ল্যান করাই বাদ দিলাম। সঞ্চয় বলতে ফেলে আসা সময়ের খাবলাখানেক টাস্কি। তাই থেকে পেটিবুর্জোয়া লবণ-চামচের আধপেটা চাখাচাখি।
৭৫০ একরের এমাথা ওমাথা অনেক হলো। বাকি থেকে গেল আসলে যা লিখতে চেয়েছিলাম। প্রতিটা মজমার তলানিতে থেকে যেত কেবল পরবর্তী মজমার স্বত্ত্ব, ইউক্যালিপটাসগুলোকে ক্ষণিক চৈতন্যপ্রভা দিয়ে উবে যেত বোধি। ফজিলতের উছিলা ফিরে ফিরে আসতো।
২২ ডিসেম্বর ১৯৯৯। এই তুচ্ছ রাতটি কেন স্মৃতিকামড়ে পড়ে আছে ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো সেদিন কোন এক বিশেষ পূর্ণিমা ছিল। প্রচন্ড শীত। ক্যাম্পাসভরা লোক বিকাল থেকে। কিন্তু যোগাযোগপ্রমাদের কারণে আমাদের চক্রের কে কোথায় আছে বুঝতে পারছিলাম না। অঞ্জন বাড়ি চলে গেল মাথা ব্যাথা বলে। আস্তে আস্তে অন্ধকার হলো। মহাকাশ মিলনভাইরা সেন্ট্রাল মাঠে টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ দেখাচ্ছিলেন। সেখানে বিশাল লাইন। আমি হন হন করে হেঁটে যাচ্ছিলাম ডেইরি থেকে প্রান্তিকের দিকে। সাথে আয়েশা,কৃতি কণিকা,শুভ,নোবেল আরো কে কে যেন। জাহানারা ইমাম পার হতে পাশে রিক্সা থামলো। সাকি ভাই আর রাহী। রাহী তখনো পরনে প্রতিচ্যমুখী। জানতো চাইলো বিশ্বজিত দাশরা কোথায়? বললাম আমরাও আসলে খুঁজছি। তারপর আরেক চক্কর ঘুরে অডিটোরিয়ামের রসায়ণভবনমুখী চিপার কাছাকাছি যেতেই বাঁশির সুর ভেসে এলো। সায়েম। ওর তখনো মোক্ষলাভ হয়নি। শামীম গাইছিল চিরদিন পুষলাম এক অচীন পাখী। প্লাস্টিকের ডিব্বায় তাল দিচ্ছিলেন রাজকুমার বিশ্বাস, তার সাথে বাবড়ি চুল নেড়ে সম্মতি দিচ্ছিল শশাঙ্ক আর বিশ্ব। মজলিস প্রায় ভরা। তারপরো বাকিদের স্থান হল চেপেচুপে। অবশিষ্ট তবারক সবার কপালে সমানভাবে জুটলো না। দুতিনজন বাদে কেউই সেখানে গায়ক নন। তবু গলা খুলে গেল। সায়েমের বাঁশির সাথে ধরলাম শ্যামরূপ ধরিয়া এসেছে মরণ । তারপর রাহী শুরু করলো দাড়িয়ে ধূম চলেছে বেচাকেনা । আরেকটু পরে যোগ দেয় ২৭তম ব্যাচের ছোটখাট সজল। সেদিনের মোটামুটি ৯৮% জুড়ে ছিলেন সাঈজী। জোৎস্নার আঁচে জঙ্গলের সাথে গুরুচন্ডালী দাড়িগোঁফ জীবন্ত হয়ে উঠছিল।
মেয়েরা উঠি উঠি করছিল। বহু তদবীর করেও খোঁয়াড়ে ঢোকার মেয়াদ রাত বারোটা থেকে এগোনো যায়নি। সাকি ভাই চলে গেলেন মিলনভাইদের মহাকাশ জটলায়। আমি মনখারাপ করে একদফা হলে ফিরলাম। ডেইরিতে খাবার শেষ। বি-ব্লকের ডাইনিং এর পাশ দিয়ে উঁকি মেরে দেখি কালুর মেসে তখনো ঘটিবাটি নড়ে। মিতভাষী প্রিন্স ভাত খাচ্ছিল চুপচাপ। আমার মিল দেওয়া ছিল না। কালু বললো তরকারি শেষ। শুধু ডাইল দিয়া মারেন। দোকান বন্ধ। ডিম নাই। একটু পরে কোত্থেকে একবাটি গিলা কলিজা আবিস্কার হলো। প্রিন্স হঠাৎ নিরবতা ভেঙে কুশল জিজ্ঞাসা করলো। বললাম ভালো। মৃদুস্বরে বলে, কছ কি! ভেবেছিলাম আমিই শেষ লোক। হলো না। বেসুরো কোরাসে দলছুট ভাজতে ভাজতে নির্মলেন্দু সিংহ, সাজ্জাদ আর সুমন্ত হাজির হলো। সুমন্ত আবার কাছ ঘেসে বসে জিজ্ঞাসা করলো, তোর কাছে সিগারেট আছে? সম্মতি দিলাম মাথা নেড়ে।
শীত হলেও সেদিন কুয়াশা ছিল না। বি-ব্লকের ছাদে একেবারে মাথার উপর বর্ধিত চান্দু। রাত তখন আড়াইটার মতো। সাজ্জাদের মেজাজ একটু বেশী ভালো। হেলেদুলে গিয়ে প্রিন্সের পেটে খোঁচা দিল। প্রিন্স মৃদূস্বরে বললো, কছ কি! সাজ্জাদ উচ্চকণ্ঠে পাঞ্জেরী শুরু করে হঠাৎ থেমে , একদিন এক সাধুর সাথে দেখা...মাঝরাস্তায় কয়, কছ কি! মাথায় আইডিয়া জ্বলে উঠলো। বর্ধিত জোৎস্নার আলোতে ষষ্ঠ পকেট থেকে বের করা নোটবইতে টুকলাম :
একদিন মনোবিকলন শেষে
গৃহত্যাগ করি
দেখি
পিপুলগাছের নীচে এক সন্যাসী
আমার চোখে চোখ রেখে বলে ,
কছ কি !
৭৫০ একরের এমাথা ওমাথা অনেক হলো। বাকি থেকে গেল আসলে যা লিখতে চেয়েছিলাম। প্রতিটা মজমার তলানিতে থেকে যেত কেবল পরবর্তী মজমার স্বত্ত্ব, ইউক্যালিপটাসগুলোকে ক্ষণিক চৈতন্যপ্রভা দিয়ে উবে যেত বোধি। ফজিলতের উছিলা ফিরে ফিরে আসতো।
২২ ডিসেম্বর ১৯৯৯। এই তুচ্ছ রাতটি কেন স্মৃতিকামড়ে পড়ে আছে ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো সেদিন কোন এক বিশেষ পূর্ণিমা ছিল। প্রচন্ড শীত। ক্যাম্পাসভরা লোক বিকাল থেকে। কিন্তু যোগাযোগপ্রমাদের কারণে আমাদের চক্রের কে কোথায় আছে বুঝতে পারছিলাম না। অঞ্জন বাড়ি চলে গেল মাথা ব্যাথা বলে। আস্তে আস্তে অন্ধকার হলো। মহাকাশ মিলনভাইরা সেন্ট্রাল মাঠে টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ দেখাচ্ছিলেন। সেখানে বিশাল লাইন। আমি হন হন করে হেঁটে যাচ্ছিলাম ডেইরি থেকে প্রান্তিকের দিকে। সাথে আয়েশা,কৃতি কণিকা,শুভ,নোবেল আরো কে কে যেন। জাহানারা ইমাম পার হতে পাশে রিক্সা থামলো। সাকি ভাই আর রাহী। রাহী তখনো পরনে প্রতিচ্যমুখী। জানতো চাইলো বিশ্বজিত দাশরা কোথায়? বললাম আমরাও আসলে খুঁজছি। তারপর আরেক চক্কর ঘুরে অডিটোরিয়ামের রসায়ণভবনমুখী চিপার কাছাকাছি যেতেই বাঁশির সুর ভেসে এলো। সায়েম। ওর তখনো মোক্ষলাভ হয়নি। শামীম গাইছিল চিরদিন পুষলাম এক অচীন পাখী। প্লাস্টিকের ডিব্বায় তাল দিচ্ছিলেন রাজকুমার বিশ্বাস, তার সাথে বাবড়ি চুল নেড়ে সম্মতি দিচ্ছিল শশাঙ্ক আর বিশ্ব। মজলিস প্রায় ভরা। তারপরো বাকিদের স্থান হল চেপেচুপে। অবশিষ্ট তবারক সবার কপালে সমানভাবে জুটলো না। দুতিনজন বাদে কেউই সেখানে গায়ক নন। তবু গলা খুলে গেল। সায়েমের বাঁশির সাথে ধরলাম শ্যামরূপ ধরিয়া এসেছে মরণ । তারপর রাহী শুরু করলো দাড়িয়ে ধূম চলেছে বেচাকেনা । আরেকটু পরে যোগ দেয় ২৭তম ব্যাচের ছোটখাট সজল। সেদিনের মোটামুটি ৯৮% জুড়ে ছিলেন সাঈজী। জোৎস্নার আঁচে জঙ্গলের সাথে গুরুচন্ডালী দাড়িগোঁফ জীবন্ত হয়ে উঠছিল।
মেয়েরা উঠি উঠি করছিল। বহু তদবীর করেও খোঁয়াড়ে ঢোকার মেয়াদ রাত বারোটা থেকে এগোনো যায়নি। সাকি ভাই চলে গেলেন মিলনভাইদের মহাকাশ জটলায়। আমি মনখারাপ করে একদফা হলে ফিরলাম। ডেইরিতে খাবার শেষ। বি-ব্লকের ডাইনিং এর পাশ দিয়ে উঁকি মেরে দেখি কালুর মেসে তখনো ঘটিবাটি নড়ে। মিতভাষী প্রিন্স ভাত খাচ্ছিল চুপচাপ। আমার মিল দেওয়া ছিল না। কালু বললো তরকারি শেষ। শুধু ডাইল দিয়া মারেন। দোকান বন্ধ। ডিম নাই। একটু পরে কোত্থেকে একবাটি গিলা কলিজা আবিস্কার হলো। প্রিন্স হঠাৎ নিরবতা ভেঙে কুশল জিজ্ঞাসা করলো। বললাম ভালো। মৃদুস্বরে বলে, কছ কি! ভেবেছিলাম আমিই শেষ লোক। হলো না। বেসুরো কোরাসে দলছুট ভাজতে ভাজতে নির্মলেন্দু সিংহ, সাজ্জাদ আর সুমন্ত হাজির হলো। সুমন্ত আবার কাছ ঘেসে বসে জিজ্ঞাসা করলো, তোর কাছে সিগারেট আছে? সম্মতি দিলাম মাথা নেড়ে।
শীত হলেও সেদিন কুয়াশা ছিল না। বি-ব্লকের ছাদে একেবারে মাথার উপর বর্ধিত চান্দু। রাত তখন আড়াইটার মতো। সাজ্জাদের মেজাজ একটু বেশী ভালো। হেলেদুলে গিয়ে প্রিন্সের পেটে খোঁচা দিল। প্রিন্স মৃদূস্বরে বললো, কছ কি! সাজ্জাদ উচ্চকণ্ঠে পাঞ্জেরী শুরু করে হঠাৎ থেমে , একদিন এক সাধুর সাথে দেখা...মাঝরাস্তায় কয়, কছ কি! মাথায় আইডিয়া জ্বলে উঠলো। বর্ধিত জোৎস্নার আলোতে ষষ্ঠ পকেট থেকে বের করা নোটবইতে টুকলাম :
একদিন মনোবিকলন শেষে
গৃহত্যাগ করি
দেখি
পিপুলগাছের নীচে এক সন্যাসী
আমার চোখে চোখ রেখে বলে ,
কছ কি !
No comments:
Post a Comment