তারপর আরো কিছুকাল গেলো। কিছুকাল ব্যাপারটা যেভাবে যায় সেভাবেই গেলো। মীর মশাররফ হোসেন হলে একদা ফ্লোরিং করতাম। তারপর খাটে উঠলাম। তারপর নানা যূগ পেরিয়ে ডাবল রুমে একা। ১০২ বি। বসন্তের বাতাসের মতো বর্ষার জলও আড়াআড়ি বয়ে যেত সে ঘরে। শীতকালে দেওয়ালগুলো হালকা সবুজে ফুলে উঠতো। আমি বিরাট ডবল রুমে আধকাঁটা মোরগের মতো ইচিং বিচিং খেলতাম হাঁচি দিতে দিতে। পলো দিয়ে ধরবার কেউ ছিল না। নাসিকা ফুলতে ফুলতে একপর্যায়ে পুরো শাটার নামিয়ে দিতো। হিস্টামিন বিরোধী বটিকা খেয়ে ভোদাই হয়ে ঘুর ঘুর করতাম ৭৫০ একর। কবিতার জ্বর খানিক কমলো। কবিতা পড়াও কমলো। বাড়তে থাকলো দেওয়ালের শ্যাওলা। বিনয় মজুমদারের কপাল কুঁচকে গেলো সবুজ আভায়। একসময় খসে পড়লেন খানিক পলেস্তারা সহ। তবু মায়া ছাড়তে পারিনা। একতলার আবেদন আলাদা। তারউপর অ্যাটাচ বাথ। ক্রস ভেন্টিলেশন সেখানেও। পিএটিসি থেকে ভেসে আসতো থেকে থেকে প্রাণহরা সুবাস। তবুও মায়া রহিয়া গেলো। বৃহৎ সমাবেশগুলো আমার ঘরেই জমতো। রাজনীতি,দর্শন,কেকোথায়কার্সাথেকেম্নে,কবিতা, মুখেনমারিতংজগত, ২৯,ব্রে,ব্রীজ,শুকনো, কর্মকর্তার পছন্দ,চুয়াডাঙ্গার শরবৎইত্যাদির জন্য ১০২/বি রীতিমতো একটা স্বর্গ।এতবড় একখানা ঘর একাই দখলে রাখা সেই স্থান সঙ্কটের কালে কোন সহজ কথা নয়। চুড়ান্ত নিরিহ হলেও তস্করসদৃশ খোমা দেখে প্রভোস্ট পর্যন্ত বিভ্রান্ত হতেন। মাথায় যথেষ্ট খুস্কিসহ উস্কোখুস্কো চুল আর দাড়িগোফে অনেক কাজ হতো। ক্যাডাররা তেমন ঘাটাতো না। যদিও আমি ঠিকই ভয় পেতাম। একদিন সকালে ২ নম্বর গেটে কালুর দোকানে যাচ্ছিলাম প্রাতরাশ সারতে। প্রভোস্ট স্যার ডাকলেন। সভয়ে জানালেন তাঁর এক ভাতিজা ভর্তি হয়েছেন। আশে পাশে কোন সীট খালি আছে কি না ইত্যাদি। আমি বললাম আমার ঘরেই একটা সীট খালি। আর ঘরের অবস্থা খুব খারাপ। মেরামত করতে হবে। স্যার বললেন আচ্ছা।
১৯৯৯ সালের ১১ মার্চ চারতলায় উঠে গেলাম সিঙ্গেলরুমে। ৪৩২/বি। বাড়াবাড়ি রকমের শুকনো। বইপত্রগুলো নতুন করে গোছালাম। আমার বইটই গোছানো হতো বছরে একবার। এরপরে সব মিলিয়ে আর দুইবার গোছানো হয়েছে। মীর মশাররফ হোসেন হলের বিব্লকের চারতলার সিঙ্গেলরুমের প্যাসেজকে(৪০১-৪৩৮) মন্ত্রীপাড়া বলা হতো। ১৯৯৮ সালের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের শীর্ষক্যাডাররা পলায়ন করায় চিহ্নিত কয়েকটি ঘর সীলগালা করা ছিল। একসময় সেগুলো ভাঙ্গা হলে নিরিহ পোলাপান সেগুলো আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে দখল করে নেয়। শিবির-রেপিস্ট-ক্যাডারমুক্ত হলে তখন রসবোধই ক্ষমতার উৎস। বারান্দা,কমনরুম,ডাইনিং,ক্যান্টিন,হালিম-শহীদের দোকান,প্যাসেজ সব মিলিয়ে চলতো লাইভ ট্রলিং। টিকে থাকতে পারলে তাকে দলভুক্ত করা হতো। এসবক্ষেত্রে বরাবরই টার্গেট থাকতো ট্রলিঙে সবচাইতে পিছিয়ে থাকা খোকাকূল। একবালতি পানি আর আকণ্ঠ গালাগালির অভ্যর্থনায় কেঁদে ফেলা খোকাকে পাকিয়ে তোলার অ্যাসাইনমেন্টের লাইফটাইম কনসালটেন্ট ছিলেন কালামাসুদ নামে সমধিক পরিচিত আমাদের গ্রেট মাসুদ ভাই। (তবে আদর্শ হিসাবে ছিলো পঞ্চপান্ডবের নামে প্রচলিত গল্পগুলি) তিনি বলতেন ট্রলিং হচ্ছে শিবির ঠেকানোর সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্র। আমিও বলতাম। এখনো বলি। রসবোধের ঘাটতি প্রতিক্রিয়াশীলতার মৌল উপাদানগুলোর একটি। কেউ মুখভরে গালিগালাজের স্বাদ পেয়ে গেলেই তার সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিন্ত হতাম। গালির ডেলিভারি থেকেই টের পাওয়া যেত এটা তার যন্ত্রণার প্রকাশ না রসবোধের প্রকাশ। যন্ত্রণা প্রকাশকদের উপর আলাদা করে নজর রাখা হতো। যন্ত্রণার ঠারে তাদের গালিতে কোন সৃজনশীলতা দেখা যেত না। আজ পর্যন্ত আমার এই এসিড টেস্টের ফলাফল খুব নির্মমভাবে সত্য হয়েছে।
২৭ তম ব্যাচ ঢুকেছিল ১৯৯৯ সালের শুরুতে। ক্যাম্পাস তখন মোটামুটি মুক্ত। ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ থাকলেও তারা কেন্দ্র কতৃক অস্বীকৃত হওয়ায় রেপিস্টদের মতো করে সাধারণ ছাত্রদের উপর চড়াও হতে পারেন নি। ক্যাম্পাস মুক্ত মানে মীর মশাররফ হোসেন হল মুক্ত থেকেও বেশী কিছু। ২৭ তম ব্যাচের এক ভালো ছেলে, আমাদের মাসুদ ভাইয়ের কাছে কেঁদেকেটে নালিশ করল। মাসুদভাই খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, "খুব খারাপ কথা।" ছেলে বললো,"হ্যা ভাইয়া আমাকে মুখে উচ্চারণ করা যায় না এমনসব কথাবার্তা বলেছে।" মাসুদ ভাই বললেন," হুমমম...দ্যাখ একটা কথা আমি সবসময়ই বইলা আসতেছি যে সবারই কর্তব্য নিজ নিজ পাছা বাঁচাইয়া চলা। ঠিক্না?" ছেলে টাস্কি খেয়ে বললো, অ্যা! মাসুদ ভাই বললেন, "এইখানকার ছেলেপেলে ভালো না! লুঙ্গী পইড়া কমনরুমে যাবি না। ছেলেপেলে মিষ্টি মিষ্টি কথা বইলা দিবো পাছা মাইরা। শেষে ব্লিডিংট্রিডিং হইয়া....এইখানকার মেডিক্যাল সেন্টার তো ভালো না!" তারপর টাস্কি খাওয়া পোলার দিকে তাকিয়ে বলে," ঠিক্না?" সেই ছেলে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই লাইনে এসে গেলো।
ট্রলিঙের যাদুতে কিছুদিনের মধ্যে কমনরুমের তাবৎ তামশগীরদের কাছে হস্তিনীশোভিত বাংলা সিনেমা, প্যানপ্যানানি প্যাকেট নাটক, এটিএন বাংলার ভরদুপুরের তাফসীর ইত্যাদি কমেডি শো'তে পরিণত হলো। এই ভরপুর আনন্দের জগতে বাগড়া দিলেন বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা। ২০০০ সালের মাঝামাঝি কেন্দ্রের আশির্বাদে ছাত্রলীগের কমিটি হলো। আবার শুরু হলো মারধোর। সন্ত্রাসের রাজত্ব। গালিবিরোধীরা শালীনতার শ্লোগানে ফাটিয়ে ফেলে মন দিলেন চাঁদাবাজী আর লুঠপাটে। ধর্ষণকারীদের পুরনো সমর্থকদের অনেকেই ঊর্ধ্বতন পদ পেলেন। ছাত্রদলেরও কমিটি হলো। এদের আড়ালে সক্রিয় থাকলো শিবির। হাওয়া বিষিয়ে উঠতে থাকলো..................
১৯৯৯ সালের ১১ মার্চ চারতলায় উঠে গেলাম সিঙ্গেলরুমে। ৪৩২/বি। বাড়াবাড়ি রকমের শুকনো। বইপত্রগুলো নতুন করে গোছালাম। আমার বইটই গোছানো হতো বছরে একবার। এরপরে সব মিলিয়ে আর দুইবার গোছানো হয়েছে। মীর মশাররফ হোসেন হলের বিব্লকের চারতলার সিঙ্গেলরুমের প্যাসেজকে(৪০১-৪৩৮) মন্ত্রীপাড়া বলা হতো। ১৯৯৮ সালের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের শীর্ষক্যাডাররা পলায়ন করায় চিহ্নিত কয়েকটি ঘর সীলগালা করা ছিল। একসময় সেগুলো ভাঙ্গা হলে নিরিহ পোলাপান সেগুলো আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে দখল করে নেয়। শিবির-রেপিস্ট-ক্যাডারমুক্ত হলে তখন রসবোধই ক্ষমতার উৎস। বারান্দা,কমনরুম,ডাইনিং,ক্যান্টিন,হালিম-শহীদের দোকান,প্যাসেজ সব মিলিয়ে চলতো লাইভ ট্রলিং। টিকে থাকতে পারলে তাকে দলভুক্ত করা হতো। এসবক্ষেত্রে বরাবরই টার্গেট থাকতো ট্রলিঙে সবচাইতে পিছিয়ে থাকা খোকাকূল। একবালতি পানি আর আকণ্ঠ গালাগালির অভ্যর্থনায় কেঁদে ফেলা খোকাকে পাকিয়ে তোলার অ্যাসাইনমেন্টের লাইফটাইম কনসালটেন্ট ছিলেন কালামাসুদ নামে সমধিক পরিচিত আমাদের গ্রেট মাসুদ ভাই। (তবে আদর্শ হিসাবে ছিলো পঞ্চপান্ডবের নামে প্রচলিত গল্পগুলি) তিনি বলতেন ট্রলিং হচ্ছে শিবির ঠেকানোর সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্র। আমিও বলতাম। এখনো বলি। রসবোধের ঘাটতি প্রতিক্রিয়াশীলতার মৌল উপাদানগুলোর একটি। কেউ মুখভরে গালিগালাজের স্বাদ পেয়ে গেলেই তার সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিন্ত হতাম। গালির ডেলিভারি থেকেই টের পাওয়া যেত এটা তার যন্ত্রণার প্রকাশ না রসবোধের প্রকাশ। যন্ত্রণা প্রকাশকদের উপর আলাদা করে নজর রাখা হতো। যন্ত্রণার ঠারে তাদের গালিতে কোন সৃজনশীলতা দেখা যেত না। আজ পর্যন্ত আমার এই এসিড টেস্টের ফলাফল খুব নির্মমভাবে সত্য হয়েছে।
২৭ তম ব্যাচ ঢুকেছিল ১৯৯৯ সালের শুরুতে। ক্যাম্পাস তখন মোটামুটি মুক্ত। ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ থাকলেও তারা কেন্দ্র কতৃক অস্বীকৃত হওয়ায় রেপিস্টদের মতো করে সাধারণ ছাত্রদের উপর চড়াও হতে পারেন নি। ক্যাম্পাস মুক্ত মানে মীর মশাররফ হোসেন হল মুক্ত থেকেও বেশী কিছু। ২৭ তম ব্যাচের এক ভালো ছেলে, আমাদের মাসুদ ভাইয়ের কাছে কেঁদেকেটে নালিশ করল। মাসুদভাই খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, "খুব খারাপ কথা।" ছেলে বললো,"হ্যা ভাইয়া আমাকে মুখে উচ্চারণ করা যায় না এমনসব কথাবার্তা বলেছে।" মাসুদ ভাই বললেন," হুমমম...দ্যাখ একটা কথা আমি সবসময়ই বইলা আসতেছি যে সবারই কর্তব্য নিজ নিজ পাছা বাঁচাইয়া চলা। ঠিক্না?" ছেলে টাস্কি খেয়ে বললো, অ্যা! মাসুদ ভাই বললেন, "এইখানকার ছেলেপেলে ভালো না! লুঙ্গী পইড়া কমনরুমে যাবি না। ছেলেপেলে মিষ্টি মিষ্টি কথা বইলা দিবো পাছা মাইরা। শেষে ব্লিডিংট্রিডিং হইয়া....এইখানকার মেডিক্যাল সেন্টার তো ভালো না!" তারপর টাস্কি খাওয়া পোলার দিকে তাকিয়ে বলে," ঠিক্না?" সেই ছেলে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই লাইনে এসে গেলো।
ট্রলিঙের যাদুতে কিছুদিনের মধ্যে কমনরুমের তাবৎ তামশগীরদের কাছে হস্তিনীশোভিত বাংলা সিনেমা, প্যানপ্যানানি প্যাকেট নাটক, এটিএন বাংলার ভরদুপুরের তাফসীর ইত্যাদি কমেডি শো'তে পরিণত হলো। এই ভরপুর আনন্দের জগতে বাগড়া দিলেন বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা। ২০০০ সালের মাঝামাঝি কেন্দ্রের আশির্বাদে ছাত্রলীগের কমিটি হলো। আবার শুরু হলো মারধোর। সন্ত্রাসের রাজত্ব। গালিবিরোধীরা শালীনতার শ্লোগানে ফাটিয়ে ফেলে মন দিলেন চাঁদাবাজী আর লুঠপাটে। ধর্ষণকারীদের পুরনো সমর্থকদের অনেকেই ঊর্ধ্বতন পদ পেলেন। ছাত্রদলেরও কমিটি হলো। এদের আড়ালে সক্রিয় থাকলো শিবির। হাওয়া বিষিয়ে উঠতে থাকলো..................
No comments:
Post a Comment