সাঁই করে একটা মিসাইল চলে গেল ডান কানের পাশ দিয়ে। আর কোন পথ নেই, মিসাইলের মোকাবিলায় চাপাতি হাতে করে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া। হাতে চাপাতি। সামনের ট্রেঞ্চ থেকে সমানে মিসাইল। তারপর শুরু হলো ব্রাশ ফায়ার..........হঠাৎ দুই ভুরুর মাঝ বরাবর ছুটে আসতেই পাকা ব্যাটসম্যানের মতো ডাক করে বাঁচা গেলো। সোজা হয়ে একটু মুড়ামুড়ি দিয়ে ধাতস্থ হতে হতে বাম কান বরাবর আরেকটা। নিচু হবার সময় নেই....পাল্টি দিয়ে ডান দিকে একলাফে অনেকটা সরে গেলে মাথাটা দুম করে মেঝেতে ঠুকলো। উফ্.......কি সব ভিষণ স্বপ্ন!
ঢক্ ঢক্ করে দুইগ্লাস পানি গিলে ফেললেন কমরেড আলেক মওলা। কপালের ডানদিকে ভালোই বাড়ি খেয়েছেন। একটা ইগলুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এরকম উদ্ভট স্বপ্ন দেখার মানে কী? দৃশ্যটা আবার ভাবা যাক। একটা খোলা মাঠের মাঝ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন চাপাতি হাতে.....তারপর মিসাইল হামলা। কেন এমন হলো? কোন দু:শ্চিন্তা নির্ঘাত। কিন্তু কি ধরণের দু:শ্চিন্তার এরকম অদ্ভুত রিফ্লেক্শান হতে পারে?
ভোর হয়ে আসছে। আর ঘুম আসবে না। বুক শেলফের ৯ম তাকে ডাস ক্যাপিটালের চতুর্থ পর্বের দ্বিতীয় খন্ডের পেছন থেকে এক প্যাকেট বেনসন বের করলেন। কমরেডদের সামনে স্টার ফিল্টার খেতে হয়। খেতে হয় ঠিক না। তিনি ইচ্ছে করেই খান। তবুও মাঝে মধ্যে বেনসন খাবার ইচ্ছে হলে টুলের উপর দাঁড়িয়ে সেই নয় নম্বর তাক থেকে প্যাকেট নামাতে হয়। ভোগবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রকৃত অস্ত্র হচ্ছে শ্রম। বলেছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় তাত্ত্বিক কমরেড দেবদাস ঘোষ। তাঁর রচনা সমগ্র থাকে প্রথম আর দ্বিতীয় তাক জুড়ে। দেবদাস ঘোষের কথা মেনে তাই বেনসনের আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে শেষ কেনা কার্টুনটি দূর্গম এলাকায় লুকিয়ে রাখেন।
কিন্তু ঐ বিদঘুটে স্বপ্নের মানে কী? চাপাতির বিরুদ্ধে মিসাইলের অসম লড়াই বিষয়ে কী তাহলে অবচেতন চৈতন্য সতর্ক করে দিলো? নাকি প্রবল বৈপরীত্যের মুখে টিকে থাকার সঙ্কল্পের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো? নাকি আপাত অপ্রকাশ্য কোন বোধি? অভিজ্ঞতা থেকে চৈতন্যের কোন অচেনা বিকাশ?
নবম টানে সিগারেট শেষ।
আবার ভাবতে চেষ্টা করলেন। লড়াইয়ের মাঠটাকে চেনা চেনা লাগছে। আরেকটু ভাবা যাক। কিন্তু....কিন্তু...হ্যা...কিন্তু....কিন্তু সেখানে তো....না ঐ মাঠ না। নাকি? বছর কুড়ি আগে যখন সবে মাত্র তাঁর দেবদাস ঘোষের সাথে পরিচয় হয়েছিল সুবিমল কায়সারের মাধ্যমে। কোন এক হরতালের দিন গলির মোড়ে দোকানে যাবার নাম করে হা করে ভাঙচুরের দৃশ্য দেখার সময় কপালের ফেরে গ্রেফতার হয়ে জেলে চালান হয়েছিলেন। সেখানে ঐদিন ঠেলাগাড়ির চাকা খুলে পিকেটিং করতে গিয়ে ধরা পড়া আরো কয়েকজন ছিলেন। তাঁদের একজন সুবিমল কায়সার, খুব প্রজ্ঞাবান মানুষ, তাঁর প্রভাবেই আলেক মওলা দেবদাস ঘোষের লাইনের ভক্ত হয়ে ওঠেন। এর কিছুদিন পরে জেল থেকে বের হয়ে আবারো এক মিছিলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মদীনাবাগ হাইস্কুলের মাঠের উপর দিয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে, ঐ মাঠে মার্বেল খেলতে থাকা তিন চারজন বছর দশেকের বালকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছিলেন। পরে জ্ঞান হয়ে দেখেন আবারো পুলিশের হেফাজতে।
স্বপ্নে দেখা মাঠটা অনেকটা সেই মাঠের মতো।
গলা খাঁখারি দিয়ে চুলায় চায়ের পানি গরম দিলেন। আরেকটা সিগারেট খাওয়া দরকার। ঐ দ্বিতীয়বারের গ্রেফতারই তাঁকে রাজনীতিতে স্থায়ী করে দেয়। গতকাল বিকালে পার্টির আগৈলঝরা বাজার কমিটির মাসিক আত্মশুদ্ধি দিবসের মিটিঙে এক ছোকরা কমরেড পার্টির কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে উপহাস করায় তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে নানান যুক্তিতর্কে ছোকরাকে নিরস্ত করেন। রাজনৈতিক প্রয়োজনে সেই স্মৃতিতে খানিক কল্পনা মেশাতে হয়েছিল। ছোকরা ধরতে পারেনি।
ক্ষণিকের অনৈতিকতাই কি তাহলে ঐ স্বপ্ন দেখালো? হতে পারে। প্রতিপক্ষ দলগুলির অনেকেই তাঁর অতীতের একটি ঘটনা নিয়ে প্রায় উপহাস করেন। একবার একটি জোটবদ্ধ আন্দোলনের সময় কিছু কঞ্চি কেটে আনতে তাঁকে আর কমরেড লাকীকে মোকলেস মিয়ার বাঁশঝাড়ে পাঠানো হয়েছিল। ডজন দুয়েক কঞ্চি জোগাড়ের পরে পাহারাদারের ধাওয়া খেয়ে কঞ্চির গাট্টি ফেলে তিনি দৌড় দিয়েছিলেন। আসলে ফেলে দেন নি, জোরে দৌড় দিতে গিয়ে গাট্টি পড়ে গিয়েছিল হাত থেকে। লাকী অন্যপথ ধরে আন্দোলনকারীদের কাছে গিয়ে পৌঁছলেও তিনি গ্রামের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। চারদিন পরে বহুকষ্টে ফিরে এসে দেখেন আন্দোলন শেষ। তখন জোটের অন্যদলগুলি রটিয়ে দেয়, তিনি নাকি মার খাবার ভয়ে শুড়িখানায় গিয়ে লুকিয়েছিলেন।
চা বিস্বাদ লাগছে। আরেকটা বেনসন ধরিয়ে মনে হলো একবার সুবিমল কায়সারের সাথে আলাপ করা দরকার। কেন্দ্রীয় আত্মশুদ্ধি কমিটির একটা বৈঠক বসাতে হবে। আক্কাস আর কুদ্দুস পার্টি ছাড়ার পর থেকে স্টুডেন্ট উইঙে নানান ঝামেলা দেখা যাচ্ছে। অনেকেই ব্যক্তিগত যৌনপ্রেমে জড়িয়ে পড়ছেন। নৈতিকতার অনুশীলনের বদলে রাজনৈতিক কৌশলের দিকে ঝুঁকে পড়তে চাইছে অনেকে। গণচাঁদা নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। কমরেডরা অন্যদলের উপহাসে খুব বেশী বিচলিত হচ্ছেন। কেউ কেউ একপর্যায়ে তাতে প্রভাবিত হয়ে দলও ছাড়ছেন। সেদিন শুনলেন করিমনগঞ্জ কলেজের হোস্টেলে নাকি কে এক দলত্যাগী ছোকড়া দেওয়ালে পার্টিকে টিটকারি দিয়ে নানান কথা লিখে সেগুলি স্যাটায়ার আকারে প্রচার করছেন। ঐ ঘরের দেওয়ালের ছবি দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়। সেখানে লেখা তাঁদের দলের বিভিন্ন জার্গন যেমন, আদর্শ-নৈতিকতা-মূল্যবোধ =দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, ইমপারসোনাল, সাবমিশন, পথের দাবী, শ্রীকান্ত, শেষপ্রশ্ন, নৈর্লৈঙ্গীকতাবাদ, জায়গা, অপরাধবোধ, নার্সিং, পার্টি টিউন, কালেক্টিভিজম ইত্যাদি। অর্থাৎ বিভিন্নভাবে ব্যক্তিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।
এই সঙ্কট এড়াতে তাঁদের পার্টি বরাবরই শান্ত সুবোধ নৈতিক ছেলেমেয়েদের রিক্রুট করার দিকে মন দিয়ে থাকেন। নৈতিকতার কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে আগে উন্নত মানুষ হতে হবে তারপরে সেই নৈতিকতার শক্তিতে তৈরী হবে বিপ্লবের নুতন পথ। এই পথ খুবই শক্ত। আমাদের প্রচলিত বোধবুদ্ধিতে যাদের আমরা বুদ্ধিমান বলি তারা শেষপর্যন্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েন। এই জন্যই বুদ্ধির সংজ্ঞার্থ পরিবর্তন করা জরুরি। পার্টিকে সর্বোচ্চ নৈতিক অবস্থানে দেখা, তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা এইটা হচ্ছে প্রথম কাজ। ক্রিটিক্যাল ইন্টেলেক্টের বিকাশ হতে হবে তার পরে। তাহলেই নতুন ধরণের বুদ্ধিমান মানুষ তৈরী করা সম্ভব হবে। কমরেড দেবদাস ঘোষ বলেছেন, বিপ্লবীর জন্য বিপ্লবে পূর্ণ মনোযোগই শেষ কথা। দুজন বিপরীত লিঙ্গের কমরেডের মধ্যে ভালোবাসা দুষনীয় নয়, কিন্তু তারাও ক্ষণিক বিশ্রামের ফাঁকে গালটিপে দিয়েই যেন আবার বিপ্লবে মনোনিবেশ করেন, সত্যিকারের বিপ্লবী দলে সেই অনুশীলন গড়ে তুলতে হবে। তাতে যত সময় লাগার লাগবে।
এই বোধের অভাবে গতকাল বিকালে ঐ ছোঁড়া খোঁচা দিয়ে বসে, আপনাদের যে স্ট্র্যাটেজি দেখছি তাতে অন্যসবাই যদি ইতিমধ্যে কোথাও চম্পট না দেয় তাহলে মোটামুটি পাঁচশো বছর সময় লাগবে। অতদিন কি পৃথিবীটা এমন থাকবে? এইসব প্রশ্ন পার্টির ভিত নড়িয়ে দেয়। এই জন্য কাল দলের স্বার্থে ছোকড়াকে কিছু কাল্পনিক কথা বলতে হয়েছিল। যে সমাজ বিপ্লব কোন বিজনেস পলিসি নয় যে তাতে মাইক্রোইকোনমির লংরান-শর্টরান পলিসি থাকবে। এটা একটা ব্রত। এখানে একেকটা ব্যক্তির ব্যক্তিবাদী অবস্থানের ক্রমবিলুপ্তিই একসময় একটা বিপ্লবী দল গড়ে তোলে। এই দল এখনো কোথাও তৈরী হয়নি কিন্তু করতে হবে। একেকটা ছোটছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে একেকজনের রিক্রুট হবার ঘটনাই এরকম বিপ্লবী দলের অনিবার্যতা প্রমাণ করে।
বেনসনের প্যাকেট আবারো উদ্বৃত্তমূল্য তত্ত্বের পেছনে পাঠিয়ে এবার খুব তৃপ্তির সাথে দিনের প্রথম স্টার ফিল্টার ধরালেন আলেক মওলা।
ঢক্ ঢক্ করে দুইগ্লাস পানি গিলে ফেললেন কমরেড আলেক মওলা। কপালের ডানদিকে ভালোই বাড়ি খেয়েছেন। একটা ইগলুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এরকম উদ্ভট স্বপ্ন দেখার মানে কী? দৃশ্যটা আবার ভাবা যাক। একটা খোলা মাঠের মাঝ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন চাপাতি হাতে.....তারপর মিসাইল হামলা। কেন এমন হলো? কোন দু:শ্চিন্তা নির্ঘাত। কিন্তু কি ধরণের দু:শ্চিন্তার এরকম অদ্ভুত রিফ্লেক্শান হতে পারে?
ভোর হয়ে আসছে। আর ঘুম আসবে না। বুক শেলফের ৯ম তাকে ডাস ক্যাপিটালের চতুর্থ পর্বের দ্বিতীয় খন্ডের পেছন থেকে এক প্যাকেট বেনসন বের করলেন। কমরেডদের সামনে স্টার ফিল্টার খেতে হয়। খেতে হয় ঠিক না। তিনি ইচ্ছে করেই খান। তবুও মাঝে মধ্যে বেনসন খাবার ইচ্ছে হলে টুলের উপর দাঁড়িয়ে সেই নয় নম্বর তাক থেকে প্যাকেট নামাতে হয়। ভোগবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রকৃত অস্ত্র হচ্ছে শ্রম। বলেছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় তাত্ত্বিক কমরেড দেবদাস ঘোষ। তাঁর রচনা সমগ্র থাকে প্রথম আর দ্বিতীয় তাক জুড়ে। দেবদাস ঘোষের কথা মেনে তাই বেনসনের আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে শেষ কেনা কার্টুনটি দূর্গম এলাকায় লুকিয়ে রাখেন।
কিন্তু ঐ বিদঘুটে স্বপ্নের মানে কী? চাপাতির বিরুদ্ধে মিসাইলের অসম লড়াই বিষয়ে কী তাহলে অবচেতন চৈতন্য সতর্ক করে দিলো? নাকি প্রবল বৈপরীত্যের মুখে টিকে থাকার সঙ্কল্পের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো? নাকি আপাত অপ্রকাশ্য কোন বোধি? অভিজ্ঞতা থেকে চৈতন্যের কোন অচেনা বিকাশ?
নবম টানে সিগারেট শেষ।
আবার ভাবতে চেষ্টা করলেন। লড়াইয়ের মাঠটাকে চেনা চেনা লাগছে। আরেকটু ভাবা যাক। কিন্তু....কিন্তু...হ্যা...কিন্তু....কিন্তু সেখানে তো....না ঐ মাঠ না। নাকি? বছর কুড়ি আগে যখন সবে মাত্র তাঁর দেবদাস ঘোষের সাথে পরিচয় হয়েছিল সুবিমল কায়সারের মাধ্যমে। কোন এক হরতালের দিন গলির মোড়ে দোকানে যাবার নাম করে হা করে ভাঙচুরের দৃশ্য দেখার সময় কপালের ফেরে গ্রেফতার হয়ে জেলে চালান হয়েছিলেন। সেখানে ঐদিন ঠেলাগাড়ির চাকা খুলে পিকেটিং করতে গিয়ে ধরা পড়া আরো কয়েকজন ছিলেন। তাঁদের একজন সুবিমল কায়সার, খুব প্রজ্ঞাবান মানুষ, তাঁর প্রভাবেই আলেক মওলা দেবদাস ঘোষের লাইনের ভক্ত হয়ে ওঠেন। এর কিছুদিন পরে জেল থেকে বের হয়ে আবারো এক মিছিলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মদীনাবাগ হাইস্কুলের মাঠের উপর দিয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে, ঐ মাঠে মার্বেল খেলতে থাকা তিন চারজন বছর দশেকের বালকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছিলেন। পরে জ্ঞান হয়ে দেখেন আবারো পুলিশের হেফাজতে।
স্বপ্নে দেখা মাঠটা অনেকটা সেই মাঠের মতো।
গলা খাঁখারি দিয়ে চুলায় চায়ের পানি গরম দিলেন। আরেকটা সিগারেট খাওয়া দরকার। ঐ দ্বিতীয়বারের গ্রেফতারই তাঁকে রাজনীতিতে স্থায়ী করে দেয়। গতকাল বিকালে পার্টির আগৈলঝরা বাজার কমিটির মাসিক আত্মশুদ্ধি দিবসের মিটিঙে এক ছোকরা কমরেড পার্টির কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে উপহাস করায় তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে নানান যুক্তিতর্কে ছোকরাকে নিরস্ত করেন। রাজনৈতিক প্রয়োজনে সেই স্মৃতিতে খানিক কল্পনা মেশাতে হয়েছিল। ছোকরা ধরতে পারেনি।
ক্ষণিকের অনৈতিকতাই কি তাহলে ঐ স্বপ্ন দেখালো? হতে পারে। প্রতিপক্ষ দলগুলির অনেকেই তাঁর অতীতের একটি ঘটনা নিয়ে প্রায় উপহাস করেন। একবার একটি জোটবদ্ধ আন্দোলনের সময় কিছু কঞ্চি কেটে আনতে তাঁকে আর কমরেড লাকীকে মোকলেস মিয়ার বাঁশঝাড়ে পাঠানো হয়েছিল। ডজন দুয়েক কঞ্চি জোগাড়ের পরে পাহারাদারের ধাওয়া খেয়ে কঞ্চির গাট্টি ফেলে তিনি দৌড় দিয়েছিলেন। আসলে ফেলে দেন নি, জোরে দৌড় দিতে গিয়ে গাট্টি পড়ে গিয়েছিল হাত থেকে। লাকী অন্যপথ ধরে আন্দোলনকারীদের কাছে গিয়ে পৌঁছলেও তিনি গ্রামের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। চারদিন পরে বহুকষ্টে ফিরে এসে দেখেন আন্দোলন শেষ। তখন জোটের অন্যদলগুলি রটিয়ে দেয়, তিনি নাকি মার খাবার ভয়ে শুড়িখানায় গিয়ে লুকিয়েছিলেন।
চা বিস্বাদ লাগছে। আরেকটা বেনসন ধরিয়ে মনে হলো একবার সুবিমল কায়সারের সাথে আলাপ করা দরকার। কেন্দ্রীয় আত্মশুদ্ধি কমিটির একটা বৈঠক বসাতে হবে। আক্কাস আর কুদ্দুস পার্টি ছাড়ার পর থেকে স্টুডেন্ট উইঙে নানান ঝামেলা দেখা যাচ্ছে। অনেকেই ব্যক্তিগত যৌনপ্রেমে জড়িয়ে পড়ছেন। নৈতিকতার অনুশীলনের বদলে রাজনৈতিক কৌশলের দিকে ঝুঁকে পড়তে চাইছে অনেকে। গণচাঁদা নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। কমরেডরা অন্যদলের উপহাসে খুব বেশী বিচলিত হচ্ছেন। কেউ কেউ একপর্যায়ে তাতে প্রভাবিত হয়ে দলও ছাড়ছেন। সেদিন শুনলেন করিমনগঞ্জ কলেজের হোস্টেলে নাকি কে এক দলত্যাগী ছোকড়া দেওয়ালে পার্টিকে টিটকারি দিয়ে নানান কথা লিখে সেগুলি স্যাটায়ার আকারে প্রচার করছেন। ঐ ঘরের দেওয়ালের ছবি দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়। সেখানে লেখা তাঁদের দলের বিভিন্ন জার্গন যেমন, আদর্শ-নৈতিকতা-মূল্যবোধ =দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, ইমপারসোনাল, সাবমিশন, পথের দাবী, শ্রীকান্ত, শেষপ্রশ্ন, নৈর্লৈঙ্গীকতাবাদ, জায়গা, অপরাধবোধ, নার্সিং, পার্টি টিউন, কালেক্টিভিজম ইত্যাদি। অর্থাৎ বিভিন্নভাবে ব্যক্তিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।
এই সঙ্কট এড়াতে তাঁদের পার্টি বরাবরই শান্ত সুবোধ নৈতিক ছেলেমেয়েদের রিক্রুট করার দিকে মন দিয়ে থাকেন। নৈতিকতার কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে আগে উন্নত মানুষ হতে হবে তারপরে সেই নৈতিকতার শক্তিতে তৈরী হবে বিপ্লবের নুতন পথ। এই পথ খুবই শক্ত। আমাদের প্রচলিত বোধবুদ্ধিতে যাদের আমরা বুদ্ধিমান বলি তারা শেষপর্যন্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েন। এই জন্যই বুদ্ধির সংজ্ঞার্থ পরিবর্তন করা জরুরি। পার্টিকে সর্বোচ্চ নৈতিক অবস্থানে দেখা, তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা এইটা হচ্ছে প্রথম কাজ। ক্রিটিক্যাল ইন্টেলেক্টের বিকাশ হতে হবে তার পরে। তাহলেই নতুন ধরণের বুদ্ধিমান মানুষ তৈরী করা সম্ভব হবে। কমরেড দেবদাস ঘোষ বলেছেন, বিপ্লবীর জন্য বিপ্লবে পূর্ণ মনোযোগই শেষ কথা। দুজন বিপরীত লিঙ্গের কমরেডের মধ্যে ভালোবাসা দুষনীয় নয়, কিন্তু তারাও ক্ষণিক বিশ্রামের ফাঁকে গালটিপে দিয়েই যেন আবার বিপ্লবে মনোনিবেশ করেন, সত্যিকারের বিপ্লবী দলে সেই অনুশীলন গড়ে তুলতে হবে। তাতে যত সময় লাগার লাগবে।
এই বোধের অভাবে গতকাল বিকালে ঐ ছোঁড়া খোঁচা দিয়ে বসে, আপনাদের যে স্ট্র্যাটেজি দেখছি তাতে অন্যসবাই যদি ইতিমধ্যে কোথাও চম্পট না দেয় তাহলে মোটামুটি পাঁচশো বছর সময় লাগবে। অতদিন কি পৃথিবীটা এমন থাকবে? এইসব প্রশ্ন পার্টির ভিত নড়িয়ে দেয়। এই জন্য কাল দলের স্বার্থে ছোকড়াকে কিছু কাল্পনিক কথা বলতে হয়েছিল। যে সমাজ বিপ্লব কোন বিজনেস পলিসি নয় যে তাতে মাইক্রোইকোনমির লংরান-শর্টরান পলিসি থাকবে। এটা একটা ব্রত। এখানে একেকটা ব্যক্তির ব্যক্তিবাদী অবস্থানের ক্রমবিলুপ্তিই একসময় একটা বিপ্লবী দল গড়ে তোলে। এই দল এখনো কোথাও তৈরী হয়নি কিন্তু করতে হবে। একেকটা ছোটছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে একেকজনের রিক্রুট হবার ঘটনাই এরকম বিপ্লবী দলের অনিবার্যতা প্রমাণ করে।
বেনসনের প্যাকেট আবারো উদ্বৃত্তমূল্য তত্ত্বের পেছনে পাঠিয়ে এবার খুব তৃপ্তির সাথে দিনের প্রথম স্টার ফিল্টার ধরালেন আলেক মওলা।
No comments:
Post a Comment