Friday, November 07, 2008

টুকরো টুকরো লেখা ৭

বুদ্ধি হওয়া থেকে শুনে আসছি এরকম অবস্থায় মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে? ভানু বন্দোপাধ্যায় এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। তিনি আঙ্গুল দেখিয়েছিলেন ভেজাল বিষের দিকে। আমার কেমন মনে হয় বেঁচে থাকা অনেকটা সাপের বিষের নেশার মতো। মরতে মরতে ঝুলে থাকায় পিনিকপ্রাপ্তি। আমি হয়তো সেই নেশাতেই আছি।
১.
শেষ পর্যন্ত ওবামা পাশ করলো। ওবামা পাশ করলেই সে একদম দুনিয়া পাল্টাইয়া ফালাবে এরকম চিন্তার কোন বাস্তব কারণ নাই। অন্তত গত শদেড়েক বছরের অভিজ্ঞতা থিকা দেখলে এই নির্বাচনের ফলাফলে খুব বেশী আশাবাদী হওয়া মুশকিল। মোটে চল্লিশ বছর পিছে গেলেই কেনেডি আর মার্টিন লুথার কিং এর ডেডবডি দেখা যায়। বারাক মিয়া চাইলেই নিওলিবারেল পাগলা কুত্তারে খেদাইতে পারবো না। বড়জোর কিছুদিনের জন্য বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মিষ্টিবাঘ সাজাইয়া রাখতে পারে। তারপরেও পাগলা কুত্তার চাইতে মিষ্টিবাঘরে আমরা ভালো পাইয়া অভ্যস্ত। ভোটের রাজনীতির এই সীমাবদ্ধতা আমরা আপাতত অনতিক্রম্য বইলা ধইরা নিছি। এখন বাজারের পরিস্থিতি ভালো না। কয়দিন পরিকল্পিত হিউম্যান ফেইস দেখানো জরুরি। তাতে কিছু লোকের উপকারও হয়। আমারো হয়তো হবে। হয়তো হবে না। যাদের হবেনা তারা যেই দুই চাইর জনের হবে সেই বিজ্ঞাপনে অন্তত কিছুটা শান্তি পাইবো। এই বাজারে মাগনা শান্তিই বা দেয় ক্যাঠা?
এর একটা আলামত দেখলাম আইজকা কামলা থিকা ফিরার পথে ট্রামস্ট্যান্ডে। দেখি জার্মানীর কুলীন সাপ্তাহিক ডী ৎসাইটের এক কোনায় ইয়ুর্গেন হাবারমাসের একটা ছবি। সাবটাইটেলে লেখা [b]নিও লিবারেলিজমের যূগ শ্যাষ[/b] :D আমার হাসি কান পর্যন্ত বিস্তৃত হইতে হইতে ট্রাম মিস করলাম। আমার প্রতিক্রিয়াশীল ;) মার্কসবাদী চৈতন্যমতে যখনই সফেদ মুরুব্বিরা মার্কেটে কোন নতুন পলিসি ইঞ্জেক্ট করতে যায় তখনই আগে কোন না কোন বুদ্ধিজীবিরে নস্ট্রাডামুস সাজাইয়া সামনে পাঠায়। বৃদ্ধসম্মতিতে ভবিষ্য হালাল হয়। এইটা অবশ্য খারাপ না। ইউনিভার্সিটিতে নতুন নতুন প্রজেক্ট হয়। ফান্ড আসে। আমরা ফান্ড শুঁইকা ভালো থাকার সম্ভাবনা ওম্ এ রাখি।
২.
১০৯ এ থাকতো মানুয়েলা ফ্রানৎস্ । প্রায় সাড়ে ছয় বছর ছিল এই ডর্মে। যাওয়ার আগের দিন পার্টি দিছিল। ও যাওয়াতে এমনিতেই মন খারাপ। এইটা ঠিক সিজনাল মনখারাপ না। মানুয়েলার মতো প্রতিবেশী যার থাকে সে বোঝে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে একদিন দেখি ১০৯ থিকা বিরিয়ানির গন্ধ আসে। মাথা খারাপ করা গন্ধ। তাড়া থাকায় বাইরে চইলা গেলাম। মন খারাপ হইলো কোন পাকি আসার সম্ভাবনায়। যেই মসলায় বিরিয়ানি রানছে সেইটা পাকি মসলা। এই বছরের শুরুর দিকে আফগান দোকানে রাধুনী আসার পর থিকা বাংলাদেশী ছাত্ররা প্রায় সবাই পাকি মসলা বর্জন করা শুরু করছি। সুতরাং গন্ধের পার্থক্য খুব ভালো বুঝি।
এর দিন দুই পরে বাইরে লনে গেছি বিড়ি খাইতে সেই সময় দেখি ভিতরে বারান্দার এক কোনায় কে জানি চাদর মুড়ি দিয়া হিটিং সিস্টেমের উপর বইসা আছে। কানে মোবাইল। দরজা একটু ফাঁক কইরা শুনলাম আমার না জানা কোন ভাষায় কথা হইতেছে। তবে ভাষাটা দক্ষিণ এশীয়। সম্ভবত: পাঞ্জাবী। ঘন্টা দেড় পরে আরেকটা বিড়ি খাইতে আইসা দেখি কথা তখনো চলে। একটু পরে দেখি বাইরে আসে। আংরেজীতে জিগায় কেমুন আছেন? কোন রূমে থাকেন? বাড়ি কৈ ইত্যাদি। কইলাম। জানলাম তার বাড়ি সিন্ধু। তবে সে অমুসলীম। মাতৃভাষা মাড়োয়াড়ি।
পরদিন ওর ডিপার্টমেন্টের এক বাংলাদেশী ছাত্রের কাছে শুনলাম, এই ছ্যামড়া মাসে ৯০০ ইউরো স্কলারশীপ পায়। তারপরেও আবার ভক্সওয়াগনে কামলা দেয়। তৎক্ষণাৎ বুঝলাম বাইরে লনে বইসা দেশে কথা বলার আসল কারণ ঘরে হিটিঙের খরচ বাঁচানো। বারান্দার হিটিঙের উপর কাঁথা গায় দিয়া রাতে ঘন্টা দুই তিন বইসা তারপর লেপের তলে গেলে অরে আর শীত লাগায় ক্যাঠা? এই কাহিনি সেদিন হিমুরে কইতেছিলাম। হিমু কয়, মাক্ষিচুস্ । আমি কইলাম আস্তে কইতে। নাইলে বাইর হইয়া আইসা জিগাইবো, কিছু বললেন?

No comments: