কম্পুতে লেখালেখির একটু বড়ো সুবিধা হচ্ছে, হাতে লেখা বা পুরনো টাইপ রাইটারের মতো এখানে খসড়া বাতিল করতে কাগজ নষ্ট হয় না। সিলেক্ট করে ডিলিট মারুন। ফুটুস। গত কয়েক মাসে বা বছরে আমার ব্লগীয় জীবনে এরকম ফুটুসরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে তার সবটাই এইসব ফুটুসের ফাটাফুটো গলে। সেগুলির অবস্থা ফুটুসরাজির থেকে ভালো ছিলো এরকম বলার তেমন কোন সুযোগ নাই। অনেকটাই নির্ভর করেছে প্রকাশ বোতাম টিপে দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্তের উপর। সিদ্ধান্ত নেওয়া না নেওয়ার দ্বন্দ্বে ক্রমশ আশরাফুলে পরিণত হয়েছি। সম্প্রতি আশরাফুল বাদ পড়ায় মোটের উপর ব্লগিং ক্যারিয়ার নিয়ে আতঙ্কে আছি। মাঝে মাঝে রীতিমতো নার্ভাস ব্রেক ডাউনের মতো হচ্ছে। "ব্লগ লিখে কী হবে" জাতীয় ফালতু কথাবার্তা পর্যন্ত খুলিতে বারকয়েক এসে ঘুরে গেছে আর কখনো আসবে না এরকম কোন গ্যারান্টি ছাড়া। এরকম সংশয় অতীতে যারা দেখিয়েছে তাঁদেরকে গণহারে "ছাগু-ট্যাগিং" করে "লেখক যশোপ্রার্থীদের হেজিমনি" তৈরীর কলঙ্ক খানিকটা আমার গায়েও থাকায় আতঙ্কটা তেমন অমূলক না। সুতরাং আবারো ফিরতে হলো চাবি-পাটা'র কাছে, কী লিখবো সেই প্রশ্নকে আপাতত অপেক্ষা তালিকায় গেঁথে। কারণ লিখতে থাকা ছাড়া তথাকথিত রাইটার্স ব্লক কাটিয়ে উঠবার অন্যকোন রাস্তা নাই।
ব্লগে কী লেখা যায় বা কী লেখা উচিতের মতো প্রশ্নগুলি বাংলাব্লগের চারবছর পার করে এখন পৌরাণিক। অধুনা আলোচ্য হতে পারে "ব্লগে কী লেখা হয়"। ব্লগে লেখা হয় না এমন কোন প্রকার আপাতত চোখে পড়ছে না। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্য, নাটক, গান, উপন্যাস, কার্টুন, পাটানাটানি, কাঠিবাজি সব কিছুই দেখতে পাচ্ছি। "ব্লগ" বলতে যে ধরণের লেখাকে অনেকে ট্যাগিং করেন সেগুলি আমার চোখে আন্তর্জালে প্রকাশিত লিংক সমৃদ্ধ প্রবন্ধ। ছাপামাধ্যমে লিংক দেওয়ার সুবিধা নেই। সেখানে শুধুই বইপত্রে ছাপা রেফারেন্সে কাজ সারতে হয়। লিংক জুড়ে দেওয়া অন্য যেকোন প্রকার লেখাও সেই লেখার আন্তর্জালিক প্রকরণ ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং "ইহা সাহিত্য" এবং "ইহা ব্লগ" জাতীয় সীল ছাপ্পড়ের তেমন কোন সুযোগ এই মুহুর্তে দেখতে পাচ্ছি না। পার্থক্য যারা টানেন তাঁরা আলো ফেলেন প্রকাশযোগ্যতার উপর। প্রকাশযোগ্যতার প্রশ্নটির সমাধান হয় আলাদা আলাদা পাটাতনের আলাদা আলাদা কিছু সাধারণ সিদ্ধান্তের উপর যেই সিদ্ধান্তগুলি সংশ্লিষ্ট পাটাতনে দার্শনিক আধিপত্য (হেজিমনি:)) তৈরী করে।এই সাধারণ সিদ্ধান্ত বা নীতিমালামুক্ত পাটাতনের অস্তিত্ব যতদূর জানি অন্তত আমাদের বর্তমান সৌরজগতে নাই, সে নেটপাটাতনই হোক আর তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত ছাপাপাটাতনই হোক। সুতরাং ব্লগগুলিও একেকটা মিডিয়া।
এসব কথা সবাই জানেন। এগুলি নতুন কিছু না। ব্লগ লেখালেখি শুরু হওয়ার পর থেকে এই কথাগুলি সহস্রাধিকবার আলোচিত হয়েছে। আরো হবে। কেন্দ্রমুক্ত কাঠামো বা কাঠামোমুক্ত অবস্থিতির নির্মাণ কীভাবে হতে পারে বা আদৌ পারে কিনা সেই প্রশ্নগুলিও উত্থাপিত হতেই থাকবে। তবে এখনও পযর্ন্ত যা দেখা যাচ্ছে কোন না কোন কাঠামোর বাইরে থেকে এসব উত্থাপিত হচ্ছে না। সেইক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে কাঠামোসমূহের দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ এড়াবার পথ আছে কি? নাই। থাকা সম্ভব না। লেখা তো চেতনেরই বস্তুরূপ। আর চেতনাও তো বস্তুজগতের বাইরের কিছু না। আর ফিজিক্সের সীমানা পেরিয়ে মিঠাফিজিক্সও আজ পর্যন্ত বস্তুনিরপেক্ষ চেতন প্রমাণ করতে পারে নাই।
তাহলে লিলিপুট-ব্রবডিঙনাগ সঙ্কটের কী হবে? কে হবে বা কে তবে গালিভার? কেই বা ইয়াঙ্কি বা হুইনহুম? কে কারে দেখায়ে দেবে? আবার জবাব হচ্ছে চাবিপাটা টিপতে থাকুন ইচ্ছা মতো। একটা না একটা জবাব ঠিক পেয়ে যাবেন। না পেলে আরো টিপুন।
যা লিখলাম এটা কি কোন সময়োপযোগী লেখা? অবশ্যই না। এটা নিতান্তই আশরাফুলপনা থেকে মুক্তির ডেসপারেডো প্রয়াস
No comments:
Post a Comment