বলার কথা অনেক থাকার বিপদ হচ্ছে কথা জমতে জমতে একসময় মুখ-আঙ্গুল-মগজ সব একসাথে ব্লক হয়ে যায়। তখন ভুদাই হওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। এরকম ভুদাই হয়েই অবশ্য এই অপ্রয়োজনীয় জীবনের বেশীরভাগটা পার করে দিয়েছি। বাকিটা কীভাবে পার হবে বা আদৌ হবে কী না ভবিষ্য তার বিচার করতে পারবে কি পারবে না এইসব ভাবনাও ভুদাই সত্ত্বাকে ভুদাইতর করে।
গত এপ্রিল থেকে নিষ্ক্রিয়। প্রায়ই সচল খুলে বসে থেকেছি। মাঝে মধ্যে লগইনও করেছি। কিন্তু ব্লগ লিখুনে ক্লিক করতে আঙ্গুল সরে নাই। কখনো দু'এক ঝাপটা খোলা বাতাসে মনে হয়েছে হ্যা এইখানে এই পোস্টে বা এই মন্তব্যে আমার কী কী যেন বলার ছিল। এবার ঠিক বলে ফেলবো। তারপর সচল খুলতে খুলতে কথাগুলি ক্লিশে হয়ে যায়। মগজ হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে থাকে। রাজনীতি-সমাজনীতি-সাহিত্যফাহিত্য বাদ দিয়ে শুধু জম্পেশ একটা মালিশের জন্য হাহাকার করতে থাকে। এইভাবেই চলে যায় সাড়ে চার মাসের মতো।
এর মধ্যে একবার বুড়ো বয়সে শিশুদের রোগ বাধিয়ে হাসপাতালেও দিন দশেক ঘুরে এসেছি। সত্যি বলতে ঐ কয়টা দিন ভালোই ছিলাম। আমার এই মনোটোনাস ছোট্ট ঘরটা থেকে বের হতে পারাই আমার কাছে অনেক কিছু।
১.
এর মধ্যে পারিপার্শ্ব নিজের মতো করে তার ঘটনাগুলি ঘটিয়ে গেছে। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলো সর্বোচ্চ আদালতে। অনেক কথা বলা হলো ছাপামাধ্যমে-ব্লগে-ফোরামে। কিন্তু শেষমেষ এই রায়গুলি বর্তমানকে ঠিক কোন পরিবর্তন উপহার দিচ্ছে বোঝা গেলো না। বলা হলো ধর্মনিরপেক্ষতা পুণর্বহাল হয়েছে কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনীতিও থাকছে রাষ্ট্রধর্মও থাকছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পলিটোলজি মতে এই সহাবস্থান অসম্ভব। তারপর সপ্তম সংশোধনীও বাতিল হলো একসময়। অনেকে অনেক অভিনন্দনটন্দন জানালেন। শেষ মেষ দেখা গেলো বাতিল হয়েছে বটে তবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে চলমান রাজনীতি। অর্থাৎ ইসলামের সওগাত নিয়ে আসা আটরশির পীরের একনিষ্ঠ মুরিদ নিরাপদেই থাকবেন। রাজনীতিতে সবরকম সামরিক হস্তক্ষেপ অবৈধ হলে সেটাও সম্ভব নয় বলে জানতাম। কিন্তু পলিট্রিক্সে সবই সম্ভব। একথা বলে একদা সেই আটরশির পীরের মুরিদ অনেকের হাততালিটালি পেয়েছিলেন। এখনো পাচ্ছেন।
২.
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বহুদিন কোন আপডেট নাই। শুরু তো করলাম এখন দেখি কী হয় পরিস্থিতিতে আটকে আছে, অন্তত আমার মতো বাতেনীদৃষ্টিহীন মানুষের চোখে। জাহিরি যতটুক তাতে নতুন কিছু পাচ্ছি না। মাঝে মাঝে সেই গোলাম আজমের নাগরিকত্ব মামলার দুর্গন্ধ পাচ্ছি। হতে পারে এটা নাকের সমস্যা।
৩.
জার্মান রাজনীতিতে বেশ টালমাটাল পরিস্থিতি গতবছর সেপ্টেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে। রামধরা খাওয়া সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ২৩% ভোট পেয়ে তার ইতিহাসের সর্বনিম্ন ম্যান্ডেটে। শুধু তারাই নয়। ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানীর ইতিহাসের বেশীরভাগ সময় ক্ষমতায় থাকা ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নও ৩১% ভোট নিয়ে সব থেকে খারাপ ফলাফল করেছে। একদিকে বামের (১১.৯%) অন্যদিকে লিবারেলদের (১৪.৬%) আর গ্রীনদের (১০.৭%) ভোটবৃদ্ধি গত ষাটবছরের বাইপোলারিটি রুখে দিয়েছে। সেইসাথে যোগ হয়েছে নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ২৯%। লিবারেলদের সাথে কোয়ালিশনে আবারো সিডিইউ ক্ষমতায়। কিন্তু প্রান্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর কোয়ালিশনের ভাগীদারদের মতপার্থক্যে তারাও খুব ভালো নেই। এর মধ্যে গত মে মাসে অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়ারের প্রাদেশিক নির্বাচনে এসপিডি-গ্রীনের সরকার গঠণ কেন্দ্র সরকারের সঙ্কটকে আরো বাড়িয়েছে। সব খানেই কোয়ালিশন ভাগীদাররা নির্ধারক হয়ে দীর্ঘকাল বাইপোলার মনোপলি করা বড় দুইদলের "নিজস্ব রাজনীতি"কে মানিক সাহেবের চিপায় ফেলে দিয়েছে।
এইসব কিছুরই আমি দর্শক। আমার কিছু করার নাই। খালি দেখে যাই। দেখে যাচ্ছি।
1 comment:
osadharon
Post a Comment