সব কিছুর একটা প্রপার টাইম থাকে। কথাটা বাবা খুব বেশি বলতো। আমি শুনতাম। এখনো শুনি। কিন্তু জীবনে খুব বেশিবার এই উপলব্ধি কাজে লাগাতে পারি নাই।
গত ১৮ ডিসেম্বর সিপিবি,বাসদ আর বামমোর্চার সফল হরতালের সাথে সাথে আমার একটা পোস্ট লিখে ফেলার কথা ছিল। ধুনেফুনে একটা সপ্তাহ চলে গেল। আসলে অনেকদিন না লিখলে কীবোর্ডের সামনে বসে ঝট করে লিখে ফেলা ব্যাপারটাই পৃথিবীর সব থেকে কঠিণ কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতি আমার আজ থেকে না ওবামা ক্ষমতায় আসার আগে থেকে চলছে। সমাধান জানি না।
১৮ তারিখের হরতাল ভালো হয়েছে। জ্বালাও পোড়াও ছাড়াও যে হরতাল সম্ভব ১৮ ডিসেম্বরের হরতালটা তার একটা উদাহরণ হয়ে রইল। সেটা ক্ষমতাসীন সরকারের সহায়তায় হয়ে থাকলেও উদাহরণ উদাহরণই। ভবিষ্যতে যখন ছাত্রলীগ/ছাত্রদলের পাণ্ডারা বলবে, "আমার কি বাম লিপস্টিক পার্টি যে ভাঙচুর ছাড়া হরতাল করবো?" তখন তাকে যুক্তির ফাঁদে ফেলতেও সুবিধা হবে। কারণ যত নাশকতাই হোক হরতাল বা ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা অসম্ভব। হরতাল নিষিদ্ধ করা প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করার সমার্থক। নিষিদ্ধ করলে সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবিতে হরতাল হবে। সুতরাং হরতাল পালনের পদ্ধতিতে পরিবর্তনের উদাহরণ আসাটা জরুরি ছিল।
তবে ১৮ ডিসেম্বরের হরতালের সব থেকে বড় অর্জন হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবী সামনে আসা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৫ম এবং ৭ম সংশোধনী বাতিল হলেও ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের সময়ে ক্ষমতাসীন দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করে নাই। কোন বিচারে করে নাই সেইটা ক্ষমতাসীন সরকারী দল জানে। করে নাই এটাই ঘটনা। করার সম্পূর্ণ সুযোগ সেই সময় ক্ষমতাসীন সরকারের ছিল। সুপ্রীম কোর্ট আগেই রায় দিয়েছে। সেই রায়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি/রাষ্ট্রধর্ম এইসব বিষয়ে ছাড় দেবার কোন কথা ছিল না। সেই সময়ে অল্প যে কজন মানুষ প্রতিবাদ করেছে তাঁদের প্রায় সবাই বামপন্থী। কিন্তু যতটা প্রতিবাদ সেইসময়ে সরকারের এই প্রতিক্রিয়াশীল সিদ্ধান্তগুলিকে ঠেকাতে পারতো তার কিছুই হয় নাই। প্রতিবাদ বলতে পত্রপত্রিকায় কিছু লেখা। আর তাতে হাহুতাশ ছাড়া তেমন কিছু দেখতে পাই নাই। প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল তখন। এখনও চলছে। কিন্তু যেটা একেবারে ২০০৯ সালে থেকে অত্যন্ত জরুরি ছিল সেই দাবীসমূহের সম্বয়ের ব্যাপারটা দেখা গেছে গত ১৮ ডিসেম্বরের হরতালের দাবী নামায়। এদিক থেকে বামমোর্চার দাবীনামা সিপিবি-বাসদের দাবীনামার থেকে সম্পূর্ণ। সিপিবি-বাসদের দাবীনামায় ফুলবাড়ি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং এশিয়া এনার্জিকে বহি:স্কারের দাবী ছিল না। কেন ছিল না তার ব্যাখ্যা সিপিবি-বাসদের লোকজন বলতে পারবেন। কিন্তু এই দাবীগুলির সম্মিলিত প্রকাশ খুবই জরুরি ছিল। ২০০৯ সাল থেকে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গণদাবী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া শুরু হলো তখন থেকেই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, দুর্নীতি দমন, ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ এই বিষয়গুলিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীর বিপরীত সমান্তরালে দেখিয়ে আসছিলেন কেউ কেউ। অথচ এর প্রতিটি দাবীই সঠিক এবং কোনটাই কোনটার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী কখনোই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী থেকে আলাদা ছিল না।
১৮ তারিখ হরতালের পর বিভিন্ন ব্লগে এবং দুএকটি পত্রপত্রিকায় যে গুটিকয় বিরূপ সমালোচনা এসেছে তারা কেউই সিপিবি-বাসদ বা বামমোর্চার সাথে জড়িত নন। তারা নিপাট কলাম লেখক। কর্পোরেট সংবাদ পত্রের উচ্চপদস্থ কেউ অথবা এনজিও মালিক অথবা উত্তরাধুনিকতা কপচানো কিছু বুদবুদ, যারা দেড় দশক ধরে আল্লারাখা সমাজতন্ত্রের ভাঙ্গারেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন। দাবীগুলির এই সমন্বিত প্রকাশ ছিল এইসব আল্লারাখা সমাজবাদীদের গালে টেনে চটকানা মারার মতো। সেখানেই তাদের যাবতীয় জ্বালা-পোড়া-সিনসিনানির রহস্য।
ঐ হরতালের কোন সমালোচনা যদি থেকে থাকে সেটা হরতালের টাইমিং। এই হরতালটা আরো আগে হতে পারতো। হওয়ার বাস্তব প্রয়োজন ছিল। তাজরীন গার্মেন্টসে ১২৫ জন শ্রমিক পুড়ে মরার সাথে সাথে এই দলগুলি সরাসরি শ্রমিক শ্রেণীর পাশে দাঁড়িয়ে কঠোর কর্মসূচী দিতে পারতো। ২০১১ সালের সংবিধান সংশোধনের সাথে সাথে রাস্তায় নামতে পারতো । সেদিক থেকে দেখতে গেলে ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ বেশ অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। এই বিলম্বের ক্ষতি এই দলগুলি কীভাবে পুষিয়ে নেবে বা আদৌ নিতে পারবে কিনা সেটা তারা নিজেরাই ভালো জানেন।
বামমোর্চার দাবীনামার সমর্থক হিসাবে আমার ন্যুনতম প্রাপ্তি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে একটা সফল রাজনৈতিক কর্মসূচী। এই হরতালটা হতে পারে কমিউনিষ্ট, সমাজতন্ত্রী দাবীদার দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাইলস্টোন। এরপরের কাজ হচ্ছে ঐ দাবীনামাকে নির্বাচনী কর্মসূচীতে পরিণত করে ঐক্যবদ্ধভাবে ৩০০ আসনে জনসংযোগ। জনগণ বহুদিন থেকেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুষ্টচক্র থেকে বের হতে চাইছে। পারছে না কোন শক্ত বিকল্প কর্মসূচীর অভাবে। নির্বাচনের আরো বছর খানেক সময় আছে। বামমোর্চা, সিপিবি, বাসদের সম্মিলিত দাবীগুলিকে রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসাবে জনগণের কাছে তুলে ধরে ম্যাণ্ডেট চান। বামপন্থী রাজনীতির মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবার সেটাই কার্যকর পথ।
গত ১৮ ডিসেম্বর সিপিবি,বাসদ আর বামমোর্চার সফল হরতালের সাথে সাথে আমার একটা পোস্ট লিখে ফেলার কথা ছিল। ধুনেফুনে একটা সপ্তাহ চলে গেল। আসলে অনেকদিন না লিখলে কীবোর্ডের সামনে বসে ঝট করে লিখে ফেলা ব্যাপারটাই পৃথিবীর সব থেকে কঠিণ কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতি আমার আজ থেকে না ওবামা ক্ষমতায় আসার আগে থেকে চলছে। সমাধান জানি না।
১৮ তারিখের হরতাল ভালো হয়েছে। জ্বালাও পোড়াও ছাড়াও যে হরতাল সম্ভব ১৮ ডিসেম্বরের হরতালটা তার একটা উদাহরণ হয়ে রইল। সেটা ক্ষমতাসীন সরকারের সহায়তায় হয়ে থাকলেও উদাহরণ উদাহরণই। ভবিষ্যতে যখন ছাত্রলীগ/ছাত্রদলের পাণ্ডারা বলবে, "আমার কি বাম লিপস্টিক পার্টি যে ভাঙচুর ছাড়া হরতাল করবো?" তখন তাকে যুক্তির ফাঁদে ফেলতেও সুবিধা হবে। কারণ যত নাশকতাই হোক হরতাল বা ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা অসম্ভব। হরতাল নিষিদ্ধ করা প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করার সমার্থক। নিষিদ্ধ করলে সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবিতে হরতাল হবে। সুতরাং হরতাল পালনের পদ্ধতিতে পরিবর্তনের উদাহরণ আসাটা জরুরি ছিল।
তবে ১৮ ডিসেম্বরের হরতালের সব থেকে বড় অর্জন হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবী সামনে আসা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৫ম এবং ৭ম সংশোধনী বাতিল হলেও ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের সময়ে ক্ষমতাসীন দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করে নাই। কোন বিচারে করে নাই সেইটা ক্ষমতাসীন সরকারী দল জানে। করে নাই এটাই ঘটনা। করার সম্পূর্ণ সুযোগ সেই সময় ক্ষমতাসীন সরকারের ছিল। সুপ্রীম কোর্ট আগেই রায় দিয়েছে। সেই রায়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি/রাষ্ট্রধর্ম এইসব বিষয়ে ছাড় দেবার কোন কথা ছিল না। সেই সময়ে অল্প যে কজন মানুষ প্রতিবাদ করেছে তাঁদের প্রায় সবাই বামপন্থী। কিন্তু যতটা প্রতিবাদ সেইসময়ে সরকারের এই প্রতিক্রিয়াশীল সিদ্ধান্তগুলিকে ঠেকাতে পারতো তার কিছুই হয় নাই। প্রতিবাদ বলতে পত্রপত্রিকায় কিছু লেখা। আর তাতে হাহুতাশ ছাড়া তেমন কিছু দেখতে পাই নাই। প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল তখন। এখনও চলছে। কিন্তু যেটা একেবারে ২০০৯ সালে থেকে অত্যন্ত জরুরি ছিল সেই দাবীসমূহের সম্বয়ের ব্যাপারটা দেখা গেছে গত ১৮ ডিসেম্বরের হরতালের দাবী নামায়। এদিক থেকে বামমোর্চার দাবীনামা সিপিবি-বাসদের দাবীনামার থেকে সম্পূর্ণ। সিপিবি-বাসদের দাবীনামায় ফুলবাড়ি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং এশিয়া এনার্জিকে বহি:স্কারের দাবী ছিল না। কেন ছিল না তার ব্যাখ্যা সিপিবি-বাসদের লোকজন বলতে পারবেন। কিন্তু এই দাবীগুলির সম্মিলিত প্রকাশ খুবই জরুরি ছিল। ২০০৯ সাল থেকে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গণদাবী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া শুরু হলো তখন থেকেই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, দুর্নীতি দমন, ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ এই বিষয়গুলিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীর বিপরীত সমান্তরালে দেখিয়ে আসছিলেন কেউ কেউ। অথচ এর প্রতিটি দাবীই সঠিক এবং কোনটাই কোনটার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী কখনোই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী থেকে আলাদা ছিল না।
১৮ তারিখ হরতালের পর বিভিন্ন ব্লগে এবং দুএকটি পত্রপত্রিকায় যে গুটিকয় বিরূপ সমালোচনা এসেছে তারা কেউই সিপিবি-বাসদ বা বামমোর্চার সাথে জড়িত নন। তারা নিপাট কলাম লেখক। কর্পোরেট সংবাদ পত্রের উচ্চপদস্থ কেউ অথবা এনজিও মালিক অথবা উত্তরাধুনিকতা কপচানো কিছু বুদবুদ, যারা দেড় দশক ধরে আল্লারাখা সমাজতন্ত্রের ভাঙ্গারেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন। দাবীগুলির এই সমন্বিত প্রকাশ ছিল এইসব আল্লারাখা সমাজবাদীদের গালে টেনে চটকানা মারার মতো। সেখানেই তাদের যাবতীয় জ্বালা-পোড়া-সিনসিনানির রহস্য।
ঐ হরতালের কোন সমালোচনা যদি থেকে থাকে সেটা হরতালের টাইমিং। এই হরতালটা আরো আগে হতে পারতো। হওয়ার বাস্তব প্রয়োজন ছিল। তাজরীন গার্মেন্টসে ১২৫ জন শ্রমিক পুড়ে মরার সাথে সাথে এই দলগুলি সরাসরি শ্রমিক শ্রেণীর পাশে দাঁড়িয়ে কঠোর কর্মসূচী দিতে পারতো। ২০১১ সালের সংবিধান সংশোধনের সাথে সাথে রাস্তায় নামতে পারতো । সেদিক থেকে দেখতে গেলে ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ বেশ অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। এই বিলম্বের ক্ষতি এই দলগুলি কীভাবে পুষিয়ে নেবে বা আদৌ নিতে পারবে কিনা সেটা তারা নিজেরাই ভালো জানেন।
বামমোর্চার দাবীনামার সমর্থক হিসাবে আমার ন্যুনতম প্রাপ্তি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে একটা সফল রাজনৈতিক কর্মসূচী। এই হরতালটা হতে পারে কমিউনিষ্ট, সমাজতন্ত্রী দাবীদার দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাইলস্টোন। এরপরের কাজ হচ্ছে ঐ দাবীনামাকে নির্বাচনী কর্মসূচীতে পরিণত করে ঐক্যবদ্ধভাবে ৩০০ আসনে জনসংযোগ। জনগণ বহুদিন থেকেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুষ্টচক্র থেকে বের হতে চাইছে। পারছে না কোন শক্ত বিকল্প কর্মসূচীর অভাবে। নির্বাচনের আরো বছর খানেক সময় আছে। বামমোর্চা, সিপিবি, বাসদের সম্মিলিত দাবীগুলিকে রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসাবে জনগণের কাছে তুলে ধরে ম্যাণ্ডেট চান। বামপন্থী রাজনীতির মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবার সেটাই কার্যকর পথ।
No comments:
Post a Comment