Thursday, April 02, 2020

লক ডাউননামা : এখনো পোলাপান

রহিম বাদশা এখনো পোলাপান। দ্বাদশ শ্রেণী শেষ করে উচ্চমাধ্যমিকের অপেক্ষায়। মোটামুটি গুছিয়ে এনেছে সবকিছু। তার মধ্যে এই লক ডাউন। সঠিকবেঠিক সবসময় সবাই বাড়িতে।

টেস্ট পেপারগুলি টেবিলের উপরেই ভৌগলিক অবস্থান বদলাতে থাকে। কাল থেকে পরীক্ষা শুরু হলেই ফাটিয়ে ফেলবে মেজাজ বাড়িময় ভন্ ভন‌্ করে। ঘরের মধ্যে ষোলগুটির কোর্ট বানিয়ে হাঁটে। হাঁটতে থাকে রহিম বাদশা।

ঘরের দক্ষিণে জানালা। এই জানালা থেকে পয়ষট্টি ডিগ্রি দক্ষিণে বানু আপুর জানালা। সঠিক দর্শন পেতে প্রক্ষেপকের ক-বিন্দু প্রতিবারই অনেক খুঁজে বের করতে হয়। বানু আপু খুব পড়ূয়া। নৃবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ। আদিম সমাজ নিয়ে অনেক পড়াশোনা। দেয়ালে নানারকম আঁতেল টাইপ ছবি। বানু আপুর ভালো নাম রূপবান সুলতানা।

একশ পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি দক্ষিণে টোকন ভাইয়ের জানালা। বন্ধই থাকে বেশির ভাগ। রাত সাড়ে নয়টা দশটার দিকে খোলে। প্রায়ই ভেসে আসে বড় তামাকের গন্ধ। ভালো লাগে।

বানু আপুকে টোকন ভাইয়ের জানালায় দেখা যায় মাঝে মাঝে। টোকন ভাইকেও দেখা গেছে বানু আপুর জানালায় দুয়েকবার।

এগুলি ডালভাত।

রহিমের জানালা থেকে নব্বই ডিগ্রিতে রাধাবিলাসবাবুর শোবার ঘরের জানালা। রাধাবিলাস ওঝা। পেশায় দর্জি। নিউ মার্কেটে দোকান আছে। পান্না বৌদি বাড়িতেই থাকেন। রাধাবিলাসবাবু ভালোবেসে ডাকেন পানু।

রহিম বাদশা এখনো পোলাপান। আলাদা একটা হার্ডডিস্ক ভর্তি শুধু ভিন্টেজ বড়দের ছবি। ৭২০ থেকে ১০৮০।

টিভির খবরে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলছে। বলছে সম্ভব হলে ঘরের মধ্যেও দূরত্ব বজায় রাখতে।

রহিমদের পরিবার প্রগতিশীল। ওরা গত সপ্তাহ থেকেই কেউ কারো ঘর থেকে বের হয় না। বাথরূমের বাইরে আলাদা বাতি আছে। কেউ ভেতরে থাকলে বোঝা যায়।

ল্যাপটপটা চার্জে দিয়ে শাল্টু বানানোতে মন দেয়।

রহিম বাদশা এখনো পোলাপান।

No comments: