বাংলা ব্লগিঙের প্রথম যূগে ধুমধারাক্কা লেখা নামিয়ে দিতাম। আন্তর্জালে বাংলায় লিখতে পারাটাই তখন প্রধাণ উত্তেজনা। ক্রমশ দিন বদলালো। ব্লগের নিজের সবখানে। সচলায়তন খুলে বসে বসে পড়ি। কখনো মন্তব্য করি। কখনো শুধু পড়েই যাই। হাত আর চলে না আগের মতো। কারণ এখন আর বালছাল লিখে দিতে যে মন সরে না তা না, কারণ আমি মূলত বালছালই লিখি; বলতে গেলে হাতে আর আগের মতো বালছালও আসে না।
১.
বেশ কিছুদিন থেকে ভাবছিলাম, প্রবাসীরা যে যেখানে আছে সেখানকার স্বতন্ত্র প্রতিবেশ বাস্তবতা নিয়ে শুধু প্রবন্ধ, রম্য বা স্মৃতিকথা না রীতিমতো নাটক, সিনেমা, শর্ট ফিল্ম বানাতে পারে। এখন যেহেতু মুভি ক্যামেরার মূল্য অনেকেরই ক্রয় ক্ষমতার আওতায়, গল্প ফেঁদে স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলতে পারলে ধুমধারাক্কা নাটক নামানো যায়। অনেকে নামাচ্ছেনও হয়তো। কিন্তু এই পর্যন্ত যা দেখলাম তার মধ্যে এক অলৌকিক হাসানেরটা বাদ দিলে সবই একঘেঁয়ে। প্রফেশনাল লোকদের পক্ষে মনে হয় এই মুহুর্তে মিডিয়ার "খাই" এর বাইরে কাজ করা মুস্কিল। আবার নন প্রফেশনাল কেউ এইসব কাজে খুব একটা উৎসাহও পান না। সবাই প্রবাসে থাকেন হাজারটা ঝামেলা কাঁধে করে। বালছাল চিন্তাভাবনা আসে আমার মতো সবচাইতে বেশী চিপায় থাকা লোকজনের মাথাতেই। এইসব ভাবতে থাকলে একসময় মাথা গরম লাগে। ভাল্লাগে না। মাথায় পোকা কুড়কুড় করে। সেই কুড়কুড়ানি নিয়ে ঘুমাতে গেলে শাল্টুখোঁরি খোঁয়াব দেখি। (না খাইয়া। এইখানে শাল্টুর অনেক দাম। ঠোলা ধরতে পারলে খবরাছে। এই দিক থিকা তানবীরাদের শহরটা ভালো।)
গত শনিবার রাতে দেখি আমি স্টেয়ার্নের মোড়ে ড্যোনার কাবাবের দোকান কেবাপ আম স্টেয়ার্নের সামনে দাঁড়িয়ে রিকসা ডাকি, "ঐ খালি ! যাইবো নাকি"? স্লেকারের সামনে থেকে রিক্সাওয়ালা মাথা বের করে বলে, "কৈ"? বললাম, "হেলেব্যোন", কয়, "না। ঐদিক থিকা এদিকের খ্যাপ নাই। আমার রিক্সা নর্ডস্টাড্ট এর।" বললাম, "আরে চলো। ভাড়া না হয় ৫০ সেন্ট বেশী নিও।" রিক্সায় উঠলাম। স্টেয়ার্ন থেকে হাউপ্টবানহফের দিকে রিক্সা চলে ঠুনঠুন করে। স্টাড্টবাড পার হয়ে রিক্সা বাঁক নেয় রুডলফ শ্ভোন্ডারস্ট্রাসে ধরে শাইডেমানপ্লাৎসের দিকে।
- তোমারে কেমন জানি চেনা চেনা লাগে।
- লাগবোই। আমার রিক্সা নর্ডস্টাড্ট এর। দিনের বেশীরভাগ থাকি ফ্রিডরিখ্ প্লাৎসে সিন লেফার্সের সামনে।
- বলো কি! ঐখানে তো ফ্লোরিয়ান একটা রিক্সা নিয়া আসে।
- তো এইটা কোন্ রিক্সা?
বলে ঘাড় ফিরিয়ে আমার দিকে তাকায়।
এ কি! এতো ফ্লোরিয়ান!
- তুমি বাংলা শিখলা কবে?
-শিখি নাই।
- তাইলে বলতেছো ক্যামনে?
- বলতেছি না।
-তাইলে আমি শুনতেছি ক্যান?
- কারণ আপনে স্বপ্ন দেখতাছেন।
২.
ইউটিউব দুষ্ট হইয়া গেছে। গত মাস দেড়েকের মধ্যে বহুত কিছু মুইছা দিছে। আগে প্রচুর বাংলা সিনেমা ছিল, নাটক ছিল। সেগুলা গেছে। ইদানিং শুরু হইছে ম্লেচ্ছ জিনিসপত্র মোছা। গত এপ্রিলমাস থিকা আমার ঘরে টিভি নাই। পরের জিনিস। পর আইসা বছর দুই পর একদিন নিয়া গেল। "গুটে ৎসাইটেন শ্লেষ্টে ৎসাইটেন" (good times bad times) নামে একটা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং জটিল ডেইলি সোপ দেখতাম। টিভি চইলা গেলে সেইটা দেখা বন্ধ। তারপর একদিন ফ্রাইবুর্গবাসী আমার এর বন্ধুর কাছে সবিস্তারে এপ্রিল থিকা আগস্ট পর্যন্ত কাহিনি জাইনা ইউটিউবে সার্চ দিয়া পাইয়া গেলাম। একেবারে গত বছরের শুরু থিকা আছে। খুটুর খুটুর কইরা দেখা শুরু করলাম। নুয়া দেখলে গুয়া কামড়ায়। কথাটা ডেইলি সোপের নিয়মিত দর্শকের ক্ষেত্রে সবিশেষ প্রযোজ্য। দেখতে দেখতে আবার গতিজড়তার মধ্যে। এখন প্রতিদিন না হইলেও প্রতি তিন দিনে একবার কইরা এই নেভার এন্ডিঙ কাহিনির আপডেট না পাইলে পরান অস্থির করে। কাহিনি শুধু জটিল না রীতিমতো গিট্টু। শুরু হইছে সেই ১৯৯২ সালে। সাড়ে চাইর হাজার পর্ব অলরেডি শ্যাষ। এর মধ্যে কত লোক যে আইছে আর গেছে তার কোন হিসাব নাই। আমি শুরু করছি ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে। প্রথমে দুই একটা পর্ব দেইখা বিরক্ত হইয়া বাদ দিছিলাম। পরে দেখি একবার কাহিনির কোন একটা সূত্র মাথায় ঢু্ইকা গেলেই ডেইলি সোপ বাদ দেওয়া রীতিমত যমের অসাধ্য। বিশেষ কইরা যদি ঐ নাটক হওয়ার সময়টায় কেউ ফ্রী থাকে। সকালে ঘুম থিকা উইঠা পেটে কিছু দিতে থাকার সময়টাতেই আরটিএল চ্যানেলে ঐটা দেখায়। সেই থিকা শুরু।
কইতেছিলাম কাহিনির কথা। আমি যখন শুরু করছি তখন জনের সাথে এমিলির প্রেম কিন্তু একই সাথে ক্লাসমেট পাওলারেও জন ভালো পায়, টিমের সাথে লেনার প্রেম, প্রফেসর ভেয়ার্নারের সাথে কী যেন নাম ভুইলা গেছির প্রেম, সেই কী যেন নাম ভুইলা গেছিরে আবার কে যেন ভালো পায় তার নামও ভুইলা গেছি, ক্যাথরিনের সাথে লিওনের প্রেম হয় আবার হয় না স্টেজ, ভিনসেন্ট তখন জনদের স্কুলের হেড মিস্ট্রেসের জামাই যদিও মহিলার অনেক বয়স কারণ ভিনসেন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক তার কাগজ দরকার, ওদিকে ভেরেনা ভিনসেন্টরে ভালো পায় এইসব মিলাইয়া একটা পরিস্থিতি। এরমধ্যে হঠাৎ আবিস্কার হইলো যে এমিলি আসলে জনের সৎবোন। সেই ছ্যাঁকের শোকে জন আর আবিট্যুর (ইন্টারমেডিয়েট) দ্যায় না। পরে কী জানি এক্টা ট্রেনিঙ করে। তারপর থিকা তারা ভাইবোন। এইসব বালছাল পার হৈয়া বছর খানি পরে পরিস্থিতি দাঁড়াইল ভিনসেন্টের সাথে হেডমিস্ট্রেসের ছাড়াছাড়ি হৈল কিন্তু ওদিকে আবার ভেরেনা বিরক্ত হৈয়া ভিক্টররে বিয়া করার ঘোষনা দিয়া দিছে। সেই বিয়ার দিনটা ছিল ৩৩৩৩ নম্বর পর্ব। সেইখানে অনেক কান্ড কইরা শেষ পর্যন্ত বিয়ার আসর থিকা ভেরেনা পলায়। ভিনসেন্ট গিয়া তারে উদ্ধার করে। তারপর তাদের প্রেম শুরু। ওদিকে বিয়ার আসরে এতগুলা লোক বইসা আছে তাদের কী হবে? এই যখন পরিস্থিতি তখন জন আর পাওলা বোম ফাটাইলো। তারা বিবাহ করতে চায়। চার্চের ইমাম সাহেব মহানন্দে তাগো বিয়া পড়াইলেন। এরপরে প্রায় বছর খানেক দেখা হয় নাই। এর মধ্যে বহুত নতুন লোক আইছে গেছে। ২০০৬ সালের জুনের শেষে অসুস্থ থাকার সময় আবার টিভি দেখা শুরু করলাম। একদিকে বিশ্বকাপ আরেক দিকে গুটে ৎসাইটেন শ্লেষ্টে ৎসাইটেন। দেখি জন আর পাওলা ঠিকাছে। এমিলি ফ্যাশান ডিজাইন করে। তার প্রেম হয় নাই। এমিলির জমজ ভাই ফিলিপের প্রেম হইছে ফ্রান্সির সাথে। প্রফেসার ভেয়ার্নারের সেই নাবালিকা বান্ধবী টিমের সাথে ঝুইলা পইড়া তারপর কোনভাবে মারা পড়ছে পোলা পয়দা কইরা। তারপর নানান মামলার পরে সেই পোলা টিমের কাছেই থাকে। লেনা যে কই গেছে আর জানা গেলো না। তারপর আবার অনেকদিনের গ্যাপ। সেই সময়টা ব্লগ গরম। ব্লগের থিকা বড় কোন এন্টারটেইনমেন্ট নাই দুনিয়াতে। ২০০৭ এর একেবারে শেষে একদিন উঁকি দিয়া দেখি কাহিনিতে অনেক নতুন টুইস্ট। তারপর আবার কিছুদিন বাদ গেলো নানান ঝামেলায়। এর মধ্যে এপ্রিলে টিভি চইলা যাওয়ার পরে একদিন ফ্রাইবুর্গের বন্ধুর কাছে আপডেট পাইয়া শুরু করলাম ইউটিউবে আবার দেখা। এইবার বিশাল ঝামেলা। হের বাখমান মরার পরে তার তিন পোলা মাইয়া( লেনা কৈ গেছে জানিনা) একলগে থাকা শুরু করার পরে এমিলি আলাদা বাসায় গেছে গা কারণ সে জনের বৌ পাওলারে দেখতে পারে না। এদিকে কেমনে কেমনে জানি ফ্রান্সির সাথে পাওলার খাতির বাইড়া গেল গা। বাড়তে বাড়তে একেবারে সব্জিকামের দিকে। সেইটা প্রথমে জানজানি হওয়ার পরে তো বিশাল কান্দাকাটি। দুই জা সমকামী হইলেও ওদিকে দুইভাই শেষ পর্যন্ত সামুকামীই থাইকা গেলগা। প্রথমে তারা দুইজনই ভাবতে চাইল, না তারা কেউই শাকসব্জি ভালোবাসে না। এরমধ্যে কী এক্টা জানি ট্রেনিঙের পরে পাওলা ঠোলা হইয়া গেলো। ওদিকে এমিলি শুরু করছে হেরোইন খাওয়া। পাওলা একদিন ধইরাও ননদের খাতিরে ছাইড়া দিলো। কিন্তু এমিলি আর থামে না। সে ফ্রান্সিরেও মাল ধরাইল। ওদিকে জনের লগে পাওলার দ্রবণ ক্রমশ ক্রিস্টাল হওয়া ধরছে। তার ডিরেকশান চিলিঙের দিকে। ঠোলার জীবনে অতিষ্ঠ পাওলা আবার যায় ফ্রান্সির কাছে। তারে তওবা করায় যে আর মাল খাইবা না। এদিকে পাওলা ডিউটিতে গেলে এমিলি তারে নিয়া নানান পার্টি ঘুইরা টালটক্কর হইয়া বাসায় ফিরে। ফ্রান্সি কী জানি এক্টা গরম করতে রান্নাঘরে গিয়ে স্টোভ বার্স্ট কইরা পটল তোলে। পাওলা মামলা করে এমিলির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে জনের লগে ডিভোর্সও হৈয়া যায়। তারপর সেই মামলা চলতে থাকে। ওদিকে আরো নানান চরিত্ররা আরো নানান কিছু করতে থাকে.......
আপ্নারাই কন, কাহিনিটা পৃথিবীর কোন সিরিয়াল থিকা কম জটিল? :D
৩.
১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে একটা অ্যাকসিডেন্টে ডান হাতের অনেকগুলি শিরা আর ধমনী কাটা পড়ে। তখন ছায়ানটে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলাম। তবলায়। হাসপাতাল থেকে বের হবার পর সবই ফেরত পেলাম। শুধু তবলাকে ভুলতে হলো। মোটেও ভালো বাজাতাম না। বাজনার হাত বেশ খারাপই ছিল। তবু চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত পৌঁছেছিলাম। তবলাগুলি কোথায় কার কাছে হারিয়েছে জানি না। ডায়রীটা অঞ্জনের কাছে। কিন্তু বোলগুলি মাথায় থেকে গেছে। সারেঙ্গীর বাজনা শুরু হতে কানিতে টোকা পড়লেই কে যেন খচ্ করে বুকের মধ্যে ছুরি মারে।
আজ বিকালে ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখি ওস্তাদ আহমদজান থিরাকাওয়ার কিছু ক্লিপ। ওস্তাদজীর নাম বলতে বলতে কানে হাত চলে গেল। তাহ্জীব-এ-মৌসিকী বলে কথা।
লিঙ্কগুলি সচলে দিলাম। আমি শুধু শুনে শুনে সঙ্গীতের ভক্ত। তত্ত্বকথা আমি জানি না।
১.
বেশ কিছুদিন থেকে ভাবছিলাম, প্রবাসীরা যে যেখানে আছে সেখানকার স্বতন্ত্র প্রতিবেশ বাস্তবতা নিয়ে শুধু প্রবন্ধ, রম্য বা স্মৃতিকথা না রীতিমতো নাটক, সিনেমা, শর্ট ফিল্ম বানাতে পারে। এখন যেহেতু মুভি ক্যামেরার মূল্য অনেকেরই ক্রয় ক্ষমতার আওতায়, গল্প ফেঁদে স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলতে পারলে ধুমধারাক্কা নাটক নামানো যায়। অনেকে নামাচ্ছেনও হয়তো। কিন্তু এই পর্যন্ত যা দেখলাম তার মধ্যে এক অলৌকিক হাসানেরটা বাদ দিলে সবই একঘেঁয়ে। প্রফেশনাল লোকদের পক্ষে মনে হয় এই মুহুর্তে মিডিয়ার "খাই" এর বাইরে কাজ করা মুস্কিল। আবার নন প্রফেশনাল কেউ এইসব কাজে খুব একটা উৎসাহও পান না। সবাই প্রবাসে থাকেন হাজারটা ঝামেলা কাঁধে করে। বালছাল চিন্তাভাবনা আসে আমার মতো সবচাইতে বেশী চিপায় থাকা লোকজনের মাথাতেই। এইসব ভাবতে থাকলে একসময় মাথা গরম লাগে। ভাল্লাগে না। মাথায় পোকা কুড়কুড় করে। সেই কুড়কুড়ানি নিয়ে ঘুমাতে গেলে শাল্টুখোঁরি খোঁয়াব দেখি। (না খাইয়া। এইখানে শাল্টুর অনেক দাম। ঠোলা ধরতে পারলে খবরাছে। এই দিক থিকা তানবীরাদের শহরটা ভালো।)
গত শনিবার রাতে দেখি আমি স্টেয়ার্নের মোড়ে ড্যোনার কাবাবের দোকান কেবাপ আম স্টেয়ার্নের সামনে দাঁড়িয়ে রিকসা ডাকি, "ঐ খালি ! যাইবো নাকি"? স্লেকারের সামনে থেকে রিক্সাওয়ালা মাথা বের করে বলে, "কৈ"? বললাম, "হেলেব্যোন", কয়, "না। ঐদিক থিকা এদিকের খ্যাপ নাই। আমার রিক্সা নর্ডস্টাড্ট এর।" বললাম, "আরে চলো। ভাড়া না হয় ৫০ সেন্ট বেশী নিও।" রিক্সায় উঠলাম। স্টেয়ার্ন থেকে হাউপ্টবানহফের দিকে রিক্সা চলে ঠুনঠুন করে। স্টাড্টবাড পার হয়ে রিক্সা বাঁক নেয় রুডলফ শ্ভোন্ডারস্ট্রাসে ধরে শাইডেমানপ্লাৎসের দিকে।
- তোমারে কেমন জানি চেনা চেনা লাগে।
- লাগবোই। আমার রিক্সা নর্ডস্টাড্ট এর। দিনের বেশীরভাগ থাকি ফ্রিডরিখ্ প্লাৎসে সিন লেফার্সের সামনে।
- বলো কি! ঐখানে তো ফ্লোরিয়ান একটা রিক্সা নিয়া আসে।
- তো এইটা কোন্ রিক্সা?
বলে ঘাড় ফিরিয়ে আমার দিকে তাকায়।
এ কি! এতো ফ্লোরিয়ান!
- তুমি বাংলা শিখলা কবে?
-শিখি নাই।
- তাইলে বলতেছো ক্যামনে?
- বলতেছি না।
-তাইলে আমি শুনতেছি ক্যান?
- কারণ আপনে স্বপ্ন দেখতাছেন।
২.
ইউটিউব দুষ্ট হইয়া গেছে। গত মাস দেড়েকের মধ্যে বহুত কিছু মুইছা দিছে। আগে প্রচুর বাংলা সিনেমা ছিল, নাটক ছিল। সেগুলা গেছে। ইদানিং শুরু হইছে ম্লেচ্ছ জিনিসপত্র মোছা। গত এপ্রিলমাস থিকা আমার ঘরে টিভি নাই। পরের জিনিস। পর আইসা বছর দুই পর একদিন নিয়া গেল। "গুটে ৎসাইটেন শ্লেষ্টে ৎসাইটেন" (good times bad times) নামে একটা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং জটিল ডেইলি সোপ দেখতাম। টিভি চইলা গেলে সেইটা দেখা বন্ধ। তারপর একদিন ফ্রাইবুর্গবাসী আমার এর বন্ধুর কাছে সবিস্তারে এপ্রিল থিকা আগস্ট পর্যন্ত কাহিনি জাইনা ইউটিউবে সার্চ দিয়া পাইয়া গেলাম। একেবারে গত বছরের শুরু থিকা আছে। খুটুর খুটুর কইরা দেখা শুরু করলাম। নুয়া দেখলে গুয়া কামড়ায়। কথাটা ডেইলি সোপের নিয়মিত দর্শকের ক্ষেত্রে সবিশেষ প্রযোজ্য। দেখতে দেখতে আবার গতিজড়তার মধ্যে। এখন প্রতিদিন না হইলেও প্রতি তিন দিনে একবার কইরা এই নেভার এন্ডিঙ কাহিনির আপডেট না পাইলে পরান অস্থির করে। কাহিনি শুধু জটিল না রীতিমতো গিট্টু। শুরু হইছে সেই ১৯৯২ সালে। সাড়ে চাইর হাজার পর্ব অলরেডি শ্যাষ। এর মধ্যে কত লোক যে আইছে আর গেছে তার কোন হিসাব নাই। আমি শুরু করছি ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে। প্রথমে দুই একটা পর্ব দেইখা বিরক্ত হইয়া বাদ দিছিলাম। পরে দেখি একবার কাহিনির কোন একটা সূত্র মাথায় ঢু্ইকা গেলেই ডেইলি সোপ বাদ দেওয়া রীতিমত যমের অসাধ্য। বিশেষ কইরা যদি ঐ নাটক হওয়ার সময়টায় কেউ ফ্রী থাকে। সকালে ঘুম থিকা উইঠা পেটে কিছু দিতে থাকার সময়টাতেই আরটিএল চ্যানেলে ঐটা দেখায়। সেই থিকা শুরু।
কইতেছিলাম কাহিনির কথা। আমি যখন শুরু করছি তখন জনের সাথে এমিলির প্রেম কিন্তু একই সাথে ক্লাসমেট পাওলারেও জন ভালো পায়, টিমের সাথে লেনার প্রেম, প্রফেসর ভেয়ার্নারের সাথে কী যেন নাম ভুইলা গেছির প্রেম, সেই কী যেন নাম ভুইলা গেছিরে আবার কে যেন ভালো পায় তার নামও ভুইলা গেছি, ক্যাথরিনের সাথে লিওনের প্রেম হয় আবার হয় না স্টেজ, ভিনসেন্ট তখন জনদের স্কুলের হেড মিস্ট্রেসের জামাই যদিও মহিলার অনেক বয়স কারণ ভিনসেন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক তার কাগজ দরকার, ওদিকে ভেরেনা ভিনসেন্টরে ভালো পায় এইসব মিলাইয়া একটা পরিস্থিতি। এরমধ্যে হঠাৎ আবিস্কার হইলো যে এমিলি আসলে জনের সৎবোন। সেই ছ্যাঁকের শোকে জন আর আবিট্যুর (ইন্টারমেডিয়েট) দ্যায় না। পরে কী জানি এক্টা ট্রেনিঙ করে। তারপর থিকা তারা ভাইবোন। এইসব বালছাল পার হৈয়া বছর খানি পরে পরিস্থিতি দাঁড়াইল ভিনসেন্টের সাথে হেডমিস্ট্রেসের ছাড়াছাড়ি হৈল কিন্তু ওদিকে আবার ভেরেনা বিরক্ত হৈয়া ভিক্টররে বিয়া করার ঘোষনা দিয়া দিছে। সেই বিয়ার দিনটা ছিল ৩৩৩৩ নম্বর পর্ব। সেইখানে অনেক কান্ড কইরা শেষ পর্যন্ত বিয়ার আসর থিকা ভেরেনা পলায়। ভিনসেন্ট গিয়া তারে উদ্ধার করে। তারপর তাদের প্রেম শুরু। ওদিকে বিয়ার আসরে এতগুলা লোক বইসা আছে তাদের কী হবে? এই যখন পরিস্থিতি তখন জন আর পাওলা বোম ফাটাইলো। তারা বিবাহ করতে চায়। চার্চের ইমাম সাহেব মহানন্দে তাগো বিয়া পড়াইলেন। এরপরে প্রায় বছর খানেক দেখা হয় নাই। এর মধ্যে বহুত নতুন লোক আইছে গেছে। ২০০৬ সালের জুনের শেষে অসুস্থ থাকার সময় আবার টিভি দেখা শুরু করলাম। একদিকে বিশ্বকাপ আরেক দিকে গুটে ৎসাইটেন শ্লেষ্টে ৎসাইটেন। দেখি জন আর পাওলা ঠিকাছে। এমিলি ফ্যাশান ডিজাইন করে। তার প্রেম হয় নাই। এমিলির জমজ ভাই ফিলিপের প্রেম হইছে ফ্রান্সির সাথে। প্রফেসার ভেয়ার্নারের সেই নাবালিকা বান্ধবী টিমের সাথে ঝুইলা পইড়া তারপর কোনভাবে মারা পড়ছে পোলা পয়দা কইরা। তারপর নানান মামলার পরে সেই পোলা টিমের কাছেই থাকে। লেনা যে কই গেছে আর জানা গেলো না। তারপর আবার অনেকদিনের গ্যাপ। সেই সময়টা ব্লগ গরম। ব্লগের থিকা বড় কোন এন্টারটেইনমেন্ট নাই দুনিয়াতে। ২০০৭ এর একেবারে শেষে একদিন উঁকি দিয়া দেখি কাহিনিতে অনেক নতুন টুইস্ট। তারপর আবার কিছুদিন বাদ গেলো নানান ঝামেলায়। এর মধ্যে এপ্রিলে টিভি চইলা যাওয়ার পরে একদিন ফ্রাইবুর্গের বন্ধুর কাছে আপডেট পাইয়া শুরু করলাম ইউটিউবে আবার দেখা। এইবার বিশাল ঝামেলা। হের বাখমান মরার পরে তার তিন পোলা মাইয়া( লেনা কৈ গেছে জানিনা) একলগে থাকা শুরু করার পরে এমিলি আলাদা বাসায় গেছে গা কারণ সে জনের বৌ পাওলারে দেখতে পারে না। এদিকে কেমনে কেমনে জানি ফ্রান্সির সাথে পাওলার খাতির বাইড়া গেল গা। বাড়তে বাড়তে একেবারে সব্জিকামের দিকে। সেইটা প্রথমে জানজানি হওয়ার পরে তো বিশাল কান্দাকাটি। দুই জা সমকামী হইলেও ওদিকে দুইভাই শেষ পর্যন্ত সামুকামীই থাইকা গেলগা। প্রথমে তারা দুইজনই ভাবতে চাইল, না তারা কেউই শাকসব্জি ভালোবাসে না। এরমধ্যে কী এক্টা জানি ট্রেনিঙের পরে পাওলা ঠোলা হইয়া গেলো। ওদিকে এমিলি শুরু করছে হেরোইন খাওয়া। পাওলা একদিন ধইরাও ননদের খাতিরে ছাইড়া দিলো। কিন্তু এমিলি আর থামে না। সে ফ্রান্সিরেও মাল ধরাইল। ওদিকে জনের লগে পাওলার দ্রবণ ক্রমশ ক্রিস্টাল হওয়া ধরছে। তার ডিরেকশান চিলিঙের দিকে। ঠোলার জীবনে অতিষ্ঠ পাওলা আবার যায় ফ্রান্সির কাছে। তারে তওবা করায় যে আর মাল খাইবা না। এদিকে পাওলা ডিউটিতে গেলে এমিলি তারে নিয়া নানান পার্টি ঘুইরা টালটক্কর হইয়া বাসায় ফিরে। ফ্রান্সি কী জানি এক্টা গরম করতে রান্নাঘরে গিয়ে স্টোভ বার্স্ট কইরা পটল তোলে। পাওলা মামলা করে এমিলির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে জনের লগে ডিভোর্সও হৈয়া যায়। তারপর সেই মামলা চলতে থাকে। ওদিকে আরো নানান চরিত্ররা আরো নানান কিছু করতে থাকে.......
আপ্নারাই কন, কাহিনিটা পৃথিবীর কোন সিরিয়াল থিকা কম জটিল? :D
৩.
১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে একটা অ্যাকসিডেন্টে ডান হাতের অনেকগুলি শিরা আর ধমনী কাটা পড়ে। তখন ছায়ানটে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলাম। তবলায়। হাসপাতাল থেকে বের হবার পর সবই ফেরত পেলাম। শুধু তবলাকে ভুলতে হলো। মোটেও ভালো বাজাতাম না। বাজনার হাত বেশ খারাপই ছিল। তবু চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত পৌঁছেছিলাম। তবলাগুলি কোথায় কার কাছে হারিয়েছে জানি না। ডায়রীটা অঞ্জনের কাছে। কিন্তু বোলগুলি মাথায় থেকে গেছে। সারেঙ্গীর বাজনা শুরু হতে কানিতে টোকা পড়লেই কে যেন খচ্ করে বুকের মধ্যে ছুরি মারে।
আজ বিকালে ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখি ওস্তাদ আহমদজান থিরাকাওয়ার কিছু ক্লিপ। ওস্তাদজীর নাম বলতে বলতে কানে হাত চলে গেল। তাহ্জীব-এ-মৌসিকী বলে কথা।
লিঙ্কগুলি সচলে দিলাম। আমি শুধু শুনে শুনে সঙ্গীতের ভক্ত। তত্ত্বকথা আমি জানি না।
1 comment:
লেখা খুব ভাল্লাগলো। সিনেমা বানানোর খুব শখ আমার। টেকনিক্যাল কোনো জ্ঞান নাই দেখে কিছু করতে পারি না। মনে মনে কাহিনী সাজাই দেখি। আবার সব শেষ।
টরন্টোর রাস্তার মোড়ে টঙ দোকান থেকে স্বপ্নে অনেকবার চা-বিড়ি কিনে খাইছি। সাথে একটা বনরুটি কলা।
লেখেন। এমন লেখা ভাল্লাগে পড়তে।
Post a Comment