২০০৪ এর মে মাসের মাঝামাঝি একদিন আগাতা ( আমার পোলিশ প্রতিবেশীনী ) বেশ মজা করে বল্ল জানো ২০৮ এ এক লোক আসছে তার বিছানা বালিশ কিছুই নাই , কিন্তু বিরাট একটা টি.ভি. আছে । কথা বল্লে রাস্তা থিকা শোনা যায় । আমি তখনও বুঝি নাই এত মজা পাওয়ার কি আছে । রাতে বাসায় ফিরেছি , দেখি তিনতলা থেকে এক আফ্রিকান শব্দ করে নেমে আসছে । আমাকে দেখে বাড়ি কাঁপিয়ে হালুম করে উঠলো । একটু ধাতস্থ হয়ে বুঝলাম হ্যালো বলছে । বলে আমি ২০৮ এ উঠছি,আমার নাম মার্টিন মুডো, বাড়ি ক্যামেরুন..এই পর্যন্ত বলে জবাবের অপেক্ষা না করে ধুমধাম করে নেমে গেলো । আফ্রিকান দের সাথে সাধারণত আমার ভালোই খাতির হয় । ভাবলাম ভালোই একটু হুড়াহুড়ি করা যাবে ।
কয়েকদিন পর এক সন্ধ্যায় দরজা খুলতেই নাকে ধাক্কা মারলো, অতি পরিচিত ''বাবার প্রসাদের'' সুবাস । খাইছে আমারে এতো দেখি গাঞ্জাখোর ! রান্নাঘরে আগাতা জিজ্ঞাসা করলো, আফ্রিকান দের মধ্যেও ঘরে ধূপ দেওয়ার ট্র্যাডিশান আছে নাকি ? বললাম , থাকতে পারে তবে এই ধূপ খাঁটি ভারতীয় । একটু অবাক হলাম । গাঁজার গন্ধ চিনে না , একটা কথা হইলো ? আগাতা বলে যে সে বার্লিনে এক ভারতীয় কে চিনতো , কিন্তু সেই ধূপের গন্ধ এরকম না । বললাম হ..নানা রকম উপাসক..নানারকম ধূপ। আগাতার কাছেই জানলাম যে মুডোকে সে স্লিপিং ব্যাগ ধার দিয়েছে । আমি প্রমাদ গুনলাম । আমার ঘরে একটা এক্সট্রা ম্যাট্রেস ছিল । বাসায় থাকলে ওইটা চেয়ে বসতো । যাইহোক সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মুডোর আরও অনেক প্রতিভা প্রকাশ পেতে শুরু করলো । প্রথম ২/৩ দিন আমাকে বলে এবং তারপরথেকে না বলে কাবাড ও ফ্রিজ থেকে থেকে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য সুবিধামত ব্যবহার করলো । নিজে ডিম ছাড়া কিছু কিনতো না । একসাথে ৭/৮ টা ডিম পোচ খেয়ে, ৫টা টি-ব্যাগ দিয়ে চা ...আর তারপর ঘরে গিয়ে ব্যোম ভোলানাথ । শুধু আমার না আগাতার ভাঁড়ারেও তার অবাধ বিচরণ শুরু হলো । আগাতা এমনিতে বেশ লক্ষী টাইপ হলেও একদিন ধরে বসলো । মুডো বলে,why do you shought like that? its only couple of eggs!! সবচাইতে বিরক্ত লাগতো রান্না তরকারি টেবিলে রেখে গেলে যখন বাসায় ফিরে জমে যাওয়া মাংসের ঝোলে ছোট ছোট ভ্যাকুয়াম দেখতাম । এরমধ্যে একদিন সে রান্নাঘরে ব্যোমভোলা শুরু করলো। আমি সহ্য করে নিচ্ছিলাম কিন্তু আগাতা ক্ষেপে গেল, ঠান্ডা গলায় অনুরোধ করলো রান্নাঘরে ধূমপান না করতে । মুডো তেড়ে উঠলো I don't smoke cigarattes like him ! This is pure Hashish!! ঘর গন্ধ হয় বরে আমিও রান্নাঘরে ফুকতাম । আমি মধ্যস্থতা করে বল্লাম ঠিক আছে আজ থেকে আমিও রান্না ঘরে বিড়ি খাবো না। এরপর থেকে আগাতা অতিরিক্ত খাপপা হয়ে উঠলো। জুলাই র মাঝামাঝি এসেও এক হপ্তার জন্য ধার নেওয়া স্লিপিং ব্যাগ ফেরত দেওয়ার নাম নাই । শেষে আমার অনুপস্থিতিতে একদিন প্রচন্ড ঝগড়ার পরে সেটা ফেরত পাওয়া গেল। আগাতা কেঁদে কেটে একশেষ। কারন মুডো মহাশয় জিনিসটা না ধুয়ে, আনুষঙ্গিক সুবাসসহই ফেরত দিয়েছেন। আমি আসলে চেষ্টা করছিলাম যতটা পারা যায় ঝামেলায় না গিয়ে ওকে এড়িয়ে চলতে । একদিন ওর সাথে বসে একটান দিয়েও দেখলাম, ২০০১ থেকে ওই প্রসাদে আর মতি না থাকায় মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো; বল্লাম আর খাবো না, মুডো কয় you look high, man you look high !!!.....খুব ঝামেলা হতো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে । আগাতা বার কয়েক অভিযোগও করলো কতর্ৃপক্ষকে ।মুডো বেশ কয়েকবার আগাতাকে কায়দা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো । আমি এই সময়ে কাজ আর পরীক্ষা নিয়ে খুব ব্যাস্ত ছিলাম । আর মুডোকে আসলে ভয়ও পেতাম । ওর চেহারা ছিল অনেকটা নাইজেরিয়ান ফুটবলার রশীদ ইয়াকিনির মতো, স্বাস্থ্যও । আমার সাথে ওইসময় তেমন সমস্যা হয়নি ওর । আমি অন্য হলে সীটের আবেদন করে রেখেছিলাম আগেই ।
সেপ্টেম্বরে আগাতা চলে গেল লুইনেবুর্গ। উচ্চে:স্বরে টিভি এবং হিপহপের অত্যাচার বেড়ে গেল কয়েক গুন । একদিন রাতে কাজ থেকে ফিরে খাবার গরম করছি, মুডো এসে পয়সা চাইলো । বললাম নেই কয়,dont worry..if you gimme 10 today, you'll get 15 tomorrow, there are two classified m�dels in my room..hahahah we can share every thing..আমি বল্লাম আমার কাছে সাকুল্যে ২/৩ ইউরোর বেশী নেই..আর আমি খুব ক্লান্ত দয়া করে ডেকের সাউন্ড কমাও । মুডো বেশ রাগ দেখিয়ে চলে গেল..একটু পরে দেখলাম ওর ঘর থেকে ১৪/১৫ বছর বয়সী ২ বালিকা বের হয়ে গেল । মুডো কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে , অনির্দিষ্টভাবে গালাগালি শুরু করলো..সেদিন থেকে ও আমাকে আর সহ্য করতে পারতো না । তবে আমার তরকারিতে ভাগ বসানো চলছিলই । ওকে শায়েস্তা করার জন্য একদিন তরকারিতে ধুন্ধুমার ঝাল দিলাম । সেদিন সকাল থেকেই চলছিল তার ব্যোম ভোলানাথ । ওই অবস্থায় ঝাল খেলে ঝাঁকি দিয়ে নেশা ছাড়বে এটা জানতাম । সেদিন বাসায় ফেরার পর অপ্রাসঙ্গিকভাবে ঝগড়া শুরু করলো । আমার রান্নার দূর্গন্ধে নাকি তার ঘুম হচ্ছে না। (জার্মানরা কোনদিন এই অভিযোগ করেনি) আমি বল্লাম তোমার গাঞ্জার গন্ধে আমিও ঘুমাতে পারি না..ইত্যাদি । একটা ঠান্ডা লড়াই রীতিমতো শুরু হয়ে গেল ।
সেপ্টেম্বরের ২১/২২ তারিখের দিকে একটি আমেরিকান মেয়ে এল । নাম ক্রিস্টিন । টাসকি খাওয়ার মতো সুন্দরী । আমার প্রায় টেঁসে যাবার পরিস্থিতি । মুডো বড়ি ছিল না । আমি তাকে বাসার একটা শর্ট ইনট্রুডাকশান দিলাম । মুডো সম্পর্কেও সতর্ক করে দিলাম । যখন বুঝলাম যথেষ্ট ভয় পেয়েছে নিশ্চিন্তে বাইরে গেলাম । রাতে বাসায় ফিরে শুনলাম ক্রিস্টিনকে বলা হয়েছে পরদিনই পুরো বাড়ি পরিস্কার করতে । আমি বললাম ব্যাপারটা এইরকম না আসলে , একেক হপ্তায় একেকজনের দায়িত্ব । আমি জানতাম আজকে আমার দায়িত্ব, তুমি কোথাও যাবার হলে যাও । শেষ পর্যন্ত দুজন মিলেই কাজ করলাম । বাসার অবস্থা ছিল ভয়াবহ । দুপুরের দিকে মুডো বাড়ি ফিরে দেখে ক্রিস্টিনের সাথে আমার রসালাপ চলছে ...মানে হাসাহাসি আর কি....বেচারা ঘরে গিয়ে উঁচু আওয়াজে বব মার্লে ছাড়লো..রিডেম্পশান সং ...
পরদিন খুব ব্যাস্ত ছিলাম,বাড়ি ফিরলাম ১১ টার দিকে। ক্রিস্টিন বল্ল মুডো একটু আগে পুরা টাল অবস্থায় ওর ইন্টারভিউ নিয়েছে জার্মান ভাষায় । মুডোর জার্মান উচ্চারণ ছিল ভয়াবহ । যার আফ্রিকান ইংরেজী সম্পর্কে ধারনা আছে এরকম জার্মান জানা লোক ছাড়া ওর কথা সম্পূর্ণ বোঝা মুস্কিল । যাই হোক খুব ক্লান্ত থাকায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম । সকালে উঠে শুনি ক্রিস্টিন কাঁদছে...ঘটনা কি ? বলে মুডো গতরাতে ওকে ৩ ঘন্টা যাবৎ আবোল তাবোল বলেছে । একপর্যায়ে চুমু খাবারও চেষ্টা করেছে ..আজই সে চলে যাবে বাড়ি ছেড়ে..আমি বল্লাম তুমি হল অফিসে একটা লিখিত অভিযোগ কর,ওর নামে আগেও অভিযোগ ছিল ...এবার ব্যাটা নিশ্চয়ই ভাগবে । বেশ খারাপ লাগছিল । আর এক আমেরিকান এসেছিল গাড়ি নিয়ে,সু্টকেস নামাতে সাহায্য করলাম.মনটা হু হু করছিল...........
পরে কয়েকদিন মুডোর খবর নাই । এর মধ্যে আর একটা আমেরিকান মেয়ে উঠলো ২০৭ এ। নাম শ্যারন। ক্রিস্টিনের সখী । কাসেলের সাথে গ্রীন বে'র এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম আছে ।সবাই ওখান থেকেই আসে । সে বেশ ঠ্যাটা মেয়ে । মুডোকে পাত্তাই দিতো না । আমার সাথে খিটমিটি রেগেই থাকতো মুডোর ।
আগে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিরাম মুডো আসলে ছিল গাজা বিক্রেতা । ওর ব্যাবসা বোধ হয় তখন খারাপ যাচ্ছিল ।
সেদিন ছিল অক্টোবরের ৩১ তারিখ। রান্না করছিলাম । আমাকে সরাসরি বল্ল,if yoy try to provoke me it'll be very dangarous for you..mind it ! you are provoking everyone afainst me..i undersatnd everything..you are the inventor of this conspiracy.........ইত্যাদি । আরও বল্ল যে সে চলে যাচ্ছে বাড়ি ছেড়ে । আমি তো খুশিতে আটখানা ।
পরদিন ঘুম ভাঙলো হল অফিসের কর্মচারির ডাকে । নতুন একটি মেয়ে এসেছে ২০৬ এ। রাশিয়ান। নাম আলেকজান্দ্রা। দেখতে মন্দ না। তবে আমার আগের দিনের উৎসাহে ভাঁটা পড়রো এবার নিশ্চয়ই নতুন শিকারের আশায় ব্যাটা আবার কোন ঝামেলা করবে । রাতে বাসায় ফিরে দেখলাম অনুমান নির্ভুল । সাশা ( আরেকজান্দ্রার ডাক নাম ) কে নাকি সে তার ঘরে যেতে বলেছিল টেবিল মেরামতের জন্যে । সাশা যায়নি । পরের দিন সকালে শুনলাম আবার সেই রান্নাঘর পরিস্কার করা বিষয়ে মুডোর বক্তৃতা । সাশা অবশ্য গাজার গন্ধ চিনে ফেল্ল শুরুতেই । রাশিয়া থেকে মাত্র ডাক্তারি পাশ করেছে ।আমাকে জিজ্ঞাসা করলো , আমরা পুলিশে খবর দেই না কেন , বল্লাম এত ঝামেলায় যায় কে ইত্যাদি । শুনলাম মুডো নাকি ওর খাবার ফ্রিজ থেকে নিয়ে গার্বেজে ফেলেছে ।
পরদিন সকালে ঢুলতে ঢুলতে টয়লেটে ঢুকছি, মুডো পথ আটকালো : if you ever come to the kitchen while im eating , ill beat you up..you dont know me... রীতিমতো হুমকি । এদিকে রান্নাঘরে না গেলে আমার তো চলবে না । ভয় আসলে তেমন পাই নাই, বিরক্ত লাগতেছিল । বাঙ্গালী ছাত্রদের সাথে পরামর্শ করলাম । তারা বল্ল কয়েক দিন এর ওর বাসায় খাইতে আর অফিসিয়ালি অভিযোগ করতে । একা অভিযোগে আগে কোন ফল হয়নি ।
আমার রাজনৈতিক বুদ্ধি প্রয়োগ করলাম । ক্যাম্পাসে বসে কৃস্টিন,শ্যারন আর সাশাকে নিয়ে একত্রে লিখিত অভিযোগ করলাম। কর্তৃপক্ষ বল্লেন,তারা পুলিশের কাজ করতে পারবেন না,তবে ওকে বের করে দিতে পারবেন। তাও মাসের শেষে । ৩০ নভেম্বর ডেডলাইন। আমাকে পরামর্শ দেওয়া হলো ২ সপ্তাহ অন্য কোথাও থাকার এবং মেয়েদের বলা হলো ঝামেলা হলেই ১১৩(ঠোলার নাম্বার)তে ফোন করতে। পরের ২ হপ্তা ছিলাম এখানে সেখানে। সাশা আর শ্যারন নিয়মিত এস.এম.এস দিয়ে পরিস্থিতি আপডেট করতো। শেষ যে রাতে ঐ বাসায় ছিলাম সেদিন মুডো রাত দশটা থেকে একাই রান্নাঘর দখল কইরা রাখছিল। সবাই বাসায় কিন্তু বাইর হইয়া টয়লেটে যাইতেও ভয় লাগে ধরণের পরিস্থিতি। মুডোর ঘরে দালান কাঁপাইয়া হিপহপ চলতেছে আর মুডো ধুপধাপ শব্দ কইরা একবার রান্নাঘরে যায় আর আসে। এক পর্যায়ে প্যাসেজে দাড়াইয়া ঘোষনা দিল, so meine Lesben und Schwulen! Ihr schläft wie Brüder und Schwestern...ich werde heiraten und Kinder haben!!!!
(প্রিয় লেসবিয়ান এবং গে সকল! তোমরা শুয়ে থাকো ভাইবোনের মতো। আমি ঠিকই বিয়া করুম। পোলাপানও হইবো)
৩০ নভেম্বর সন্ধায় বাড়ি ফিরলাম মস্কোভোস্কায়ার বোতল নিয়ে ......ইয়াসলিপ ইয়া, বিল সুলতান ইয়াকিম ইয়া ত্রাপসোন..(রুশ গান..আমি যদি ৩ বৌওয়ালা সুলতান হতাম)..সেরকম একটা পার্টি হয়েছিল। আমি একা পুরুষ। ২ আমেরিকান ১ রুশ..ঠান্ডা লড়াই আর ৩য় বিশ্ব....
কয়েকদিন পর এক সন্ধ্যায় দরজা খুলতেই নাকে ধাক্কা মারলো, অতি পরিচিত ''বাবার প্রসাদের'' সুবাস । খাইছে আমারে এতো দেখি গাঞ্জাখোর ! রান্নাঘরে আগাতা জিজ্ঞাসা করলো, আফ্রিকান দের মধ্যেও ঘরে ধূপ দেওয়ার ট্র্যাডিশান আছে নাকি ? বললাম , থাকতে পারে তবে এই ধূপ খাঁটি ভারতীয় । একটু অবাক হলাম । গাঁজার গন্ধ চিনে না , একটা কথা হইলো ? আগাতা বলে যে সে বার্লিনে এক ভারতীয় কে চিনতো , কিন্তু সেই ধূপের গন্ধ এরকম না । বললাম হ..নানা রকম উপাসক..নানারকম ধূপ। আগাতার কাছেই জানলাম যে মুডোকে সে স্লিপিং ব্যাগ ধার দিয়েছে । আমি প্রমাদ গুনলাম । আমার ঘরে একটা এক্সট্রা ম্যাট্রেস ছিল । বাসায় থাকলে ওইটা চেয়ে বসতো । যাইহোক সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মুডোর আরও অনেক প্রতিভা প্রকাশ পেতে শুরু করলো । প্রথম ২/৩ দিন আমাকে বলে এবং তারপরথেকে না বলে কাবাড ও ফ্রিজ থেকে থেকে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য সুবিধামত ব্যবহার করলো । নিজে ডিম ছাড়া কিছু কিনতো না । একসাথে ৭/৮ টা ডিম পোচ খেয়ে, ৫টা টি-ব্যাগ দিয়ে চা ...আর তারপর ঘরে গিয়ে ব্যোম ভোলানাথ । শুধু আমার না আগাতার ভাঁড়ারেও তার অবাধ বিচরণ শুরু হলো । আগাতা এমনিতে বেশ লক্ষী টাইপ হলেও একদিন ধরে বসলো । মুডো বলে,why do you shought like that? its only couple of eggs!! সবচাইতে বিরক্ত লাগতো রান্না তরকারি টেবিলে রেখে গেলে যখন বাসায় ফিরে জমে যাওয়া মাংসের ঝোলে ছোট ছোট ভ্যাকুয়াম দেখতাম । এরমধ্যে একদিন সে রান্নাঘরে ব্যোমভোলা শুরু করলো। আমি সহ্য করে নিচ্ছিলাম কিন্তু আগাতা ক্ষেপে গেল, ঠান্ডা গলায় অনুরোধ করলো রান্নাঘরে ধূমপান না করতে । মুডো তেড়ে উঠলো I don't smoke cigarattes like him ! This is pure Hashish!! ঘর গন্ধ হয় বরে আমিও রান্নাঘরে ফুকতাম । আমি মধ্যস্থতা করে বল্লাম ঠিক আছে আজ থেকে আমিও রান্না ঘরে বিড়ি খাবো না। এরপর থেকে আগাতা অতিরিক্ত খাপপা হয়ে উঠলো। জুলাই র মাঝামাঝি এসেও এক হপ্তার জন্য ধার নেওয়া স্লিপিং ব্যাগ ফেরত দেওয়ার নাম নাই । শেষে আমার অনুপস্থিতিতে একদিন প্রচন্ড ঝগড়ার পরে সেটা ফেরত পাওয়া গেল। আগাতা কেঁদে কেটে একশেষ। কারন মুডো মহাশয় জিনিসটা না ধুয়ে, আনুষঙ্গিক সুবাসসহই ফেরত দিয়েছেন। আমি আসলে চেষ্টা করছিলাম যতটা পারা যায় ঝামেলায় না গিয়ে ওকে এড়িয়ে চলতে । একদিন ওর সাথে বসে একটান দিয়েও দেখলাম, ২০০১ থেকে ওই প্রসাদে আর মতি না থাকায় মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো; বল্লাম আর খাবো না, মুডো কয় you look high, man you look high !!!.....খুব ঝামেলা হতো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে । আগাতা বার কয়েক অভিযোগও করলো কতর্ৃপক্ষকে ।মুডো বেশ কয়েকবার আগাতাকে কায়দা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো । আমি এই সময়ে কাজ আর পরীক্ষা নিয়ে খুব ব্যাস্ত ছিলাম । আর মুডোকে আসলে ভয়ও পেতাম । ওর চেহারা ছিল অনেকটা নাইজেরিয়ান ফুটবলার রশীদ ইয়াকিনির মতো, স্বাস্থ্যও । আমার সাথে ওইসময় তেমন সমস্যা হয়নি ওর । আমি অন্য হলে সীটের আবেদন করে রেখেছিলাম আগেই ।
সেপ্টেম্বরে আগাতা চলে গেল লুইনেবুর্গ। উচ্চে:স্বরে টিভি এবং হিপহপের অত্যাচার বেড়ে গেল কয়েক গুন । একদিন রাতে কাজ থেকে ফিরে খাবার গরম করছি, মুডো এসে পয়সা চাইলো । বললাম নেই কয়,dont worry..if you gimme 10 today, you'll get 15 tomorrow, there are two classified m�dels in my room..hahahah we can share every thing..আমি বল্লাম আমার কাছে সাকুল্যে ২/৩ ইউরোর বেশী নেই..আর আমি খুব ক্লান্ত দয়া করে ডেকের সাউন্ড কমাও । মুডো বেশ রাগ দেখিয়ে চলে গেল..একটু পরে দেখলাম ওর ঘর থেকে ১৪/১৫ বছর বয়সী ২ বালিকা বের হয়ে গেল । মুডো কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে , অনির্দিষ্টভাবে গালাগালি শুরু করলো..সেদিন থেকে ও আমাকে আর সহ্য করতে পারতো না । তবে আমার তরকারিতে ভাগ বসানো চলছিলই । ওকে শায়েস্তা করার জন্য একদিন তরকারিতে ধুন্ধুমার ঝাল দিলাম । সেদিন সকাল থেকেই চলছিল তার ব্যোম ভোলানাথ । ওই অবস্থায় ঝাল খেলে ঝাঁকি দিয়ে নেশা ছাড়বে এটা জানতাম । সেদিন বাসায় ফেরার পর অপ্রাসঙ্গিকভাবে ঝগড়া শুরু করলো । আমার রান্নার দূর্গন্ধে নাকি তার ঘুম হচ্ছে না। (জার্মানরা কোনদিন এই অভিযোগ করেনি) আমি বল্লাম তোমার গাঞ্জার গন্ধে আমিও ঘুমাতে পারি না..ইত্যাদি । একটা ঠান্ডা লড়াই রীতিমতো শুরু হয়ে গেল ।
সেপ্টেম্বরের ২১/২২ তারিখের দিকে একটি আমেরিকান মেয়ে এল । নাম ক্রিস্টিন । টাসকি খাওয়ার মতো সুন্দরী । আমার প্রায় টেঁসে যাবার পরিস্থিতি । মুডো বড়ি ছিল না । আমি তাকে বাসার একটা শর্ট ইনট্রুডাকশান দিলাম । মুডো সম্পর্কেও সতর্ক করে দিলাম । যখন বুঝলাম যথেষ্ট ভয় পেয়েছে নিশ্চিন্তে বাইরে গেলাম । রাতে বাসায় ফিরে শুনলাম ক্রিস্টিনকে বলা হয়েছে পরদিনই পুরো বাড়ি পরিস্কার করতে । আমি বললাম ব্যাপারটা এইরকম না আসলে , একেক হপ্তায় একেকজনের দায়িত্ব । আমি জানতাম আজকে আমার দায়িত্ব, তুমি কোথাও যাবার হলে যাও । শেষ পর্যন্ত দুজন মিলেই কাজ করলাম । বাসার অবস্থা ছিল ভয়াবহ । দুপুরের দিকে মুডো বাড়ি ফিরে দেখে ক্রিস্টিনের সাথে আমার রসালাপ চলছে ...মানে হাসাহাসি আর কি....বেচারা ঘরে গিয়ে উঁচু আওয়াজে বব মার্লে ছাড়লো..রিডেম্পশান সং ...
পরদিন খুব ব্যাস্ত ছিলাম,বাড়ি ফিরলাম ১১ টার দিকে। ক্রিস্টিন বল্ল মুডো একটু আগে পুরা টাল অবস্থায় ওর ইন্টারভিউ নিয়েছে জার্মান ভাষায় । মুডোর জার্মান উচ্চারণ ছিল ভয়াবহ । যার আফ্রিকান ইংরেজী সম্পর্কে ধারনা আছে এরকম জার্মান জানা লোক ছাড়া ওর কথা সম্পূর্ণ বোঝা মুস্কিল । যাই হোক খুব ক্লান্ত থাকায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম । সকালে উঠে শুনি ক্রিস্টিন কাঁদছে...ঘটনা কি ? বলে মুডো গতরাতে ওকে ৩ ঘন্টা যাবৎ আবোল তাবোল বলেছে । একপর্যায়ে চুমু খাবারও চেষ্টা করেছে ..আজই সে চলে যাবে বাড়ি ছেড়ে..আমি বল্লাম তুমি হল অফিসে একটা লিখিত অভিযোগ কর,ওর নামে আগেও অভিযোগ ছিল ...এবার ব্যাটা নিশ্চয়ই ভাগবে । বেশ খারাপ লাগছিল । আর এক আমেরিকান এসেছিল গাড়ি নিয়ে,সু্টকেস নামাতে সাহায্য করলাম.মনটা হু হু করছিল...........
পরে কয়েকদিন মুডোর খবর নাই । এর মধ্যে আর একটা আমেরিকান মেয়ে উঠলো ২০৭ এ। নাম শ্যারন। ক্রিস্টিনের সখী । কাসেলের সাথে গ্রীন বে'র এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম আছে ।সবাই ওখান থেকেই আসে । সে বেশ ঠ্যাটা মেয়ে । মুডোকে পাত্তাই দিতো না । আমার সাথে খিটমিটি রেগেই থাকতো মুডোর ।
আগে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিরাম মুডো আসলে ছিল গাজা বিক্রেতা । ওর ব্যাবসা বোধ হয় তখন খারাপ যাচ্ছিল ।
সেদিন ছিল অক্টোবরের ৩১ তারিখ। রান্না করছিলাম । আমাকে সরাসরি বল্ল,if yoy try to provoke me it'll be very dangarous for you..mind it ! you are provoking everyone afainst me..i undersatnd everything..you are the inventor of this conspiracy.........ইত্যাদি । আরও বল্ল যে সে চলে যাচ্ছে বাড়ি ছেড়ে । আমি তো খুশিতে আটখানা ।
পরদিন ঘুম ভাঙলো হল অফিসের কর্মচারির ডাকে । নতুন একটি মেয়ে এসেছে ২০৬ এ। রাশিয়ান। নাম আলেকজান্দ্রা। দেখতে মন্দ না। তবে আমার আগের দিনের উৎসাহে ভাঁটা পড়রো এবার নিশ্চয়ই নতুন শিকারের আশায় ব্যাটা আবার কোন ঝামেলা করবে । রাতে বাসায় ফিরে দেখলাম অনুমান নির্ভুল । সাশা ( আরেকজান্দ্রার ডাক নাম ) কে নাকি সে তার ঘরে যেতে বলেছিল টেবিল মেরামতের জন্যে । সাশা যায়নি । পরের দিন সকালে শুনলাম আবার সেই রান্নাঘর পরিস্কার করা বিষয়ে মুডোর বক্তৃতা । সাশা অবশ্য গাজার গন্ধ চিনে ফেল্ল শুরুতেই । রাশিয়া থেকে মাত্র ডাক্তারি পাশ করেছে ।আমাকে জিজ্ঞাসা করলো , আমরা পুলিশে খবর দেই না কেন , বল্লাম এত ঝামেলায় যায় কে ইত্যাদি । শুনলাম মুডো নাকি ওর খাবার ফ্রিজ থেকে নিয়ে গার্বেজে ফেলেছে ।
পরদিন সকালে ঢুলতে ঢুলতে টয়লেটে ঢুকছি, মুডো পথ আটকালো : if you ever come to the kitchen while im eating , ill beat you up..you dont know me... রীতিমতো হুমকি । এদিকে রান্নাঘরে না গেলে আমার তো চলবে না । ভয় আসলে তেমন পাই নাই, বিরক্ত লাগতেছিল । বাঙ্গালী ছাত্রদের সাথে পরামর্শ করলাম । তারা বল্ল কয়েক দিন এর ওর বাসায় খাইতে আর অফিসিয়ালি অভিযোগ করতে । একা অভিযোগে আগে কোন ফল হয়নি ।
আমার রাজনৈতিক বুদ্ধি প্রয়োগ করলাম । ক্যাম্পাসে বসে কৃস্টিন,শ্যারন আর সাশাকে নিয়ে একত্রে লিখিত অভিযোগ করলাম। কর্তৃপক্ষ বল্লেন,তারা পুলিশের কাজ করতে পারবেন না,তবে ওকে বের করে দিতে পারবেন। তাও মাসের শেষে । ৩০ নভেম্বর ডেডলাইন। আমাকে পরামর্শ দেওয়া হলো ২ সপ্তাহ অন্য কোথাও থাকার এবং মেয়েদের বলা হলো ঝামেলা হলেই ১১৩(ঠোলার নাম্বার)তে ফোন করতে। পরের ২ হপ্তা ছিলাম এখানে সেখানে। সাশা আর শ্যারন নিয়মিত এস.এম.এস দিয়ে পরিস্থিতি আপডেট করতো। শেষ যে রাতে ঐ বাসায় ছিলাম সেদিন মুডো রাত দশটা থেকে একাই রান্নাঘর দখল কইরা রাখছিল। সবাই বাসায় কিন্তু বাইর হইয়া টয়লেটে যাইতেও ভয় লাগে ধরণের পরিস্থিতি। মুডোর ঘরে দালান কাঁপাইয়া হিপহপ চলতেছে আর মুডো ধুপধাপ শব্দ কইরা একবার রান্নাঘরে যায় আর আসে। এক পর্যায়ে প্যাসেজে দাড়াইয়া ঘোষনা দিল, so meine Lesben und Schwulen! Ihr schläft wie Brüder und Schwestern...ich werde heiraten und Kinder haben!!!!
(প্রিয় লেসবিয়ান এবং গে সকল! তোমরা শুয়ে থাকো ভাইবোনের মতো। আমি ঠিকই বিয়া করুম। পোলাপানও হইবো)
৩০ নভেম্বর সন্ধায় বাড়ি ফিরলাম মস্কোভোস্কায়ার বোতল নিয়ে ......ইয়াসলিপ ইয়া, বিল সুলতান ইয়াকিম ইয়া ত্রাপসোন..(রুশ গান..আমি যদি ৩ বৌওয়ালা সুলতান হতাম)..সেরকম একটা পার্টি হয়েছিল। আমি একা পুরুষ। ২ আমেরিকান ১ রুশ..ঠান্ডা লড়াই আর ৩য় বিশ্ব....
No comments:
Post a Comment