জায়গাটা আবিস্কার করি ২০০৫ এর কোন এক রবিবার। বিভিন্ন কারণে মাথা গরম হইতে হইতে এক পর্যায়ে ল অফ ডিমিনিশিং রিটার্নে ভুদাই হইতে শুরু করছি। সময়রে হাতি দিয়া টাইনাও সামনে নেওয়া যায় না। মনে হইলো বাইর হই একটু। ভোদর হইয়া বাইসা থাইকা লাভ নাই।
তখন ভরা গ্রীষ্মকাল। ঠা ঠা রোইদ। ইউরোপের গ্রীষ্মকাল বিকিনিভূষিতাদের ব্যাস্তানুপাতে শুস্ক। সবরকম তৃষ্ণা একসাথে বাড়ে।কিছু দূর হেটে ভাবলাম পছন্দমতো বীয়ার গার্টেন বা খোলা পাব দেখলে ঢুকে পড়বো। সোজা হাটতে হাটতে চলে গেলাম নদীর পাড়। সেইখানে বসে বসে নানারকম পাখী দেখলাম ঘন্টাখানেক।তারপর রওনা দিলাম শহরের দিকে।
Ysenburgstrasseর কোনায় সেই ক্নাইপের দরজা দেখি হাট করে খোলা। মনে হইল ঢুকি। এক সময় কাজের ধান্দায় কাসেলের প্রায় সব ক্নাইপে-বার-রেস্টুরেন্টে ঢু মারলেও এইখানে কেন জানি কখনো আসা হয় নাই। বাইরে থেকে দেখলে চট করে কারো আগ্রহ হয় না। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয়।
ঢুকলাম। লম্বা কাঠামো। বাইরের অর্ধেকটা বার তারপর কিছুটা পথ ছেড়ে একটা বিলিয়ার্ড বোর্ড। তারপর কয়েকটা টেবিল চেয়ারপাতা। ঢুকতেই অভ্যর্থনা জানালো বার থেকে। সাকুল্যে ৫ জন লোক, বারের ভদ্রলোক বাদে। বসলাম। বল্লাম একটা সাদা বীয়ার দিতে। ভদ্রলোক সবিনয়ে জানালেন ব্যারেল শেষ। ঘন্টাখানেক পরে সাদা বিয়ার পাওয়া যাবে। বল্লাম তাহলে এক পেগ জ্যাক ডানিয়েলস..অন দ্য রক। উত্তর হেসেনের পাহাড়ি লোক সঙ্গীতের সাথে ইংরেজের পানীয় বেমানান হলেও নিতে হল।
বুড়োরা একে একে উঠে এসে অভ্যর্থনা জানানো শুরু করলো। শুধু কুশল জিজ্ঞাসা আর কিছু না। একজন সিগারেট অফার করলো। মানে মানে করে নিয়ে নিলাম। একজন খবরের কাগজে কি জানি একটা দেখিয়ে উত্তেজিত ভাবে বলে এর কোন মানে হয়? ভয়ে ভয়ে বল্লাম, না। ভেবেছিলাম আরো কিছু বলবে কিন্তু চুপ করে গেল। বারের কর্মচারী ইশারায় বললো, লাইনে আছে। একটা চিরকুট দেখালো তাতে পরিসংখ্যানের ভাষায় ৯ টা ঢ্যাড়া। মানে এই পর্যন্ত ৯ বোতল বীয়ার টেনেছেন। কোনাকুনি দশম টানের অপেক্ষায়। এর মধ্যে একজন গিয়ে গান বদলে দিলো। এখানে গান বদলাতে পয়সা লাগে। অ্যালবাম প্রতি দেড় ইউরো। এক আধাবুড়ো, বয়স অনুমান ৬০ হবে। রোলিং স্টোনস চলছিল। ভালো লাগছিল। বললাম আরেক পেগ দিতে।
এরমধ্যে এক বুড়ো, যে গান বদলেছে,সামনের টুলে এসে বসলেন। বললেন, দিনকাল খারাপ। বললাম,হ। তারপর শুরু করলেন পুরানা গল্প:
পূর্বপুরুষ বেবরা'র(কাসেল থেকে ট্রেনে ৩৫ মিনিট) বাসিন্দা। গত শতাব্দীর শুরুতে কোন এক সময় তার পিতামহ ভেজার টোর এলাকায়(যেখানে বর্তমান কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়)বাড়ি কেনেন। সেইসময় অন্যরকম ছিল সবকিছু। হাতিশালে ব্যাং ঘোড়াশালে চিংড়ি মাছ ইত্যাদি। (বর্ণনা শুনতে শুনতে আর শুনবার অভিনয় করতে করতে ৪র্থ পেগ টানা হয়ে গেছে।ভাবছিলাম এইভাবে টানলে ভবিষ্যত ফকফকা। উঠতে হবে।) দুনিয়াটাই অন্যরকম ছিল। এমনকি তার বউও। এখন দেখলে মনে হয় কেমঞ্জানি কিন্তু ৪৫ বছর আগে লোকজন হা করে থাকতো। এই পর্যায়ে হা করে আলজ্বিভ দেখিয়ে দিলেন।
প্রমাদ গুণলাম। বিল কত হয়েছে? বারম্যান জানালো ৩ ইউরো ৯৬ সেন্ট। মানিব্যাগ বের করতেই বুড়ো বললো,"আরে এখনই যাবে কোথায়?গল্প তো শুরুই করিনি!এই একে একটা ডাবল পেগ দাও..বিল আমার!" বসলাম আবার গাঁট হয়ে।বুড়ো চালিয়ে গেলেন....
“সম্ভবত ১৯৫৩..হ্যা..সেই বিশ্বকাপের আগের বছর .....আমি তখন, এখন তোমরা যাকে নর্ড স্টাড্ট বলো সেখানে কাগজের কারখানায়(এই কারখানা ১৯৭৭ সালে শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়) কাজ করতাম। শহরের চেহারা তখনো একটা কঙ্কালের মতো। ছুটির দিনে সবাই তালে থাকতো কিভাবে শহর থেকে বের হওয়া যায়। তো এক শুক্রবার দুপুরে এক কলিগ নাম লিজেলটে বললো বিকালে অরাঞ্জেরীতে মেলা আছে যাবা নাকি? রাজী হলাম। লিজেলটের কথা আলাদা করে কখনো না ভাবলেও মাথার মধ্যে মোটামুটি ঘনঘন যারা যাতয়াত করে তাদের মধ্যেই ছিল। বললাম বিকালে ফ্রিডরিখ প্লাৎস এ থাকতে। ফ্রিডরিখ প্লাৎস এ গিয়ে যখন পৌছলাম তখন বিকাল সাড়ে পাঁচটা। সে একটা আকাশী রঙএর স্কর্ট আর বেগুনি টপ পড়া ছিল। গেলাম অরাঞ্জেরীতে। নিজে দাওয়াত দিলোও কেমন জানি বিরক্ত ছিল শুরু থেকে। একটা দোকান খুব সুন্দর করে সাজানো। বললাম বীয়ার খাই। রাজী হলো। ভাজা সসেজ অফার করলাম। তাতেও রাজী হল। তারপর উঠলাম মেরী গো রাউন্ডে। স্পিড বাড়তেই আমাকে জাপটে ধরলো......”
তারপর চুপচাপ নিজের বীয়ারে মন দিলেন। আমার গেলাস বহুৎ আগেই খতম। জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর?- হু? তারপর গত ৪৫ বছর ধইরা আর ছাড়ে নাই।
(চলবে...)
তখন ভরা গ্রীষ্মকাল। ঠা ঠা রোইদ। ইউরোপের গ্রীষ্মকাল বিকিনিভূষিতাদের ব্যাস্তানুপাতে শুস্ক। সবরকম তৃষ্ণা একসাথে বাড়ে।কিছু দূর হেটে ভাবলাম পছন্দমতো বীয়ার গার্টেন বা খোলা পাব দেখলে ঢুকে পড়বো। সোজা হাটতে হাটতে চলে গেলাম নদীর পাড়। সেইখানে বসে বসে নানারকম পাখী দেখলাম ঘন্টাখানেক।তারপর রওনা দিলাম শহরের দিকে।
Ysenburgstrasseর কোনায় সেই ক্নাইপের দরজা দেখি হাট করে খোলা। মনে হইল ঢুকি। এক সময় কাজের ধান্দায় কাসেলের প্রায় সব ক্নাইপে-বার-রেস্টুরেন্টে ঢু মারলেও এইখানে কেন জানি কখনো আসা হয় নাই। বাইরে থেকে দেখলে চট করে কারো আগ্রহ হয় না। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয়।
ঢুকলাম। লম্বা কাঠামো। বাইরের অর্ধেকটা বার তারপর কিছুটা পথ ছেড়ে একটা বিলিয়ার্ড বোর্ড। তারপর কয়েকটা টেবিল চেয়ারপাতা। ঢুকতেই অভ্যর্থনা জানালো বার থেকে। সাকুল্যে ৫ জন লোক, বারের ভদ্রলোক বাদে। বসলাম। বল্লাম একটা সাদা বীয়ার দিতে। ভদ্রলোক সবিনয়ে জানালেন ব্যারেল শেষ। ঘন্টাখানেক পরে সাদা বিয়ার পাওয়া যাবে। বল্লাম তাহলে এক পেগ জ্যাক ডানিয়েলস..অন দ্য রক। উত্তর হেসেনের পাহাড়ি লোক সঙ্গীতের সাথে ইংরেজের পানীয় বেমানান হলেও নিতে হল।
বুড়োরা একে একে উঠে এসে অভ্যর্থনা জানানো শুরু করলো। শুধু কুশল জিজ্ঞাসা আর কিছু না। একজন সিগারেট অফার করলো। মানে মানে করে নিয়ে নিলাম। একজন খবরের কাগজে কি জানি একটা দেখিয়ে উত্তেজিত ভাবে বলে এর কোন মানে হয়? ভয়ে ভয়ে বল্লাম, না। ভেবেছিলাম আরো কিছু বলবে কিন্তু চুপ করে গেল। বারের কর্মচারী ইশারায় বললো, লাইনে আছে। একটা চিরকুট দেখালো তাতে পরিসংখ্যানের ভাষায় ৯ টা ঢ্যাড়া। মানে এই পর্যন্ত ৯ বোতল বীয়ার টেনেছেন। কোনাকুনি দশম টানের অপেক্ষায়। এর মধ্যে একজন গিয়ে গান বদলে দিলো। এখানে গান বদলাতে পয়সা লাগে। অ্যালবাম প্রতি দেড় ইউরো। এক আধাবুড়ো, বয়স অনুমান ৬০ হবে। রোলিং স্টোনস চলছিল। ভালো লাগছিল। বললাম আরেক পেগ দিতে।
এরমধ্যে এক বুড়ো, যে গান বদলেছে,সামনের টুলে এসে বসলেন। বললেন, দিনকাল খারাপ। বললাম,হ। তারপর শুরু করলেন পুরানা গল্প:
পূর্বপুরুষ বেবরা'র(কাসেল থেকে ট্রেনে ৩৫ মিনিট) বাসিন্দা। গত শতাব্দীর শুরুতে কোন এক সময় তার পিতামহ ভেজার টোর এলাকায়(যেখানে বর্তমান কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়)বাড়ি কেনেন। সেইসময় অন্যরকম ছিল সবকিছু। হাতিশালে ব্যাং ঘোড়াশালে চিংড়ি মাছ ইত্যাদি। (বর্ণনা শুনতে শুনতে আর শুনবার অভিনয় করতে করতে ৪র্থ পেগ টানা হয়ে গেছে।ভাবছিলাম এইভাবে টানলে ভবিষ্যত ফকফকা। উঠতে হবে।) দুনিয়াটাই অন্যরকম ছিল। এমনকি তার বউও। এখন দেখলে মনে হয় কেমঞ্জানি কিন্তু ৪৫ বছর আগে লোকজন হা করে থাকতো। এই পর্যায়ে হা করে আলজ্বিভ দেখিয়ে দিলেন।
প্রমাদ গুণলাম। বিল কত হয়েছে? বারম্যান জানালো ৩ ইউরো ৯৬ সেন্ট। মানিব্যাগ বের করতেই বুড়ো বললো,"আরে এখনই যাবে কোথায়?গল্প তো শুরুই করিনি!এই একে একটা ডাবল পেগ দাও..বিল আমার!" বসলাম আবার গাঁট হয়ে।বুড়ো চালিয়ে গেলেন....
“সম্ভবত ১৯৫৩..হ্যা..সেই বিশ্বকাপের আগের বছর .....আমি তখন, এখন তোমরা যাকে নর্ড স্টাড্ট বলো সেখানে কাগজের কারখানায়(এই কারখানা ১৯৭৭ সালে শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়) কাজ করতাম। শহরের চেহারা তখনো একটা কঙ্কালের মতো। ছুটির দিনে সবাই তালে থাকতো কিভাবে শহর থেকে বের হওয়া যায়। তো এক শুক্রবার দুপুরে এক কলিগ নাম লিজেলটে বললো বিকালে অরাঞ্জেরীতে মেলা আছে যাবা নাকি? রাজী হলাম। লিজেলটের কথা আলাদা করে কখনো না ভাবলেও মাথার মধ্যে মোটামুটি ঘনঘন যারা যাতয়াত করে তাদের মধ্যেই ছিল। বললাম বিকালে ফ্রিডরিখ প্লাৎস এ থাকতে। ফ্রিডরিখ প্লাৎস এ গিয়ে যখন পৌছলাম তখন বিকাল সাড়ে পাঁচটা। সে একটা আকাশী রঙএর স্কর্ট আর বেগুনি টপ পড়া ছিল। গেলাম অরাঞ্জেরীতে। নিজে দাওয়াত দিলোও কেমন জানি বিরক্ত ছিল শুরু থেকে। একটা দোকান খুব সুন্দর করে সাজানো। বললাম বীয়ার খাই। রাজী হলো। ভাজা সসেজ অফার করলাম। তাতেও রাজী হল। তারপর উঠলাম মেরী গো রাউন্ডে। স্পিড বাড়তেই আমাকে জাপটে ধরলো......”
তারপর চুপচাপ নিজের বীয়ারে মন দিলেন। আমার গেলাস বহুৎ আগেই খতম। জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর?- হু? তারপর গত ৪৫ বছর ধইরা আর ছাড়ে নাই।
(চলবে...)
No comments:
Post a Comment