Wednesday, October 08, 2008

টুকরো টুকরো লেখা ৪

জীবন জীবিতের ধর্ম। কোন একসময় অপূরনীয় ক্ষতেও চল্টা পড়তে শুরু করে। জীবিতেরা আবার হাসে। আইসক্রিম খেয়ে কাঠিটা সযত্নে আগলে রাখে সুযোগমতো কোথাও দিতে। অদূরদর্শী কেউ কেউ কাঠি ফেলেও দেয়। কেউ কেউ আবার সেগুলি কুড়িয়ে নেয়। কিংবা কেউ কেউ খুলে বসে কাঠির কারখানা। এই সব টুকরো টুকরো এফেক্ট আর ইফেক্টের প্রপঞ্চগুচ্ছ থেকে নানামাপের খাবলায় আমরা ভাবি-বলি-লিখি-ব্লগাই-চাপাপিটাই-গুয়ামারামারি করি।

১.

কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক কেন্দ্রে বসানো এই ছাত্রাবাসে অনেক দিন হলো। একে একে চেনামুখগুলো হাওয়া হতে হতে ভুষুন্ডির মাঠে ফাটা ঢোল হাতে একা এই আদুভাই অবশিষ্ট।

সেপ্টেম্বর শেষ হতে হতে এই পাঁচজনের অ্যাপার্টমেন্টে আমি একা। স্ফেয়া গেলো প্রথমে, তারপর সেবাস্তিয়ান, তারপর সীগিতা।

স্ফেয়া অনেকদিনের হাউজমেটিনি। বেহালা বাজায় ক্যোলন অর্কেস্ট্রায়। প্রায়ই পড়ন্ত বিকালে ব্রান্ডেনবেয়ার্গ কনসের্তো নাড়া দিতো। খুব জমিয়ে বক বক করতে থাকলেও থেমে যেতাম। কখনো কারো বিরুদ্ধে অমূলক অভিযোগ করতে শুনিনি। স্ফেয়ার মতো প্রতিবেশী পেলে কোন অ্যাপার্টমেন্ট কমিউনিটিতে অনন্তকাল গেঁথে থাকা যায়। ও গেলো জুলাইয়ের শেষে।

সেবাস্তিয়ানের ডানকানে দুল। প্রথম প্রথম কথা কম বলতাম। তক্কে তক্কে থাকতাম। পরে দেখলাম ও অসম্ভব ভালো ছেলে। খুবই ভালো আচরন করতো সবার সাথে। কতবার যে ওর অনুপস্থিতিতে আমি আর হিমু, সেবাস্তিয়ানের পেঁয়াজটারসুন্টালবণ্টাআদাটা সরিয়েছি তার ইয়াত্তা নাই। চলে গেলো সেপ্টেম্বরের ২৯।

১১৬ তে থাকতো সীগিতা। শুরু থেকেই ক্যামঞ্জানি আচরণ ছিলো। সবচাইতে বিরক্তিকর ছিল রান্নাঘর থেকে নানান জিনিস নিজের ঘরে নিয়ে রেখে দিতো। একটা ওয়াইনের গ্লাস, একটা বীয়ারের গ্লাস, তিনটা কফির মগ, দুইটা প্লেট, একটা চিনির পট আর একটা দুধের পট গত চাইরমাস ধইরা আটকাইয়া রাখছে। বাইঠা আর বেশ মোটাতাজা। এই ছেমড়ির বয়ফ্রেন্ডের বাড়ি ইজরায়েল। ইহুদী না। গলায় খাটিয়া ঝুলানো খ্রীষ্টান। জার্মানী আসছে শুয়োরের গোস্ত খাইতে। যাওয়ার সময় অনেক কিছু ফেরত দিলেও সালাদের বাটিটা দেয় নাই। খুব সুন্দর একটা ট্রান্সপারেন্ট কাঁচের বাটি ছিল। দাম কমপক্ষে ১৫ ইউরো তো হবেই। এইরকম প্রতিবেশী চইলা গেলে মন বরং ভালোই হয়।

১১৫ তে যে ছিল তার নাম শেষ পর্যন্ত আর জানাই হইলো না। বাড়ি তুরস্ক। চেহারা দেইখা নাম দিছিলাম ই.টি.। সেইটা আবার হিমু পরে সমর্থন করছে। ই.টি. এমনিতে খুব ভালো ছিল। কোন উপদ্রব করে নাই। একেবারেই জার্মান জানতো না। যাওয়ার আগে সব পরিস্কার করলেও ফ্রিজটা করে নাই। তাতে এমন এমন জিনিস রাইখা গেছে যেগুলার এক্সপায়ারি ডেইট শেষ। তবুও ছেমড়ি ঝামেলা করে নাই বইলা গালি দিলাম না। চুপচাপ আজকে সকালে ফ্রিজটা পরিস্কার করলাম।

২.

গত পরশু সকালে প্রথমে ১১৫তে পরে ১১৭তে দুই পিস মহিলা-গালিভার উঠছে। আমার থিকা কমসে কম পৌনে দুই হাত তো হইবোই। লাগুড় পাওয়াসে শোচনা ভি নামুমকীন। তা নাই পাইলাম। ব্যাপান্না। কিন্তু আইছে বাপমাভাই লইয়া। যারা তাগো মাইয়া বা বইনরে অস্বাস্খ্যকর জাগায় থাকতে দিতে অরাজী। আমার ধারনা আমার জাগায় কোন সফেদ আদমী থাকলে ওদের অণুসিদ্ধান্তে আরো খানিক মাংস যোগ হইতো। কিন্তু যা বুঝলাম, আমারে দেইখা দুই পরিবারই চুড়ান্ত হতাশ। কালকে পুরা সকাল গেলো রান্নাঘর সাফা করতে। এর মধ্যে একবার ১১৫ নম্বর গালিভারনীর বাপ আইসা আমারে জিগায়, এই বাসায় কয়দিন ধইরা থাকেন? আমি কইলাম পৌনে চাইর বছর। ভদ্রলোক চিন্তিতভাবে মাইয়ার ঘরে চইলা গেলেন। আইজকা সকালে ঘুম থিকা উইঠা গেছিলাম একটু লেইট মর্নিং ওয়াকে। আইসা দেখি পুরা গুষ্টি একলগে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামছে। বেসিনে আমার একটা ডেগচি ভিজানো ছিল। সেইটা এমনভাবে টেবিলে তুইলা রাখছে যাতে মনে হয়, এই তোমার জন্যই ডাস ডয়েটশে ফোল্কের (Das deutsche Volk= The German Volk) আইজ এই অবস্থা! ঘরে আইসা কিছুক্ষণ ভুদাই কইসা থাইকা পরে হ্যারা বাইরে গেলে গেলাম আবার রসুই সাফা করতে। রসুই, হাগন কুঠি আর হামাম মিলাইয়া লাগলো আরো ঘন্টা দুই। দেখলাম গোসলখানা থিকা আমার নতুন কেনা একপিস শ্যাম্পু আর একপিস হেয়ারজেল হাওয়া। মেজাজ টং-এ উঠাইয়া আইসা বইলাম সচলায়তনে। আইসা দেখলাম কাইল রাইতের পর আর পোস্টই পড়ে নাই। সব মিলাইয়া মেজাজ খুব বিলা হইলো। সেই সূত্রই এই পোস্টু।

৩.

অনেক দিন থেকে হাত চলছে না। আমি ফুর্তিবাজ লোক বলেই হয়তো শোক চট করে গত হয় না। অনেক দিন ধরে একটু একটু করে পোঁড়ায়। প্রতিটি কোষের দাহ এক এক করে অনুভব করি। এই অনুভব অনিবার্য। তার মধ্যে চুরি চামারি করে বেঁচে থাকার সুলুক সন্ধান করতে হয়তো পদে পদে কয়েক টুকরো কুলুখই খুঁজে পাই। তবুও বেঁচে থাকি। থাকতে হয়। চিৎকার করে বলতে হয়, বাইচ্চা আছি অর মায়রে বাপ!

No comments: