একসাথে অনেক কথা জমে গেলে শেষ পর্যন্ত আর্তনাদ বা ভেটকী ছাড়া কিছু বের হয় না। "জয়বাবা ফেলুনাথ"এ পড়েছিলাম লালমোহনবাবু "অ্যাঁ" আর "গেলুম" একসাথে বলতে গিয়ে বলেছিলেন "গ্যাঁ"।
সেই অক্টোবর থেকে হাত চলছে না টের পাচ্ছিলাম। বহু কসরৎ করে একেকটা চড়ুই পাখী সাইজের (এবং গুরুত্বের) পোস্ট নামছিল। মার্চ পর্যন্ত একরকম। এপ্রিলের শুরুতে সিজনের প্রথম ক্রিকেট খেলতে গেলাম। সিজনের প্রথম বলটা ইয়র্কার লেন্থে অফ-মিডলে পড়ে আউটসুইং করে অফস্ট্যাম্প ঘেঁষে বের হয়ে গেল। ব্যাটিং করতে গিয়ে প্রথম বলটা ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিভ খেললাম। সেদিন খেলার পর থেকেই মাথায় "কী হইলে কী হয়" ভাবনা ভর করে বসলো। কামলাসূত্রে প্রচুর হাঁটাহাঁটি করতে হয়। হাঁটতে হাঁটতে মূলত আবজাববালছালই মাথায় আসে। কারণ বাস্তব জীবনের দুর্ভাবনা দূর করতে বালছালের কোন বিকল্প নাই। নতুন ভাবনাসূত্র গুদামে আগুন লাগালো। ভাবনাগুলো ঊর্ধ্বশ্বাসে চারপায়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো। তারপর একের পর এক ভাবনার পিঠে ভাবনা।
১.
ডেইলী সোপ জিনিসটা পছন্দ করার কোন কারণ গত তেরো-চৌদ্দ বছর যাবৎ কোন নিয়মিত দর্শকের কাছ থেকে জানতে পারিনি। বরং হার্ডকোর ডেইলী সোপ দর্শকদের কাছ থেকেই কঠোরতম সমালোচনাগুলি শুনেছি। তারপরেও তাঁরা থামেন না। প্রতিদিন ধারাবাহিকগুলো দেখতে দেখতে সমালোচনা করেন সমালোচনা করতে করতে দেখেন। মামাসীদের দেখতাম নিয়মিত ডিডিবাংলার জন্মভূমি দেখতে। রাত নটা বাজতেই কানে আসতো টাইটেল সঙ। ২০০৪ থেকে একটা জার্মান ডেইলী সোপ দেখতে শুরু করি। তবে প্রতিদিন দেখতাম না। শনিবার সকালে একসাথে পাঁচপর্বের ঘন্ট দেখতাম। বাংলা মেগা সিরিয়াল দেখতে শুরু করি প্রবাসে আসার কিছু পরে ২০০৫ সালে। নেটের কল্যাণে বিদেশে বসে বাংলা নাটক দেখবার একটা আলাদা উত্তেজনা ছিল তখন। ৫১ বর্তী লাগলো মোটামুটি ধুনফুন। কিন্তু 69 দেখতে গিয়ে বুঝলাম নিয়মিত বাজে জিনিস দেখা কতো কষ্ট। বিশেষ করে বাংলায়। এর পরে বাদ। চলে গেলো আরো কয়েক বছর। এর মধ্যে বাংলাব্লগের জন্ম হওয়ায় বাকি সব এন্টারটেইনমেন্ট স্থগিত হয়ে গেলো। গত বছর থেকে ইউটিউবের কল্যাণে আবার এট্টুআট্টু বিভিন্ন নাটকের এইপর্ব সেইপর্ব দেখা শুরু হলো। কিন্তু কোনটাই ধারাবাহিকভাবে না। সেই সিক্সটিনাইনের তেতো অভিজ্ঞতার পরে প্রথমবারের মতো মেগাসিরিয়াল দেখি এই বছর মার্চ মাসে। খুব মেজাজ খারাপ ছিল। কিছুই ভাল্লাগেনা পকেটো খালি এরকম একটা পরিস্থিতিতে শুরু করলাম নেট থিকা ডেইলী সোপ গুলশান এভিনিউ নামাইয়া দেখা। মোটামুটি -২৭৩° পর্যায়ের বাজে জিনিস। কিন্তু কেমন একটা গতিজড়তা থেকে দেড়শ পর্বের মতো দেখে ফেললাম। তারপরে শুরু করলাম ডলস হাউজ। মৌলিক এলার্জি ইভা রহমান গীত টাইটেল সে নাটকের। কাহিনি বরাবরের মতো ধুনফুন। বিরক্ত হতে হতে দেখে ফেললাম ২৯৭টা পর্ব! দেখে একটা উপকার হলো। আগে যে কারণে মেজাজ খারাপ ছিল, নাটকের প্রতিক্রিয়ায় মেজাজ খারাপ হয়ে সেটাকে রিপ্লেস করে ফেললো। এই জন্য নাট্যকারকে ধন্যবাদ। তারপর আবার পথে পথে কামলা সূত্রে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো শালার নাটক লেখার লাইন ঘাট বাইর করতে পারলে এইরকম বালছাল আমিও লিখতে পারতাম। তাতে পকেটের অবস্থাও একটু ভালোর দিকে থাকতো ইত্যাদি। এইরকম ভাবনার এ পর্যায়ে কাসেলের প্রাণকেন্দ্র কোয়নিগস্ প্লাৎস্ এ এসে মনে হলো টিভিতে এইসব বালছালের প্রতিক্রিয়া হিসাবে একটা ব্লগীয় ডেইলী সোপ নামানো যাইতারে। একটা কোন কাহিনি কোনখান থিকা শুরু কইরা ওপেন এন্ড চালাইয়া গেলেই হইবো। কিছুতেই শেষ করা যাইবো না। যতক্ষণ পর্যন্ত মাথায় ধুনফুন আইডিয়া আইতে থাকে ততক্ষণ চলবো। আর সেপ্টেম্বর থিকা যে রাইটার্স ব্লকে পাইয়া বইছিল তার থিকা মুক্তিও পাওয়া যাইবো। এই পরিকল্পনা থিকাই জন্ম হইলো বাংলা সাহিত্যের প্রথম অনলাইন টেরা-উপন্যাস "আম কোয়নিগস প্লাৎস্" এর।
২.
পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছিল সেই ২০০৪ সালে। তখনকার সরকার স্থগিত করে রেখেছিল এই কয় বছর। এখন আবার বিষয়টা আলোচনায় আসছে। সেই সাথে রাষ্ট্রধর্মের প্রসঙ্গটাও উঠেছে। কিন্তু যারা যেভাবে বিষয়টা তুলেছে তাঁদের সম্পর্কে রাজনৈতিক ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে তেমন কোন ইতিবাচক প্রত্যাশার জায়গায় যেতে মন সরে না। আইনমন্ত্রী ইতোমধ্যেই "বিসমিল্লাহ" সম্পর্কে সাবধানী মত দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এই বিসমিল্লাহ রাজনীতির ইতি ঘটাবার ইচ্ছা বা সাহস কোনটাই সরকারের থাকার সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন কমিউনিটি ব্লগে কয়েকদিন ধরে খেয়াল করলাম এই নিয়ে নানান আলোচনা-বাহাস। একটা জায়গায় কেউ আসছে না। এই পঞ্চম সংশোধনী আর সপ্তম-অষ্টম সংশোধনী সবই সেনা শাসকদের করা। এগুলিকে বৈধতার জায়গা দিতে গেলে সেনাশাসনকে নৈতিক বৈধতা দিতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান তৈরী হয়েছিল, সেখানে নানান ঝামেলা ছিল স্বীকার করে নিয়েও বলা যায় সেই সংবিধানটি একভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতো। সামরিক শাসন সেটার উপর যেভাবে কাঁচি চালিয়েছে সেটা পরিস্কারভাবে বাংলাদেশের পাকিস্থানীকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই কথা বলতে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে বা আওয়ামীসিপিবিমোজাফ্ফর ন্যাপের রাজনীতিকে পরমার্থ ধরার প্রয়োজন হয় না। কারণ শেখ মুজিব বাকশাল করেছিলেন এটা কখনোই সংবিধানে সাম্প্রদায়িকতা আমদানী করার যুক্তি হতে পারে না। আওয়ামী লীগ যা পাপ করেছে তার ফল সে ভোগ করেছে ভবিষ্যতে আরো করবে। সেই যুক্তিতে সেনা শাসন হালাল হয় না।
৩.
আজ রবিবুড়োর জন্মদিন। ২০০৬ থেকে প্রতিবছর এইদিনে ব্লগে কিছু না কিছু লিখেছি। এইবার আর কিছু লিখতে মন চাচ্ছে না। রবিবুড়োকেও প্রতিদিন গালাগালি করি এবং করতে করতে তাঁর গানগুলি শুনি। শুনতেই থাকি। আরো শুনবো। ব্লগকেও শুনাবো। এই আর কি.....
TAAR HATEY CHILO - DEBABRATA
No comments:
Post a Comment