Wednesday, April 01, 2009

আম কোয়নিগস্ প্লাৎস্ :::: ১

কাঁচা শাকসব্জিতেও বিশ্বায়ন এসে গেছে, নর্ডপোল থেকে বের হয়ে গট্শ্লাকস্ট্রাসের মিনি চৌরাস্তা পর্যন্ত এসে সেরকমই মনে হয় মাকসুদের। নর্ডপোল থেকে চৌরাস্তার মোড়ে ৫৫ ডিগ্রি কোণে কামালের দোকান। তুর্কিরা বলে কেমাল। একেবারে ৪০৯ নম্বর সেমিনার রূমের গা ঘেঁষে। টমেটো, শসা, শ্রীচন্দন, ফুলকপি, বাঁধাকপি সব কিছুই সেখানে চিৎকাৎ হয়ে শোভা পাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আঁটি বাঁধা অ্যাসপারাগাস, জার্মান ভাষায় যাকে বলে স্পার্গেল, তাও দেখা যায়। অনেক কসরৎ করে অ্যাসপারাগাস গলিয়ে জার্মানরা একরকম স্যুপ বানায় অমৃতের মতো। প্রতীচ্যের সপ্তাহান্ত নৈশজীবনের মতো এটাও মাকসুদের আয়ত্ত্বে আসেনি।

নর্ডপোলের কাজটাও গেলো। কিচেনে আরেকজন কুক জুটেছে। এই লোক কুক হিসাবে ট্রেনিঙ করে এসেছে মাত্র। সুতরাং ফাঁকিবাজ ছাত্রদের তুলনায় পেঁয়াজ-রসুন-সালাদ কাটায় তাঁর দক্ষতা বেশী হবেই। গতরাতে তাঁর পরামর্শমতো শসা কাটতে গিয়ে তর্জনীর পুরোটাই যেত আরেকটু হলে। যেভাবে তাড়া দিচ্ছিল তাতে মোহাম্মদপুর বাজারের বিহারী কসাইও ক্ষ্যামা দিতো। আজ দুপুরে দোকানে ঢুকতে মালিকের তলব। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। কিন্তু তোমার চাকরি ছাড়া পাতে এই মুহুর্তে কোন অনিবার্য খাদ্য ছিল না। তুমি বেশী ব্যাথা পাও নাই তো?

শেষ প্রশ্নটার জবাব দেওয়া হয়নি। পকেটে সাকুল্যে ১২ ইউরো ৩৩ সেন্ট। এর মধ্যে ৩ ইউরো যাবে চালে (যদি মার্কিন দেশের সস্তা সিদ্ধ চাল কেনা হয় আর কি), দুই থেকে আড়াই ইউরো ডালে, নিরানব্বই সেন্টের ডিম, ৫ ইউরো মাছ বা মাংসে। এছাড়া কিচেন পেপার, টয়লেট টিস্যুও কিনতে হবে এই হপ্তায়। কাল দুপুরের মধ্যে মানিব্যাগে থাকবে সব মিলিয়ে খুব বেশী হলে দেড় থেকে দুই ইউরো। তারপর কী হবে? চোখ বুজতে গোটা চার ম্যারাকে দেখা গেলো ক্যাফেটেরিয়ার পাশে ভাস্কর্যের গায়ে শিং ঘষতে। একেকটা স্পার্কে মগজের অনেকখানি করে দেখা যায়। খুলির ভেতরটা দেখতে ভোল্কস্ ভাগেনের কারখানায় যেখানে গাড়ির ছাঁচ তৈরী হয় সেরকম। দেওয়াল জুড়ে কারা যেন নিয়মিত বিরতিতে ওয়েল্ডিঙ করে চলেছে।

আর দুটো পেপার শেষ করতে পারলেই থিসিস শুরু করা যাবে। কিন্তু ঐ দুটো পেপারই ভোগাচ্ছে গত দুই সেমিস্টার ধরে। থিসিস শুরু না করে চাকরিও খোঁজা যাচ্ছে না। তারমধ্যে যদি চালডালতেলনুনেও টান পড়ে তাহলে আর ইহজনমে পাশ করা হবে না।

হল্যান্ডিশার প্লাৎস থেকে বাঁয়ে ঘুরে সোজা কুর্ট ভল্টারর্স স্ট্রাসে ধরে হাঁটতে থাকে মাকসুদ। কাটৎসেন স্প্রুঙ ট্রাম স্টেশনের রূপালী ছাউনিতে রোদ পড়ে একটা বিস্ফোরক ইফেক্ট নিয়েছে। হাতের ডানে হেনশেল গ্রুন্ডশুলের সামনে কাঠের বেঞ্চে বসে পড়লো। বাম পায়ের তলা চুলকাচ্ছে। পা ভর্তি ধুলা। তার মধ্যেও না চুলকিয়ে উপায় নেই। ডান হাতের তালু চুলকালে অর্থযোগ ঘটে বলে শুনেছে। কিন্তু বাম পায়ের তালু চুলকালে কী হয় ?

(চলবে)

No comments: