Wednesday, April 08, 2009

আম কোয়নিগস্ প্লাৎস্ :::: ৩

ওলগা। ওলগা ফ্লাইশহাকার। অনেকদিন পরে নামটা মনে পড়লো। একসাথে পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন আর স্থাপত্যের ছাত্রী ছিল। মাথায় পৈতে বামুন টাইপ টাক। চান্দির আধা বিঘৎ নিচে ইঞ্চি খানেক চুলের আভাস। বামপন্থী গ্রীনের সমর্থক ছিল তখন। পরে কর্মী হয়েছিল। এক লিটারের বড় গ্লাসে জীবনে সেই প্রথম চুমুক। জার্মান ভাষায় যাকে বলে মাসেন ক্রুগ। গ্লাসের চুড়া ছেড়ে আড়াই ইঞ্চি পরিমান ফেনা ফুঁড়ে চুমুক দিতে হয় সেখানে। এক চুমুকে কতটা টানা যায় তার প্রতিযোগিতা। সোজা ওলগার চোখের দিকে তাকিয়ে গ্লাসের মাঝামাঝি আসতে আসতেই দুর্ঘটনা। আসলে একলিটারের গ্লাসে বীয়ার খেতে গিয়ে এরকম দুঘটনাই বিনোদন। বারটেন্ডারের পেছনের আয়নায় দেখা যাচ্ছিল মাকসুদের বিপর্যস্ত ফেনামাখা মুখ। সেদিন আড়াইটা বেজেছিল বাড়ি ফিরতে। ডর্মে না। শোয়েনফেল্ডার স্ট্রাসের যে চিলেকোঠায় ওলগা থাকতো সেখানে। কাসেলে পুরনো বাড়ি বলতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেকার এই রকম কিছু কাঠের বাড়িই টিকে আছে। পাথরের দেয়াল কাঠের মেঝে।

ওলগার পিতামহ এসএসের সদস্য ছিলেন। সাইবেরিয়ার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ফিরে দেড়দশক পঙ্গু দশা কাটিয়ে পটল তুলেছেন। ওর বাপ ফ্রাঙ্কফুর্ট আম মাইনের গোয়থে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক। এইসব পরিবারের লোকেরা চৈতন্যে জিঘাংসা পুষে রেখে পদে পদে নাৎসী বিরোধীতা প্রমাণের চেষ্টা করেন। ওলগাও সেরকম বলে মনে হয়। বেছে বেছে অজার্মান ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করে। মাথার টুপিতে কাঁধের ব্যাগে বিচিত্র নকশা করে লেখা থাকে "গেগেন নাৎসীজ" অর্থাৎ নাৎসীদের বিরুদ্ধে। ওলগার গলা থেকে নাভী পর্যন্ত, তারপর পিঠে, পাছায়, হাঁটুতে বিচিত্র ট্যাটু। দুই ভুরুতে আধ ডজন রূপার আংটি।

পরের সেমিস্টারের মাঝামাঝি ওলগা লাইপৎসিগে চলে যায়। এখনো শোয়েনফেল্ডার স্ট্রাসে দিয়ে হাঁটতে গেলে বাড়িটা চোখে পড়ে।

পৌনে চারবছর পরে বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেনার সূত্র ধরে ওলগাকে মনে পড়লো। মাকসুদের এখন এইসব বালছাল ভাবার সময় থাকা উচিৎ না। প্রবাসী ছাত্রদের জীবনে এরকম কয়েক বস্তা উপন্যাস আর কয়েক টন ছোট গল্প থাকে। সবারই থাকে। তবে প্রবাসীদের টুইস্ট বেশী।

শহরের দিকে হাঁটা দেয় মাকসুদ। স্টেয়ার্নের মোড়ে সোহাগের সাথে দেখা। হাতে বাজারের ব্যাগ।

- কী রে তোর কাম নাই আইজকা?
- কাম তো আছেই..হে হে....তয় কাজটা নাই।
- নাই মানে?
- নাই মানে নাই। দুইটার দিক গেলাম আর মালিক নিজে হাসিমুখে সুখবর দিলো। স্ট্যান্ড রিলিজ।
- এখন কী করবি?
- এখন আর কি? এখন তো কোথাও গিয়া কোন লাভ নাই। কাইলকা সকালে বাইর হমু আবার কামের ধান্দায়।
- পুওর গাই। তোর আসলে লটো জিতা দরকার।
- হ.....
- আমার বাসায় চল।
- গিয়া?
- রান্দাবাড়া করি। পোলাপান ডাকুম সন্ধ্যায়।

সোহাগের বাসা ক্যাম্পাসের উল্টাদিকে মার্সিডিজ টাওয়ারের নয় তলায়। আটত্রিশ স্কয়ার মিটারের সিঙ্গেল অ্যাপার্টমেন্ট। রান্নার জায়গাটা একটা পার্টিশন দিয়ে আলাদা করা। দুই বার্নারের চুলা। রান্না করতে বেশী সময় লাগায় এই বাসায় আড্ডাটা ভালো জমে। আরএশীপ আর পিএইচডি একসাথে পাওয়ার পর এই বাসাটা নিয়েছে।

মার্সিডিজ টাওয়ারের সামনে এসে মাকসুদ বলে, তুই যা, আমি বিড়ি নিয়া আসি।
- বিড়ি আছে। টুনি আসলো না গত সপ্তাহে! এক কার্টুন বাংলা বেনসন আনাইছি।
- টুনি আইছে না কি? জানতাম না। তাইলে আমিও আনাইতাম আরো কিছু।
- এক কার্টুনের বেশী থাকলে এখন সমস্যা করে এয়ারপোর্টে।
- আরে না। কেরু আনামু ভাবছিলাম। এই মিলেনিয়ামে আর খাওয়া হয় নাই।
- কেরু খাওন লাগবো না। বাসায় বীয়ার আছে।
- কয় টা?
- প্রায় আধা কেইজ। আর একটা ব্যারেলও আছে। ভাবছিলাম এই উইকেন্ডে মাস্তি করুম। সেইটা আইজকাই হোক!
- হ, আমার বেকারত্ব উপলক্ষে ..........

(চলবে)

No comments: