মালিক অবশ্য কাটা ঘায়ের জন্য খানিক মলমের ব্যবস্থাও করেছেন। এমাসের পারিশ্রমিকটা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবেন দু-একদিনের মধ্যে। তাতে হয়তো আগামী মাসের ঘরভাড়া, হেলথ ইনসুরেন্স, টেলিফোন বিল হয়ে যাবে। তারপর কী হবে ইবলিসও জানে না।
ব্যাগ থেকে তামাকের ঠোঙ্গা আর সিগারেটের খোল বের করে একটা সিগারেট বানানো গেল। তামাক যা আছে তাতে মেরে কেটে সর্বোচ্চ আর তিনটি সিগারেট হবে। তারপর থেকে সিগারেট হারাম। অন্তত পরবর্তী রুটিরুজির সিস্টেম হবার আগ পর্যন্ত হারাম। উত্তর হেসেনের এই দু:স্থ শহরে কোনরকমে টিকে থাকাই একরকম মিরাকল। এই সপ্তাহের মধ্যে এরকম কোন একটা মিরাকল ঘটাতে হবে। না ঘটার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। তারপরেও ঘটাতে হবে। না ঘটলে....ধুর!!! সিগারেট তিতা লাগছে। মার্কিন দেশের তুলনামূলক কমদামী স্যাভয় তামাক চলছে কয়েক বছর ধরে। স্বাদ যথারীতি জঘন্য। কামলার ফাঁকে একমাত্র বিনোদন হিসেবে তাও চলছিল। এবার ছাড়তে হবে। তামাক শেষ হলেও বেঁচে যাবে প্রায় গোটা চল্লিশেক সিগারেটের খোল। সেগুলো দিয়ে দিতে হবে কাউকে। কিংবা স্মৃতি হিসেবে সাজিয়ে রাখা যেতে পারে বুক শেলফের এক কোনায়।
আবার উল্টোদিকে হাঁটা শুরু। কুর্ট ভল্টার্স স্ট্রাসে আর ভেজার স্ট্রাসের চৌরাস্তার মেড়ে পেট্রোল পাম্পের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে মাকসুদ। তিন বছর আগে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে এখানে এসেছিল কাজের খোঁজে। শুক্রবার শনিবারের নাইট ডিউটির জন্য লোক খোঁজা হচ্ছিল। ইন্টারভিউ শেষে হাসিমুখে ফোন নম্বর টুকে নিয়ে বলা হয়েছিল দুদিনের মধ্যে ডাক পাবে। হয়নি। সপ্তাহ খানেক পরে সেখানে এক স্বর্ণকেশীকে দেখা গেলো। হয়তো মালিকের কোন প্রিয় শ্যালিকা।
ডানে মোড় ঘুরে মোয়নশেবেয়ারগার স্ট্রাসের পাথুরে পথ উঠে গেছে ইউনিভার্সিটির দিকে। হাতের বায়ে একটা এভাঙ্গেলিক চার্চ, তারপরে একটা পাব, তারপর একটা লেবনিজ দোকান। নানারকম মনোহারি দ্রব্য পাওয়া যায় সেখানে। ডানদিকের ফুটপাথ ঘেঁষে প্রথমে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, তারপরে গীস হাউস। পৌনে চারবছর আগে এই দালানের তৃতীয় তলায় শুরু হয়েছিল জার্মান ভাষা পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কোর্স। গীস হাউস পেরিয়ে একটা নীল রঙের সিংহদ্বার। ব্লাউয়ে টোয়ার নামে বিখ্যাত। ওখান থেকে সোজা নেমে গেছে আরেকটা পাথুরে পথ ক্যাম্পাসের ভিতরে। ব্লাউয়ে টোয়ার থেকে দশ কদম এগোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষণ বিভাগ। তার নিচতলায় টোয়ার ক্যাফে। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধাণ পাঁচটি ক্যাফেটেরিয়ার একটি।
ক্যাফেতে কর্মচারীরা ছাড়া পরিচিত কেউ নেই। প্রায় সবই নতুন মুখ। উদ্দেশ্যহীনভাবে ক্যাফের ভিতর দুতিনচক্কর ঘুরে কফি মেশিনের সামনে এসে দাঁড়ালো মাকসুদ। মানিব্যাগ খুলে খুচরোগুলোর দেখে নেয় একবার। তারপর ইউটার্ন নিয়ে ঘুরে আসে কাউন্টারের দিকে। মেশিনের কফি না, কাউন্টার থেকে সদ্য বানানো বড় এককাপ ধূমায়িত কাপুচিনো নিয়ে জানালার কাছে খালি টেবিলটার শেষ কোনায় গিয়ে বসে। প্রবল অর্থকষ্ট নানারকম বিলাসীতা উৎসাহিত করে। আড়াই ইউরো দামের কাপুচিনোর ভরা কাপের উপর ফেনায়িত কোকোর নকশা সকৌতুক চেয়ে থাকে।
ঘড়িতে বেলা সাড়ে তিনটা। এখন কোথাও গিয়ে লাভ নেই। সবাই অফিসের শেষ সময়ের কাজ সেরে বাড়ি যাবার মতলবে আছে। কাল সকালে একটা মেগাট্যুর দিতে হবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলিতে। যেখানে যা হয় একটা কিছু পেতে হবে। গত কয়েক বছর নর্ডপোলে শিকড় গেড়ে গিয়েছিল। থালাবাসন ওয়াশিং মেশিনে ঢোকানো, সালাদকাটা আর মাঝে মধ্যে গেরডার ডে অফ থাকলে বারে দাঁড়িয়ে ব্যারেল থেকে গ্লাসে বীয়ার ঢালা এই ছিল পরমার্থ। গেরড়ার চাকরী গেছে আরো দুদিন আগে। একদিনের বেশী বেকার থাকেনি। গতকাল ট্রামে দেখা। শুনলাম ইকেয়াতে একটা ৪০০ বেসিস হয়ে গেছে। স্বর্ণকেশীদের বেকার থাকতে হয় না।
কাপের সাইজ মোতাবেক কাপুচিনোর তিনটে ক্যাটেগরি এখানে। মাকসুদ এদের নাম দিয়েছে আলাল, দুলাল আর খোকন। এর আগে শেষবার আলাল সাইজের কাপুচিনো খেয়েছিল জার্মান ভাষার পরীক্ষার পরে। তখনো উৎকণ্ঠা ছিল। পেটের না অ্যাডমিশনের। কাপুচিনো শেষ করার পনের মিনিট পরে রেজাল্ট দেখে সেদিন সন্ধ্যার সেই জমজমাট পার্টি। দিনগুলি অন্যরকম ছিল। গোঁফে খানিকটা ফেনা অনুভব করে মাকসুদ। বড় কাপে খেতে গেলে এরকম হয়। সেদিনের ঐ পার্টিতে বীয়ারের ফেনা নাকে ঢুকেছিল। হেঁচকিটেচকি উঠে একটা পরিস্থিতি। ওলগা বলেছিল বীয়ার খেয়ে হেঁচকি ওঠা নাকি ভালো লক্ষণ। কপালে প্রাপ্তিযোগ থাকে।
(চলবে)
ব্যাগ থেকে তামাকের ঠোঙ্গা আর সিগারেটের খোল বের করে একটা সিগারেট বানানো গেল। তামাক যা আছে তাতে মেরে কেটে সর্বোচ্চ আর তিনটি সিগারেট হবে। তারপর থেকে সিগারেট হারাম। অন্তত পরবর্তী রুটিরুজির সিস্টেম হবার আগ পর্যন্ত হারাম। উত্তর হেসেনের এই দু:স্থ শহরে কোনরকমে টিকে থাকাই একরকম মিরাকল। এই সপ্তাহের মধ্যে এরকম কোন একটা মিরাকল ঘটাতে হবে। না ঘটার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। তারপরেও ঘটাতে হবে। না ঘটলে....ধুর!!! সিগারেট তিতা লাগছে। মার্কিন দেশের তুলনামূলক কমদামী স্যাভয় তামাক চলছে কয়েক বছর ধরে। স্বাদ যথারীতি জঘন্য। কামলার ফাঁকে একমাত্র বিনোদন হিসেবে তাও চলছিল। এবার ছাড়তে হবে। তামাক শেষ হলেও বেঁচে যাবে প্রায় গোটা চল্লিশেক সিগারেটের খোল। সেগুলো দিয়ে দিতে হবে কাউকে। কিংবা স্মৃতি হিসেবে সাজিয়ে রাখা যেতে পারে বুক শেলফের এক কোনায়।
আবার উল্টোদিকে হাঁটা শুরু। কুর্ট ভল্টার্স স্ট্রাসে আর ভেজার স্ট্রাসের চৌরাস্তার মেড়ে পেট্রোল পাম্পের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে মাকসুদ। তিন বছর আগে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে এখানে এসেছিল কাজের খোঁজে। শুক্রবার শনিবারের নাইট ডিউটির জন্য লোক খোঁজা হচ্ছিল। ইন্টারভিউ শেষে হাসিমুখে ফোন নম্বর টুকে নিয়ে বলা হয়েছিল দুদিনের মধ্যে ডাক পাবে। হয়নি। সপ্তাহ খানেক পরে সেখানে এক স্বর্ণকেশীকে দেখা গেলো। হয়তো মালিকের কোন প্রিয় শ্যালিকা।
ডানে মোড় ঘুরে মোয়নশেবেয়ারগার স্ট্রাসের পাথুরে পথ উঠে গেছে ইউনিভার্সিটির দিকে। হাতের বায়ে একটা এভাঙ্গেলিক চার্চ, তারপরে একটা পাব, তারপর একটা লেবনিজ দোকান। নানারকম মনোহারি দ্রব্য পাওয়া যায় সেখানে। ডানদিকের ফুটপাথ ঘেঁষে প্রথমে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, তারপরে গীস হাউস। পৌনে চারবছর আগে এই দালানের তৃতীয় তলায় শুরু হয়েছিল জার্মান ভাষা পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কোর্স। গীস হাউস পেরিয়ে একটা নীল রঙের সিংহদ্বার। ব্লাউয়ে টোয়ার নামে বিখ্যাত। ওখান থেকে সোজা নেমে গেছে আরেকটা পাথুরে পথ ক্যাম্পাসের ভিতরে। ব্লাউয়ে টোয়ার থেকে দশ কদম এগোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষণ বিভাগ। তার নিচতলায় টোয়ার ক্যাফে। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধাণ পাঁচটি ক্যাফেটেরিয়ার একটি।
ক্যাফেতে কর্মচারীরা ছাড়া পরিচিত কেউ নেই। প্রায় সবই নতুন মুখ। উদ্দেশ্যহীনভাবে ক্যাফের ভিতর দুতিনচক্কর ঘুরে কফি মেশিনের সামনে এসে দাঁড়ালো মাকসুদ। মানিব্যাগ খুলে খুচরোগুলোর দেখে নেয় একবার। তারপর ইউটার্ন নিয়ে ঘুরে আসে কাউন্টারের দিকে। মেশিনের কফি না, কাউন্টার থেকে সদ্য বানানো বড় এককাপ ধূমায়িত কাপুচিনো নিয়ে জানালার কাছে খালি টেবিলটার শেষ কোনায় গিয়ে বসে। প্রবল অর্থকষ্ট নানারকম বিলাসীতা উৎসাহিত করে। আড়াই ইউরো দামের কাপুচিনোর ভরা কাপের উপর ফেনায়িত কোকোর নকশা সকৌতুক চেয়ে থাকে।
ঘড়িতে বেলা সাড়ে তিনটা। এখন কোথাও গিয়ে লাভ নেই। সবাই অফিসের শেষ সময়ের কাজ সেরে বাড়ি যাবার মতলবে আছে। কাল সকালে একটা মেগাট্যুর দিতে হবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলিতে। যেখানে যা হয় একটা কিছু পেতে হবে। গত কয়েক বছর নর্ডপোলে শিকড় গেড়ে গিয়েছিল। থালাবাসন ওয়াশিং মেশিনে ঢোকানো, সালাদকাটা আর মাঝে মধ্যে গেরডার ডে অফ থাকলে বারে দাঁড়িয়ে ব্যারেল থেকে গ্লাসে বীয়ার ঢালা এই ছিল পরমার্থ। গেরড়ার চাকরী গেছে আরো দুদিন আগে। একদিনের বেশী বেকার থাকেনি। গতকাল ট্রামে দেখা। শুনলাম ইকেয়াতে একটা ৪০০ বেসিস হয়ে গেছে। স্বর্ণকেশীদের বেকার থাকতে হয় না।
কাপের সাইজ মোতাবেক কাপুচিনোর তিনটে ক্যাটেগরি এখানে। মাকসুদ এদের নাম দিয়েছে আলাল, দুলাল আর খোকন। এর আগে শেষবার আলাল সাইজের কাপুচিনো খেয়েছিল জার্মান ভাষার পরীক্ষার পরে। তখনো উৎকণ্ঠা ছিল। পেটের না অ্যাডমিশনের। কাপুচিনো শেষ করার পনের মিনিট পরে রেজাল্ট দেখে সেদিন সন্ধ্যার সেই জমজমাট পার্টি। দিনগুলি অন্যরকম ছিল। গোঁফে খানিকটা ফেনা অনুভব করে মাকসুদ। বড় কাপে খেতে গেলে এরকম হয়। সেদিনের ঐ পার্টিতে বীয়ারের ফেনা নাকে ঢুকেছিল। হেঁচকিটেচকি উঠে একটা পরিস্থিতি। ওলগা বলেছিল বীয়ার খেয়ে হেঁচকি ওঠা নাকি ভালো লক্ষণ। কপালে প্রাপ্তিযোগ থাকে।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment