Tuesday, April 14, 2009

আম কোয়নিগস্ প্লাৎস্ :::: ৫

সোহাগ মাকসুদের বাল্যবন্ধু। একেবারে ক্লাস ওয়ান থেকে হরিহর আত্মা। দেশ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দুরে, প্রবাসে এসে একই শহরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ভাগ্য খুব বেশী মানুষের হয় না। আপাদমস্তক ভাগ্যবিপর্যয়াক্রান্ত হলেও মাকসুদকে এই একটা ব্যাপারে ভাগ্যবান বলা যেতে পারে।

দুই কেজি পেঁয়াজের পোটলাটা টেবিলে তুলে মাকসুদ বললো, দেখি কাঠ আর ছুরিটা দে। পিঁয়াইজ কাটার কাজটা তো গেলোই গা। কিন্তু ট্রেনিংটা রইয়া গেছে।
- হ। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র।

- কী রানবি? পেঁয়াজ কাটতে কাটতে জিজ্ঞাসা করে মাকসুদ।
- ভুনা খিচুড়ি আর গরু।
- তাইলে গরুটা আমি রান্ধি।
- তুইই তো রানবি। তুই কি ভাবছোস আমি দুইটাই রান্ধুম?
- হালার পো....

রান্না শেষ হতে হতে রাত সোয়া আটটা। কুত্তার মতো খিদে পেয়েছিল দুজনেরই। আটটা সাইত্রিশের মধ্যে সোয়া কেজি গরু ভুনা হাওয়া। খিচুড়ির হাড়িও প্রায় খালি।

আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের অসহ্য গরম। ইউরোপের গ্রীষ্মকালে ঘাম ঝরে না। ওদের সবকিছুই শুস্ক। বারান্দার দিকের জানালা দরজা হাট করে খুলে রাখা। তারপরেও হাঁসফাঁস লাগছিল। গরু ভুনাটা গুল্লি হয়েছে। নিজের রান্না খেয়ে মাকসুদ নিজেই মুগ্ধ। তবে এই বিষয়টা সে বেশী প্রচার করতে চায় না। কারণ গরু রন্ধনের এই প্রতিভার বদৌলতে সোহাগ চান্স পেলেই তাঁকে গরু মোকসেদ বলে ডাকে।

সোহাগের বাসায় একটা বাড়তি ডবল ম্যাট্রেস আছে। সেটাকে টেনে বারান্দায় আনা গেল। সাথে বীয়ারের কেইজটাও। যথেষ্ট ঠান্ডা হয়েছে আর লাগবে না। এই বারো বোতল খতম করার পরেও যদি চোখে যথেষ্ট ধোঁয়া দেখা না গেলে ব্যারেলটা খোলা যাবে।

আগে বিড়ি দে, বলে মাকসুদ। এই রকম জামপ্যাক্ট খাওয়াদাওয়ার পর স্মোকারদের জন্য খোলা আকাশের নীচে বিড়ি ফরজ। মার্সিডিজ টাওয়ারের বারান্দায় খোলাআকাশের অনেকটাই পাওয়া যায়। রোদের তেজ এতক্ষণে পড়তে শুরু করেছে। এখন থেকে টানা সাড়ে দশটা পর্যন্ত সোজা পশ্চিমে হেরকুলেসের দিকে তাকিয়ে থাকলে রোদের গতি অনুসরণ করা যায়। মেক্সিকান ওয়েভের মতো লম্বা সার্চ লাইট রোদ হেরকুলেসের মাথা থেকে কাসেল শহরকে স্ক্যান করে চলে যায়।

- আমার এক খালাতো ভাই সাড়ে সাত বছর লন্ডনে থাইকা দেশে ফিরছিল। ডিগ্রী ছাড়া। ফিরার পরে একদিন তারে কেন্দ্র কইরা বিশাল ফ্যামিলি সমাবেশ। সব মুরুব্বিরা একলগে তারে গালাগালি। এক পর্যায়ে তারা ক্লান্ত হইলে ভাইয়া বারান্দায় আইসা চুপচাপ বিড়ি টানে। আমরা সব কাজিনরা তার ভক্ত ছিলাম। আমাগো ডাইকা ভাইয়া কয়, বড়রা তো বুঝবো না, তোরা বুঝবি। কলোনিয়াল বাস্টার্ডগো দ্যাশ থিকা আমি কী শিখছি জানোস? আমরা মাথা নাড়লাম। সে ম্যাজিকের মতো পর পর পাঁচটা রিং বাইর করলো। সেগুলা সব জোড়া লাইগা একটা অলিম্পিক হৈয়া গেলো। আমি একটু পরে জিগাইলাম কলোনিয়াল বাস্টার্ড মানে কী? সে কয়, এইটা তুই বুঝবি না বড়রা বুঝবো। বুইঝা আমারে আরো গাইলাইবো....

- এই গল্পটা মনে হয় আগেও কইছস
-হ

দুটো বীয়ার খোলা হলো।

- আউফ ডী উনভারশাইনলিশকাইট ডেস লেবেনস্ ( জীবনের অনিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে)

ঢক ঢক করে গ্লাসের পঁচিশ শতাংশ পেটে চলে গেলো দুজনের। ভাইস বীয়ার টিপিক্যাল বীয়ার গ্লাস ছাড়া জমে না।

- এইবার ক, কীভাবে আমরা একটা প্রোডাক্টিভ আড্ডা দিতারি। সিগারেটে একটা পেজগী টান দিয়ে জিজ্ঞাসা করে মাকসুদ।
- যেমন ধর আমরা একটা ছোটগল্প বানাইতে পারি।
- মালের আড্ডায় ছোট গল্প একটা না রীতিমতো একটা সংকলন হৈতারে।
- তাইলে উপন্যাস।
- সেইখানে নানান টেকনিক্যাল জটিলতা আছে।
- কীয়ের জটিলতা। দিনের শেষে বড় আকারের একটা গল্পই উপন্যাস। এর বাইরের অ্যাকাডেমিক কথাবার্তাগুলা নানারকম চাপাবাজি। যেইটা উপন্যাস হয় না সেইটা গল্পও হয় না।
- তাইলে কী করা যায়?
- খাড়া ভাবতাছি..
- খাড়াইতে পারুম না প্যাট ভরা।
- তাইলে বইয়া থাক।
- হুম..... এক্কাম করা যায়। আমরা একটা ডেইলী সোপের খসড়া বানাইতারি।
- গুটে ইডে ( গুড আইডিয়া!) এইটা আমারো মনে হইতেছিল। কিন্তু মোটে দুইটা বীয়ারেই তো আর এইটা বাইর হৈবো না।
- দুই বীয়ারে শুরু করি তারপর দেখবি পুরা অন্যরকম এক্টা কিছু হৈবো।
- তুই চিন্তা কর বাংলাদেশে এখন সব গারবেজ টাইপ ডেইলী সোপ হৈতাছে। সব বালছালরা নাট্যকার হৈয়া গেছে আর আমরা কামলা দিয়া নিজেগো গোয়া ফাটাই।
- এইটা ঠিক্কৈছস। কিন্তু ওদের যেইটা আছে সেইটা হৈল আন্ডার ওর্য়াল্ডের ব্যাকিং।
- আমরা তো নিজেরা নিজেরা বানাই। আমরা কর্পোরেটিজম চুদি না। আমাগো সিরিয়াল আমরা বানামু।
- হুম..... তাইলে ধরা যাক...একটা ডেইলী সোপ...সেইটার নাম হৈতারে....
- জার্মান প্রবাস?
- না।
- অন্যকিছু। যেইটাতে একটা অপ্রকাশ্য কোন সম্ভাবনা থাকে। অনেক বেশী নাটকীয়তা থাকে।
- তাইলে....তাইলে এইটার নাম দেওয়া যাইতারে...
- আম কোয়নিগস্ প্লাৎস! ( At königs platz)
- ঠিক! তাইলে শুরু হৈলো নতুন ডেইলী সোপ, আম কোয়নিগস্ প্লাৎস্ !

(চলবে)

No comments: