Thursday, April 16, 2009

আম কোয়নিগস্ প্লাৎস্ :::: ৭

- প্রথম পর্বটা কেমনে শুরু করি....
- এইখানে আটকাইলে জীবনেও আর আগে বাড়া হৈবো না। প্যাটভর্তি আইডিয়া লইয়া ভুদাই হইয়া মরতে হৈবো।
- তাইলে এইবার সামনে আসুক প্রথম দৃশ্য....
- টাইটেল সঙটঙ দিবি না?
- পরে দিমু। আগে কয়েকপর্ব হোক।
- ও.কে. পাগলা মুভ! ......

প্রথম পর্ব
(প্রথম দৃশ্য)

প্রথম বলটা লেগস্ট্যাম্পের উপর আসতে আসতে মাঝপথে আউটসুইঙ করে অফস্ট্যাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে গিয়ে পেছনের গ্রীলে লাগলো। একটুর জন্য ওয়াইড হয়নি। অফস্ট্যাম্পের বাইরে শ্যাডো প্র্যাক্টিসের মতো কাভার ড্রাইভের ভঙ্গীতে ব্যাট ঘোরালো মাসুম। গ্রীল থেকে বল ছুটিয়ে ননস্ট্রাইকিঙ এন্ডে বল ঠেলে দিতে রেজা নিচু হয়ে বল কুড়িয়ে নিয়ে রানআপে ফেরত গেল। মাসুম একনজর মাঠটা দেখে নেয়... শর্ট কাভারে জয়, ডিপ একস্ট্রা কাভারে নান্টু, লং অফে চয়ন আর ডীপ মিড উইকেটে সুব্রত। স্কোয়ার লেগে গ্রীলের সীমানা। ইউনিভার্সিটির হকিটার্ফে ক্রিকেট খেলার সুবাদে স্কোয়ার লেগ কোরবানি দিতে হয়েছে। আঠারো পা রানআপের মাথায় গিয়ে রেজা দৌড় শুরু করলো। অ্যাকশানটা রিচার্ড হ্যাডলীর মতো হলেও রেজা বোলিঙ করে ঠিক রেজাউল করীমের মতো। পরের বলটা লেগের দিকে আসতে আসতে লেগ থেকে আধাগজ বাঁচিয়ে গিয়ে গ্রীলে লাগলো। আম্পায়ার মকবুল হাসিমুখে দুহাত প্রসারিত করে। প্রথম রান এলো ওয়াইড বল থেকে। পরের বল অফস্ট্যাম্পের বাইরে। স্কোয়ার কাট করতে পয়েন্টের উপর দিয়ে বল গিয়ে লাগলো সাইকো অ্যানালাইসিস বিভাগের দেওয়ালে। ডিফল্ট এক। ব্যাটসম্যানরা জায়গা বদল করে। স্ট্রাইকে আসে জসীম। "ব্যাট থিকা প্রথম রান" ঘোষনা দেয় স্কোরার সোহেল। তারপাশে বসে বিড়ি খায় আর মোবাইলে গেম খেলে মির্জা।

পুরো কাসেল মানে কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো টাইগার স্কোয়াড এখন মাঠে। উহু ভুল হলো। স্কোয়াডের একমাত্র নারীসদস্য শারমিন অনুপস্থিত। বেশীরভাগ সপ্তাহান্তের মতো ফ্রাংকফুর্টে মামার বাড়ি বেড়াতে গেছে। শারমিনকে ক্রিকেট শেখানোর প্রচুর চেষ্টা করে গতবছর সবাই ক্ষ্যামা দিয়েছে। যে কারণে এগারো নম্বর প্লেয়ারের অভাব থেকেই যাচ্ছে। জয় একবার প্রস্তাব দিয়েছিল, অন্তত চিয়ার লীডারের চরিত্রে অভিনয় করতে। শারমিন পাত্তা দেয়নি। শারমিন ইনফ্যাক্ট জয়ের কোন কথাই কোনদিন পাত্তা দেয় না, যদিও জয় সেই প্রথম দিন থেকে অনবরত ওকে পাত্তা দিতে দিতে সিরিজ ছ্যাকা খেয়ে চলেছে। শুধু শারমিন না, শারমিনের যাবতীয় বান্ধবীদের বিশেষ করে চৈনিক বান্ধবীদের উপস্থিতিতে জয় রীতিমতো তাজা হয়ে ওঠে। কী যেন করতে চায় কী যেন বলতে চায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংরেজী-জার্মানে তালগোল পাকানোতে পবীত্র ইচ্ছার অপমৃত্যু ঘটে।

লং অফের দিকে ঠেলে আরো একটি রান। চয়নের ডিরেক্ট থ্রো গিয়ে লেগ সাইডের গ্রীলে লাগলো। চয়ন বরবরই চমৎকার ভঙ্গীতে থ্রো করে। তবে সবগুলিই যাকে দিতে চায় সে ছাড়া অন্যকেউ পায়।

- আমাগো এগারো নম্বর পিলিয়ার কয়টায় আইতাছে?
মোটা দেহ মোচড় দিতে দিতে ডিপ মিডউইকেট থেকে সুব্রত আওয়াজ দেয়।
- সাতটা তেতাল্লিশে ভিলহেলমসহোয়ে ( স্টেশনের নাম।বুলেট ট্রেনের জন্য কাসেল শহরে আলাদাভাবে তৈরী করা রেলস্টেশন।)
- আইসিইতে আইতাছে!(I.C.E.= ইন্টার সিটি এক্সপ্রেস) পোলার টেকা আছে।
- ব্যাটা প্রথমদিন ফ্রাংফুর্টে নাইমা সবাই ফাঁপরে থাকে। বিশেষ কৈরা একলা আইলে।
- যাই হোক, স্টেশনে কে কে যাইতাছে?

ওভারের শেষ বলটা ইয়র্কার। মাসুম কোনরকমে ঠেকিয়ে বলে,
- সবাই যাই !
- আরে না। সবাই গেলে পোলা শুরুতেই রিল্যাক্স কৈরা যাইবো। মনে করবো সবাই যখন আছে তখন আর সমস্যা নাই।
জয় বল নিয়ে হাতের উপর কায়দা করে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,
- মাইনসেরে খালি ফাঁপর দিতে চাস ক্যান? আমরা যখন আইছি তখন কাসেলে কোন বাংলাদেশী ছাত্র ছিল না বৈলা আমাগো ভুগা লাগছে। এখন জোর কৈরা কাউরে ঐ রিয়েলিটির দিকে ঠেইলা দেওয়া ঠিক না।

জয়ের প্রথম বলটা পয়েন্টের দিকে ঠেলে জসীম আরো একটা সিঙ্গেল নেয়।
- আরে না তা না। পোলা আসুক। আইসা দেখুক কী অবস্থা। আমরা কেমনে থাকি কেমনে কী...। তারপর সে তার মতো। তবে অরে ক্রিকেট ধরাইতে হইবো। এইটা ফরজ। তারপর সিরিজ খেলুম। কাসেল বনাম রেস্ট অব জার্মানী।
পরের দুই বল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে। মাসুম দুটোই মিস করে।
- ঊ লা লা...ঐ দেখ ক্যাঠা আহে....
স্কোরার সোহেল আওয়াজ দেয়।
মাসুমের ক্লাসমেটিনি কাম হাউজমেটিনি গ্যাব্রিয়েলা অর্থাৎ গাবি হাসিমুখে সাইকো অ্যানালাইসিসের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।
- হালো সুযামেন! ( Hi all!)
- হোলা গাবি! ভিলস্ট দু মীটস্পীলেন? ( Hola Gabi! Wanna play with us?)
আম্পায়ার মকবুল জিজ্ঞাসা করে।
- ভাস স্পীলেন? ( কী খেলার কথা কও?) সানগ্লাসের উপর দিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করে গাবি।
- ক্রিকেট
- আ হা..নাইন ...কান গার নিষ্ট। ( না ..এইটা একদম পারি না) আবার গুকে গেয়ার্নে ( তবে দেখতাছি দেঁতো হাসি)

জয়ের পরের বল গুডলেন্থ। তবে মাসুম আগে থেকেই এগিয়ে গিয়ে স্ট্যান্স নিয়েছিল। হাফভলি নিয়ে স্ট্রেইট ড্রাইভ। বল পুরনো পেপার মিলের ছাদে। সবাই টাস্কি। মকবুল পেটে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো। এই নিয়ে এটা দ্বিতীয় ঘটনা। গাবির আগমন ঘটলেই মাসুমের ব্যাটে আগুন জ্বলে। ওভারের শেষ বলে আরো একটা। বল গিয়ে পড়লো বীচ ভলিবলের কোর্টে। মাসুম অন ফায়ার।

(দ্বিতীয় দৃশ্য)

ফ্রাংকফুর্টের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন। ম্যাগডোনাল্ডসের পাশে কফির দোকানের সামনে মুখ হাড়ি করে শারমিন আর তার মামী।
- তোমরা আর ইটালী যাওয়ার টাইম পাইলা না !
মামীর চোখ খুশীতে চকচক করছে। তবু মুখে ব্যাজারভাব আনার চেষ্টা করে বললেন,
- আরে তোর মামার এক কলিগ দাওয়াত দিছে। আর সোমবারেও ছুটি আছে। তুই কাসেলে গিয়া ঘুমা।
- আরে দুর! একটা বোরিং সানডে কাটবে। ডর্মের লোকজন সব বাড়ি গেছে।
- বাংলাদেশী পোলাপানরা আছে না?
- আরে ওরা খালি ক্রিকেট খেলে আর যার যার কামলার গল্প করে। আর আমি ঐখানে একমাত্র মেয়ে। পোলাপান বোগাস বু'র মতো তাকাইয়া থাকে। আবার আজকে আসতেছে আরেক কুতুব।
- পোলাপানের আর খাইয়া কাম নাই, জার্মানীতে বইসা তোর দিকে চাইয়া থাকবো। এইসব কমপ্লেক্স ছাড়। আর তুই আরেকজনরে কুতুব বলবি ক্যান?
- এরকম একটা বাজে কথা তুমি বলতে পারলা মামী!? আমার দিকে তাকানোর কিছু নাই!
- এইখানেই বুঝা যাইতেছে তোর আসলে এইসব কমপ্লেক্স আছে।
- আর যদি আমি আসি ফ্রাংকফুর্ট। দ্যাও টাকা দাও। পঞ্চাশ ইউরো কমপক্ষে।
- টাকা দিয়া কী করবি? তুই না মীটফার (কারো গাড়িতে জায়গা থাকলে তেলের টাকা শেয়ার কৈরা সড়ক পথে ভ্রমন) ঠিক করলি!
- যামু না ঐটাতে। পঞ্চাশ ইউরো দাও। আইসিই'র টিকেট কাটুম।
এইবার মামীর মুখ ব্যাজার হয়। মুখটা হাড়ি থেকে ডেগচি পর্যায়ে নিতে নিতে ব্যাগ খোলেন।

( তৃতীয় দৃশ্য)

ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দর। লাগেজের চেইন ঘুরছে। সামনে সবুজ পাসপোর্টের ভিতরে টিকেট গুঁজে লাগেজের অপেক্ষায় জনৈক "কুতুব"

(চলবে)

No comments: