Wednesday, July 23, 2008

টনি

নাম তাঁর আন্তোনিও আচিলা। ভক্স ওয়াগনের কারখানায় কামলা দিতে গিয়া পরিচয়। বাড়ি নাইজেরিয়া। গায়ে যথারীতি অসুরের মতো শক্তি। প্রায়ই ভারী কাজ করতে একজায়গায় দুতিনজনকে লাগানো হয়। সবকয়টা ফোরম্যান তালে থাকে যাতে কালা আদমীদের দিয়ে ভারী কাজগুলি ধুমধাম করিয়ে নেওয়া যায়। আমার কপালে অবশ্য মাঝেমধ্যে হালকা কাজ জোটে। তখন টেবিলে বসে চীনা ছেমড়িদের সাথে স্ক্রু,সুইচ,রোলার ইত্যাদি প্যাক করি। কখনো কাজের চাপ বাড়লে গায়ে গাউন চড়িয়ে যেতে হয় টার্বোচার্জার কিম্বা ব্রেক ডিস্ক প্যাক করতে। সেখানে দেখা হয় একগাদা আফ্রিকানের সাথে। টনি, অস্কার, ইয়ানিক, কেনে সব কয়টাই মনে হয় আমার থেকে কমপক্ষে ২৩৫ গুণ বেশী শক্তিশালী।

এদের মধ্যে একমাত্র অছাত্র টনি। কানে প্রায় পুরো আটঘন্টাই এয়ারফোন গোঁজা। এমপিথ্রিপ্লেয়ারের না মোবাইলের। সারাক্ষণই কেউ না কেউ ফোনে থাকে। কখনো জার্মান কখনো রাজার ভাষা কখনো কিজানি এক্টা (ফরাসী না, নাইজেরিয়া ব্রীটিশ উপনিবেশ ছিল , এই সূত্রে নিশ্চিত হই....আমার ফরাসী জ্ঞান বোঁজো-অঁরভোঁয়া-সেমোঁয়া-উই পর্যন্তই )। উচ্চারণ যথারীতি দূর্বোধ্য। মুডোর প্রাক্তন প্রতিবেশী বলে আমি প্রায় ৭০%র মতো বুঝতে পারি। ওপাশে একেবারে ব্যতিক্রম ছাড়াই সবাই বিপরীত লিঙ্গের। তার মধ্যে আবার বেশীরভাগ শেতাঙ্গীনী। মাঝে মাঝে এয়ারফোন কাজ না করলে টেবিলে ফোন রেখে স্পীকার অন করে দেয়। বিষয়বস্তুও মোটামুটি এক। অমুক জায়গায় অমুকের কাছে তোমার নাম্বার পাইলাম, তুমি কেমুনাছো, আমার কিছু ভাল্লাগে না, অনেক গরম, অনেক শীত, দিনকাল ভালো না,অমুক ডিস্কোতে নাইচা শান্তি নাই কিন্ত তমুকের ডিজে রীতিমতো ঢাকনাখোলা গ্রেনেড ইত্যাদি। সব কথাই শেষ হইতো অ্যাপয়ন্টমেন্টে গিয়া। খুব কম ক্লিওপেট্রাকেই আন্তোনিও খালি হাতে ফেরায়। সপ্তাহে কম করে হলেও তিনটা অ্যাপয়ন্টমেন্ট থাকে। তার মধ্যে আবার উইকেন্ডের বিশেষ পরিকল্পনা।

আমি, কেনে, ইয়ানিক সবাই অবাক হই। কেমনে কী? টনির আবার বউও আছে। তার জন্য শুক্রবার। শুক্রবার রাতে টনি কোন পার্টিতে যায় না। শনিবার দুপুর থেকে আবার যে যার মতো। বউয়ের সাথে সেরকমই চুক্তি টনির। বেঁচে থাকার অনেক পরিশ্রম। আমরা জিজ্ঞাসা করি, কিন্তু কেমনে? টনি স্মিত হেসে বলে ধৈর্য শুধু ধৈর্য।

বিচিত্র অভিজ্ঞতা টনির। জার্মান, আরব, তুর্কি, চীনা,স্লাভ সবই। আরবদের তাঁর বিশেষ পছন্দ। ওরা নাকি বেশ সাফসুতরো। বেশ অ্যারোমেটিক। চীনাদের অনেক কোলাহল। বর্ণনা দেবার সময় টনি রীতিমতো তেঁতে ওঠে।
"এই শনিবার ফ্রাঙ্কফুর্ট যাচ্ছি। কেউ ইচ্ছা করলে আসতে পারো। সঙ্গে আরো দুই একজন থাকলে মজাই হবে।"
"কি হবে?" জিজ্ঞাসা করি আমি।
"গ্যাংব্যাং পার্টি। ফ্রাউ বেকেনবাখ দুইটা হাঁস আর তিন বোতল ভদকা কিনা ফালাইছে অলরেডি।"
"খাইছে!"
"তোমরা একরম ভয় পাও ক্যান? দেড়-দুই ঘন্টা কোন ব্যাপার না। ফুটবল খেলার কথা কিম্বা কোন মেগা সিরিয়ালের কথা ভাবতে থাকবা সময় চইলা যাবে.....এইটা আমরা পারি। এইজন্যই কোন জার্মান বেটি একবার আফ্রিকান বোধিস্বত্ত্ব পাইলে আর অন্যমুখো হয় না। ঈশ্বর আমাদের টাকা না দিলেও অশ্বক্ষমতা দিছে।"
"অ্যা!"

No comments: