গতকাল দুপুরে হিমু মিয়া ফোন করে তেহারি খাওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করছিল। এমনিতে ভুড়ি আর গোমাংসের মূল্য, দুটোর বেখাপ্পা উর্ধ্বগতিতে কিছুকাল (অনুর্ধ্ব দু হপ্তা) গোমাংস ভক্ষণে বিরত ছিলাম। তবে বলে কিনা বামুনের প্রতিজ্ঞা চন্ডালের পোষায় না। তেহারির নাম শুনে মন হু হু করে উঠলো।
তো হলো শেষ পন্ত। বিকেল থেকে শুরু করে রাত আট্টা নাগাদ আর দেখি নড়তে চড়তে পারি না। তারপর হামটিডামটির মতো দেয়ালে না বসে গুটিগুটি হেঁটে গেলাম শহরের দিকে। হিমু মিয়া বাড়ি গেল বাঁশে চড়ে। আমি আবারো ভাড়ি বাঁচিয়ে গুটিশুটি বাড়ির দিকে রওনা দেই।
না এবার আর স্টেয়ার্নের মোড়ে না, স্টেয়ার্ন থেকে আরো বেশ কিছুদুর এগিয়ে ডয়েটশে পোস্টের সামনে আসতে দেখি ক্লেমেন্স আর ফ্লোরিয়ান। মুখে মৌলিক হাসি। চোখ লাল। এতো খুশী ক্যান? ফ্লোরিয়ান একটা সান্ধ্যকালীন পত্রিকা ধরিয়ে দিলো। গতরাতে হেসেনের প্রাদেশিক পার্লামেন্টে ছাত্রসমাজের শিকে ছিঁড়েছে। আগামী সেমিস্টারে জ্ঞানার্জন বাবদ আর হাদিয়া দিতে হবে না। টিউশন ফী বাতিল! শিকে ম্যাড় ম্যাড় করছিল ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচনের পর থেকেই। আজন্ম মালদার ক্যাথলিকদের মুখপাত্র, নব্যউদারতাবাদের একনিষ্ঠ ওয়াফাদার খৃষ্টীয় গণতন্ত্রী দল হেসেন প্রদেশে চৌদ্দখানা আসন হারাবার পরেই ক্যাম্পাস একটু নড়ে বসেছিল। তারপর কোয়ালিশন পেজগীতে বিষয়টা মাঝে টেঁসে যেতে বসেছিল। কোয়ালিশনের বিষয়ে এখনো রফা হয়নি। তবে মাস খানেক আগে এসপিডি, গ্রীন আর বামজোট রফা করেছিল, প্রাদেশিক পার্লামেন্টের প্রথম সিটিঙেই টিউশান ফী বাতিল করবে। দীর্ঘদিন রাজনীতি শাস্ত্রের ছাত্রত্ব আর স্বচক্ষে রাজনীতি দর্শনের দীর্ঘতর অভিজ্ঞতা থেকে এইসব চুক্তিটুক্তির উপর ভরসা না করাই মনস্থ করেছিলাম। ওদিকে আবার সুপ্রীম কোর্টে মামলা ঝুলছিল ২০০৬ থেকে। প্রাদেশিক সংবিধানে নাকি সেই ১৯৪৯ সাল থেকে পাঠদানদক্ষিনা হারাম। সেই নিয়ে দুবছর যাবৎ সর্বত্র নানারকম কিচির মিচির শুনেছি। আম্রিকাইংলন্ডনে এ্যাত্তো এ্যাত্তো টেকা লাগে এইখানে লাগে না ক্যান? এইরকম চলতে থাকলে পিতৃভূমিতে নমশুদ্রদেশের ফকিন্নির পুতরা এসে মুফতে আর্যজ্ঞান নিয়ে যাবে। গেলেও কথা ছিল। ছাট্টিফিকেট নিয়ে এখানেই এঁটে বসছে আর্যদের কলিগ হয়ে। এরম চলা কি উচিত? তার সাথে আবার আরেক ফেউ ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট আর ইইসিকে কাঁচকলা দেখিয়ে আর্যমহাজনদের উর্ধ্বতন মজমা ইআরটি একেরপর এক ফতোয়া জারি করে শুধু শিক্ষানীতি না একেবারে সিলেবাস পন্ত পাল্টে দেবার তাল করে চলেছে। এম্রিকা হলে এই সব ফতোয়া বাস্তবায়ন করা সুমায়ের বেফার হতো। কিন্তু ইউরোপে সেটা নানাকারণে শক্ত। পুঁজিবাদী দেশেও কত রঙ্গের মাগনা খিচুড়ি পাওয়া যায়, ইত্যাদি দেখাতে ১৯৪৫-১৯৯০ কালে দেওয়া কল্যাণ রাষ্ট্রের সুবিধাগুলি একে একে বাতিল করা এখন ম্লেচ্ছ মহাজনের জন্য অতীব জরুরি। কিন্তু এতোদিন ধরে সুবিধাপ্রাপ্তরা তা মানবে কেন? ইংলন্ডনে অভিজাত বলতে একধরণের প্রাণী বাস করে। শিক্ষাদীক্ষা তাঁদের জন্য। ইউরোপের মূল ভুখন্ডে গত দেড় শতাব্দী জুড়ে ভাঙচুড়ে অভিজাতদের মেরে তাড়ানো হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় এখনো নিম্নমধ্যবিত্তই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাপদাদার সম্পতিখেকোরা এখানে মোটামুটি বেশীর ভাগই একাধারে ধার্মিক এবং ভোদাই। আমার অভিজ্ঞতার স্যাম্পলিং থেকে বলতে পারি পয়সাওয়ালা বিশ্বাসী ক্যাথলিকদের মতো ভোদাই শুধু প্রকৃত আরব (সৌদী-আমিরাত-মরক্কো)দের মধ্যে দেখেছি। ইয়ে গোটাদুই মালয়ও দেখেছি। পয়সাওয়ালাদের যারা থিঙ্কট্যাঙ্ক তাঁরা সবাই আদি মধ্যবিত্ত। তবে একদিক থেকে এরা ঈমানদার। যথেষ্ট মোটা বেতন পকেটে না যাওয়া পর্যন্ত এরা দালালি তত্ত্ব জন্ম দেন না। ইউরোপ মানে পশ্চিম ইউরোপ এক্ষেত্রে রীতিমতো ইকোনমিক ডিটারমিনিজম মতে চলে। বিশেষ করে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্র সংসদগুলি একতরফা বামপন্থীরা দখল করে থাকে। থাকার পেছনে উচ্চশিক্ষার আকাশ ছোঁয়া ব্যায় না থাকাটা খুব বড় কারণ। এরা কর্মজীবনে গিয়ে বেতনটেতন পেয়ে কী করে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু যতদিন পকেট ফাঁকা ততদিন প্রগতিশীল। এদের অনেকেই পরবর্তীতে সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি করেন।
এইসব দৃশ্যত: আবোলতাবোল আলাপ করতে করতে তিন বন্ধুতে ক্যাম্পাসে ঢুকে দেখি পুরো ক্যাম্পাস গুষ্টিশুদ্ধ নাচছে। যেখানেই উঁকি দেই একটা করে বোতল ধরিয়ে দেয়। মেনজার সামনের গর্তে গিয়ে বসলাম। আমি বললাম, খুশীটা তাৎক্ষণিক। কারণ পার্লামেন্টে ভোটের পরে সিডিইউ'র পার্লামেন্টারী দলের নেতা বলেছে, হেসেনের জন্য দিনটা শোকের। এর আগে নির্বাচনে হারার পরে সিডিইউ'র মুখ্যমন্ত্রী রোলান্ড কখ বলেছিল, বামপন্থীদের উত্থানের দায় এসপিডিকে বইতে হবে। তাঁর মতে বামপন্থীদের উত্থান প্রাদেশিক নিরাপত্তার জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়াবে। আসলে বামপন্থীদের আড়ালে তাঁর ঈঙ্গীত ছিল বিদেশীদের দিকে। টিউশান ফী সম্পর্কে কখ সাহেবের পস্তাব ছিল বিদেশী ছাত্ররা জার্মানদের তিনগুণ দেবে। এমনিতেই গত দুই সেমিস্টারে টাকা দিতে গিয়ে চোখে ধোঁয়া দেখেছি, তিনগুণ দিতে হলে এতদিনে সচলায়তনের ব্যানার হয়ে যেতাম। ফ্লোরিয়ান বলে, কিন্তু অন্তত আগামী সেমিস্টারে টিউশন ফী দিতে হবে না এটাও তো একটা বড় বিজয়। বললাম তা ঠিক। তবে প্রকৃত বিজয় হইতো গত দুই সেমিস্টারে দেওয়া টাকা ফেরত পাইলে। সেই সম্ভাবনা অবশ্য এখনো আছে। জুনের শেষ নাগাদ সুপ্রীম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি চুপচাপ মাল টানি। এসপিডির পিছনে যে ইউরোপের ধোনকুবেররা নাই তা তো না। না থাকলে তারা এতবার এতগুলি নির্বাচনে জিততে পারতো না। মাফিয়াদের ব্যাকিং ছাড়া নির্বাচনে জিতলে অন্তত মানুষের পৃথিবীর পুঁজিবাদী সমাজে গৃহযুদ্ধ বা নাশকতার মুখে না পড়া অসম্ভব। কি নয়ছয় হয়েছে তলে তলে কে জানে? ওদিকে সিডিইউ সন্ত্রাস সম্পর্কে যা বলছে তাতে মনে ভয়ই সৃষ্টি হয়। হিটলারের দেশ তো! ১৯৩৬ সালে রাইখস্টাগের সেই ঘটনা ভুলি কিভাবে? তাছাড়া ইআরটির এইমুহুর্তের ভাবভঙ্গী দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো করে ইউরোপকেও ক্রমশ ছাগুকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে গেলে শিক্ষার ব্যায় বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। অভিজাতরা উচ্চশিক্ষায় আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে। নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে দুচারজন উঠে আসবে বৃত্তি পেয়ে। ঐ দুচারজনকে বেশী বেতন দিয়ে বশ করা হবে, আর বাকিরা তো ডিফল্ট ছাগু। এর মধ্যেও ডায়ালেকটিকস ঠিকই কাজ করবে হয়তো......অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিতরা বরাবরই মহাজনদের হাতের মুঠায়, কিন্তু এতকাল তাঁদের হাত করতে নানান কায়দা করতে হয়েছে...নতুন যে রামছাগলের ঝাঁক তৈরী হচ্ছে তারা শুরু থেকেই গলবস্ত্র হয়ে থাকবে। তারপর গরীব দেশে গিয়ে জ্ঞান দিবে। আহারে মাইনসের কত কষ্ট........
যাই হোক। আমি অভাবী মানুষ। মাস চালাইতেই প্রাণ হাঁসফাঁস করে। টিউশন ফী দিতে গিয়ে জিভ বেরিয়ে হাঁটুতে নেমে আসছিল। বাতিলে আমি খুশী তো বটেই। ব্যক্তি হিসেবেই খুশী। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া আন্দোলনে রাস্তায়ও নেমেছিলাম। তখন সিডিইউ গায়ের জোরে আইন চাঁপিয়ে দিয়েছিল। ফ্রাঙ্কফুর্টে মারামারিও করেছে ছাত্ররা পুলিশের সাথে। তখন জার্মান ছাত্রদের উপর খুব রাগ হতো। ফ্রান্সের ছাত্ররা ২০০৩ সালে টিউশন ফী ঠেকিয়েছে পুলিশ পিটিয়ে, গাড়ি ভেঙে, দোকান ভেঙে। জার্মানরা ১৯৬৮র পরে আর জ্বালাও পোড়াওয়ে নামেনি। আজ রাজনীতির প্যাচেই হোক আর যেভাবেই হোক শেষ সেমিস্টারটাতে অন্তত একগাদা টাকা গুণতে হবে না। এটা তো এক ধরনের বিজয়ই। বিজয় হোক বা না হোক, অন্তত পাদ্রীর মলিনমুখটা দেখার আনন্দে দু পেগ তো টানতেই পারি, নাকি?
তো হলো শেষ পন্ত। বিকেল থেকে শুরু করে রাত আট্টা নাগাদ আর দেখি নড়তে চড়তে পারি না। তারপর হামটিডামটির মতো দেয়ালে না বসে গুটিগুটি হেঁটে গেলাম শহরের দিকে। হিমু মিয়া বাড়ি গেল বাঁশে চড়ে। আমি আবারো ভাড়ি বাঁচিয়ে গুটিশুটি বাড়ির দিকে রওনা দেই।
না এবার আর স্টেয়ার্নের মোড়ে না, স্টেয়ার্ন থেকে আরো বেশ কিছুদুর এগিয়ে ডয়েটশে পোস্টের সামনে আসতে দেখি ক্লেমেন্স আর ফ্লোরিয়ান। মুখে মৌলিক হাসি। চোখ লাল। এতো খুশী ক্যান? ফ্লোরিয়ান একটা সান্ধ্যকালীন পত্রিকা ধরিয়ে দিলো। গতরাতে হেসেনের প্রাদেশিক পার্লামেন্টে ছাত্রসমাজের শিকে ছিঁড়েছে। আগামী সেমিস্টারে জ্ঞানার্জন বাবদ আর হাদিয়া দিতে হবে না। টিউশন ফী বাতিল! শিকে ম্যাড় ম্যাড় করছিল ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচনের পর থেকেই। আজন্ম মালদার ক্যাথলিকদের মুখপাত্র, নব্যউদারতাবাদের একনিষ্ঠ ওয়াফাদার খৃষ্টীয় গণতন্ত্রী দল হেসেন প্রদেশে চৌদ্দখানা আসন হারাবার পরেই ক্যাম্পাস একটু নড়ে বসেছিল। তারপর কোয়ালিশন পেজগীতে বিষয়টা মাঝে টেঁসে যেতে বসেছিল। কোয়ালিশনের বিষয়ে এখনো রফা হয়নি। তবে মাস খানেক আগে এসপিডি, গ্রীন আর বামজোট রফা করেছিল, প্রাদেশিক পার্লামেন্টের প্রথম সিটিঙেই টিউশান ফী বাতিল করবে। দীর্ঘদিন রাজনীতি শাস্ত্রের ছাত্রত্ব আর স্বচক্ষে রাজনীতি দর্শনের দীর্ঘতর অভিজ্ঞতা থেকে এইসব চুক্তিটুক্তির উপর ভরসা না করাই মনস্থ করেছিলাম। ওদিকে আবার সুপ্রীম কোর্টে মামলা ঝুলছিল ২০০৬ থেকে। প্রাদেশিক সংবিধানে নাকি সেই ১৯৪৯ সাল থেকে পাঠদানদক্ষিনা হারাম। সেই নিয়ে দুবছর যাবৎ সর্বত্র নানারকম কিচির মিচির শুনেছি। আম্রিকাইংলন্ডনে এ্যাত্তো এ্যাত্তো টেকা লাগে এইখানে লাগে না ক্যান? এইরকম চলতে থাকলে পিতৃভূমিতে নমশুদ্রদেশের ফকিন্নির পুতরা এসে মুফতে আর্যজ্ঞান নিয়ে যাবে। গেলেও কথা ছিল। ছাট্টিফিকেট নিয়ে এখানেই এঁটে বসছে আর্যদের কলিগ হয়ে। এরম চলা কি উচিত? তার সাথে আবার আরেক ফেউ ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট আর ইইসিকে কাঁচকলা দেখিয়ে আর্যমহাজনদের উর্ধ্বতন মজমা ইআরটি একেরপর এক ফতোয়া জারি করে শুধু শিক্ষানীতি না একেবারে সিলেবাস পন্ত পাল্টে দেবার তাল করে চলেছে। এম্রিকা হলে এই সব ফতোয়া বাস্তবায়ন করা সুমায়ের বেফার হতো। কিন্তু ইউরোপে সেটা নানাকারণে শক্ত। পুঁজিবাদী দেশেও কত রঙ্গের মাগনা খিচুড়ি পাওয়া যায়, ইত্যাদি দেখাতে ১৯৪৫-১৯৯০ কালে দেওয়া কল্যাণ রাষ্ট্রের সুবিধাগুলি একে একে বাতিল করা এখন ম্লেচ্ছ মহাজনের জন্য অতীব জরুরি। কিন্তু এতোদিন ধরে সুবিধাপ্রাপ্তরা তা মানবে কেন? ইংলন্ডনে অভিজাত বলতে একধরণের প্রাণী বাস করে। শিক্ষাদীক্ষা তাঁদের জন্য। ইউরোপের মূল ভুখন্ডে গত দেড় শতাব্দী জুড়ে ভাঙচুড়ে অভিজাতদের মেরে তাড়ানো হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় এখনো নিম্নমধ্যবিত্তই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাপদাদার সম্পতিখেকোরা এখানে মোটামুটি বেশীর ভাগই একাধারে ধার্মিক এবং ভোদাই। আমার অভিজ্ঞতার স্যাম্পলিং থেকে বলতে পারি পয়সাওয়ালা বিশ্বাসী ক্যাথলিকদের মতো ভোদাই শুধু প্রকৃত আরব (সৌদী-আমিরাত-মরক্কো)দের মধ্যে দেখেছি। ইয়ে গোটাদুই মালয়ও দেখেছি। পয়সাওয়ালাদের যারা থিঙ্কট্যাঙ্ক তাঁরা সবাই আদি মধ্যবিত্ত। তবে একদিক থেকে এরা ঈমানদার। যথেষ্ট মোটা বেতন পকেটে না যাওয়া পর্যন্ত এরা দালালি তত্ত্ব জন্ম দেন না। ইউরোপ মানে পশ্চিম ইউরোপ এক্ষেত্রে রীতিমতো ইকোনমিক ডিটারমিনিজম মতে চলে। বিশেষ করে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্র সংসদগুলি একতরফা বামপন্থীরা দখল করে থাকে। থাকার পেছনে উচ্চশিক্ষার আকাশ ছোঁয়া ব্যায় না থাকাটা খুব বড় কারণ। এরা কর্মজীবনে গিয়ে বেতনটেতন পেয়ে কী করে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু যতদিন পকেট ফাঁকা ততদিন প্রগতিশীল। এদের অনেকেই পরবর্তীতে সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি করেন।
এইসব দৃশ্যত: আবোলতাবোল আলাপ করতে করতে তিন বন্ধুতে ক্যাম্পাসে ঢুকে দেখি পুরো ক্যাম্পাস গুষ্টিশুদ্ধ নাচছে। যেখানেই উঁকি দেই একটা করে বোতল ধরিয়ে দেয়। মেনজার সামনের গর্তে গিয়ে বসলাম। আমি বললাম, খুশীটা তাৎক্ষণিক। কারণ পার্লামেন্টে ভোটের পরে সিডিইউ'র পার্লামেন্টারী দলের নেতা বলেছে, হেসেনের জন্য দিনটা শোকের। এর আগে নির্বাচনে হারার পরে সিডিইউ'র মুখ্যমন্ত্রী রোলান্ড কখ বলেছিল, বামপন্থীদের উত্থানের দায় এসপিডিকে বইতে হবে। তাঁর মতে বামপন্থীদের উত্থান প্রাদেশিক নিরাপত্তার জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়াবে। আসলে বামপন্থীদের আড়ালে তাঁর ঈঙ্গীত ছিল বিদেশীদের দিকে। টিউশান ফী সম্পর্কে কখ সাহেবের পস্তাব ছিল বিদেশী ছাত্ররা জার্মানদের তিনগুণ দেবে। এমনিতেই গত দুই সেমিস্টারে টাকা দিতে গিয়ে চোখে ধোঁয়া দেখেছি, তিনগুণ দিতে হলে এতদিনে সচলায়তনের ব্যানার হয়ে যেতাম। ফ্লোরিয়ান বলে, কিন্তু অন্তত আগামী সেমিস্টারে টিউশন ফী দিতে হবে না এটাও তো একটা বড় বিজয়। বললাম তা ঠিক। তবে প্রকৃত বিজয় হইতো গত দুই সেমিস্টারে দেওয়া টাকা ফেরত পাইলে। সেই সম্ভাবনা অবশ্য এখনো আছে। জুনের শেষ নাগাদ সুপ্রীম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি চুপচাপ মাল টানি। এসপিডির পিছনে যে ইউরোপের ধোনকুবেররা নাই তা তো না। না থাকলে তারা এতবার এতগুলি নির্বাচনে জিততে পারতো না। মাফিয়াদের ব্যাকিং ছাড়া নির্বাচনে জিতলে অন্তত মানুষের পৃথিবীর পুঁজিবাদী সমাজে গৃহযুদ্ধ বা নাশকতার মুখে না পড়া অসম্ভব। কি নয়ছয় হয়েছে তলে তলে কে জানে? ওদিকে সিডিইউ সন্ত্রাস সম্পর্কে যা বলছে তাতে মনে ভয়ই সৃষ্টি হয়। হিটলারের দেশ তো! ১৯৩৬ সালে রাইখস্টাগের সেই ঘটনা ভুলি কিভাবে? তাছাড়া ইআরটির এইমুহুর্তের ভাবভঙ্গী দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো করে ইউরোপকেও ক্রমশ ছাগুকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে গেলে শিক্ষার ব্যায় বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। অভিজাতরা উচ্চশিক্ষায় আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে। নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে দুচারজন উঠে আসবে বৃত্তি পেয়ে। ঐ দুচারজনকে বেশী বেতন দিয়ে বশ করা হবে, আর বাকিরা তো ডিফল্ট ছাগু। এর মধ্যেও ডায়ালেকটিকস ঠিকই কাজ করবে হয়তো......অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিতরা বরাবরই মহাজনদের হাতের মুঠায়, কিন্তু এতকাল তাঁদের হাত করতে নানান কায়দা করতে হয়েছে...নতুন যে রামছাগলের ঝাঁক তৈরী হচ্ছে তারা শুরু থেকেই গলবস্ত্র হয়ে থাকবে। তারপর গরীব দেশে গিয়ে জ্ঞান দিবে। আহারে মাইনসের কত কষ্ট........
যাই হোক। আমি অভাবী মানুষ। মাস চালাইতেই প্রাণ হাঁসফাঁস করে। টিউশন ফী দিতে গিয়ে জিভ বেরিয়ে হাঁটুতে নেমে আসছিল। বাতিলে আমি খুশী তো বটেই। ব্যক্তি হিসেবেই খুশী। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া আন্দোলনে রাস্তায়ও নেমেছিলাম। তখন সিডিইউ গায়ের জোরে আইন চাঁপিয়ে দিয়েছিল। ফ্রাঙ্কফুর্টে মারামারিও করেছে ছাত্ররা পুলিশের সাথে। তখন জার্মান ছাত্রদের উপর খুব রাগ হতো। ফ্রান্সের ছাত্ররা ২০০৩ সালে টিউশন ফী ঠেকিয়েছে পুলিশ পিটিয়ে, গাড়ি ভেঙে, দোকান ভেঙে। জার্মানরা ১৯৬৮র পরে আর জ্বালাও পোড়াওয়ে নামেনি। আজ রাজনীতির প্যাচেই হোক আর যেভাবেই হোক শেষ সেমিস্টারটাতে অন্তত একগাদা টাকা গুণতে হবে না। এটা তো এক ধরনের বিজয়ই। বিজয় হোক বা না হোক, অন্তত পাদ্রীর মলিনমুখটা দেখার আনন্দে দু পেগ তো টানতেই পারি, নাকি?
No comments:
Post a Comment