আমার জীবনে কোন নাটক নেই। কোন ড্রামা নেই। নিজ থেকে বড়ই গাছে না চড়লে গায়ে কাঁটাও বেঁধে না। আমার ঈশ্বরও নেই যে সালিশ বসাবো। পুরুন্দর ভাটকে স্মরণ করে তাই মাল খাই আর স্মৃতি চিবাই চুপচাপ। পুরুন্দর ভাট নামে কোন এক স্বল্প পরিচিত শক্তিমান লিখেছিলেন,
আমার জীবনে নাই কেন কোনো ড্রামা
তাই দিব আমি কার্পাস ক্ষেতে হামা
আমার জীবনে নাই কেন কোনো ড্রিম
টিকটিকি আমি, পোকা খাই, পাড়ি ডিম
আমার মরণে হয় না তো হেডলাইন
প্রাসাদ গাত্রে মুতিয়া ভাঙিব আইন
আমার মরণে কাঁদিবে না কোনো মেনি
লেডি ক্যানিং-এর নাম থেকে লেডিকেনি
এক পা স্বর্গে, এক পা নরকে, ঝোলা
একটি কামান, দুটি কামানের গোলা।
পুরুন্দর ভাট
আজ সারাদিন নানারকম দুনিয়াদারির কাজে ছ্যাঁচা খেয়েছি। তারপর একচক্কর ঘুরেছি কারণ ছাড়া। তারপর ঘরে আসতে আসতে দিনের আলো পড়তি। ঠিক এই সন্ধিক্ষণের সময়টা বাড়ি বসে থাকাটা আমার সবচাইতে অপছন্দের কাজগুলির একটি। কেমন যেন স্ক্রু হতে গিয়ে মাঝপথে অষ্টাবক্র থেমে থাকা। এসময় ঘরে ঢুকলেই মনে হয় কী যেন একটা অসম্পূর্ণ রেখে চলে এসেছি। অদ্ভুত ধরণের একটা অপূর্ণতার অনুভুতি। যেন প্রচুর মাল টানলেও টালত্ব দরজার বাইরে কোথাও ফেলে এসেছি।
এরম বিখাউজ পরিস্থিতিতে শুরু হয় স্মৃতি খাউজানি। পাহাড়ে আমিও গেছি। মোটেই নাটক করে না। নাটক না থাকার জন্য কাকে দায়ী করা যায় কপাল ছাড়া? কোন নাটক নেই। সিনেমা খানিক শুরু হয়ে দেখা গেল ফাইল দুই নম্বরী। ভর্তি স্ক্র্যাচ। হলো না তাই আর শেষ পর্যন্ত। নাটকো হলোনা ফিলিমো হলোনা। অর্থাৎ কেন্দ্রীভুত কোন কাঠামোবাদী প্রপঞ্চগুচ্ছ এক নজরে চেখে নেয়া গেল না। টুকরো টুকরো কিছু প্রবাহকণা, হয়তো কিছু অণুগল্প কিম্বা তাও নয়।
নয় বছর হয়ে এলো। সেই ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর। বেতন ফী বৃদ্ধির প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলন সামাল দিতে না পেরে ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে হল খালি করার ঘোষনা দেন তৎকালীন ভিসি ড. আলাউদ্দিন আহমেদ। বাড়ি ফিরলাম ভোদাই হয়ে। কবে এই লুহার তালা খোলে কে জানে? এর মধ্যে ভাই এর বিবাহে গেল কয়দিন। তারপর আবার ভোদাই। আসলে টানা হলে থাকতে থাকতে জাবির বাইরের জগতটাই অসহ্য লাগতো। কারো সাথে মানিয়ে নিতে পারি না। সবাই কেমন যেন শুধু অন্য অন্য কথা বলে। আগে টানা প্রায় দুমাস বিছানায় পড়েছিলাম। একটা কোন ব্রেকআপ জরুরি ছিল।
অক্টোবরের ২৩ তারিখের দিকে জয় মানে আমাদের সচল কর্ণজয়(দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ) এসে বললো বান্দরবনের রাজপুত্রের বিবাহ, সে কণ্যাপক্ষে আমন্ত্রিত, আমি এবং ইচ্ছে করলে আরো কেউ সচ্ছন্দে সহযাত্রী হতে পারে। ডিগবাজী দিয়ে রাজী হলাম। আমি আর জয় ছাড়া অপর ব্যক্তি দাদার বন্ধু আমাদের গ্রেট সেলিম ভাই, যিনি সপ্তাহজুড়ে এঁকে যেতে পারেন আর ছত্রিশ ঘন্টা নির্বিকার ঘুমাতে পারেন।
২৫ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে সাত নাগাদ থ্রীস্টুজেস রওনা হলাম আমাদের বাসা থেকে। পথে তিন দফা জ্যাম পেরিয়ে রাত পৌনে দশটায় পড়িমড়ি করে পৌছলাম কমলাপুর। টিকেট শেষ। বহু কসরৎ করে স্ট্যান্ডিং টিকেট মিললো। রাত সাড়ে দশটায় ট্রেন ছাড়লো গুটিশুটি। সীট নেই। তেজগাঁ গেলো। ক্যান্টনমেন্ট গেলো। সেলিম ভাই খালি হতে গিয়ে আবিস্কার করলেন সামনের বগীতে বামদিকের কোণায় গোটা তিন সীট আছে তবে অনিশ্চিত। অর্থাৎ পরবর্তী স্টেশনে কেউ দাবী করলে ছাড়তে হবে। পরবর্তী না উঠতে হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে। চোখ লেগে এসেছিল এক ভদ্রমহিলার ধাক্কায় চোখ খুলে দেখি বরিশালের ভাষায় ঝাড়ি,এএএই ..এইয়া মোর সীট...উঠে এসে দেখি জয় আর সেলিমভাই ইতোমধ্যেই দুইবগীর মাঝামাঝি ফ্লোরে জমিয়ে বসেছে। জনৈক শরীফুদ্দিন উপবিষ্ট সমাবেশকে নানারকম আধ্যাত্মিক জ্ঞান দিচ্ছেন। পৃথিবীর কোন কিছুই যে একক অর্থ ধারণ করেনা এই হলো তার অভিসন্দর্ভ। তার প্রিয়গান পথের বাপই বাপরে মনা পথের মা ই মা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার করার পরে আর সীটে বসার কোন চান্স পাই নাই। শরীফুদ্দিনের গলা ভালো। একেরপর এক মাইজভান্ডারী গান চললো। তাতেই সময় কেটে যাচ্ছিল। টিকেটচোকারো যোগ দিল এক পর্যায়ে। কোরাস ধরা হলো, ভাবা মাইজবান্ঢারী
লাইন ছাড়া চলেনা রেলগাড়ি
ভোর ছটা নাগাদ ট্রেন চট্টগ্রাম পৌঁছল। নিশিজাগরণের ক্লান্তি খানিক ছিল বটে, তবে ক্ষুধা আরো খানিক বেশী। স্টেশন থেকে বেরিয়ে বায়ে মোড় নিতে সারি সারি রেস্তোরা। প্রথমটাতেই ঢোকা গেল। পরোটা-গরু। সাথে কাঁচা পেঁয়াজ। এক এক প্রস্থ পরোটাগরু...এক এক কামড় পেঁয়াজ কচ্ কচ্ খতম্! গলা না মোটামুটি চাঁদি পর্যন্ত ঠেসে হেলেদুলে সামনের বাস স্টপে পৌঁছলাম ত্রিমুর্তি। বান্দরবানের বাস ছাড়তে আর মিনিট পনের। জয়কে বললাম মুমুদের বাসায় একটা ফোন দিতে। ও বললো সারপ্রাইজ দিলে নাকি পাহাড়ীরা খুশী হয়। এদিকে সেলিম ভাই ঘুমে ঢুলে পড়ছিল। পারলে ট্রাফিক আইল্যান্ডেই কাৎ হয়। এক সময় বাস তৈরী হলো। উঠে বসলাম। বান্দরবান যেতে লাগবে প্লাসমাইনাস ঘন্টা তিন। সীট পেয়েছিলাম পেছনের দিকে। বাস ছুটছিল হৈ হৈ করে। কোন এক ফাঁকে চোখ লেগে এলো।
(চলবে )
আমার জীবনে নাই কেন কোনো ড্রামা
তাই দিব আমি কার্পাস ক্ষেতে হামা
আমার জীবনে নাই কেন কোনো ড্রিম
টিকটিকি আমি, পোকা খাই, পাড়ি ডিম
আমার মরণে হয় না তো হেডলাইন
প্রাসাদ গাত্রে মুতিয়া ভাঙিব আইন
আমার মরণে কাঁদিবে না কোনো মেনি
লেডি ক্যানিং-এর নাম থেকে লেডিকেনি
এক পা স্বর্গে, এক পা নরকে, ঝোলা
একটি কামান, দুটি কামানের গোলা।
পুরুন্দর ভাট
আজ সারাদিন নানারকম দুনিয়াদারির কাজে ছ্যাঁচা খেয়েছি। তারপর একচক্কর ঘুরেছি কারণ ছাড়া। তারপর ঘরে আসতে আসতে দিনের আলো পড়তি। ঠিক এই সন্ধিক্ষণের সময়টা বাড়ি বসে থাকাটা আমার সবচাইতে অপছন্দের কাজগুলির একটি। কেমন যেন স্ক্রু হতে গিয়ে মাঝপথে অষ্টাবক্র থেমে থাকা। এসময় ঘরে ঢুকলেই মনে হয় কী যেন একটা অসম্পূর্ণ রেখে চলে এসেছি। অদ্ভুত ধরণের একটা অপূর্ণতার অনুভুতি। যেন প্রচুর মাল টানলেও টালত্ব দরজার বাইরে কোথাও ফেলে এসেছি।
এরম বিখাউজ পরিস্থিতিতে শুরু হয় স্মৃতি খাউজানি। পাহাড়ে আমিও গেছি। মোটেই নাটক করে না। নাটক না থাকার জন্য কাকে দায়ী করা যায় কপাল ছাড়া? কোন নাটক নেই। সিনেমা খানিক শুরু হয়ে দেখা গেল ফাইল দুই নম্বরী। ভর্তি স্ক্র্যাচ। হলো না তাই আর শেষ পর্যন্ত। নাটকো হলোনা ফিলিমো হলোনা। অর্থাৎ কেন্দ্রীভুত কোন কাঠামোবাদী প্রপঞ্চগুচ্ছ এক নজরে চেখে নেয়া গেল না। টুকরো টুকরো কিছু প্রবাহকণা, হয়তো কিছু অণুগল্প কিম্বা তাও নয়।
নয় বছর হয়ে এলো। সেই ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর। বেতন ফী বৃদ্ধির প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলন সামাল দিতে না পেরে ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে হল খালি করার ঘোষনা দেন তৎকালীন ভিসি ড. আলাউদ্দিন আহমেদ। বাড়ি ফিরলাম ভোদাই হয়ে। কবে এই লুহার তালা খোলে কে জানে? এর মধ্যে ভাই এর বিবাহে গেল কয়দিন। তারপর আবার ভোদাই। আসলে টানা হলে থাকতে থাকতে জাবির বাইরের জগতটাই অসহ্য লাগতো। কারো সাথে মানিয়ে নিতে পারি না। সবাই কেমন যেন শুধু অন্য অন্য কথা বলে। আগে টানা প্রায় দুমাস বিছানায় পড়েছিলাম। একটা কোন ব্রেকআপ জরুরি ছিল।
অক্টোবরের ২৩ তারিখের দিকে জয় মানে আমাদের সচল কর্ণজয়(দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ) এসে বললো বান্দরবনের রাজপুত্রের বিবাহ, সে কণ্যাপক্ষে আমন্ত্রিত, আমি এবং ইচ্ছে করলে আরো কেউ সচ্ছন্দে সহযাত্রী হতে পারে। ডিগবাজী দিয়ে রাজী হলাম। আমি আর জয় ছাড়া অপর ব্যক্তি দাদার বন্ধু আমাদের গ্রেট সেলিম ভাই, যিনি সপ্তাহজুড়ে এঁকে যেতে পারেন আর ছত্রিশ ঘন্টা নির্বিকার ঘুমাতে পারেন।
২৫ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে সাত নাগাদ থ্রীস্টুজেস রওনা হলাম আমাদের বাসা থেকে। পথে তিন দফা জ্যাম পেরিয়ে রাত পৌনে দশটায় পড়িমড়ি করে পৌছলাম কমলাপুর। টিকেট শেষ। বহু কসরৎ করে স্ট্যান্ডিং টিকেট মিললো। রাত সাড়ে দশটায় ট্রেন ছাড়লো গুটিশুটি। সীট নেই। তেজগাঁ গেলো। ক্যান্টনমেন্ট গেলো। সেলিম ভাই খালি হতে গিয়ে আবিস্কার করলেন সামনের বগীতে বামদিকের কোণায় গোটা তিন সীট আছে তবে অনিশ্চিত। অর্থাৎ পরবর্তী স্টেশনে কেউ দাবী করলে ছাড়তে হবে। পরবর্তী না উঠতে হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে। চোখ লেগে এসেছিল এক ভদ্রমহিলার ধাক্কায় চোখ খুলে দেখি বরিশালের ভাষায় ঝাড়ি,এএএই ..এইয়া মোর সীট...উঠে এসে দেখি জয় আর সেলিমভাই ইতোমধ্যেই দুইবগীর মাঝামাঝি ফ্লোরে জমিয়ে বসেছে। জনৈক শরীফুদ্দিন উপবিষ্ট সমাবেশকে নানারকম আধ্যাত্মিক জ্ঞান দিচ্ছেন। পৃথিবীর কোন কিছুই যে একক অর্থ ধারণ করেনা এই হলো তার অভিসন্দর্ভ। তার প্রিয়গান পথের বাপই বাপরে মনা পথের মা ই মা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার করার পরে আর সীটে বসার কোন চান্স পাই নাই। শরীফুদ্দিনের গলা ভালো। একেরপর এক মাইজভান্ডারী গান চললো। তাতেই সময় কেটে যাচ্ছিল। টিকেটচোকারো যোগ দিল এক পর্যায়ে। কোরাস ধরা হলো, ভাবা মাইজবান্ঢারী
লাইন ছাড়া চলেনা রেলগাড়ি
ভোর ছটা নাগাদ ট্রেন চট্টগ্রাম পৌঁছল। নিশিজাগরণের ক্লান্তি খানিক ছিল বটে, তবে ক্ষুধা আরো খানিক বেশী। স্টেশন থেকে বেরিয়ে বায়ে মোড় নিতে সারি সারি রেস্তোরা। প্রথমটাতেই ঢোকা গেল। পরোটা-গরু। সাথে কাঁচা পেঁয়াজ। এক এক প্রস্থ পরোটাগরু...এক এক কামড় পেঁয়াজ কচ্ কচ্ খতম্! গলা না মোটামুটি চাঁদি পর্যন্ত ঠেসে হেলেদুলে সামনের বাস স্টপে পৌঁছলাম ত্রিমুর্তি। বান্দরবানের বাস ছাড়তে আর মিনিট পনের। জয়কে বললাম মুমুদের বাসায় একটা ফোন দিতে। ও বললো সারপ্রাইজ দিলে নাকি পাহাড়ীরা খুশী হয়। এদিকে সেলিম ভাই ঘুমে ঢুলে পড়ছিল। পারলে ট্রাফিক আইল্যান্ডেই কাৎ হয়। এক সময় বাস তৈরী হলো। উঠে বসলাম। বান্দরবান যেতে লাগবে প্লাসমাইনাস ঘন্টা তিন। সীট পেয়েছিলাম পেছনের দিকে। বাস ছুটছিল হৈ হৈ করে। কোন এক ফাঁকে চোখ লেগে এলো।
(চলবে )
No comments:
Post a Comment