Wednesday, July 23, 2008

অণুগল্প : : বাড়ির ভাত খেয়ে

কলিং বেলে টিপ দেবার জন্য হাত তুলতেই চোখে পড়লো দরজার উপর নোটিশ :


জরুরি কাজে বাইরে যাচ্ছি। আজ ক্লাস হবে না। সামনের শনিবার বিকালে রিকাভারি ক্লাস।

সকাল থেকে কলেজের পর এই দুপুর রোদে ঘামে চুপচুপ হয়ে কেমিস্ট্রি পড়তে এসে পড়া না হলে ভালোই লাগে। কিন্তু যাবো কোথায়? বাইরে বাঙ্গীফাটা রোদ। রাস্তায় নেমে হাঁটতে হাঁটতে পুরনো এলিফ্যান্ট রোডের কোনায় এসে দেখি গরম গরম পাকোড়া ভাজা চলছে। ডিমসহ পাঁচ টাকা ডিম ছাড়া তিন টাকা। তিন টাকার এক প্লেট নিয়ে খুব তৃপ্তি করে খাওয়া গেল। খেতে খেতে বুদ্ধি খুলল। একবার মল্লিকা থেকে ঘুরে আসা যেতে পারে। কুড়ি টাকার মধ্যে টিকেট পাওয়া গেলেই ঢুকে পড়বো। অনেকদিন ভালোমন্দ দেখা হয় না।

ব্যাগ পিঠে নিয়ে স্যান্ডেল ঘষতে ঘষতে গানের ডালি, সোনালী ব্যাঙ্ক, এরোপ্লেন মসজিদ পেরিয়ে একসময় পৌঁছলাম মল্লিকার সামনে। দুটো চল্লিশ বাজে। ছবি শুরু হতে আরো কুড়ি মিনিট। এক টিকেটে দুইটি ছবি। Fatal desire আর Those who care. কিন্তু ব্ল্যাকারদের দেখা নেই। কাউন্টারের সামনে একটা লাইনমতো দেখা যাচ্ছে। এই জাতীয় ছবির টিকেট তো কাউন্টারে বিক্রি হবার কথা না। যারা জানেনা তারা লাইনে দাঁড়ায়। বাকিরা হয়তো রোদ থেকে বাঁচতে শেডের নিচে ঢুকেছে।

লাইনের সামনে কে যেন কাঁদছে আর তাঁকে ঘিরে একটা জটলা। সামনে এগিয়ে দেখি বছর কুড়ির এক ছেলে হাঁপুস নয়নে কাঁদছে। ওর নাকি ভিড়ের মধ্যে পকেটমার হয়েছে। এখন ছবি দেখবে কিভাবে? হাতে একটা দুটাকার নোট আর একটা একটাকার কয়েন। কিছু উদ্যোগী জনসেবক পাওয়া গেল। দ্যান ভাই দ্যান যা পারেন। পোলা এত শখ কইরা ইংলিশ বই দ্যাখতে আইছে। একজন আবার প্রতিবাদ করে বলে, টেকা নাই কইয়া হলে আইয়া কানলেই হেরে টেকা তুইলা বই দেহান লাগবো! এইটা কী কন? উদ্যোগী ভদ্রলোক বললেন, আরে ভাই রাগ করেন ক্যা? পোলা পাগল দ্যাহেন না? এইবার ছেলেটি গলা চড়ালো। কান্না থামিয়ে জোর গলায় বললো, আমি পাগল না, আমার নাম শাহীন, আমি বাসার থিকা ভাত খাইয়া আইছি!

2 comments:

. said...

পারফেক্টো...

Suman Chowdhury said...

বহৃত শুক্রিয়া....